আরবের সবচেয়ে বিস্তৃত ধর্ম ছিল শিরক। শিরকের অর্থ এই যে ইলাহ হিসেবে এক সত্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁর সাহায্য-সহযোগিতার জন্য তাঁর সাহায্যকারী ও সহযোগী স্থির করা। অর্থাৎ আল্লাহর সঙ্গে অন্যদের শরিক করা। এমন আকিদা-বিশ্বাস ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ আরবের।
ফেরেশতা ও জিন নিয়ে জাহেলি আরবের বিশ্বাস
উম্মে আহমাদ ফারজানা

এই শত শত উপাস্যের ভিড়ে সেই পবিত্র অস্তিত্ব ছিল সমুজ্জ্বল, যার নাম দিয়েছিল তারা ‘আল্লাহ’। তারা বিশ্বাস করত যে আল্লাহই আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং জগতের অন্য যত বড় বড় সৃষ্টবস্তু আছে সব কিছু তিনিই সৃষ্টি করেছেন। এ কারণেই জাহেলি যুগের কবিদের কবিতায় আল্লাহ নামটি বারবার এসেছে। তবে এসব মূর্তি, দেবদেবী ও ফেরেশতাদের চিত্রিত করা হয়েছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় হিসেবে।
তারা এসব দেবদেবীর পূজা করত এ কারণে যে এগুলো খুশি হয়ে তাদের প্রতি আল্লাহকে সন্তুষ্ট রাখবে। পবিত্র কোরআন কয়েক স্থানে আরবের কাফিরদের এই দোষের কথা উল্লেখ করেছে যে তারা যদি আল্লাহকে আকাশ, পৃথিবী ও নক্ষত্ররাজির স্রষ্টা হিসেবে বিশ্বাসই করে থাকে এবং বিশ্বাস করে থাকে যেসব শক্তি ও কর্তৃত্ব তাঁরই হাতে আছে তাহলে কেন তারা অন্যদের উপাসনা করে?
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘জিজ্ঞেস করো, এই পৃথিবী এবং তাতে যারা আছে তারা কার, যদি তোমরা জান? তারা বলবে, আল্লাহর।
বলো, তবু কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?
জিজ্ঞেস করো, কে সপ্ত আকাশ এবং মহা আরশের অধিপতি? তারা বলবে, আল্লাহ।
বলো, তবু কি তোমরা সাবধান হবে না?
জিজ্ঞেস করো, সব কিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে, যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যার ওপর আশ্রয়দাতা নেই, যদি তোমরা জানো?
তারা বলবে, আল্লাহর।
বলো, তবু তোমরা কেমন করে মোহগ্রস্ত হচ্ছ?
বরং আমি তো তাদের কাছে সত্য পৌঁছিয়েছি; কিন্তু তারা তো নিশ্চিত মিথ্যাবাদী। আল্লাহ কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সঙ্গে কোনো ইলাহ নেই; যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করত। তারা যা বলে তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্র!’ (সুরা : মুমিনুন : আয়াত : ৮৪-৯১)
উপযুক্ত আয়াতগুলোতে মুশরিকদের আকিদা-বিশ্বাসের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহর সন্তান গ্রহণসংক্রান্ত যে বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে তা খ্রিস্টানদের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, বরং মুশরিকদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা ফেরেশতাদের আল্লাহর সন্তান মনে করত। অন্যান্য আয়াতেও এ বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহ বলেন,
‘বলো, কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী থেকে জীবনোপকরণ সরবরাহ করে অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কার কর্তৃত্বাধীন, জীবিতকে মৃত থেকে কে বের করে এবং সব কিছুকে কে নিয়ন্ত্রণ করে?
তারা তখন বলবে, আল্লাহ।
বলো, তবু কি তোমরা সাবধান হবে না।’
(সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৩১)
এসব আয়াত থেকে বোঝা যায় যে তারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখত। অন্য দেবদেবীকে তারা কী চোখে দেখত এবং কেন সেগুলোর উপাসনা করত তা নিম্নরূপ আয়াতগুলো থেকে প্রতীয়মান হয়।
পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তারা আল্লাহ ব্যতীত যার ইবাদত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, এগুলো আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।’
(সুরা : ইউনুস, আয়াত : ১৮)
সুরা জুমারে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা বলে, আমরা তো এদের পূজা এজন্যই করি যে এরা আমাদের আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে দেবে।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৩)
ফেরেশতাদের ব্যাপারে বিশ্বাস
ফেরেশতাদের সম্পর্কে তাদের এই বিশ্বাস ছিল যে ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা। এ কারণে তারা ফেরেশতাদের নারী গণ্য করত। পবিত্র কোরআন বলছে, ‘তবে কি তোমাদের জন্য পুত্রসন্তান এবং আল্লাহর জন্য কন্যাসন্তান? এই প্রকার বণ্টন তো অসংগত। এগুলো কতক নামমাত্র, যা তোমাদের পূর্বপুরুষরা ও তোমরা রেখেছ, যার সমর্থনে আল্লাহ কোনো দলিল প্রেরণ করেননি।’
(সুরা : নাজম, আয়াত : ২১-২৩)
তারপর মহান আল্লাহ বলছেন, ‘যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তারাই ফেরেশতাদের নারীবাচক নাম দিয়ে থাকে।’
(সুরা : নাজম, আয়াত : ২৭)
সুরা তুরে বর্ণিত হয়েছে, ‘তবে কি কন্যাসন্তান তাঁর (আল্লাহর) এবং পুত্রসন্তান তোমাদের জন্য?’ (সুরা : তুর, আয়াত : ৩৯)
জিনদের ব্যাপারে বিশ্বাস
মুশরিকরা ভূতপ্রেত ও জিনে বিশ্বাস রাখত। তারা এগুলোকে দেবতা বা আল্লাহর সমকক্ষ বিশ্বাস করত। এগুলোর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করত এবং এগুলোর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির ভয় করত। কোরআনে এসেছে,
‘তারা জিনকে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে, অথচ তিনিই তাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তারা আল্লাহর প্রতি অজ্ঞতাবশত পুত্র-কন্যা আরোপ করে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১০০)
সুরা জিনে মহান আল্লাহ জিনদের বক্তব্য উল্লেখ করেছেন—‘আরো এই যে কিছু মানুষ কিছু জিনের শরণাপন্ন হতো, ফলে তারা জিনদের আত্মম্ভরিতা বাড়িয়ে দিত।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ৬)
মুশরিকরা মহান আল্লাহ ও জিনদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্কও স্থাপন করত। বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা আল্লাহ ও জিন জাতির মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক (জিন ও আল্লাহর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক ) স্থির করেছিল।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ১৫৮)
সম্পর্কিত খবর

