পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের রাস্তাগুলো সোমবার ছিল জনমানবশূন্য। বন্ধ ছিল দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিস। গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ফিলিস্তিনিরা এই সাধারণ ধর্মঘট পালন করে। এএফপি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের রাস্তাগুলো সোমবার ছিল জনমানবশূন্য। বন্ধ ছিল দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিস। গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ফিলিস্তিনিরা এই সাধারণ ধর্মঘট পালন করে। এএফপি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েল দখল করে রাখা পশ্চিম তীরজুড়ে দোকান, স্কুল ও বেশির ভাগ সরকারি প্রশাসনিক কার্যালয় এদিন বন্ধ ছিল। ফিলিস্তিনের বেথলেহেম শহরের দোকানদার ফাদি সাদি এএফপিকে বলেন, ‘আজ পুরো শহর ঘুরে দেখেছি, একটি দোকানও খোলা পাইনি।’
ফাতাহ, হামাসসহ বিভিন্ন ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর একটি জোট এই ধর্মঘটের ডাক দেয়। তারা বলেছে, ‘আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও চলমান হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদেই এই ধর্মঘট।
চলতি বছরের ১৮ মার্চ হামাসের সঙ্গে প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় ফের বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তার পর থেকে প্রতিদিনই সেখানে নিহত হচ্ছে বহু ফিলিস্তিনি। জেরুজালেমের ওল্ড সিটির এক স্যুভেনির দোকানের মালিক ৬৮ বছর বয়সী ইমাদ সালমান বলেন, ‘আজ আমরা গাজার পরিবার, আমাদের সন্তানদের কথা ভেবে দোকান বন্ধ রেখেছি।
ইসরায়েলের দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের সাধারণত ব্যস্ত সালাহেদ্দিন সড়কও এদিন ছিল পুরোপুরি ফাঁকা। পূর্ণ পরিচয় প্রকাশ করতে না চাওয়া আহমেদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘এই ধর্মঘট গাজা ও ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের প্রতিবাদে। হোক তা ট্রাম্প, নেতানিয়াহু, ইসরায়েলি সরকার বা যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে—এই যুদ্ধ থামাতেই হবে। এই যুদ্ধ, এই হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংস থামাতে হবে।
ধর্মঘটের অংশ হিসেবে সোমবার রামাল্লার কেন্দ্রস্থলে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিরও আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তর অবস্থিত। রামাল্লার কমিউনিটি সংগঠক ইসসাম বেকার বলেন, ‘এবারের ধর্মঘট গুরুত্বপূর্ণ এবং জনগণের অংশগ্রহণও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ইসরায়েলি আগ্রাসন এখন প্রতিটি ফিলিস্তিনি পরিবারকে স্পর্শ করেছে, হোক তা পশ্চিম তীরে বা গাজায়।’
একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, ‘পশ্চিম তীরজুড়ে আজকের মতো এই মাত্রার পূর্ণ ধর্মঘট আমরা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর আর দেখিনি।’
গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরেও সহিংসতা বেড়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের হাতে ৯১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন যোদ্ধা। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের হামলা ও সেনা অভিযানের সময় সংঘর্ষে অন্তত ৩৩ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে সেনা সদস্যও রয়েছেন।
সম্পর্কিত খবর
চীনের রাজধানী বেইজিং ও উত্তরাঞ্চলে প্রবল বাতাসের কারণে ৮৩৮ টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া, ট্রেন চলাচলও স্থগিত রয়েছে।
শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে বেইজিংয়ের দুটি প্রধান বিমানবন্দরে এসব ফ্লাইট বাতিল হয়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, বেইজিংয়ে ঘণ্টায় ৯৩ মাইল গতিবেগের বাতাস বইছে, যা গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। এই দমকা হাওয়া রবিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণে পর্যটন স্পট ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে শুক্রবার থেকেই লক্ষাধিক মানুষকে ঘরের ভেতরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ঝড়ের কারণে বেইজিংয়ের বিমানবন্দর এক্সপ্রেস সাবওয়ে লাইনসহ বেশ কিছু উচ্চগতির রেল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া, শহরের পার্কগুলো বন্ধ রয়েছে এবং প্রায় ৩০০টি গাছ উপড়ে পড়েছে।
বেইজিংয়ের ২২ মিলিয়ন বাসিন্দাকে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়াতে বলা হয়েছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেন, বেইজিংয়ের সবাই এ নিয়ে খুব চিন্তিত। আজ রাস্তায় লোকজনের দেখা মিলছে না। তবে যতটা ভেবেছিলাম, অবস্থা ততটা খারাপ নয়।
ঝেজিয়াং প্রদেশের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রবল বাতাসের কারণে গত রাত ও আজকের সব ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, মঙ্গোলিয়ার উপর দিয়ে আসা শীতল ঘূর্ণাবর্তের কারণে এই প্রবল বাতাসের সৃষ্টি হয়েছে। শনিবারই সবচেয়ে বেশি বাতাস বইতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গাজা উপত্যকার বেশির ভাগ এলাকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শিগগিরই ‘জোরালোভাবে’ অভিযান সম্প্রসারণ করবে। এ ছাড়া দক্ষিণ গাজার রাফা ও খান ইউনিস শহরের মাঝখানে একটি ‘নিরাপত্তা এলাকা’ ইতিমধ্যে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ শনিবার এক ঘোষণায় এসব তথ্য জানিয়েছেন।
