শরিয়াহ বিষয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমাধান কি গ্রহণযোগ্য

  • শরিয়াহ বিষয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমাধান গ্রহণযোগ্য নয়, তবে যারা একই সঙ্গে অভিজ্ঞ আলেম ও এআইবিশারদ, তাদের গবেষণা গতিশীল করতে এটি চমত্কার ভূমিকা রাখতে পারে
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
শেয়ার
শরিয়াহ বিষয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমাধান কি গ্রহণযোগ্য
ছবি : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আলোচিত একটি বিষয় হলো, (Artificial Intelligence) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। স্বয়ংক্রিয়তা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও নতুন নতুন উদ্ভাবনে জোরালো ভূমিকা রেখে সব খাতেই শক্ত অবস্থান তৈরি করছে এই প্রযুক্তি। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ব্যবসা ও অর্থনীতি, কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন, শিল্প ও উৎপাদন, আইন ও নিরাপত্তা, যোগাযোগ মাধ্যম ইত্যাদি খাতেই এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। মানুষ অল্প খরচ ও সময়ে অধিক ফলাফল পেতে দিন দিন এই প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

প্রশ্ন হলো, ধর্ম শেখার ক্ষেত্রেও কি এই প্রযুক্তির ওপর আস্থা রাখা যাবে?

এর উত্তর হলো, ইসলামী জ্ঞান শুধু তথ্যগত বিষয় নয়, বরং এর সঙ্গে আধ্যাত্মিকতা, তাকওয়া (আল্লাহভীতি), হিকমাহ (প্রজ্ঞা) ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতার সমন্বয় রয়েছে। যেহেতু এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কোনো আত্মা বা আধ্যাত্মিক উপলব্ধি নেই, তাই ইসলামী বিধান বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র এটিকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তদাতা বা নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে গ্রহণ করা বিপজ্জনক হতে পারে। স্রেফ আক্ষরিক জ্ঞান হিদায়াত পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। এ জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) এমন আক্ষরিক জ্ঞান থেকে আশ্রয় চেয়েছেন, যা উপকারে আসে না।

তিনি দোয়া করতেন—‘হে আল্লাহ! আমি সেই জ্ঞান থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই, যা কোনো উপকারে আসে না; এমন দোয়া থেকে, যা শোনা হয় না; সেই অন্তর থেকে, যা ভীত হয় না এবং সেই দেহ থেকে, যা তৃপ্ত হয় না।

(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৫০)

 

সমাধান কী হতে পারে?

১. এআইয়ের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে মানব স্কলারদের তত্ত্বাবধান রাখা

এআইকে ইসলামী গবেষণার সহায়ক টুল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে চূড়ান্ত ফায়সালা ও ব্যাখ্যা অবশ্যই অভিজ্ঞ ও যোগ্য আলেমদের মাধ্যমেই হতে হবে।

এআইভিত্তিক ইসলামিক ফতোয়া বা মাসআলা নির্ধারণে হিউম্যান-ইন-দ্য-লুপ ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে, যেখানে এআই শুধু তথ্য সরবরাহ করবে, কিন্তু আলেমরা যাচাই ও অনুমোদন করবেন।

কারণ এআই ইন্টারনেটে থাকা তথ্য-উপাত্তকে বিশ্লেষণ করে তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে একটি সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করে, যা ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিপজ্জনক।

বাজার থেকে বই কিনে এনে কোনো মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি না হয়ে নিজে নিজে বই পড়ে যেমন ডাক্তার হওয়া যায় না, তেমনি কোনো মুত্তাকি আহলে ইলমের তত্ত্বাবধানে না থেকে শুধু বই পড়ে ধর্মীয় বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায় না। এ জন্যই নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তর থেকে ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) উঠিয়ে নেন না, কিন্তু দ্বিনের আলেমদের উঠিয়ে নেওয়ার ভয় করি। যখন কোনো আলেম অবশিষ্ট থাকবে না তখন লোকেরা মূর্খদেরই নেতা বানিয়ে নেবে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হলে না জানলেও ফতোয়া প্রদান করবে। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে।

(বুখারি, হাদিস : ১০০)

ইবেনে সিরিন (রহ.) বলেন, নিশ্চয়ই এই ইলম হচ্ছে দ্বিন। অতএব, তোমরা লক্ষ রাখবে যে তোমাদের দ্বিন কার কাছ থেকে গ্রহণ করছ?

