পাচারের টাকায় বিদেশে লোটাসের বিলাসী জীবন

হাসিব বিন শহিদ
হাসিব বিন শহিদ
শেয়ার
পাচারের টাকায় বিদেশে লোটাসের বিলাসী জীবন

দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে দেশে-বিদেশে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে এক হাজার ১২৮ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকা লোপাট ও পাচারের হোতা ছিলেন সাবেক এই অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া তিনি পরিবারের সদস্যদের যোগসাজশে এক হাজার ১৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংও (অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তর, স্থানান্তর) করেছেন। সব মিলিয়ে ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান ও তদন্তে এসব তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পাচার করা অর্থে লোটাস কামাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা দুবাইয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলে বিলাসী জীবন যাপন করছেন।

এরই মধ্যে কমিশন লোটাস কামালের বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি মামলা করেছে। এসব মামলার তদন্ত কার্যক্রমও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

মামলাগুলোর সুষ্ঠু বিচারের লক্ষ্যে শিগগিরই এসব মামলায় আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হবে। এ ছাড়া পাচারকৃত অর্থের গন্তব্য জানতে মালয়েশিয়া, দুবাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দুদক সূত্র কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর তদন্ত কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

মালয়েশিয়া, দুবাইসহ কয়েকটি দেশে তাঁর সম্পদের তথ্য চেয়ে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই এসব মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

জনশক্তি রপ্তানি সিন্ডিকেটের হোতা : মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে মোট এক হাজার ১২৮ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালসহ ১২ এজেন্সির মালিকের বিরুদ্ধে পৃথক ১২টি মামলা করেছে দুদক। গত ১১ মার্চ দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলাগুলো করা হয়েছে। মামলার এজাহারগুলোতে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাবেক মন্ত্রী-এমপি-উপজেলার চেয়ারম্যান-কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বায়রার বিভিন্ন পদে থাকার সময় সিন্ডিকেট করে সরকারের নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার চেয়ে পাঁচ গুণ অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করেছেন।

আসামিরা শ্রমিকদের অবৈধভাবে ক্ষতি সাধন করেছেন। শ্রমিকদের কাছ থেকে পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং প্রতি কর্মীর নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণপূর্বক আত্মসাৎ করেছেন। এসব সিন্ডিকেটের হোতা ছিলেন লোটাস কামাল। অর্থমন্ত্রী থাকাকালে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে পারিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় এই সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।

প্রথম মামলায় অরবিটাল এন্টারপ্রাইজের মালিক সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও তাঁর স্ত্রী কাশমিরি কামালকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ১০০ কোটি ৯৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। দ্বিতীয় মামলায়ও মুস্তফা কামাল ও তাঁর স্ত্রীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ৫০ কোটি ১৬ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। তৃতীয় মামলায় ১১ কোটি ৫০ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা, চতুর্থ মামলায় ৯১ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার টাকা, পঞ্চম মামলায় ১১৯ কোটি ৩২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, সপ্তম মামলায় ১৩০ কোটি ৪৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকা, অষ্টম মামলায় ১৪৩ কোটি ৯১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, নবম মামলায় ১৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা, দশম মামলায় ৭০ কোটি ৬০ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা, একাদশতম মামলায় ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং দ্বাদশতম মামলায় ৬৩ কোটি ৫৯ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