অন্যদিকে গাজা থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিক্রিয়ায় হামলার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসরায়েল খান ইউনিস ও আশপাশের এলাকায় বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে।
১৮ মার্চ দুই মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতি ভেঙে হামাসের বিরুদ্ধে পুনরায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তার পর থেকে গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করেছে তারা এবং আবারও লক্ষাধিক মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। ইসরায়েলি বাহিনী ইতিমধ্যে গাজার পুরো সীমানা ঘিরে একটি ‘বাফার জোন’ বা সুরক্ষা অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে, যাতে ভবিষ্যৎ আক্রমণ প্রতিহত করা যায় বলে দাবি করা হয়েছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান অভিযানের লক্ষ্য হলো গাজায় হামাসের হাতে থাকা ৫৯ জন জিম্মিকে মুক্ত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা, যাদের মধ্যে ২৪ জন এখনো জীবিত বলে ধারণা করা হয়।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ শনিবার জানান, ‘মোরাগ করিডর’ এখন আইডিএফের নিয়ন্ত্রণে, যা রাফা ও খান ইউনিসের মাঝখানে এক সময়কার একটি ইহুদি বসতির নাম। তিনি বলেন, ‘আইডিএফ এখন রাফা ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী মোরাগ করিডর দখল করেছে এবং পুরো ফিলাডেলফি করিডর থেকে মোরাগ পর্যন্ত অঞ্চল এখন ইসরায়েলি নিরাপত্তা এলাকার অংশ।’
এই করিডরের দখল কার্যত গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাকে খান ইউনিস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
কাটজ আরো হুঁশিয়ারি দেন, ‘আইডিএফের অভিযান শিগগিরই গাজার অধিকাংশ এলাকায় জোরালোভাবে সম্প্রসারিত হবে’ এবং এসব এলাকার বাসিন্দাদের ‘যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে যেতে হবে’।
তিনি বলেন, ‘এটাই শেষ সময় হামাসকে নির্মূল করা, জিম্মিদের মুক্ত করা ও যুদ্ধের অবসান ঘটানোর।’
ইসরায়েলি মন্ত্রী আরো জানান, গাজার উত্তরের কিছু এলাকাও, যেমন বেইত হানুন ও কেন্দ্রীয় গাজা ভেদ করে যাওয়া নেতজারিম করিডর খালি করা হচ্ছে, যাতে সেখানে নিরাপত্তা এলাকা সম্প্রসারণ করা যায়। তিনি বলেন, ‘উত্তর গাজাতেও বেইত হানুন ও অন্যান্য এলাকায় বাসিন্দারা সরছে, এলাকা দখল করা হচ্ছে এবং নিরাপত্তা অঞ্চল সম্প্রসারিত হচ্ছে, এর মধ্যে রয়েছে নেতজারিম করিডরও।
বিবিসি এ বিষয়ে আইডিএফের কাছে জানতে চাইলে তারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে যেতে বলে।
এএফপি হামাসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলি অভিযানে ‘নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে’ এবং জিম্মিদের ভাগ্য ‘অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে’।
গত মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর অভিযোগ করেছিল, ইসরায়েল যেসব এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছে তা আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বৈধ নয় এবং এতে ক্ষতিগ্রস্তদের আবাসন, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা বা খাদ্য সরবরাহের কোনো নিশ্চয়তা নেই। অন্যদিকে ইসরায়েল সরকার বলেছে, তারা সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য তাদের সরিয়ে নিচ্ছে, যাতে তারা হামাসের ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহৃত না হয়, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
এদিকে কাটজের ঘোষণার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা গাজার থেকে ছোড়া গোলার জবাবে খান ইউনিস ও আশপাশের এলাকায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আইডিএফ আরো জানায়, গাজা থেকে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া তিনটি গোলা তাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভূপাতিত করেছে। হামলার দায় পরে হামাসের সামরিক শাখা স্বীকার করে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
হামাস চালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ জন নিহত ও ৬৪ জন আহত হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার জবাবে ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করতে সামরিক অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হয়। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তখন থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫০ হাজার ৯৩৩ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া নতুন অভিযানে প্রাণ গেছে এক হাজার ৫৬৩ জনের।
ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশিরা। শনিবার (১২ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ অংশ নিয়েছিল। এ সময় ফিলিস্তিনি পতাকা বহন করে এবং ‘ফ্রি, ফ্রি ফিলিস্তিন’ স্লোগান দেয় তারা।