(মিশকাত, হাদিস : ২৭৩, মুকাদ্দামায়ে মুসলিম)

এগুলো প্রমাণ করে যে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনে কোনো মুত্তাকি, বিজ্ঞ আলেমের তত্ত্বাবধানে না থেকে স্রেফ এআইয়ের ওপর নির্ভরশীল হওয়া মানুষের বিভ্রান্তির কারণ হবে।

 

২. নির্ভরযোগ্য ও সত্যায়িত উৎস ব্যবহারের নিশ্চয়তা

এআই কেবলমাত্র বিশুদ্ধ, নির্ভরযোগ্য উৎস (যেমনকোরআন, সহিহ হাদিস, নির্ভরযোগ্য তাফসির ও ফিকহ গ্রন্থ) থেকে উদ্ধৃতি একত্র করে দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো একটি হাদিসের ভাবার্থ মনে আছে, কিন্তু হাদিসের মতন বা উৎস মনে নেই। সে ক্ষেত্রে এআই ভাবার্থটি বিশ্লেষণ করে নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে তার কাছাকাছি অর্থের হাদিসগুলো (নিজে থেকে তৈরি না করে) হুবহু খুঁজে দিতে সহায়তা করতে পারে।

অনলাইনে বিভিন্ন ভুল ব্যাখ্যা ও ভিত্তিহীন মতামত থাকা স্বাভাবিক, তাই এআইভিত্তিক ইসলামিক টুলগুলোতে সত্যায়িত ইসলামিক উৎস ফিল্টার থাকা উচিত, যা প্রয়োজনে সব মাজহাবের আলেমদের তত্তাবধানে আলাদা মাজহাব উল্লেখ করেও হতে পারে।

 

৩. এআইয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত না দিয়ে, বরং গবেষণা সহায়ক টুল হিসেবে ব্যবহার করা

ইসলামের বিষয়ে এআই নিজে সিদ্ধান্ত দেবে না, তাই ডিজিটাল মুফতি বা ফতোয়া ইঞ্জিন তৈরি না করে এটিকে গবেষণার সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

যেমনইসলামিক স্কলারদের জন্য এআই ব্যবহার করে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে কোরআন, হাদিস ও ফিকহ গ্রন্থ থেকে রেফারেন্স খুঁজে দেওয়া যেতে পারে। সাধারণ মানুষ সেখান থেকে কোনো তথ্য নেওয়ার আগে অবশ্যই কোনো বিজ্ঞ আলেমের কাছ থেকে তা যাচাই করে নিতে হবে। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি (শুধু) বইপত্র থেকে ফিকহ অর্জন করে, সে (শরিয়তের) বিধি-বিধান ধ্বংস করে। (আলমাজমু শরহুল মুহায্যাব : ১/৩৮)

 

৪. এআইতে ভুল ধরা ও শুদ্ধকরণের ব্যবস্থা রাখা

এআই মডেলকে আপডেট করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক ইসলামিক বোর্ড বা স্কলার কমিটি থাকা প্রয়োজন, যারা ভুল তথ্য শনাক্ত করে সংশোধন করবে।

এআই যদি ভুল তথ্য দেয়, তাহলে স্কলাররা তা সংশোধন করতে পারবেন, এমন ফিডব্যাক সিস্টেম থাকা উচিত।

 

