ঢাকা, শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫
৮ চৈত্র ১৪৩১, ২১ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫
৮ চৈত্র ১৪৩১, ২১ রমজান ১৪৪৬
বাজার পরিস্থিতি

খুচরায় এখনো চড়া খেজুর

  • পাইকারিতে গত বছরের তুলনায় খেজুরের দাম কমেছে ৩০-৩৫%
  • পাইকারি ও খুচরায় প্রতি কেজিতে পার্থক্য ১০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত
সজীব আহমেদ
সজীব আহমেদ
শেয়ার
খুচরায় এখনো চড়া খেজুর

পবিত্র রমজানে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরের দাম পাইকারিতে গত বছরের তুলনায় অনেকটা কম হলেও খুচরা বাজারে তেমন প্রভাব নেই। এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। 

শুল্কছাড়ের কারণে এবার ব্যাপক আমদানি হয়েছে। অগ্রিম কর অব্যাহতি, কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ এবং অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু কমিয়ে শুল্কায়ন করায় এবার খেজুরের দাম ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে বলে আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান।

এর পরও খুচরা বাজারে খেজুরের দাম চড়া। পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে মান ও প্রকারভেদে প্রতি কেজি খেজুরে ১০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত পার্থক্য দেখা গেছে।

সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল, আমদানি ব্যয় কম হওয়ায় বাজারে খেজুরের দাম কম থাকবে। কিন্তু আমদানি বৃদ্ধি এবং সরকারের শুল্ক কমানোর সুবিধা পাচ্ছে না ভোক্তারা।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে আজওয়া, মারিয়াম, আমবর, মসদুল, সাফাবি, সুপরি, মাসরুখ, মাবরুম, জিহাদি, দাব্বাস, নাগাল, লুলু, সাইয়িদি, ফরিদি, রশিদি, কুদরি, মেডজুল, সুকারিসহ নানা জাতের ও নামের খেজুর রয়েছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কয়েক বছরের তুলনায় এবার খেজুরের দাম সহনীয় থাকার কারণ শুল্কছাড়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম কম থাকা। এ ছাড়া এ বছর আমদানিকারকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় খেজুরের বাজার অস্থিতিশীল করার কোনো সুযোগ ছিল না। খুচরা বিক্রেতাদের লাভের আকাঙ্ক্ষা বেশি থাকায় তাঁরা কেনা দামের চেয়ে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ লাভ ছাড়া খেজুর বিক্রি করছেন না।

এতে ভোক্তারা সরকারের শুল্কছাড়ের সুফল পাচ্ছে না।

গত বুধবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় প্রতি কেজি আজওয়া খেজুর মানভেদে এক হাজার থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা, দাব্বাস খেজুর ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, বরই খেজুর ৪৬০ থেকে ৫০০ টাকা, জিহাদি খেজুর ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, সুকারি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, মারিয়াম ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, ছড়া খেজুর মানভেদে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, মেডজুল মানভেদে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

রাজধানীর বাদামতলীর খেজুরের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, পাইকারি পর্যায়ে পাঁচ কেজির আজওয়া খেজুরের কার্টন তিন-চার হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সেই হিসাবে প্রতি কেজি পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়।

মানভেদে মারিয়াম খেজুরের পাঁচ কেজির কার্টন বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। দাব্বাস খেজুরের পাঁচ কেজির কার্টন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে এক হাজার ৮৫০ টাকায়। বরই খেজুরের পাঁচ কেজির কার্টন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭৫০ টাকায়। জিহাদি খেজুরের পাঁচ কেজির কার্টন ৫৭৫ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মেডজুল খেজুর পাঁচ কেজির কার্টন দুই থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে উচ্চমানের মেডজুল খেজুর পাঁচ কেজির কার্টন সাত হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।  

