<p style="text-align:justify">চার বছর আগে জো বাইডেনের কাছে পরাজয় এবং মামলার চক্রে পড়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন খাদের কিনারে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে, আততায়ীর বুলেট এড়িয়ে, বেশির ভাগ ভোটারের সমর্থন নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জনগণের আস্থা ও প্রত্যাশার হাতিতে চেপে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন হলো ৭৮ বছর বয়সী এই রিপাবলিকান নেতার।</p> <p style="text-align:justify">এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগামী জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে পা রাখতে চলেছেন ট্রাম্প। এর আগে ২০২০ সালে ৭৭ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন। শুধু তা-ই নয়, এই জয়ের মধ্য দিয়ে ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ট্রাম্প।</p> <p style="text-align:justify">আস্থা প্রত্যাশায় ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন৬০ বছর বয়সী কমলাকে হারিয়ে আরো একটি নজির গড়লেন ট্রাম্প। ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ট্রাম্প ২০২০ সালে বাইডেনের কাছে পরাজিত হন।</p> <p style="text-align:justify">এবার আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ট্রাম্পই দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বারের চেষ্টায়ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের দখলে। ১৮৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ১৮৯২ সালে পুনরায় জয় পান তিনি। ১৮৮৫ সালে প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হন ক্লিভল্যান্ড; তিনি দেশটির ২২তম ও ২৪তম প্রেসিডেন্ট।</p> <p style="text-align:justify">যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে (বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার বিকেলের দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় নিশ্চিত হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে ২৭০টি পেতেই হয়। গত রাত ৯টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২৭৯টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প, যার মধ্য দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছেন তিনি। অন্যদিকে কমলা পেয়েছেন মাত্র ২২৩টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। জাতীয় পর্যায়ে ট্রাম্প পেয়েছেন সাত কোটি ১৩ লাখের বেশি ভোট আর কমলা পেয়েছেন ছয় কোটি ৬৩ লাখের বেশি ভোট।</p> <p style="text-align:justify">বাকি ছিল দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য নেভাডা, আরিজোনা ও মিশিগান এবং পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য মেইনের ভোট গণনা। এই রাজ্যগুলোর মধ্যে নেভাডায় ছয়টি, আরিজোনায় ১১টি, মিশিগানে ১৫টি এবং মেইনে চারটি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। অবশ্য এর মধ্যে তিনটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যেই এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। অন্যদিকে মেইনে এগিয়ে ছিলেন কমলা।</p> <p style="text-align:justify">এবারের নির্বাচনের আগে জনমত জরিপগুলোতে ট্রাম্প ও কমলার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলেছিল। জাতীয় পর্যায়ের ভোটে কমলাকে এগিয়ে রেখেছিল জরিপের ফলাফল, এমনকি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে দেওয়া হয়েছিল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস। তবে নির্বাচনের ফলাফলে জরিপের আভাসের প্রতিফলন ঘটেনি। সব সমীকরণ পাল্টে দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বেশি ভোট পাওয়ার পাশাপাশি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতেও আধিপত্য দেখিয়েছেন ট্রাম্প।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া বাকি চারটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যেও জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে উইসকনসিনের ১০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট, পেনসিলভানিয়ার ১৯টি, জর্জিয়ার ১৬টি এবং নর্থ ক্যারোলাইনার ১৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প। এতে কমলাকে হারানোর পথ সুগম হয়েছে ট্রাম্পের।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া আলাস্কার তিনটি, আলাবামার ৯টি, আরকানসাসের ছয়টি, ফ্লোরিডার ৩০টি, আইডাহর চারটি, ইন্ডিয়ানার ১১টি, আইওয়ার ছয়টি, কানসাসের ছয়টি, কেন্টাকির আটটি, লুইজিয়ানার আটটি, মিসিসিপির ছয়টি, মিসৌরির ১০টি, মন্টানার চারটি, নেব্রাস্কার চারটি, নর্থ ডাকোটার তিনটি, ওহাইওর ১৭টি, ওকলাহোমার সাতটি, সাউথ ক্যারোলাইনার ৯টি, সাউথ ডাকোটার তিনটি, টিনেসির ১১টি, টেক্সাসের ৪০টি, ইউটাহর ছয়টি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার চারটি, ওয়াইয়োমিংয়ের তিনটি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প।</p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার ৫৪টি, কলোরাডোর ১০টি, কানেকটিকাটের সাতটি, ডেলাওয়ারের তিনটি, ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার তিনটি, হাওয়াইয়ের চারটি, ইলিনয়ের ১৯টি, মেরিল্যান্ডের ১০টি, ম্যাসাচুসেটসের ১১টি, মিনেসোটার ১০টি, নেব্রাস্কার একটি, নিউ হ্যাম্পশায়ারের চারটি, নিউ জার্সির ১৪টি, নিউ মেক্সিকোর পাঁচটি, নিউইয়র্কের ২৮টি, অরেগনের আটটি, রোড আইল্যান্ডের চারটি, ভারমন্টের তিনটি, ভার্জিনিয়ার ১৩টি, ওয়াশিংটনের ১২টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন কমলা।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া ডেমোক্র্যাটদের দখল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের দখল নিজেদের কাছে নিয়েছেন রিপাবলিকানরা। সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, এখনো অনেক ভোট গণনা বাকি। তবে এটা স্পষ্ট যে ডেমোক্র্যাটরা তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে যাচ্ছেন।</p> <p style="text-align:justify">গত রাত ৯টা পর্যন্ত রিপাবলিকানদের অধীনে ছিল ৫১টি সিনেট আসন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটদের অধীনে ছিল মাত্র ৪০টি। আটটি আসনের ফলাফল ঘোষণা বাকি ছিল এবং একটি ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থীর দখলে, যদিও তিনি ডেমোক্র্যাটদেরই সমর্থক।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি আসনের জন্যও ভোট হয়েছে। এখানেও এগিয়ে আছেন রিপাবলিকানরা। গত রাত ৯টা পর্যন্ত রিপাবলিকানরা ১৯৮টিতে এবং ডেমোক্র্যাটরা ১৮০টিতে জয় পান।</p> <p style="text-align:justify">নির্বাচনে জয়ের পর ফ্লোরিডায় দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘এটি এমন এক রাজনৈতিক বিজয়, যা আমাদের দেশ কখনো দেখেনি। আমেরিকা আমাদের নজিরবিহীন ও শক্তিশালী জনরায় দিয়েছে।’ ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, তাঁরা আমাকে ৪৭তম ও ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করে অসাধারণ সম্মান দিয়েছেন।’</p> <p style="text-align:justify">তবে ট্রাম্পের বিজয়ী ভাষণের কিছুক্ষণ আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী পার্টির জায়গায় ভিন্ন দৃশ্য দেখা গেছে। হাওয়াার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কমলার বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তিনি বক্তৃতা দেবেন না জানানোর পর উপস্থিত সবাই চেয়ার ও পতাকা রেখেই বাড়ি ফিরে যান।</p> <p style="text-align:justify">ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বিশ্বনেতারা তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়াও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান, সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ন্যাটোর প্রধান মার্ক রুতি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রধান উরসুলা ফন ডার লিয়েনসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা অভিনন্দন জানিয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">তবে রাশিয়া বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করবে মস্কো। একই সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যুতে তার নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনকে অগ্রাধিকার দেবে। এদিকে চীন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চায় বেইজিং।</p> <p style="text-align:justify">সূত্র : বিবিসি, এএফপি</p>