কলেরার চিকিৎসার জন্য তিন ঘন্টা হেঁটেও চিকিৎসা না পেয়ে দক্ষিণ সুদানে আটজন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে পাঁচ শিশুও রয়েছে। আজ বুধবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এই খবর জানিয়েছে। মার্কিন সাহায্য কর্তনের ফলে স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে গেছে। কলেরা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসা নিতে তিন ঘন্টা হেঁটে যাওয়ার সময় তাদের মৃত্যু হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ জানুয়ারি ক্ষমতায় নেওয়ার পর খরচ কমানোর জন্য নানা ধরনের সহায়তা বন্ধ করতে শুরু করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ পর মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম। সেভ দ্য চিলড্রেন এই বছরের শুরু পর্যন্ত পূর্ব দক্ষিণ সুদানের জংলেই রাজ্যে ২৭টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করেছিল। কিন্তু মার্কিন সহায়তা কর্তনের ফলে সাতটি সম্পূর্ণভাবে এবং ২০টি আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায় বলে সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, দক্ষিণ সুদানে মার্কিন অর্থায়নে পরিচালিত পরিবহন পরিষেবাও তহবিলের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে আটজন কলেরা রোগীকে নিকটতম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য প্রায় ৪০° সেলসিয়াস (১০৪° ফারেনহাইট) তাপে হেঁটে যেতে হয়েছিল।
মৃত তিন শিশুর বয়স ৫ বছরের কম।
দক্ষিণ সুদানে সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার নিয়ামান্ডি বলেছেন, ‘অন্যান্য দেশের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের নেওয়া সিদ্ধান্তের ফলে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটল, বিশ্বব্যাপী এ নিয়ে নৈতিক ক্ষোভ থাকা উচিত।’
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ইউএসএআইডির ৯০ শতাংশেরও বেশি চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে আগামী বছরগুলোতে অপুষ্টি, এইডস, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য রোগের কারণে লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুর মুখে পড়তে পারে।
দক্ষিণ সুদানের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি লোক সংঘাত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে উত্তর-পূর্বে লড়াই শুরু হওয়ার পর দেশটি একটি নতুন গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে। গত অক্টোবরে কলেরা প্রাদুর্ভাব ঘোষণা করা হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গত মাসে ২২ হাজারের বেশি রোগীর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যার ফলে শত শত মানুষ মারা গেছে।
আরো পড়ুন
থাইল্যান্ডে রাজতন্ত্র অবমাননার জন্য মার্কিন শিক্ষক গ্রেপ্তার
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, সেভ দ্য চিলড্রেনের এই প্রতিবেদন করা মৃত্যুর তথ্য তাদের কাছে নেই।
একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘দক্ষিণ সুদানে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রদানকারী অনেক মার্কিন সরকারের কর্মসূচি সক্রিয় রয়েছে, তবে চিকিৎসা পরিষেবার জন্য দেওয়া সহায়তা দেশটির নেতারা ব্যবহার করছে।’
ওই মুখপাত্র আরো বলেছেন, আমরা আমেরিকান করদাতাদের এমন সহায়তা প্রদানের জন্য বলব না, যা দক্ষিণ সুদানের রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত আচরণকে সমর্থন দেন, যদিও জরুরি জীবন রক্ষাকারী কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। দক্ষিণ সুদানের সরকারের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে কিন্তু রাষ্ট্রপতি সালভা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দেশটিতে মানবিক সহায়তা প্রায়ই বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়, মূলত দুর্নীতির উদ্বেগের কারণে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণ হ্রাস ছাড়াও, অন্যান্য দাতারা ধীরে ধীরে অনুদান কমিয়ে দেওয়ার ফলে দক্ষিণ সুদানে মানবিক সহায়তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার নিয়ামান্ডি বলেছেন, সেভ দ্য চিলড্রেন ২০২৫ সালে দেশে ৩০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার প্রত্যাশা করছে, যা গত বছর ৫০ মিলিয়ন ডলার ছিল।
সূত্র : রয়টার্স