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, এবার সরকার খেজুরে ভ্যাট ও শুল্ক সুবিধা দেওয়ায় ব্যাপক আমদানি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশের বেশি আমদানি হয়েছে। খেজুরের দামও কমেছে ৩৫ শতাংশের মতো। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা দাম কমিয়ে বিক্রি করছে না বলে আমাদের কাছেও অভিযোগ আছে। তাই আমাদের পরিকল্পনা আছে আগামী দিনে বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক সেলের মতো খুচরায় বিক্রির ব্যবস্থা করব। এতে খুচরা বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে। কেউ চাইলে বাড়তি দরে বিক্রি করতে পারবে না। রোজার আগে আগে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে একটা মেলার আয়োজন করারও পরিকল্পনা রয়েছে। এখান থেকে ক্রেতারা ন্যায্য দামে খেজুর কিনতে পারবে।

বাদামতলীর মেসার্স মোল্লা ফ্রেশ ফ্রুটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আল আমিন মোল্লা কালের কণ্ঠকে বলেন, এবার চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি খেজুর আমদানি হয়েছে। এতে আমাদের লাভ তো দূরের কথা, লোকসান দিয়েও কিছু খেজুর বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা বন্দরে পাইকারিতে কেজিতে দু-তিন টাকা লাভে মাল ছেড়ে দিচ্ছি। অথচ খুচরা বাজারে এক কেজি খেজুর বিক্রি করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করছে। এই বিষয়টি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দেখা উচিত। অভিযান চালালে খুচরা বিক্রেতারা দাম কমাবে।

রাজধানীর বাড্ডার খুচরা খেজুর বিক্রেতা মো. আব্দুল খালেক কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছর রোজা উপলক্ষে খেজুরের দাম বেড়ে যায়। এবার সেটি হয়নি। বরং রোজার আগের সময়ের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে। রোজার শেষ দিকে আরো কমবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছর খেজুর আমদানিতে যুক্ত ছিলেন ৫৮ জন। এবার তা অন্তত ১৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এনবিআরের তথ্য অনুসারে, দেশে আমদানি করা খেজুরের ৮০ শতাংশ আনা হয় রোজার তিন মাস আগে। সে অনুযায়ী এবার ডিসেম্বরের শুরু থেকে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫৮ শতাংশ, অর্থাৎ আড়াই গুণ বেশি খেজুর আমদানি করা হয়েছে। এবার তিন মাসে দেশে খেজুর এসেছে ৪৬ হাজার ১২৩ মেট্রিক টন। এর আর্থিক মূল্য ৮৩৩ কোটি টাকা। গত মৌসুমে এর পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৮২৬ মেট্রিক টন, যার আর্থিক মূল্য ছিল ৪০১ কোটি টাকা। পাশাপাশি এ দফায় খেজুর আমদানিতে সরকারের রাজস্ব এসেছে ৩২১ কোটি টাকা। গত মৌসুমের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২১২ কোটি টাকা। এ হিসাবে এবার খেজুর আমদানি থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১০৯ কোটি টাকার বেশি।

আমদানির তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি খেজুর আসে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। এ ছাড়া তিউনিশিয়া, মিসর, জর্দান, ইরাক, ইরান ও পাকিস্তান থেকেও খেজুর আমদানি করা হয়।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

যানজটের সৃষ্টি

শেয়ার
যানজটের সৃষ্টি
ঈদ উপলক্ষে নিউমার্কেটের ফুটপাতগুলোতেও জমে উঠেছে বেচাকেনা। মানুষের উপস্থিতি বাড়ার কারণে ওই পথে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল তোলা। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য

ঢাকায় ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনি দুজন নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক ও কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
শেয়ার
ঢাকায় ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনি দুজন নিহত

ঢাকার চকবাজার ও কেরানীগঞ্জে গতকাল শুক্রবার ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে আরো দুজন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চকবাজার চম্পাতলী সোয়ারীঘাট এলাকায় এক ছিনতাইকারী নিহত হয়।

চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, কেরানীগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায় ছিনতাই করার সময় স্থানীয় লোকজন ধাওয়া দেয়। এ সময় ছিনতাইকারী দলের এক সদস্য পালিয়ে যায়। অন্য তিনজন নদীতে ঝাঁপ দেয়। তারা সাঁতার কেটে চকবাজার চম্পাতলী ঘাটে এলে স্থানীয় জনতা তাদের পিটুনি দেয়।

পরে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে তাদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সকাল সাড়ে ৭টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করে। অন্যদিকে নদীর ওপারে গণপিটুনির শিকার হয়ে আরো একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. আবুল খায়ের বলেন, সিআইডির সহযোগিতায় জানা গেছে, নদীর এপারে মারা যাওয়া একজনের নাম আসিফ।

সে কামরাঙ্গীর চর এলাকার বাসিন্দা। অন্য একজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

কেরানীগঞ্জে পিটুনিতে একজন নিহত : গণপিটুনি দিয়ে বুড়িগঙ্গা পানিতে ফেলে দেওয়ার পর হাসান মাঝি নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে বরিশুর নৌ পুলিশ। নিহত হাসান বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সুলতানি গ্রামের মানিক মাঝির ছেলে।

কামরাঙ্গীর চর মুসলিমনগর কুরবান হাজির বাড়িতে বসবাস করত এবং পার্শ্ববর্তী একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করত সে।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন জিনজিরা নামাবাড়ি এলাকায় নাদু ব্যাপারীর ঘাট থেকে লাশটি উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বরিশুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোক্তার হোসেন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা লাশ উদ্ধার করি। সুরতহালের সময় লাশের গায়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গণপিটুনির একটা ঘটনার কথা শুনেছি তবে কেউ সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়নি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

 

 

মন্তব্য

হিমাগার মালিকদের স্লিপ কারসাজি প্রতারিত লাখো আলু চাষি

সাইদ শাহীন ও তামজিদ হাসান তুরাগ
সাইদ শাহীন ও তামজিদ হাসান তুরাগ
শেয়ার
হিমাগার মালিকদের স্লিপ কারসাজি প্রতারিত লাখো আলু চাষি

সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় কৃষকের আলু রাখছেন না হিমাগার মালিকরা। কারসাজির মাধ্যমে নামে-বেনামে, আত্মীয়-স্বজন ও পরিজনদের নামে আগে থেকেই স্লিপ কেটে রেখেছেন মালিকরা। ফলে কৃষক আলু রাখতে গেলে তাঁদের বলা হচ্ছে হিমাগারে জায়গা নেই। হিমাগারে জায়গা না থাকায় গুটিকয়েক ব্যবসায়ী ছাড়া কোনো ক্রেতা আলু কিনতেও পারছেন না।

এভাবেই সারা দেশে হিমাগার মালিকদের স্লিপ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন লাখো আলু চাষি। অবশ্য দিশাহারা কৃষকদের পাশে কৌশলে দাঁড়াচ্ছেন হিমাগারের কর্মকর্তারা। তাঁরা গোপনে বলে দিচ্ছেন, অমুকের স্লিপ নেওয়া আছে, সেখানে আলু বিক্রি করতে পারবেন। আসলে অমুক ব্যক্তিটাই হলো হিমাগার মালিকের এজেন্ট।

বাধ্য হয়ে কৃষক তার কাছে কম দামে আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। বাজারে কৃষকের আলু কেনার কোনো ক্রেতা না মেলার কারণ এটাই।

কুড়িগ্রাম জেলা শহরের আলু চাষি মকবুল আলমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এ মৌসুমে আলু তোলা হয়েছে এক হাজার ২০০ বস্তা। কিন্তু তিনি আলু রাখতে পেরেছেন মাত্র ৬০০ বস্তা।

বাকি আলু তিনি বিক্রি করছেন কম দামে। তাঁর ভাষায়, আলু থুবার পাই নাই। যা দাম পাইছি, তা আর কবার নয়। কোল্ড স্টোরেজের মালিক প্রতিনিধিরা কয় আর বস্তা থোয়ার জাগা নাই। বাকি আলু কম দামে বেছে দিছি।