১০১৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও মানি লন্ডারিং : ১৬৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৮৫০ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে লোটাস কামাল, তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি মামলা করেছে দুদক। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলাগুলো করা হয়েছে। প্রতিটি মামলাতেই লোটাস কামালকে আসামি করা হয়েছে। প্রথম মামলায় লোটাস কামালের বিরুদ্ধে পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত উৎসর সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ২৭ কোটি ৫২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তা ভোগদখলে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর নিজ ও ব্যাবসায়িক ৩২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৪৪৬ কোটি ৪২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দ্বিতীয় মামলায় লোটাস কামালের স্ত্রী কাশমিরি কামালের বিরুদ্ধে স্বামীর যোগসাজশে ৪৪ কোটি ১১ লাখ ৬২ হাজার ১৪৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ২০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২৬ কোটি ৬৪ লাখ এক হাজার ১৩৩ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় লোটাস কামালকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। আর তৃতীয় মামলায় লোটাস কামালের মেয়ে কাশফি কামালের বিরুদ্ধে পিতার যোগসাজশে ৩১ কোটি ৭৮ লাখ ৮৩ হাজার ১৯৫ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৩৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৭৭ কোটি ৪৮ লাখ ২৩ হাজার ৫৪৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায়ও লোটাস কামালকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া চতুর্থ মামলায় লোটাস কামালের অন্য মেয়ে নাফিসা কামালের বিরুদ্ধে পিতার যোগসাজশে ৬২ কোটি ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫১৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৯৯ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার ৫৪৭ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায়ও লোটাস কামালকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ অক্টোবর লোটাস কামালের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অনুসন্ধানে নামে দুদক।

পাচারকৃত অর্থে দুবাইয়ে বাবা-মেয়ের সাম্রাজ্য : লোটাস কামাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করে দুবাইয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন বলে তথ্য মিলেছে। শেয়ারবাজার কারসাজিতে ব্যাপক আলোচিত-বিতর্কিত ব্যবসায়ী থেকে মন্ত্রী বনে যাওয়া লোটাস কামাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুবাইয়ে আবাসন খাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নামে-বেনামে বিপুল অর্থসম্পদ রয়েছে বলে দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ট্যাক্স অবজারভেটরির (ইইউট্যাক্স) চলতি বছরের ১৬ মে প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০২২ সালে দুবাইয়ের আবাসন খাতে ৫৩২ বাংলাদেশির প্রপার্টি মালিকানার (অফ-প্ল্যান বা উন্নয়ন বা নির্মাণ শেষের আগেই কিনে নেওয়া প্রপার্টির মালিকানাসহ) হিসাব পাওয়া গেছে। এ তালিকায় লোটাস কামাল ও তাঁর পরিবারের নাম রয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, দুবাইয়ের আবাসন খাতে বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রপার্টির মূল্য ২৮ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। অফ-প্ল্যান প্রপার্টিসহ এ সম্পদমূল্য দাঁড়ায় ৩৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। এরই মধ্যে লোটাস কামাল, তাঁর স্ত্রী কাশমিরি কামাল ও মেয়ে নাফিসা কামালের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, তাঁদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপ

যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪%, জবাবে চীনের ৮৪%

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪%, জবাবে চীনের ৮৪%

কয়েক ডজন দেশের ওপর চাপানো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক গতকাল বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে চীনের পণ্যে আরোপিত ১০৪ শতাংশ শুল্কও রয়েছে।

এদিকে চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪ শতাংশ শুল্কারোপের জবাবে এবার সব ধরনের মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে চীনের অর্থ মন্ত্রণালয়। আজ বৃহস্পতিবার থেকে নতুন এই শুল্ক কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে চীন সরকার।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। ওই দিন বাংলাদেশি পণ্যেও ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়। ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্কের একাংশ সেদিনই কার্যকর হয়ে যায়। বাংলাদেশসহ বাকি অংশ গতকাল থেকে কার্যকর হলো।

বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধের আঁচ

এদিকে বিশ্লেষকদের মতে এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে পুরোদমে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, চীন পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের এই ঘটনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে আবারও বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিষয়টি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করছেন তাঁরা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি নিলেও বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানো যায়নি।

ট্রাম্পের এই শাস্তিমূলক শুল্ক কয়েক দশক ধরে বিরাজমান বিশ্ব বাণিজ্যের ধারায় ভূমিকম্প ঘটিয়েছে।  বিশ্বব্যাপী মার্কিন পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার প্রথমদিনেই এর আঁচ লেগেছে বিশ্ববাজারে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। গতকাল ব্রেন্টের অপরিশোধিত তেলের দাম কমে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে বিক্রি হয়েছে, যা করোনাকালে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর সর্বনিম্ন। বিশ্লেষক অ্যাশলে কেলি বলছেন, হোয়াইট হাউস চায় তেলের দাম আরো কমে যাক।
কারণ এটাই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক হবে।

ট্রাম্পের চালু করা নতুন শুল্কের ধাক্কায় শেয়ারবাজারেও উথালপাথাল দেখা যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে দরপতন হচ্ছে। গতকাল সকালে এশিয়ার শেয়ারবাজারে আবারও পতন হয়েছে। মূলত ট্রাম্প চীনের প্রতিশোধমূলক শুল্কের জবাবে চীনের পণ্যে অতিরিক্ত, অর্থাৎ মোট ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘটনার জেরে গতকাল সকালেই এশিয়ার শেয়ারবাজারে পতন হয়েছে।

এরপর ইউরোপের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পর পরই সূচকের পতন হয়। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক আঞ্চলিক সূচক প্যান-ইউরোপীয় স্টকস ৬০০ কমেছে ৩.৪ শতাংশ। আঞ্চলিক এই সূচকের অন্তর্ভুক্ত সব খাতের শেয়ারের দামেই নেতিবাচক প্রবণতা চলছে। এ ছাড়া আঞ্চলিক স্বাস্থ্যসেবা, খনি ও তেল ও গ্যাস খাতের সূচকগুলো ব্যাপক হারে পড়ে গেছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা, খনি, তেল ও গ্যাস খাতের শেয়ারের দাম যথাক্রমে ৫.৩ শতাংশ, ৩.৩ শতাংশ ও ৪.৬ শতাংশ কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য বাজারেও। মন্দা দেখা দেবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউরোর বিপরীতে কমেছে ডলারের দাম।

এদিকে বিশ্ববাজারে গতকাল সোনার দাম বেড়েছে। অবশ্য ২ এপ্রিলে সোনার দাম পড়ে গিয়েছিল।

বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া

চীন জানিয়েছে, এই দ্বন্দ্ব্ব সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে ইচ্ছুক। এই লক্ষ্যে চীন গতকাল বাণিজ্য বিষয়ক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। শ্বেতপত্রে চীন বলেছে, চীন সব সময়ই চেষ্টা করেছে, মার্কিন-চীন বাণিজ্য যেন সব সময় উভয়ের জন্য লাভজনক হয়। শ্বেতপত্রে আরো বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পাল্টা শুল্কের বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থা, নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হবে।

এদিকে ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া শুল্কের ধাক্কা সামাল দিতে ভিয়েতনাম, ইসরায়েল, আর্জেন্টিনার মতো কিছু দেশ মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কম করেছে। ভারতও কিছু পণ্যে শুল্ক কম করেছে।

তবে ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্কারোপের প্রতিক্রিয়ায় এবার পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইউরোপের ২৭টি দেশের এই জোট যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন, মোটরসাইকেল ও সৌন্দর্যপণ্যেও পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়টি গতকাল অনুমোদন দিয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কয়েকটি যানবাহনের ওপর গতকাল থেকে ২৫ শতাংশ হারে শুল্কারোপ করেছে কানাডা।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে রাশিয়া। বিশেষ করে, চীনা পণ্য আমদানির ওপর ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করাটা কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের রীতির মধ্যে পড়ে না বলে মনে করে দেশটি।

 

মন্তব্য

রাজশাহীর নবগঙ্গা পদ্মার পার থেকে তোলা

শেয়ার
রাজশাহীর নবগঙ্গা পদ্মার পার থেকে তোলা
একসময়ের প্রমত্তা পদ্মার রূপ এখন আর নেই। পানি শুকিয়ে কঙ্কালসার অবস্থা। জেগেছে ছোট-বড় অসংখ্য চর। অনেক জায়গায় নৌকা লাগে না, হেঁটেই পার হওয়া যায় নদী। রাজশাহীর নবগঙ্গা পদ্মার পার থেকে তোলা। ছবি : সালাহ উদ্দিন
মন্তব্য
সালাহউদ্দিন আহমদ

ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদে একমত নয় বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদে একমত নয় বিএনপি
সালাহউদ্দিন আহমদ

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদ-এর সঙ্গে একমত নয় বিএনপি। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন খবর প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বিষয়টি পরিষ্কার করেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেড শিটের ৫, ৬ ও ৭-এ সংবিধানের মূলনীতি এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে বহুত্ববাদের কথা বলা হয়েছে, সাম্য-মানবিক মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বহুত্ববাদসহ অন্য বিষয়গুলোর সঙ্গে বিএনপি একমত নয়।

তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিগুলো সংবিধানের ৮, ৯, ১০ এবং ১২এই অনুচ্ছেদগুলোতে বিধৃত আছে। সেই অনুচ্ছেদগুলোর বিষয়ে সংস্কার কমিশনে সুপারিশ করা হয়েছে যে তারা এই বিষয়গুলো পুনস্থাপন করতে চেয়েছে। যেমনএকটা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি বিলুপ্ত করা হোক। আমরা সেখানে বলেছি, এটাতে (ধর্মনিরপেক্ষতা) একমত নই।

কিন্তু কী কী চাই সেটাও আমরা বলেছি।

এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন,  আমরা চেয়েছি, পঞ্চম সংশোধনীতে যেটা গৃহীত হয়েছে, সেটা পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বাবস্থা, সেটা বহাল করা হোকআমরা চেয়েছি। কিন্তু সবাই মনে করেছে, ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিলের কথা বলেছি। বিষয়টা তা নয়।

আমরা পরিষ্কার করার জন্য বলেছি, আপনাদের (সংস্কার কমিশনের) প্রতিস্থাপন বহুত্ববাদসহ অন্যান্য বিষয় এক সঙ্গে আসতে হবে। অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা-বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র অর্থাৎ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার’—এ বিষয়গুলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গণ্য হবে। যেটা গৃহীত হয়েছিল বাকশাল বিলুপ্তির পরে। আশা করি এ নিয়ে আর কোনো বিভ্রান্তি থাকবে না।

রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংবিধানের মূলনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিষয়ে কথা বলছি।

আমরা উপরাষ্ট্রপতি, উপপ্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব করেছি, দুই কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রস্তাব করেছি, উভয় কক্ষে ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দল থেকে নিয়ে আসার প্রস্তাব করেছি। আমরা রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রস্তাব করেছি, নতুন করে কিছু ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে দেওয়ার প্রস্তাব করেছি, সংসদে সংরক্ষিত ৫০ মহিলা আসন থেকে ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছিএ ধরনের অনেক প্রস্তাব করেছি।

 

মন্তব্য

দুদকে ‘অতিগোপনীয়’ অভিযোগ নিয়ে হাসনাত-সারজিস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দুদকে ‘অতিগোপনীয়’ অভিযোগ নিয়ে হাসনাত-সারজিস

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। সেখানে তাঁরা লিখিতভাবে কিছু অভিযোগ জানিয়েছেন।

গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে এই দুই নেতা সাক্ষাৎ করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।

সাংবাদিকদের হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা কিছু অভিযোগ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে এসেছি। অভিযোগগুলো আমরা লিখিতভাবে জানিয়েছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভেরি কনফিডেনশিয়াল (অতিগোপনীয়)। কাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে হাসনাত বলেন, কনফিডেনশিয়াল বিষয় বলে দিলে তো আর কনফিডেনশিয়াল থাকল না।

এ ছাড়া অপরাধীরা এতে সতর্ক হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, অতীতে দুদককে ব্যবহার করে অনেকে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। অনেক সাধারণ মানুষকে আবার বিনা অপরাধে হয়রানি করা হয়েছে। এ সময়ে এসেও এখন আমরা সেটি প্রত্যাশা করি না।

আমাদের কিছু অভিযোগ ছিল, সেটি জানাতেই এখানে এসেছি। এর বেশি কিছু বলছি না এখন।

 

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