সুরা আম্বিয়া
এই সুরায়ও তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু শুরুতেই আখিরাতের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এরপর কয়েকজন নবীর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। পরে মক্কার মুশরিকদের প্রসঙ্গ আনা হয়েছে।
সুরা আম্বিয়া
এই সুরায়ও তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু শুরুতেই আখিরাতের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এরপর কয়েকজন নবীর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। পরে মক্কার মুশরিকদের প্রসঙ্গ আনা হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. কোরআন, কোরআনের আয়াত ও বিধান নিয়ে উপহাস করা হারাম।
২. কোরআনের ব্যাপারে অমনোযোগী থাকা নিষিদ্ধ। কেননা তা মানুষকে পুরো দ্বিন থেকে উদাসীন করে দেয়। (আয়াত : ৩)
৩. মহানবী (সা.) মাটির তৈরি রক্ত-মাংসের মানুষ ছিলেন।
(আয়াত : ৭)
৪. আল্লাহ মুসলমানের সম্মান কোরআনে নিহিত রেখেছেন। (আয়াত : ১০)
৫. আল্লাহর কোনো সৃষ্টি উপকারহীন নয়। তাই প্রকৃতির বৈচিত্র্য রক্ষা করা আবশ্যক। (আয়াত : ১৬)
৬. সত্য প্রকাশ করাই মিথ্যা অপসারণের কার্যকর মাধ্যম, তা গোপন করা বা এড়িয়ে যাওয়া নয়। (আয়াত : ১৮)
৭. ফেরেশতারা নির্দোষ সৃষ্টি।
৮. মজলিসে বড়দের উপস্থিতিতে আগ বেড়ে কথা বলা অনুচিত এবং মজলিসপ্রধানের বক্তব্যের অপেক্ষা করা উত্তম। (আয়াত : ২৭)
৯. পানির উৎসগুলো রক্ষা করা অপরিহার্য। কেননা প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষায় পানি অপরিহার্য। (আয়াত : ৩০)
১০. ত্বরাপ্রবণতা মন্দ স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত। (আয়াত : ৩৭)
১১. নবী-রাসুলদের নিয়ে বিদ্রুপ করা সব যুগের অবিশ্বাসীদের বৈশিষ্ট্য। তাদের শাস্তি দেওয়াও আল্লাহর চিরায়ত নিয়ম। (আয়াত : ৪১)
১২. মুমিন তার কাজকর্মে কৌশলী হবে। (আয়াত : ৫৭)
১৩. যুক্তিপূর্ণ বিতর্ক কখনো কখনো মানুষের বিবেকের দ্বার খুলে দেয়। (আয়াত : ৬৪)
১৪. শাম অঞ্চলের তিনটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো : ক. আল্লাহর বরকতপ্রাপ্ত, খ. কিয়ামতের আগে এখানে ঈসা (আ.)
আগমন করবেন, গ. পরকালে এটা হাশরের ময়দান হবে। (আয়াত : ৭১)
১৫. সুসন্তান আল্লাহর অনুগ্রহ ও দান। তাই আল্লাহর কাছে সুসন্তান কামনা করা আবশ্যক। (আয়াত : ৭২)
১৬. কোনো জনপদে পাপ ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়লে সম্ভব হলে মুমিনের জন্য তা ত্যাগ করা আবশ্যক। (আয়াত : ৭৪)
১৭. বিচারক যথাযথ অনুসন্ধানের পর রায় প্রদানে ভুল করলে তা ক্ষমার যোগ্য। (আয়াত : ৭৮)
১৮. জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় পুত্র পিতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পিতা পুত্রের সিদ্ধান্তকে মূল্যায়ন করবে। (আয়াত : ৭৯)
১৯. আত্মরক্ষার উপকরণ আল্লাহর অনুগ্রহ। মুমিন সাধ্যানুসারে আত্মরক্ষার উপকরণ গ্রহণ করবে। (আয়াত : ৮০)
২০. সন্তান যোগ্য হলে দ্বিনি কাজে পিতার উত্তরাধিকারী হতে পারে। (আয়াত : ৮১)
২১. দোয়ার শিষ্টাচার হলো ভাগ্য ও ভাগ্য নির্ধারক আল্লাহর প্রতি অভিযোগ না করা। (আয়াত : ৮৩)
২২. বিপদ থেকে রক্ষা পেতে দোয়ায়ে ইউনুস পাঠ করা যায়। এটি একটি বহুল পরীক্ষিত আমল। (আয়াত : ৮৭)
২৩. নবী-রাসুল (আ.)-এর তিনটি বৈশিষ্ট্য হলো : ক. সত্ কাজে অগ্রগামী হওয়া, খ. আশা ও ভয় নিয়ে দোয়া করা, গ. আল্লাহর ভয় অন্তরে লালন করা। (আয়াত : ৯০)
২৪. সতীত্ব রক্ষাকারীকে আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতের বিপুল সম্মান ও পুরস্কার দান করেন। (আয়াত : ৯১)
২৫. স্বজাতির ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞতা নিন্দনীয়। (আয়াত : ১০১)
গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান
সম্পর্কিত খবর
আয়াতের অর্থ : ‘যদি তোমরা ঘরে কাউকেও না পাও তাহলে তাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়। যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। আর তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।