বাংলাদেশিদের এই বিক্ষোভের সংবাদটি বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে পুনরায় প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি প্রভাবশালী গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল। সেখানে নেতানিয়াহুর ছবিতে পেটানোর বিষয়টি মূল শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও এপির শিরোনামে এ বিষয়টি নেই। তারা শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশের রাজধানীতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রায় ১ লাখ মানুষের র্যালি।
এই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানাতে বাংলাদেশের রাজধানীতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী র্যালি করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সোহরাওয়ার্দী পার্কে প্রায় ১ লাখ বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছিল। তাদের সঙ্গে ছিল কয়েক শ ফিলিস্তিনি পতাকা।
এপির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও ইসলামিক দল এই র্যালিতে সংহতি জানায়।
টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের একটি মুসলিমপ্রধান দেশ। ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এবং তারা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন করে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সমহারে শুল্কারোপের আওতা থেকে স্মার্টফোন ও কম্পিউটারকে বাদ দিয়েছে, যার মধ্যে চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত ১২৫ শতাংশ শুল্কও অন্তর্ভুক্ত। এতে জনপ্রিয় প্রযুক্তিপণ্যের দাম নিয়ে মার্কিন ভোক্তাদের ওপর সম্ভাব্য চাপ কিছুটা কমবে।
শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস ও বর্ডার প্রটেকশন এক নোটিশ প্রকাশ করে জানায়, এসব পণ্যকে ট্রাম্পের অধিকাংশ দেশের ওপর আরোপিত ১০ শতাংশ বৈশ্বিক শুল্ক ও চীনের পণ্যের ওপর আরোপিত আরো উচ্চ হারে শুল্ক থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে যেসব ইলেকট্রনিক পণ্য চীন থেকে আমদানি হয় এবং বর্তমানে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্কের আওতায় রয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকগুলোই এবার ছাড় পাচ্ছে।
এ ছাড়া শুল্ক মওকুফ পাওয়া অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের মধ্যে রয়েছে সেমিকন্ডাক্টর, সোলার সেল ও মেমোরি কার্ড। এসব পণ্য বাদ পড়েছে বেশির ভাগ বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর আরোপিত ১০ শতাংশ ‘মূল শুল্ক’ ও চীনের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত ১২৫ শতাংশ শুল্ক থেকে।
এই ছাড়ের ফলে ট্রাম্পের চলতি মাসে ঘোষিত ১০ শতাংশ বিস্তৃত শুল্ক ও চীনা পণ্যের ওপর নতুনভাবে আরোপিত শাস্তিমূলক শুল্কের পরিধি কিছুটা সংকুচিত হলো। এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় এলো, যখন মার্কিন প্রযুক্তি কম্পানিগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করছিল, শুল্কারোপের কারণে অনেক ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম হঠাৎই কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে।
সমহারে শুল্কারোপের মাধ্যমে ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন, যেটিকে ওয়াশিংটন ‘অন্যায্য বাণিজ্যচর্চা’ বলে মনে করে। সম্প্রতি চীনা পণ্যের ওপর নতুন ১২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে, যার লক্ষ্য বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। এই নতুন হারে যুক্ত হয়েছে আগের ২০ শতাংশ শুল্ক, যা চীনের ফেন্টানিল সরবরাহে ভূমিকার অভিযোগে আরোপ করা হয়েছিল।
কিছু অনুমান বলছে, শুল্কের বাড়তি খরচ ক্রেতাদের ওপর চাপিয়ে দিলে মার্কিন বাজারে আইফোনসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম তিন গুণ বেড়ে যেত। যুক্তরাষ্ট্র অ্যাপলের একটি বড় বাজার। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের অর্ধেকের বেশি ছিল অ্যাপলের তৈরি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য নির্ধারিত অ্যাপলের আইফোনের প্রায় ৮০ শতাংশ চীনে ও বাকি ২০ শতাংশ ভারতে উৎপাদিত হয়।
চীনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের মতো অন্য স্মার্টফোন নির্মাতারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের সরবরাহব্যবস্থা বৈচিত্র্যময় করার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে বিকল্প উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে ভারত ও ভিয়েতনাম এগিয়ে এসেছে। শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর অ্যাপল ভারতে তাদের ডিভাইসের উৎপাদন বাড়াতে আরো তৎপর হয় বলে জানা গেছে।
এই সপ্তাহে ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে বুধবার হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন করে তিনি ঘোষণা দেন, চীন বাদে মার্কিন শুল্কের পাল্টা জবাব না দেওয়া অন্যান্য দেশের জন্য ৯০ দিনের বিরতি কার্যকর হবে। এ সময়ের মধ্যে তারা মাত্র ১০ শতাংশ শুল্কের আওতায় থাকবে। এ সিদ্ধান্ত জুলাই পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ মূলত অন্যান্য দেশের কাছ থেকে আরো ভালো বাণিজ্য চুক্তি আদায়ের একটি কৌশল। এ ছাড়া বাদ দেওয়া অনেক পণ্যের উৎপাদন সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে হয় না, যেমন হার্ড ড্রাইভ ও কম্পিউটার প্রসেসর। যদিও ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, শুল্ক আরোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ফিরিয়ে আনা যাবে, কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে এখনো বহু বছর সময় লাগবে।