দেশের অর্থনীতিতে এখন নানামুখী সংকট চলছে। সংকট উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও অনেক সংকট থেকেই গেছে। আগে থেকেই অর্থনীতির স্থবিরতা, এরপর ক্ষমতার পালাবদলের রেশ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ব্যবসা-উদ্যোগে আস্থাহীনতা, ডলার সংকট, উচ্চ সুদহার, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা, রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতি—সব মিলিয়ে অর্থনীতি ঠিকমতো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এসবের প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত নির্মাণশিল্পেও।
বিশেষ করে আবাসন ও অবকাঠামো খাতসহ সরকারের সব ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।
সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম বাস্তবায়িত হয়েছে। তা ১৭ শতাংশের কাছাকাছি। এর অর্থ হলো দেশের সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বলতে গেলে স্থবির।
এ খাতে সরকারের অর্থায়ন ছাড় হয়েছে কম। ফলে দেশব্যাপী যে কর্মযজ্ঞ হওয়ার কথা ছিল, সেটি হয়নি। বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজের সুযোগ হারিয়েছে। আবার এসব কাজের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারিসহ অন্যান্য ব্যবসা বা উদ্যোগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একইভাবে বেসরকারি খাতেও নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রায় স্থবির হয়ে গেছে। বেসরকারি পর্যায়ে আবাসন খাতের উদ্যোক্তাদের মতে, তাঁদের ব্যবসা ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। নতুন বিনিয়োগ নেই। কোনো কোনো উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান চালানোর খরচও মেটাতে পারছেন না বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে। মোটকথা, নির্মাণশিল্পের সঙ্গে জড়িতদের অবস্থা এখন খুবই নাজুক। এমন প্রেক্ষাপটে আসছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। নির্মাণশিল্পের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হাউজিং, সিমেন্ট, স্টিল, বালু, সিরামিক, হার্ডওয়্যারসহ এ রকম শতাধিক ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এ খাতে শুল্ক-কর কমানোর দাবি জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) ও বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) নির্মাণ খাতকে এগিয়ে নিতে এ খাতের শুল্ক-কর কমানোর আহ্বান জানায়। তারা চায় আসছে বাজেটে সিমেন্টের মূল উপকরণ ক্লিংকারের শুল্ক প্রতি মেট্রিক টনে ৫০০ থেকে কমিয়ে ২০০ টাকা করা হোক। একইভাবে নির্মাণশিল্পের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপকরণ স্টিলের নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার ও শুল্কহার কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণেরও প্রস্তাব উদ্যোক্তাদের।
আমরা মনে করি, নির্মাণ খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে এ খাতের সঙ্গে জড়িত শতাধিক উপখাতকে টিকিয়ে রাখা, ব্যবসা চাঙ্গা করা এবং নতুন বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান করতে হলে উদ্যোক্তাদের দাবিগুলো সদয় বিবেচনায় নিতে হবে। আসছে বাজেটে ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণ করা হলে অর্থনীতিতে যে স্থবিরতা বিরাজ করছে, তা অনেকটাই কেটে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।