বরগুনার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বৈশাখী উৎসব ও হালখাতা উপলক্ষে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। ওই নেতা প্রকাশ্যে মাইকিং করে জানিয়েছেন চাঁদাবাজির টাকা তিনি পুলিশকে দিয়েছেন, এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অভিযুক্ত ওই নেতার নাম মো. হাবিবুর রহমান খলিফা। তিনি ডৌয়াতলা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ডৌয়াতলা বাজার কমিটির স্ব-ঘোষিত সেক্রেটারি।
আরো পড়ুন
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯ এপ্রিল খাল খনন শুরু করবে জামায়াত
জানা গেছে, দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে ২ বৈশাখ ডৌয়াতলা বাজারের ব্যবসায়ীরা হালখাতা ও নববর্ষ উৎসব পালন করে থাকেন। প্রতিবছর এ দিনে ডৌয়াতলা বাজারে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। দোকানিদের কেনাবেচা চলে গভীর রাত পর্যন্ত।
অভিযোগ উঠেছে, বাজার কমিটির সেক্রেটারি ও স্থানীয় বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান খলিফার নেতৃত্বে হালখাতা উৎসবে ডৌয়াতলা বাজারে আসা ভাসমান বিক্রেতা ও স্থানীয় দোকানিদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা হয়েছে।
ওই বিএনপি নেতাকে দোকান ভেদে সর্বনিম্ন এক শ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আরো পড়ুন
গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে রফিক আজাদের স্মৃতিস্মারক বাড়ি
এদিকে ওই নেতার চাঁদাবাজির ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তিনি স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী ও নেতাকর্মী নিয়ে জরুরী সভা ডাকেন। ওই সভায় প্রকাশ্যে তিনি ডৌয়াতলা বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা ও ওই চাঁদার টাকা থেকে কিছু টাকা পুলিশকে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তার স্বীকারোক্তীমুলক একটি ভিডিও গতকাল মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, তিনি প্রকাশ্যে একটি মাইক্রোফোন নিয়ে মাইকে কথা বলছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সকালে ৪ জন পুলিশ আইছে, তাদের কয় টাকা ভাত খেতে দেওয়া লাগে? অন্তত দুই হাজার টাকা দেওয়া লাগে, এক হাজার টাকা দিয়েছি। রাতে যারা আইছে (পুলিশ) তাদের তো এক হাজার দেওয়াই লাগে।’
আরো পড়ুন
কফি হাউজের সামনে পিটুনির শিকার সেই নারীকে খুঁজে পেয়েছে পুলিশ
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের বাজারে লক্ষ লক্ষ টাকা কালেকশন হইছে। আমি যদি প্রত্যেক দোকানে যাইতাম প্রত্যেকে আমারে এক শ টাকা দিত।
সেখানে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা উঠত। ৫ হাজার তো উঠত। সেখানে পুলিশরে ২ হাজার দিয়া ৩ হাজার আমার পকেটে থুইতাম। আমি চিন্তা করছি ওই টাকা উঠাইতে গিয়া আমার দোকানের বেশি ক্ষতি হইয়া যায়। তাই পকেট থেকে ৫০০ পুরাইয়া আমি পুলিশকে দিয়া দিছি। আমি আপনাগো কাউরে ডিস্টাব না কইরা থাকি তাহলে আমার নামে যদি এত বড় বদনাম দেয়, আপনারা কি বিচার চান? আমার নেতা আইবে, দরকার হলে মনি ভাই আইবে।’
ডৌযাতলা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বাজার কমিটি অনেক দোকান থেকেই চাঁদা তুলেছে। তবে এ ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তারা চাঁদা তোলা বন্ধ করে দেয়।
বাজারের গার্মেন্সে ব্যবসায়ী মো. খলিল জানান, বাজার কমিটি অনেক দোকান থেকে টাকা নিয়েছে। আমার এই গলিতে আসার আগেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তাই আমার এখানে আসেনি।
আরো পড়ুন
ধানমন্ডিতে চাঁদা আদায়ের দায়ে আটক যুবককে নিয়ে যা বললেন আরিফ সোহেল
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা মূলত অবৈধ কমিটি। এরা বিভিন্ন দোকান থেকে মাঝে মাঝে টাকা তোলে। টাকা তোলার কারণও রয়েছে। দেখা গেছে, বাজারের একটি টিউবঅয়েলের ওয়াশার দরকার, সেখানে যা টাকা খরচ হয় তারা তার অধিক তুলে। আর হালখাতা উপলক্ষে টাকা তুলেছে, এ ঘটনাটি সত্য তবে টাকা তুলে পুলিশকে দিয়েছে সেটা ভিডিও দেখে জেনেছি।
ডৌয়াতলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব হাওলাদার বলেন, ‘হাবিব খলিফা নিজের বক্তৃতায় স্বীকার করেছেন তিনি চাঁদা তুলেছেন। তিনি অবৈধভাবে সেক্রেটারি হয়েছেন। বাজারের ব্যবসায়ীরা তাকে সেক্রেটারি নির্বাচিত করেননি। নববর্ষে তিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করেছেন আর সেই টাকাই তিনি পুলিশকে দিয়েছেন।’
অভিযুক্ত বাজার কমিটির স্ব-ঘোষিত সেক্রেটারি ও বিএনপি নেতা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ডৌয়াতলা বাজারে আমি টাকা তুলিনি। আমার বিরুদ্ধে চাঁদাতোলার অভিযোগ উঠলে আমি ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা করি। ওই সভায় ভুল করে বলেছি- আমি পুলিশকে টাকা দিয়েছি। আসলে আমি কথাটা বুঝিয়ে বলতে পারিনি। হালখাতা উপলক্ষে ডিউটিরত পুলিশদের নিয়ে দুপুরে ও রাতে আমি একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করি। আমি তাদেরকে কোনো টাকা পয়সা দেইনি এবং কোনো টাকা-পয়সা আদায়ও করিনি।’
বামনা থানার ওসি হারুন অর রশিদ হাওলাদার বলেন, ‘আমি আদৌ কিছু জানি না। টাকা তুলেছে কিনা তাও জানি না। আমাকে দেওয়ার তো কিছুই নাই। আপনি তাদেরকে চার্জ করেন- কোন পুলিশকে টাকা দিয়েছেন।’