৫. আধ্যাত্মিকতা ও তাকওয়াকে গুরুত্ব দেওয়া

এআই কখনোই মানুষের ঈমান, তাকওয়া ও আধ্যাত্মিক উপলব্ধির বিকল্প হতে পারে না। তাই সত্যিকারের আত্মশুদ্ধি ও ইসলামী জ্ঞান অর্জনের জন্য অবশ্যই যোগ্য মুত্তাকি আলেমের দারস্থ হওয়া অপরিহার্য। কারণ হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, একজন ফকিহ (শরিয়তের বিধানে অভিজ্ঞ ব্যক্তি) শয়তানের জন্য এক হাজার ইবাদতকারীর চেয়ে অধিক শক্ত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২২)

তাই আধ্যাত্মিকতা ও তাকওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়ে এআইকে মানুষের বিকল্প ভাবার সুযোগ নেই। তবে বিজ্ঞ আলেমদের মধ্যে যারা এআই প্রমোট সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে, তাদের গবেষণা গতিশীল করতে এআই চমৎকার সহযোগী টুল হতে পারে; কিন্তু যারা বিজ্ঞ আলেম, তবে এআইকে তার ভাষায় প্রমোট লিখে বোঝাতে সক্ষম নয়, কিংবা এআই প্রমোট লিখতে পটু হলেও বিজ্ঞ আলেম নয়, এমন লোকদের জন্য এআই ব্যবহার করে ইসলাম গবেষণা বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ জাগতিক বিষয়েও এআইকে সঠিকভাবে প্রমোট লিখে বোঝাতে ব্যর্থ হলে ভুল তথ্য দিয়ে বসে।

 

উপসংহার

মূল কথা হলো, এআইকে ইসলামের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তদাতা বা ব্যাখ্যাকারী বানানোর সুযোগ নেই, শরিয়াহ বিষয়ে এআইয়ের সমাধান গ্রহণযোগ্য নয়, বরং এটিকে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান রাখে এমন ব্যক্তিদের ইসলামী গবেষণার সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ধর্মীয় জ্ঞানের সঙ্গে ঈমান-আমলের সম্পর্ক, তাই এখানে উদাসীনতার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ সবাইকে সঠিক জ্ঞান আহরণ ও সঠিকভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭২৭
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : যদি তোমরা ঘরে কাউকেও না পাও তাহলে তাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়। যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। আর তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।

যে ঘরে কেউ বাস করে না তাতে তোমাদের জন্য দ্রব্যসামগ্রী থাকলে সেখানে তোমাদের প্রবেশে কোনো পাপ নেই।... (সুরা : নুর, আয়াত : ২৮-২৯)

আয়াতদ্বয়ে অন্যের ঘরে প্রবেশের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১. বসবাস করে এমন ঘরে যদি কেউ না থাকে তবু তাতে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। আর যে ঘর মানুষের বসবাসের জন্য নয় একান্ত প্রয়োজনে তাতে অনুমতি ছাড়াও প্রবেশ করা যায়।

২. ঘরের দরজা বন্ধ থাকুক বা খোলা তাতে প্রবেশের আগে অনুমতি গ্রহণ করা আবশ্যক।

৩. ঘরের সাবালক বাসিন্দার মতো নাবালক বাসিন্দাও ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারে।

৪. বিরান ও পরিত্যক্ত বাড়িতে প্রবেশের জন্য অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই। কেননা এর সঙ্গে মানুষের আব্রু ও ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা রক্ষার প্রশ্ন জড়িত নয়।

৫. ওমর (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি দরজার ছিদ্র দিয়ে উঁকি দিল সে ফিসকে (প্রকাশ্য পাপাচার) লিপ্ত হলো।

(তাফসিরে কুরতুবি : ১৫/১৯৮)

 

 

