খুলনায় অর্ণব কুমার সরকার (২৮) নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার রাতে নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানাধীন তেঁতুলতলা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল অন্য এক ঘটনায় চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়ায় দিনদুপুরে সন্ত্রাসীরা জাহাঙ্গীর আলম (৫০) নামের এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় মো. আব্বাস নামের আরো একজন গুরুতর আহত হন।
খুলনায় নিহত অর্ণব কুমার সরকার নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানাধীন আবু আহম্মেদ রোডের নিতিশ চন্দ্র সরকারের ছেলে এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তরের তথ্য মতে, অর্ণব খানজাহান আলী হলের ছাত্র এবং তাঁর রোল নম্বর-২৩০৩১৭। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিন প্রধান অধ্যাপক শেখ মাহমুদুল হাসান ও প্রভোস্ট অধ্যাপক শরিফ মোহাম্মদ খান এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, অর্ণব রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানাধীন তেঁতুলতলা মোড়ে মোটরসাইকেলযোগে পৌঁছামাত্র চার-পাঁচটি মোটরসাইকেলে অস্ত্রধারীরা এসে তাঁর মোটরসাইকেলের পথরোধ করে।
পরে অর্ণবের মাথায় গুলি করে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়।
খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ আহসান হাবীব বলেন, হত্যার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে।
হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনার প্রতিনিধি মো. মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বলেন, যারা শহরকে উত্তপ্ত করার পাঁয়তারা করছে, তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। অর্ণব হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন জরুরি বলেও তিনি মনে করেন।
নিহত শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সম্পদ জানান, আন্দোলনে ছিলেন কি না, সেটি তাঁর জানা নেই। তবে সামনের কাতারে তাঁকে কখনো দেখা যায়নি।
রাউজানে ব্যবসায়ী হত্যা
রাউজানে নিহত জাহাঙ্গীর ওই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিরামিষপাড়ার আবু ছৈয়দ মেম্বারের বড় ছেলে। তিনি শহরের খাতুনগঞ্জের আছাদগঞ্জের পাইকারি শুঁটকি ব্যবসায়ী এবং নোয়াপাড়া মাকসুদ কমিউনিটি সেন্টারের মালিক।
নিহত ব্যক্তির আত্মীয় মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম এক সপ্তাহ আগে মালয়েশিয়া সফর শেষে গত বৃহস্পতিবার দেশে ফেরেন। গতকাল নিজ গ্রামের বাড়িতে যান নিকটজনদের সঙ্গে দেখা করতে। দুপুর ১টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে মসজিদের উদ্দেশে বের হন তিনি। মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন তাঁর কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজার মো. আব্বাস (৩৯)। পেছনে বসা ছিলেন জাহাঙ্গীর।’
বাড়ি থেকে কিছুদূর যেতেই একদল সন্ত্রাসী পেছন থেকে গুলি ছোড়ে। জাহাঙ্গীরের মাথায় এবং মোটরসাইকেলের চালক ম্যানেজার আব্বাসের হাতে গুলি লাগে। ঘটনার পর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে স্থানীয় লোকজন আহত দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক জাহাঙ্গীরকে মৃত ঘোষণা করেন। আব্বাস গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
নিহতের ছোট ভাই মোরশেদ আলম জানান, তাঁর ভাই রাজনীতি করতেন না। কেন তাঁকে হত্যা করা হলো, তা বোঝা যাচ্ছে না।
এদিকে ঘটনার পর বিকেলে স্থানীয় বিএনপির এক গ্রুপের সমর্থক কামাল উদ্দীন নিজের ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা আমাকে মারতে এসে ভুল ইনফরমেশনে নিরীহ জাহাঙ্গীর আলমকে মেরে ফেলেছে।’ তবে আরেক সূত্র বলছে, সন্ত্রাসীদের চাঁদা না দেওয়ার কারণেও এ ঘটনা ঘটতে পারে।
রাউজান থানার ওসি এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী গুলিতে নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার কারণ তদন্ত করে জানা যাবে।
রাবি থেকে শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
রাবি প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস থেকে শিমুল শিহাব নামের রাজশাহী কলেজের এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা ওই শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ক্যাম্পাস থেকে রাত ১১টার দিকে একটি ছেলেকে হাসপাতালে আনা হয়। প্রথমে সড়ক দুর্ঘটনার কথা বলে লুকানো হচ্ছিল। পরে জেরার মুখে মারামারি করে মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত শিমুল শিহাব রাজশাহী কলেজের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি রাজশাহী নগরের মেহেরচণ্ডী এলাকার জামাল হোসেনের ছেলে।