নাম প্রকাশ না করে এক চাষি কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিটি কোল্ড স্টোরেজের মালিক নামে-বেনামে স্লিপ দিয়ে জায়গা দখল করে রাখেন। পরে হয় তাঁরা নিজেরাই আলু রাখেন, না হয় বস্তাপ্রতি বেশি দাম রাখেন। কারণ আলু রাখতে পারলেই লাভ। আবার এটা অঘোষিত নিয়ম হয়ে গেছে, হিমাগারে আলুর ধারণক্ষমতা যতটুকু তার ১০ শতাংশ বস্তা মালিকরা নিজের নামে রাখে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে আলুর ফলন ভালো হলেও হতাশ চাষিরা। একদিকে তাঁরা আলুর ভালো দাম পাচ্ছেন না, অন্যদিকে হিমাগারে সিন্ডিকেট করে নেওয়ার কারণে জায়গার সংকট। সব মিলিয়ে প্রান্তিক কৃষকের গলার কাঁটা মাঠের আলু। এবারে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণে বাজারে আলুর দাম কমে গেছে। এ ছাড়া হিমাগারে কৃষকরা আলু রাখতে না পারার কারণে একই সঙ্গে বাজারে আলুর সরবরাহ বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতি কেজি আলু ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। অথচ তাঁদের উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৯-২০ টাকা।  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন লক্ষামাত্রা এক কোটি ১৩ লাখ ৮৭ হাজার টন, যা গত অর্থবছরে ছিল এক কোটি ৯ লাখ ৬৫ হাজার টন।

আলুর কম দামের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবেন হিমাগার মালিকরা। মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এক কেজি আলু যেখানে রাখতে হিমাগারে খরচ হয় ৪.৫ থেকে ৬ টাকা, সেই আলু রাখার জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ৬.৭৫ টাকা। এর পরও হিমাগারে জায়গা পাচ্ছেন না কৃষক। কারসাজির মাধ্যমে হিমাগার ভরে গেছে দেখিয়ে কম দামে আলু কিনছেন মূলত হিমাগার মালিকরা। এসব আলু ক্রয়মূল্যসহ তিন মাস পরেই অফ সিজনে ন্যূনতম ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পারবেন তাঁরা। অথচ হিমাগার মালিকদের সব ধরনের খরচ মিলিয়ে মোট খরচ হবে ২২ থেকে ২৫ টাকা। আর যদি অফ সিজনে আলুর দাম আরো বেশি ওঠে তাহলে হিমাগার মালিকরা লালে লাল হবেন।

সরেজিমনে রংপুর বিভাগের একাধিক আলু হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, হিমাগারগুলোর সামনে সারি সারি আলুভর্তি বস্তা। তবে হতাশা কৃষকের মুখে। তার অন্যতম প্রধান কারণ কৃষকরা তাঁদের প্রয়োজন মতো আলু হিমাগারে রাখতে পারছেন না। ফলে তাঁদের বাধ্য হয়ে কম দামে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ী মারুফ আহমেদ বলেন, হিমাগারগুলোর মধ্যে এখনো কিছু জায়গা খালি আছে। কিন্তু তারা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম কমানোর জন্য কূটকৌশল করছেন এবং এই সুবাদে তাঁরা কিছু মাল কিনে কোল্ড স্টোরেজে কম্পানির নামে মাল রাখার ধান্দা করছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা এখনো ৬.৭৫ পয়সা ভাড়া মানি না। সামনে বড়সড় আন্দোলনে যাব।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের বাবর কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের ম্যানেজার শামীম আল মাসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের কোল্ড স্টোরেজের ধারণক্ষমতা ১১ হাজার মেট্রিক টন, যা পুরোপুরি বুকিং হয়েছে। আমরা সবাইকে স্লিপ দিয়েছি। কে কৃষক কে ব্যবসায়ী আমরা তা দেখিনি।