মন্তব্য
দেশে-বিদেশে

ইফতারের বড় পাঁচ আয়োজন

    ইবাদতের পাশাপাশি বর্তমানে ইফতার হয়ে উঠেছে মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষঙ্গ। ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক মেলবন্ধনকে শক্তিশালী করতে মুসলিম বিশ্বের বহু স্থানে ইফতারের নানা আয়োজন করা হয়। মুসলিম বিশ্বের বড় পাঁচ ইফতার আয়োজন নিয়ে লিখেছেন আবরার আবদুল্লাহ
শেয়ার
ইফতারের বড় পাঁচ আয়োজন

১. মক্কা ও মদিনায় : পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইফতারের আয়োজন হয় মক্কার মসজিদুল হারামে। তারপরই রয়েছে মসজিদে নববীর স্থান। প্রতিদিন কয়েক লাখ ওমরাহ প্রার্থী এখানে ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। গত ১৭ মার্চ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, ১৭ রমজান পর্যন্ত তারা পবিত্র দুই মসজিদে ১১ মিলিয়ন (এক কোটি ১০ লাখ) ইফতারের প্যাকেট বিতরণ করেছে এবং সমপরিমাণ খেজুরের প্যাকেটও বিতরণ করেছে।

তারা আরো বলেছে, প্রতিবছর রমজানে ওমরাহ পালনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। তবু তারা চেষ্টা করছে সবাইকে যেন মানসম্মত খাবার পরিবেশন করা যায়।

(অ্যারাব নিউজ)

২. শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ : সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম নান্দনিক স্থাপনা আবুধাবির শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। প্রতিদিন হাজার হাজার মুসল্লির ইফতারের ব্যবস্থা থাকে এখানে।

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ সেন্টারের তত্ত্বাবধানে ‘আওয়ার ফাস্টিং ইনিশিয়েটিভ’-এর আওতায় রমজান মাসজুড়ে ২১ লাখের বেশি ইফতার বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে মসজিদ প্রাঙ্গণে সাড়ে ছয় লাখ এবং সাড়ে ১০ লাখ ইফতার আবুধাবির বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করা হয়। তা ছাড়া রমজানের শেষ ১০ রাতে ৩০ হাজার সাহরি বিতরণ করা হয়। (কালের কণ্ঠ)

৩. ইসতিকলাল মসজিদ : ইন্দোনেশিয়ার ইসতিকলাল মসজিদে হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহত্ ইফতার আয়োজন।

এখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার রোজাদার ইফতার করে থাকে। তাদের সংখ্যা সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজারে উন্নীত হয়। মসজিদ কমিটি স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এই আয়োজন করে থাকে। (এপি নিউজ)

৪. মিসরে গণ-ইফতার : প্রতিবছর রমজান মাসের ১৫ তারিখ মিসরের রাজধানী কায়রোতে আয়োজন করা হয় একটি গণ-ইফতারের। এতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়।

২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই সামাজিক সম্প্রীতিমূলক আয়োজন এরই মধ্যে এক যুগ পার করেছে। বর্তমানে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি অঙ্গনের খ্যাতিমান ব্যক্তিরা এই আয়োজনে অংশ নেন। গণ-ইফতার মুসলিম ও অমুসলিম সবার জন্য উন্মুক্ত। বহু পর্যটকও এই ইফতার আয়োজনে অংশ নিয়ে থাকেন। গতবছর গণ-ইফতারে অংশ নিয়েছিল ৩০ হাজার ব্যক্তি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল ৭০০ টেবিল। এ বছর প্রায় ৫০ হাজার ব্যক্তি তাতে অংশ নেয়। (এসআইএস ডটগভ ডটইজি ও সিবিসি নিউজ)

৫. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম : বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিতে পারে যেকোনো মানুষ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুসারে বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ব্যবসায়ী, তাবলিগ জামাত, মুসল্লি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতায় এই গণ-ইফতারের আয়োজন করা হয়। বহু বছর  ধরে বায়তুল মোকাররমের এই জনসেবামূলক কার্যক্রমটি চলছে।

 

 

মন্তব্য

রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের গুরুত্ব

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের গুরুত্ব

রহমত ও মাগফিরাতের দশক শেষ হওয়ার পর আমাদের মধ্যে হাজির হলো নাজাতের দশক। পবিত্র রমজানের এই দশক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী রমজানের শেষ দশকে শান্তির বার্তা নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। যে রাতকে মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদর আখ্যা দিয়েছেন।

মোবারক এই রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আমি একে নাজিল করেছি মহিমান্বিত রাতে (লাইলাতুল কদর)। আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত কী? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে প্রতিটি কাজের জন্য ফেরেশতারা এবং রুহ তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়।
সেই রাতে শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।

(সুরা : কদর, আয়াত : ১-৫)

বিভিন্ন হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, উল্লিখিত আয়াতে মহিমান্বিত যে রাতের কথা বলা হয়েছে, তা এই শেষ দশকেই লুকিয়ে আছে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো। (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)

আমাদের নবীজি (সা.) নিজেও শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন।

এ সময় তিনি যেভাবে ইবাদত করতেন, যা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হতো। এমনকি ইবাদতের মাধ্যমে পূর্ণ সময় কাটানোর আশায় তিনি প্রতিবছর শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন। এরপর তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮; মুসলিম, হাদিস : ২০০৬)

শেষ দশকে অধিক ইবাদতের পাশাপাশি অধিক পরিমাণে দোয়াও করতে হবে।

কেননা নবীজি (সা.) রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করতেন। উম্মতকে শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করার পরামর্শ দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, যদি আমি লাইলাতুল কদর জানতে পারি, তাহলে সে রাতে কী বলব? তিনি বলেন, তুমি বোলো, (উচ্চারণ) আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি। (অর্থ) হে আল্লাহ, আপনি সম্মানিত ক্ষমাকারী, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)

এ ছাড়া যেহেতু এটি নাজাতের দশক, এই দশকে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত পাওয়ার জন্য আমরা বেশি বেশি তাওবা করতে পারি। কেননা এই মাস মহান আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ করিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাস। কোনো ব্যক্তি যদি রমজানে তার গুনাহ ক্ষমা করাতে ব্যর্থ হয়, তবে তার প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হুঁশিয়ারি আছে। তিনি বলেছেন, ওই ব্যক্তির নাক ধুলিধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

 

মন্তব্য
পর্ব : ২০

তারাবিতে কোরআনের বার্তা

সুরা কাসাস
সুরা কাসাস
শেয়ার
তারাবিতে কোরআনের বার্তা

এই সুরায় ফেরাউনের শক্তিমত্তা, ঔদ্ধত্য ও রাজত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। সে বনি ইসরাঈলে নারীদের দাসী বানিয়ে পুরুষদের হত্যা করত। সেই দিনগুলোতে মুসা (আ.)-এর জন্ম হয়। ফেরাউনের বাহিনীর ভয়ে মুসা (আ.)-এর মা তাঁকে সাগরে ভাসিয়ে দেন।

ফেরাউনের পরিবার এই বাচ্চাটি পেয়ে রাজপ্রাসাদে আদর-যত্নে লালন-পালন করতে থাকে। অতঃপর তিনি মিসর থেকে মাদায়ান চলে যান। সেখানে গিয়ে শোয়াইব (আ.)-এর মেয়েকে বিয়ে করেন। ১০ বছর তাঁর রাখাল হিসেবে জীবন পার করেছেন।
এই ঘোষণার মাধ্যমে সুরা শেষ করা হয়েছে যে জান্নাত তাদের জন্য, যারা দুনিয়ার জীবনে উদ্ধত হয় না এবং কোনো ফিতনা-ফ্যাসাদে লিপ্ত হয় না।

 

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. বিভক্তি জাতিসত্তা দুর্বল করে দেয় এবং অন্য জাতিকে কর্তৃত্ব স্থাপনের সুযোগ করে দেয়। (আয়াত : ৪)