ঘুম থেকে উঠে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তেন
ইসলামী জীবন ডেস্ক

মুমিনের সব কাজ ইবাদতের অংশ। তাই ঘুম ও সজাগ সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর স্মরণ জরুরি। ঘুমানোর সময় ও ঘুম থেকে উঠার পর কী দোয়া পড়তে হবে রাসুল (সা.) তা শিখিয়েছেন।
হুজাইফা বিন আল ইয়ামান (রা.) বলেছেন, নবী করিম (সা.) যখন বিছানায় ঘুমাতে যেতেন তখন তিনি বলতেন,
«باسْمِكَ اللَّهُمَّ أمُوتُ وأَحْيَا»
উচ্চারণ : বিসমিকা আল্লাহুম্মা আমুতু ওয়া আহইয়া।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ, তোমার নামেই আমি মারা যাব এবং জীবিত হব। ’
এবং যখন তিনি ঘুম থেকে জাগ্রত হতেন তখন তিনি পড়তেন,
«الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا، وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ»
উচ্চারণ : ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর। ’
‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি (ঘুমের মতো) মৃত্যুর পর আমাদেরকে জীবিত করলেন, আর তাঁরই কাছে আমাদের সবার পুনরুত্থান। ’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ৬৩২৪)

কিয়ামতের দিন যে আমলের ওজন সবচেয়ে বেশি হবে
উম্মে আহমাদ ফারজানা

ইসলামে উত্তম চরিত্রের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। মুমিনদের জন্য বিভিন্ন গুণে চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা ঈমানের দাবি। কেননা উত্তম চরিত্র ছাড়া একজন মুমিনের ঈমান পরিপূর্ণ হতে পারে না। ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য উত্তম চরিত্র অর্জন করা অপরিহার্য।
আমাদের সমাজে মানুষের সর্বোত্তম হওয়ার বিভিন্ন মাপকাঠি আছে। বিভিন্নজনের কাছে ভিন্ন মাপকাঠিতে ভিন্ন ধরনের মানুষ সর্বোত্তম। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হচ্ছে উত্তম চরিত্র।
রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি কখনো কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করেননি।
উত্তম চরিত্রের সওয়াব এত বেশি, যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কিয়ামতের দিন মানুষের সওয়াব ও গুনাহ পরিমাপের জন্য দাঁড়িপাল্লায় ওজন করা হবে। সেদিন যে আমলের ওজন সবচেয়ে বেশি ভারী হবে তা হলো উত্তম চরিত্র। এ সম্পর্কে আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে বেশি ওজনের আর কোনো জিনিস হবে না। কেননা আল্লাহ অশ্লীল ও কটুভাষীকে ঘৃণা করেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০০২)
উত্তম চরিত্রের সওয়াব ওজনে সবচেয়ে বেশি ভারী হওয়ার রহস্য আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়। এক ব্যক্তি সারা দিন সাওম পালন করে এবং সারা রাত নফল সালাত পড়ে যেরূপ সওয়াব পায়, মহান আল্লাহ উত্তম চরিত্রের বদৌলতে সেরূপ সওয়াব দান করেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনে) সাওম পালনকারী ও (রাতে) নামাজ আদায়কারীর মর্যাদা লাভ করতে পারে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৮)
জান্নাতে মানুষের আমল অনুযায়ী সম্মানজনক জায়গায় অধিষ্ঠিত করা হবে। যার আমল যত ভালো হবে, সে তত বেশি সম্মানিত হবে। রাসুল (সা.) নিজে উত্তম চরিত্রবানদের জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে ঘর বরাদ্দের জিম্মাদারি নিয়েছেন। এ বিষয়ে আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ন্যায়সংগত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার। আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না, আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের জিম্মাদার এবং যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে, আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)

আজকের নামাজের সময়সূচি, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
অনলাইন ডেস্ক

আজ রবিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬
ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—
জোহর সময় শুরু- ১২টা ৩ মিনিট।
আসরের সময় শুরু - ৪টা ৩০ মিনিট।
মাগরিব- ৬টা ২৩ মিনিট।
এশার সময় শুরু - ৭টা ৩৯ মিনিট।
আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ২৩ মিনিট।
আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ১৯ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৫টা ৪০ মিনিটে।
সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

প্রশ্ন-উত্তর
মৃত ব্যক্তির আকিকা দেওয়া জায়েজ আছে কি?
ইসলামী জীবন ডেস্ক

প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির আকিকা দেওয়া জায়েজ আছে কি?
-আতিক, মিরপুর
উত্তর : আকিকা জীবিত ব্যক্তির জন্য মুস্তাহাব। মৃত ব্যক্তির আকিকা করা মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাই তাতে আকিকার সওয়াব পাওয়া যাবে না। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৩৬, ফয়জুল বারি : ৪/৩৩৭)
সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা
।