মোস্তফা হিমাগারের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কুড়িগ্রামের চারটি হিমাগারের মোট আলু সংরক্ষণক্ষমতা ৪৮ হাজার টন। কিন্তু এ বছর উৎপাদন বেশি হওয়ায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেককে আলু ফেরত নিয়ে যেতে হচ্ছে।

 

 

মন্তব্য

পল্লবীতে শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা

    রায়পুরায় সংঘর্ষ গুলি, নিহত ২
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
পল্লবীতে শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা

রাজধানীর মিরপুরে পল্লবী এলাকায় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সেলিম (৩৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরিবারের দাবি, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। নিহত সেলিম পোশাকের কারচুপির কারখানায় কাজ করতেন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেলিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা মেডিক্যালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. ফারুক বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।

নিহতের আত্মীয় আশিকুর রহমান জানান, গতকাল ইফতারের পর সেলিম বাড়ির পাশে ওয়াপদা বিল্ডিংয়ের পাশের মাঠে যান। সেখানে শত্রুতার জেরে সেলিমকে কুপিয়ে ফেলে রাখা হয়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের খালা ইয়াসমিনের ভাষ্য, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী পারভিন, রনি, জনি, সীমা, রানীসহ আরো বেশ কয়েকজন শত্রুতার জেরে সেলিমকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

নিহত সেলিম এক সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুর-১১ পল্লবীর বিহারি ক্যাম্প ওয়াপদা কলোনি বিল্ডিংয়ে থাকতেন। ঘটনার পর ঘটনাস্থলে যান পুলিশ কর্মকর্তারা।

পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে গেছেন।

কারা তাঁকে হত্যা করেছে, এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

রায়পুরায় আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে গুলি, নিহত ২ : রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই প্রবাসফেরত ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এক নারীসহ চারজন আহত হয়েছে। গতকাল ভোরে উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন মোহিনীপুর এলাকার খোরশেদ মিয়ার ছেলে আমিন মিয়া ও আব্দুল বারিকের ছেলে বাশার মিয়া।

এর মধ্যে আমিন ছুটি কাটাতে তিন মাস আগে সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন বলে জানায় স্বজনরা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মোহিনীপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম ও চানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সামসু মিয়ার অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। ছয় মাস আগে সংঘর্ষের পর সালামের অনুসারীরা এলাকা ছেড়ে পাশের একটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে তারা বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিলে সামসু মেম্বারের অনুসারীরা দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সালামের অনুসারী আমিন ও বাশার মারা যান।

নিহত আমিনের বাবা খোরশেদ মিয়ার অভিযোগ, সামসু মেম্বারের হামলা ও নির্যাতনের ভয়ে আমরা গ্রাম ছেড়েছিলাম। ঈদের আগে বাড়ি ফিরতে গেলে তারা হামলা চালায়। আমার ছেলের বাঁ পায়ে গুলি করে এবং শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়। এ সময় আমার স্ত্রী আহত হয়।

বাশারের স্বজনরা জানায়, ঘটনার আগে রাতে সামসু মেম্বারের অনুসারীদের মধ্যে দুজন হামলা করতে এসে অস্ত্রসহ আটক হয়। পরে তাদের ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরই ভোরে সালামের অনুসারীদের ওপর হামলা হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাশার মারা যান।

রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রাবেয়া সুলতানা জানান, মৃত অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়। আমিনের বাঁ পায়ে এবং বাশারের বুক, পাসহ শরীরে গুলির আঘাত ছিল।

এ বিষয়ে চানপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সামসু মিয়া বলেন, সংঘর্ষের সময় আমার পক্ষের তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। প্রতিপক্ষের দুজন নিহত হয়েছে বলে শুনেছি।

রায়পুরা থানার ওসি আদিল মাহমুদ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখনো নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