২. আল্লাহ চাইলে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকেও শাসকের মর্যাদা দেন। (আয়াত : ৫-৬)

৩. সন্তানের জন্য মায়ের ভালোবাসা আল্লাহ প্রদত্ত।

(আয়াত : ১০)

৪. সন্তানকে মা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া নিন্দনীয়। (আয়াত : ১৩)

৫. বয়সের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানেও পরিপক্বতা আসে। (আয়াত : ১৪)

৬. অপরাধকারীকে সাহায্য করাও অপরাধ। (আয়াত : ১৭)

৭. চলাফেরার শালীনতা নারী জীবনের সৌন্দর্য। (আয়াত : ২৫)

৮. শ্রমিক হবে শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য।

(আয়াত : ২৬)

৯. যোগ্য লোকের সহযোগিতা গ্রহণ করো। (আয়াত : ৩৪)

১০. জয় ও পরাজয় আল্লাহ নির্ধারণ করেন। (আয়াত : ৩৫)

১১. মুমিন সত্য গ্রহণে দেরি করে না।

(আয়াত : ৫৩)

১২. ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ প্রতিদান। (আয়াত : ৫৪)

১৩. অর্থহীন কাজ পরিহার করো।

(আয়াত : ৫৫)

১৪. পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করো।

(আয়াত : ৭৭)

১৫. পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না।

(আয়াত : ৭৭)

 

সুরা আনকাবুত

আলোচ্য সুরা আনকাবুতে যুগে যুগে কিভাবে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়, তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দুর্বল-সবল ও বিশ্বাসী-অবিশ্বাসীর দ্বন্দ্ব চিরন্তন। এই সুরায় ঈমানদারদের পার্থিব জীবনে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সবর ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বলা হয়েছে। কোরআনের অলৌকিকতা উল্লেখ করে মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত সপ্রমাণ করা হয়েছে। নির্যাতিত ঈমানদারদের হিজরতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হারাম শরিফকে নিরাপদ নগরী ঘোষণা করা হয়েছে। এবং সবশেষে এই চিরন্তন রীতি উল্লেখ করা হয়েছে যে যারাই পরিশ্রম করবে, অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাবে, তারা সফলতা পাবে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. পরকালীন মুক্তির জন্য ঈমানের ঘোষণাই যথেষ্ট নয়। (আয়াত : ২)

২. পাপীদের বাড়বাড়ন্তে হতাশার কিছু নেই। কেননা পাপীরা আল্লাহর আয়ত্তের বাইরে নয়। (আয়াত : ৪)

৩. মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।

(আয়াত : ৮)

৪. দ্বিন পালনের কষ্টকে শাস্তি মনে কোরো না। (আয়াত : ১০)

৫. মুনাফিকের পরিচয় গোপন থাকে না। (আয়াত : ১১)

৬. আল্লাহভীতি মুমিনের জীবনে উত্তম পাথেয়। (আয়াত : ১৬)

৭. পৃথিবীতে ভ্রমণ কোরো। কেননা তা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে। (আয়াত : ২০)

৮. সৃষ্টিজগতে আল্লাহর নির্দেশ অপরিহার্য। (আয়াত : ২২)

৯. আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। (আয়াত : ২৩)

১০. বিপর্যয়কারীদের ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য চাও। (আয়াত : ৩০)

১১. আল্লাহ ছাড়া সব শক্তিই ক্ষণস্থায়ী। (আয়াত : ৪১)

১২. নামাজ মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। (আয়াত : ৪৫)

১৩. আল্লাহর স্মরণ সবচেয়ে বড় এবং তা ইবাদতের প্রাণ। (আয়াত : ৪৫)

১৪. বিতর্কে শিষ্টাচার রক্ষা করো।

(আয়াত : ৪৬)

১৫. প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। (আয়াত : ৫৭)

১৬. জীবিক আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত।

(আয়াত : ৬২)      

গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