<p>নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবারের লোকসভা নির্বাচনে সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গেই ২০২০ সালের পর দেশটির শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বড় পতন দেখা গেল। মঙ্গলবারের নির্বাচনী গণনার হতবাক ফলাফলের অর্থ হলো- ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ ৫৪৩ সদস্যের লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠনের জন্য মোদিকে ছোট দলগুলোর ওপর নির্ভর করতে হবে, যা ভারতীয় এ নেতার ব্যবসাবান্ধব এজেন্ডা অনুসরণ করার ক্ষমতা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে।</p> <p>মঙ্গলবার ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়া লিমিটেডের নিফটি ৫০ ও বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সেনসেক্স সূচকগুলো যথাক্রমে ৫.৯৩ শতাংশ ও ৫.৭৪ শতাংশ কমে বাজার শেষ হয়। এর আগে দিনের শুরুতে ৮.৫ শতাংশের মতো সূচক কমে যায়। ভারতীয় শেয়ারগুলো বুধবার সকালেও আরো ক্ষতির রেকর্ড করে। পরে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা নাগাদ দুটি সূচকের প্রতিটি ১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।</p> <p><strong>নির্বাচনী ফলাফলে বিনিয়োগকারীদের কেন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া?</strong><br /> বিনিয়োগকারীরা মোদির এক দশকের দীর্ঘ মেয়াদে তার অর্থনৈতিক এজেন্ডার প্রতি অত্যধিক অনুকূল ছিল। ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদি পরিকাঠামোতে ব্যাপক বিনিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন, দেশীয় উৎপাদনকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন, বিদেশি বিনিয়োগের প্রলোভন দিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক বাধা কমিয়েছেন এবং দুর্নীতির মূলোৎপাটনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।</p> <p>ভারতীয় এ নেতার নজরে নিফটি ৫০ সূচকের মূল্য প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। যদিও কিছু বিশ্লেষক যুক্তি দেন, অনেক ভারতীয় সংস্থা এখন অতিমূল্যায়িত। এই বছরের শুরুতে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম বাজার হিসেবে হংকংকে ছাড়িয়ে যেতে ভারতের স্টক মার্কেটের মূলধন ৪.৩ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। অন্যদিকে মঙ্গলবারের বিস্ময়কর নির্বাচনী ফলাফলের আগে ভারতীয় স্টক রেকর্ড উচ্চতায় বেড়েছে। কারণ বুথফেরত সমীক্ষা দেখিয়েছে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) নিরঙ্কুশ বিজয়ের পথে রয়েছে।</p> <p>মোদি জনপ্রিয় হলেও মেরুকরণকারী নেতা। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সময়কালে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এপ্রিলে শেষ হওয়া অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৮.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অধিকাংশ উন্নয়নশীল ও উন্নত অর্থনীতির দেশকে সমানভাবে ছাড়িয়ে গেছে। গত এক দশকে মাথাপিছু জিডিপি প্রায় পাঁচ হাজার ডলার থেকে বেড়ে সাড়ে সাত হাজার ডলারের বেশি হয়েছে। সেই সময় ভারত বিশ্বের নবম বৃহত্তম অর্থনীতি থেকে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।</p> <p>যদিও মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে জয়লাভ করেছেন, তবে তার জোটের ছোট অংশের সঙ্গে তার আলোচনার প্রয়োজন, তার অর্থনৈতিক এজেন্ডার দিকগুলোর সঙ্গে আপস করতে হবে—এমন সম্ভাবনা উত্থাপন করে।</p> <p>অর্থনীতিবিদ ও নয়াদিল্লির ইলারা ক্যাপিটালের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট গরিমা কাপুর বলেছেন, ‘বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর জন্য খুব বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতার অর্থ সংস্কারের জন্য বৃহত্তর চাহিদা ও যেকোনো জনবহুল পদক্ষেপের জন্য সীমিত চাহিদা এবং অব্যাহত মূলধন ব্যয়ের এজেন্ডা। বাজারগুলো এই পরিবর্তনের পুনর্মূল্যায়ন করছে। তাই বেশির ভাগ পাবলিক সেক্টর ইউনিট, পাবলিক সেক্টর ব্যাংক ও মূলধন ব্যয় নেতৃত্বাধীন স্টকগুলো তীক্ষ্ণ সংশোধন দেখছে।’</p> <p>অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের একজন জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আলেকজান্দ্রা হারম্যান বলেছেন, মোদির প্রত্যাশিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা ভূমি, শ্রম ও মূলধনসংক্রান্ত বিধি-বিধানের সংস্কার পাস করা আরো কঠিন করে তুলবে।</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘আরো অবকাঠামো বিনিয়োগ সম্ভবত মূল ফোকাস থাকবে।’</p> <p><strong>নির্বাচন ভারতের অর্থনৈতিক নীতিতে কিভাবে প্রভাব ফেলবে?</strong><br /> এদিকে ভারতের অনেক অর্থনৈতিক সুবিধা নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাবিত হয় না, এমনকি কারা ক্ষমতায় থাকে তাতেও ন। মোদির জোট যে দিকেই নিয়ে যাক না কেন, দেশটি এখনো একটি বিশাল অপেক্ষাকৃত তরুণ জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে উপকৃত হবে। পাশাপাশি ঐতিহ্যগতভাবে জোটনিরপেক্ষতার নীতিতে থাকা নয়াদিল্লি একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে এবং অন্যদিকে রাশিয়া ও চীনের দূরত্ব থেকে লাভবান হতে পারে।</p> <p>অলস্প্রিং গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্টের একজন পোর্টফোলিও ম্যানেজার গ্যারি ট্যান বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে নির্বাচনের ফলাফল ভারতের বাজারের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করবে, যা অনুকূল জনসংখ্যার দীর্ঘমেয়াদি ফ্যাক্টর এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বর্ধিত ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ভারতে স্থানান্তরিত হওয়ার পক্ষে।’</p> <p>এ ছাড়া ইলারা ক্যাপিটালের কাপুর জানান, তিনি বিশ্বাস করেন না যে নির্বাচনের ফলাফল দীর্ঘ মেয়াদে নীতিতে অনেক পরিবর্তন আনবে। </p> <p><strong>ভারতের শেয়ারবাজারের উচ্ছ্বাস কি শেষ হবে?</strong><br /> ভারতের চিত্তাকর্ষক জিডিপি বৃদ্ধি সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি ব্যাপক দারিদ্র্য, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, ব্যাপক দুর্নীতিসহ গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এর বিশাল জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে মানসম্পন্ন কাজের অভাব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে। এই বছরের শুরুতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ভারতের শিক্ষিত যুবকদের আকাঙ্ক্ষা ও উপলব্ধ চাকরির মধ্যে একটি ‘অমিল’ সম্পর্কে সতর্ক করেছিল। সেই সঙ্গে গ্যারি টানের মতে, ভারতের ক্রমবর্ধমান পারিবারিক ঋণ আরেকটি উদ্বেগের বিষয়।</p> <p>এ ছাড়া কিছু বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন, অনেক ভারতীয় সংস্থা এখন অত্যধিক মূল্যায়ন করছে, আংশিকভাবে বাজারে অনভিজ্ঞ ক্ষণস্থায়ী স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিশাল আগমনের কারণে। গত মাসে একটি বিশ্লেষণে আর্থিক পরিষেবা সংস্থা মর্নিং স্টার একজন পোর্টফোলিও ম্যানেজারকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ভারতীয় স্টকগুলো অন্যান্য উদীয়মান বাজারের তুলনায় বেশি দামে লেনদেন করছে।</p>