আয়াতদ্বয়ে অন্যের ঘরে প্রবেশের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।
শিক্ষা ও বিধান
১. বসবাস করে এমন ঘরে যদি কেউ না থাকে তবু তাতে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। আর যে ঘর মানুষের বসবাসের জন্য নয় একান্ত প্রয়োজনে তাতে অনুমতি ছাড়াও প্রবেশ করা যায়।
২. ঘরের দরজা বন্ধ থাকুক বা খোলা তাতে প্রবেশের আগে অনুমতি গ্রহণ করা আবশ্যক।
৩. ঘরের সাবালক বাসিন্দার মতো নাবালক বাসিন্দাও ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারে।
৪. বিরান ও পরিত্যক্ত বাড়িতে প্রবেশের জন্য অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই। কেননা এর সঙ্গে মানুষের আব্রু ও ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা রক্ষার প্রশ্ন জড়িত নয়।
৫. ওমর (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি দরজার ছিদ্র দিয়ে উঁকি দিল সে ফিসকে (প্রকাশ্য পাপাচার) লিপ্ত হলো।
(তাফসিরে কুরতুবি : ১৫/১৯৮)
১. মক্কা ও মদিনায় : পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইফতারের আয়োজন হয় মক্কার মসজিদুল হারামে। তারপরই রয়েছে মসজিদে নববীর স্থান। প্রতিদিন কয়েক লাখ ওমরাহ প্রার্থী এখানে ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। গত ১৭ মার্চ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, ১৭ রমজান পর্যন্ত তারা পবিত্র দুই মসজিদে ১১ মিলিয়ন (এক কোটি ১০ লাখ) ইফতারের প্যাকেট বিতরণ করেছে এবং সমপরিমাণ খেজুরের প্যাকেটও বিতরণ করেছে।
(অ্যারাব নিউজ)
২. শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ : সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম নান্দনিক স্থাপনা আবুধাবির শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। প্রতিদিন হাজার হাজার মুসল্লির ইফতারের ব্যবস্থা থাকে এখানে।
৩. ইসতিকলাল মসজিদ : ইন্দোনেশিয়ার ইসতিকলাল মসজিদে হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহত্ ইফতার আয়োজন।
৪. মিসরে গণ-ইফতার : প্রতিবছর রমজান মাসের ১৫ তারিখ মিসরের রাজধানী কায়রোতে আয়োজন করা হয় একটি গণ-ইফতারের। এতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়।
৫. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম : বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিতে পারে যেকোনো মানুষ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুসারে বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ব্যবসায়ী, তাবলিগ জামাত, মুসল্লি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতায় এই গণ-ইফতারের আয়োজন করা হয়। বহু বছর ধরে বায়তুল মোকাররমের এই জনসেবামূলক কার্যক্রমটি চলছে।
রহমত ও মাগফিরাতের দশক শেষ হওয়ার পর আমাদের মধ্যে হাজির হলো নাজাতের দশক। পবিত্র রমজানের এই দশক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী রমজানের শেষ দশকে শান্তির বার্তা নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। যে রাতকে মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদর আখ্যা দিয়েছেন।
(সুরা : কদর, আয়াত : ১-৫)
বিভিন্ন হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, উল্লিখিত আয়াতে মহিমান্বিত যে রাতের কথা বলা হয়েছে, তা এই শেষ দশকেই লুকিয়ে আছে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো। (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)
আমাদের নবীজি (সা.) নিজেও শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন।
শেষ দশকে অধিক ইবাদতের পাশাপাশি অধিক পরিমাণে দোয়াও করতে হবে।
এ ছাড়া যেহেতু এটি নাজাতের দশক, এই দশকে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত পাওয়ার জন্য আমরা বেশি বেশি তাওবা করতে পারি। কেননা এই মাস মহান আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ করিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাস। কোনো ব্যক্তি যদি রমজানে তার গুনাহ ক্ষমা করাতে ব্যর্থ হয়, তবে তার প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হুঁশিয়ারি আছে। তিনি বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলিধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এই সুরায় ফেরাউনের শক্তিমত্তা, ঔদ্ধত্য ও রাজত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। সে বনি ইসরাঈলে নারীদের দাসী বানিয়ে পুরুষদের হত্যা করত। সেই দিনগুলোতে মুসা (আ.)-এর জন্ম হয়। ফেরাউনের বাহিনীর ভয়ে মুসা (আ.)-এর মা তাঁকে সাগরে ভাসিয়ে দেন।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. বিভক্তি জাতিসত্তা দুর্বল করে দেয় এবং অন্য জাতিকে কর্তৃত্ব স্থাপনের সুযোগ করে দেয়। (আয়াত : ৪)
২. আল্লাহ চাইলে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকেও শাসকের মর্যাদা দেন। (আয়াত : ৫-৬)
৩. সন্তানের জন্য মায়ের ভালোবাসা আল্লাহ প্রদত্ত।
৪. সন্তানকে মা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া নিন্দনীয়। (আয়াত : ১৩)
৫. বয়সের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানেও পরিপক্বতা আসে। (আয়াত : ১৪)
৬. অপরাধকারীকে সাহায্য করাও অপরাধ। (আয়াত : ১৭)
৭. চলাফেরার শালীনতা নারী জীবনের সৌন্দর্য। (আয়াত : ২৫)
৮. শ্রমিক হবে শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য।
৯. যোগ্য লোকের সহযোগিতা গ্রহণ করো। (আয়াত : ৩৪)
১০. জয় ও পরাজয় আল্লাহ নির্ধারণ করেন। (আয়াত : ৩৫)
১১. মুমিন সত্য গ্রহণে দেরি করে না।
(আয়াত : ৫৩)
১২. ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ প্রতিদান। (আয়াত : ৫৪)
১৩. অর্থহীন কাজ পরিহার করো।
(আয়াত : ৫৫)
১৪. পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করো।
(আয়াত : ৭৭)
১৫. পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না।
(আয়াত : ৭৭)
সুরা আনকাবুত
আলোচ্য সুরা আনকাবুতে যুগে যুগে কিভাবে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়, তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দুর্বল-সবল ও বিশ্বাসী-অবিশ্বাসীর দ্বন্দ্ব চিরন্তন। এই সুরায় ঈমানদারদের পার্থিব জীবনে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সবর ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বলা হয়েছে। কোরআনের অলৌকিকতা উল্লেখ করে মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত সপ্রমাণ করা হয়েছে। নির্যাতিত ঈমানদারদের হিজরতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হারাম শরিফকে নিরাপদ নগরী ঘোষণা করা হয়েছে। এবং সবশেষে এই চিরন্তন রীতি উল্লেখ করা হয়েছে যে যারাই পরিশ্রম করবে, অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাবে, তারা সফলতা পাবে।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. পরকালীন মুক্তির জন্য ঈমানের ঘোষণাই যথেষ্ট নয়। (আয়াত : ২)
২. পাপীদের বাড়বাড়ন্তে হতাশার কিছু নেই। কেননা পাপীরা আল্লাহর আয়ত্তের বাইরে নয়। (আয়াত : ৪)
৩. মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।
(আয়াত : ৮)
৪. দ্বিন পালনের কষ্টকে শাস্তি মনে কোরো না। (আয়াত : ১০)
৫. মুনাফিকের পরিচয় গোপন থাকে না। (আয়াত : ১১)
৬. আল্লাহভীতি মুমিনের জীবনে উত্তম পাথেয়। (আয়াত : ১৬)
৭. পৃথিবীতে ভ্রমণ কোরো। কেননা তা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে। (আয়াত : ২০)
৮. সৃষ্টিজগতে আল্লাহর নির্দেশ অপরিহার্য। (আয়াত : ২২)
৯. আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। (আয়াত : ২৩)
১০. বিপর্যয়কারীদের ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য চাও। (আয়াত : ৩০)
১১. আল্লাহ ছাড়া সব শক্তিই ক্ষণস্থায়ী। (আয়াত : ৪১)
১২. নামাজ মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। (আয়াত : ৪৫)
১৩. আল্লাহর স্মরণ সবচেয়ে বড় এবং তা ইবাদতের প্রাণ। (আয়াত : ৪৫)
১৪. বিতর্কে শিষ্টাচার রক্ষা করো।
(আয়াত : ৪৬)
১৫. প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। (আয়াত : ৫৭)
১৬. জীবিক আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত।
(আয়াত : ৬২)
গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান