এই সুরায় ফেরাউনের শক্তিমত্তা, ঔদ্ধত্য ও রাজত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। সে বনি ইসরাঈলে নারীদের দাসী বানিয়ে পুরুষদের হত্যা করত। সেই দিনগুলোতে মুসা (আ.)-এর জন্ম হয়। ফেরাউনের বাহিনীর ভয়ে মুসা (আ.)-এর মা তাঁকে সাগরে ভাসিয়ে দেন।
ফেরাউনের পরিবার এই বাচ্চাটি পেয়ে রাজপ্রাসাদে আদর-যত্নে লালন-পালন করতে থাকে। অতঃপর তিনি মিসর থেকে মাদায়ান চলে যান। সেখানে গিয়ে শোয়াইব (আ.)-এর মেয়েকে বিয়ে করেন। ১০ বছর তাঁর রাখাল হিসেবে জীবন পার করেছেন। এই ঘোষণার মাধ্যমে সুরা শেষ করা হয়েছে যে জান্নাত তাদের জন্য, যারা দুনিয়ার জীবনে উদ্ধত হয় না এবং কোনো ফিতনা-ফ্যাসাদে লিপ্ত হয় না।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. বিভক্তি জাতিসত্তা দুর্বল করে দেয় এবং অন্য জাতিকে কর্তৃত্ব স্থাপনের সুযোগ করে দেয়। (আয়াত : ৪)
২. আল্লাহ চাইলে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকেও শাসকের মর্যাদা দেন। (আয়াত : ৫-৬)
৩. সন্তানের জন্য মায়ের ভালোবাসা আল্লাহ প্রদত্ত।
(আয়াত : ১০)
৪. সন্তানকে মা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া নিন্দনীয়। (আয়াত : ১৩)
৫. বয়সের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানেও পরিপক্বতা আসে। (আয়াত : ১৪)
৬. অপরাধকারীকে সাহায্য করাও অপরাধ। (আয়াত : ১৭)
৭. চলাফেরার শালীনতা নারী জীবনের সৌন্দর্য। (আয়াত : ২৫)
৮. শ্রমিক হবে শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য।
(আয়াত : ২৬)
৯. যোগ্য লোকের সহযোগিতা গ্রহণ করো। (আয়াত : ৩৪)
১০. জয় ও পরাজয় আল্লাহ নির্ধারণ করেন। (আয়াত : ৩৫)
১১. মুমিন সত্য গ্রহণে দেরি করে না।
(আয়াত : ৫৩)
১২. ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ প্রতিদান। (আয়াত : ৫৪)
১৩. অর্থহীন কাজ পরিহার করো।
(আয়াত : ৫৫)
১৪. পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করো।
(আয়াত : ৭৭)
১৫. পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না।
(আয়াত : ৭৭)
সুরা আনকাবুত
আলোচ্য সুরা আনকাবুতে যুগে যুগে কিভাবে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়, তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দুর্বল-সবল ও বিশ্বাসী-অবিশ্বাসীর দ্বন্দ্ব চিরন্তন। এই সুরায় ঈমানদারদের পার্থিব জীবনে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সবর ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বলা হয়েছে। কোরআনের অলৌকিকতা উল্লেখ করে মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত সপ্রমাণ করা হয়েছে। নির্যাতিত ঈমানদারদের হিজরতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হারাম শরিফকে নিরাপদ নগরী ঘোষণা করা হয়েছে। এবং সবশেষে এই চিরন্তন রীতি উল্লেখ করা হয়েছে যে যারাই পরিশ্রম করবে, অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাবে, তারা সফলতা পাবে।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. পরকালীন মুক্তির জন্য ঈমানের ঘোষণাই যথেষ্ট নয়। (আয়াত : ২)
২. পাপীদের বাড়বাড়ন্তে হতাশার কিছু নেই। কেননা পাপীরা আল্লাহর আয়ত্তের বাইরে নয়। (আয়াত : ৪)
৩. মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।
(আয়াত : ৮)
৪. দ্বিন পালনের কষ্টকে শাস্তি মনে কোরো না। (আয়াত : ১০)
৫. মুনাফিকের পরিচয় গোপন থাকে না। (আয়াত : ১১)
৬. আল্লাহভীতি মুমিনের জীবনে উত্তম পাথেয়। (আয়াত : ১৬)
৭. পৃথিবীতে ভ্রমণ কোরো। কেননা তা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে। (আয়াত : ২০)
৮. সৃষ্টিজগতে আল্লাহর নির্দেশ অপরিহার্য। (আয়াত : ২২)
৯. আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। (আয়াত : ২৩)
১০. বিপর্যয়কারীদের ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য চাও। (আয়াত : ৩০)
১১. আল্লাহ ছাড়া সব শক্তিই ক্ষণস্থায়ী। (আয়াত : ৪১)
১২. নামাজ মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। (আয়াত : ৪৫)
১৩. আল্লাহর স্মরণ সবচেয়ে বড় এবং তা ইবাদতের প্রাণ। (আয়াত : ৪৫)
১৪. বিতর্কে শিষ্টাচার রক্ষা করো।
(আয়াত : ৪৬)
১৫. প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। (আয়াত : ৫৭)
১৬. জীবিক আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত।
(আয়াত : ৬২)
গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান