বছরজুড়ে বিভিন্ন রোজা

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
শেয়ার
বছরজুড়ে বিভিন্ন রোজা

রমজান মাস এবং ফরজ রোজা শেষ হলেও বছরজুড়ে বিভিন্ন রোজা রয়েছে। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য সেসব রোজার প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বছরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন রোজার বিবরণ নিম্নরূপ

১. এক দিন পর পর রোজা

এক দিন পর পর রোজা রাখাকে সাওমে দাউদ বলে। দাউদ (আ.) এভাবে রোজা রাখতেন।

নবী (সা.) এটিকে সর্বোত্তম রোজা বলেছেন এবং বেশি রোজা রাখতে আগ্রহীদের এভাবে রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ১৮৭৮; মুসলিম, হাদিস : ২৭৯৩)         

২. সপ্তাহের রোজা

সপ্তাহের প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা রাসুল (সা.) পছন্দ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার (বান্দার) আমল (আল্লাহর কাছে) উপস্থাপিত হয়। আমি পছন্দ করি যে রোজা অবস্থায় আমার আমল উপস্থাপন হোক।

(তিরমিজি, হাদিস : ৭৪৭)

৩. মাসের রোজা

প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজাকে আইয়ামে বিজের রোজা বলে। নিয়মিতভাবে এই তিন দিনের রোজা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য। (বুখারি, হাদিস : ১৮৮০)

৪. আশুরার রোজা

মহররম মাসের ১০ তারিখ হলো আশুরা। রমজানের রোজা ফরজ হওয়া আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররম মাসের রোজা অর্থাৎ আশুরার রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ। (মুসলিম, হাদিস : ২৮১২)

৫. শাবান মাসের রোজা  

নবী (সা.) শাবান মাসে খুব বেশি পরিমাণে রোজা রাখতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) শাবান মাসের চেয়ে কোনো মাসে বেশি রোজা পালন করেননি। তিনি প্রায় পুরো শাবান মাসই রোজা পালন করতেন।

(বুখারি, হাদিস : ১৮৬৯; মুসলিম, হাদিস : ২৭৭৯)

৬. শাওয়াল মাসের রোজা

রমজানের পর শাওয়াল মাস। অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখার বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে রমজানের রোজা রাখে, অতঃপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখে, সে যেন বছরজুড়ে রোজা রাখে।

(মুসলিম, হাদিস : ২৮১৫)

৭. জিলহজ মাসের রোজা

জিলহজ মাসের প্রথম থেকে নবম দিন পর্যন্ত মোট ৯টি রোজার ব্যাপারে হাদিসে উৎসাহিত করা হয়েছে। এর প্রত্যেক দিনের রোজা এক বছর রোজার সমতুল্য। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৫৮)

জিলহজ মাসের নবম দিন হলো আরাফার দিন। এই দিন সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি আশা করি আরাফার দিনের রোজা তার পূর্ব ও পরের এক বছরের পাপ মোচন করে দেবে।

(মুসলিম, হাদিস : ২৮০৩)

৮. মানতের রোজা

রোজাসহ কোনো কিছুর মানত করলে তা পূরণ হলে মানতকারীর ওপর রোজা পালন করা অপরিহার্য। নির্দিষ্ট দিনে রোজা পালন করার মানত করলে নির্দিষ্ট দিনে আর অনির্দিষ্ট দিনে রোজা পালন করার মানত করলে যেকোনো দিনে রোজা পালন করতে হবে। আল্লাহ বলেন, আর তাদের উচিত মানতকে পুরা করা।

(সুরা : হজ, আয়াত : ২৯)

৯. কাজা রোজা

যৌক্তিক ও সংগত কারণে রমজানের রোজা আদায় করতে না পারলে পরে তার কাজা আদায় করতে হবে। আল্লাহ বলেন, সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। আর কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পুরো করবে। (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৫)

১০. কাফফারার রোজা

স্বেচ্ছায় রমজানের রোজা ভেঙে ফেললে কাজাসহ কাফফারা হিসেবে লাগাতার ৬০টি রোজা রাখতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (সা.) এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিসে তোমাকে ধ্বংস করেছে? সে বলল, রমজানে রোজা অবস্থায় আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়েছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমার দাস মুক্তির সামর্থ্য আছে? সে বলল, না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি কি দুই মাস লাগাতার রোজা রাখতে পারবে? সে বলল, না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি কি ৬০ জন মিসকিনকে খাবার খাওয়াতে পারবে? সে বলল, না। (বুখারি, হা: ১৮৩৪; মুসলিম, হা: ২৬৫১)

এ হাদিস থেকে স্বেচ্ছায় রমজানের রোজা ভেঙে ফেললে কাফফারার বিধান প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কাজের কাফফারায় রোজা পালন করার বিধান রয়েছে।

        লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী-৬২০৫

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বুলগেরিয়ায় মুসলিম শাসনের স্মৃতি

রোজি আসলান
রোজি আসলান
শেয়ার
বুলগেরিয়ায় মুসলিম শাসনের স্মৃতি

কিসেলচোভ বুলগেরিয়ার রোডোপ অঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। এই গ্রামে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে মিনারহীন একটি ছোট্ট মসজিদ। ছোট্ট মসজিদটি মুসলিম শাসনের সাক্ষী। বর্তমানে বুলগেরিয়া বললে কোনোভাবেই ইসলাম, মুসলমান ও মসজিদের কথা মনে আসে না, অথচ দেশটি ৫০০ বছর মুসলমানের শাসনাধীন ছিল।

বর্তমানে বুলগেরিয়ায় মুসলমানের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান।

মূলত আমি বুলগেরিয়ায় গিয়েছিলাম গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে। ইস্তাম্বুল থেকে গ্রিক সীমান্তবর্তী রোডোপ এলাকায় যাই। সেখানে আমি তিন সপ্তাহ অবস্থান করি।

দিনের বেলা লেখালেখি করতাম এবং প্রতিদিন বিকেলে পাহাড়ি পথ ধরে ঘুরে বেড়াতাম। আমি পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি ও স্থাপনাগুলো দেখে রোমাঞ্চিত হতাম। একসময় এখানে মানুষের কোলাহল ছিল, কিন্তু এখন সেগুলো পরিত্যক্ত। আগাছা গ্রামের পথ, বাগান ও ভবনগুলোর দখল নিয়েছে।
সূর্যাস্তের আগে নদীর তীরে বসে থাকতাম। সেখানে ধ্যান করতাম, দিনলিপি লিখতাম এবং রাতের আঁধারকে স্বাগত জানাতাম।

আমার অবস্থানের জায়গা থেকে কিসেলচোভ গ্রামটি বেশ দূরের। এবড়োখেবড়ো পথ ধরেই সেখানে যেতে হয়। একসময় পথটি পাকা ছিল।

এখন তা গর্ত ও আবর্জনায় পরিপূর্ণ। একসময় গ্রামে তিন শতাধিক বাসিন্দা ছিল। তারা ছিল পোমাক মুসলিম। এখন সেখানে মাত্র সাতজন ব্যক্তি সারা বছর বসবাস করে এবং তাদের সবাই বৃদ্ধ। গ্রামের অনেকেই আগে ইউরেনিয়াম খনিতে কাজ করত। এখন পেনশনের টাকায় তারা জীবিকা নির্বাহ করে। কমিউনিস্ট আমলে গ্রামের স্কুলসহ একাধিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গ্রামের বহু মানুষ অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়।

বুলগেরিয়ার জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি মুসলিম। রোডোপ মুসলিম অধ্যুষিত একটি অঞ্চল। শত শত বছর ধরে এখানে তুর্কি ও পোমাক মুসলিমরা বসবাস করে আসছে। ধারণা করা হয়, বুলগেরিয়ায় মুসলমানের আগমন ঘটে খ্রিস্টীয় অষ্টম ও নবম শতকে। তবে ইসলামের প্রসার ঘটে এই অঞ্চল উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাসনাধীন হওয়ার পর। পোমাক হলো বুলগেরীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম আদিবাসী। উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর পোমাকরা বলকান অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বুলগেরিয়ায় মাত্র দেড় থেকে দুই লাখ পোমাক বাস করে। তারা পোমাক ও বুলগেরিয়ান ভাষায় কথা বলে। পোমাক জনগোষ্ঠী বুলগেরিয়ান সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমি স্মোলিয়ান শহরের চারপাশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে ভ্রমণ করেছি। প্রতিটি গ্রামের মধ্যভাগে একটি মসজিদ আছে, যা ইসলামের সঙ্গে পোমাক সম্প্রদায়ের গভীর সংযোগকে প্রতিভাত করে।

তুর্কি শাসনামলে মুসলিম ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করত। তখন স্থানীয় জনগণ তুর্কি ইসলামী সংস্কৃতিকে আপন করে নেয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রিত বুলগেরিয়ার কমিউনিস্ট শাসকরা দেশটি থেকে ইসলাম ও ইসলামী সংস্কৃতির শিকড় তুলে ফেলতে চেয়েছিল। তারা বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে এবং মানুষকে ইসলামী বিশ্বাস ও সংস্কৃতি ত্যাগে বাধ্য করে। তার পরও বহু মানুষ সাংস্কৃতিক বিবেচনায় মুসলিম রয়ে গেছে। কমিউনিস্ট শাসন অবসানের পর অনেকেই প্রকাশ্যে ইসলামচর্চা শুরু করে।

আমি যে অঞ্চল ভ্রমণ করেছি তার বেশির ভাগ অধিবাসী মুসলিম। তবে ইসলাম সম্পর্কে তাদের জ্ঞান খুবই সীমিত। কমিউনিস্ট শাসকদের ইসলামবিরোধী কার্যক্রমের কারণে বুলগেরিয়ার মানুষ ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমি সেখানে বহু মসজিদ দেখেছি, যাতে কোনো মুসল্লি নেই। কিছু মসজিদে শুধু জুমার নামাজ হয়। শুধু একটি গ্রামে আমি আজান শুনতে পেয়েছি। যদিও বুলগেরিয়ার মুসলিমরা খুব বেশি ধর্মপরায়ণ নয়, তবু তারা রমজান ও ঈদসহ অন্যান্য ইসলামী দিবস উদযাপন করে।

কিসেলচোভের যে মসজিদের কথা আমি প্রথমে বলেছি সেটা সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক কোকারা আমাকে জানিয়েছেন, মসজিদটি ৩০০ বছরের পুরনো। তাঁর দাদা এই মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন ছিলেন। প্রাচীন এই মসজিদের সঙ্গে তাঁর ও স্থানীয় মুসলমানের আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে আছে। কোকারার বয়স ৭৯ বছর। এই বয়সেও তিনি মসজিদটি সংস্কার করতে শত শত ঘণ্টা কাজ করেছেন এবং বহু অর্থ ব্যয় করেছেন। মসজিদের ছাদ ধসে পড়েছিল, তিনি তা ঠিক করেছেন। মসজিদটি এখন ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। কোকারা মসজিদটি রক্ষা করতে চান বুলগেরীয় মুসলমানের সোনালি দিনের স্মারক হিসেবে এবং তাঁর দাদার স্মৃতি হিসেবে। তিনি আশা করেন, এর বিনিময়ে আল্লাহ জান্নাতে তাঁকে ঘর দান করবেন।

 

সিক্রেড ফুটস্টেপস থেকে আবরার আবদুল্লাহর ছায়ানুবাদ

 

মন্তব্য

কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
শেয়ার
কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে

বিশ্ব সন্ত্রাসী ইসরায়েলি হামলায় মসজিদে আকসা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। পাখির মতো উড়ে যাচ্ছে গাজাবাসী। কাঁদছে নিষ্পাপ শিশুরাও। এক লাখ ১৭ হাজার মানুষের শহর রাফাহ, সেখানে হয়তো কেউ বেঁচে নেই।

এমন রূঢ় বাস্তবতায়ও মহান আল্লাহর অভয় বার্তায় আস্থা রাখতে চাই—‘তোমরা হীনবল হইয়ো না এবং দুঃখিতও হইয়ো না; তোমরাই বিজয়ী, যদি তোমরা মুমিন হও। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৯)

অচিরেই অলৌকিক সাহায্য ও নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি হবে। কেননা, মজলুম জনগণের হাহাকার আল-কোরআনের শাশ্বত আবেদন : আর তোমাদের কী হলো যে দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষেযারা বলে : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের অত্যাচারীদের এ জনপদ থেকে উদ্ধার করো। তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য অভিভাবক পাঠাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী পাঠাও।

(সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৫)

মুসলমানদের বিপদ-বিপর্যয়ের কারণ

অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসমৃদ্ধ সম্মিলিত মুসলিম বাহিনী না থাকা

ইস্পাতকঠিন একক মুসলিম নেতৃত্ব না থাকা

তাওবা, তাকওয়া ও দোয়ার পথ ছেড়ে দেওয়া

ইলম আমলের ত্রুটি ও প্রযুক্তিবিমুখিতা

অনৈক্য, বিলাসিতা ও বিধর্মীদের সঙ্গে সখ্য ইত্যাদি।

দুঃখজনক সত্যইরান, ইরাক, পাকিস্তান, তুরস্ক প্রভৃতি পারমাণবিক শক্তিধর মুসলিম দেশ গাজার মুসলমানদের রক্ষার্থে একটি বোমাও ফাটায়নি। সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের রয়েছে বিপুল তেল সম্পদ। কিন্তু গাজার অ্যাম্বুল্যান্সগুলো দাঁড়িয়ে থাকল নিরূপায় নীরব আর্তনাদে।

তবু তেল দিয়ে কেউ সহযোগিতা করেনি।

জাতিসংঘ মিশনে শান্তিরক্ষা বাহিনী প্রেরণে শীর্ষস্থানের অধিকারী বাংলাদেশ; গোটা বিশ্বের মুসলমানদের ৫০ লাখ সৈন্য, অসংখ্য ট্যাংক, ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, স্যাটেলাইট এবং ঈমানি শক্তি নিয়ে গাজার দিকে কেউ হাঁটেনি। বিশ্ব মুসলমান ও তাদের বিবেক নিশ্চুপ... অথচ সুরা সাফের ১৩ নম্বর আয়াত নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারিব। (আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী)!

মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি মিথ্যা নয় ...দুঃখ-দারিদ্র্য ও রোগবালা তাদের স্পর্শ করেছিল এবং তারা ভীত-কম্পিত হয়েছিল। তারা এত দূর বিচলিত হয়েছিল যে রাসুল ও তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারীরা বলে উঠেছিল, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।

(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২১৪)।

বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপটে আয়াতটির সামঞ্জস্যতা লক্ষণীয়। মদিনায় হিজরতের পর মুসলিমরা যখন ইহুদি, মুনাফিক ও আরবের মুশরিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পীড়া ও কষ্ট পেতে লাগল, তখন কোনো কোনো মুসলিম নবী করিম (সা.)-এর কাছে অভিযোগ করলে, মুসলিমদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এ আয়াত নাজিল হয় এবং রাসুল (সা.)ও বললেন যে তোমাদের আগের লোকদের তাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত করাত দিয়ে চেরা হতো এবং লোহার চিরুনি দিয়ে তাদের গোশত ও চামড়া ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হতো। কিন্তু এ অকথ্য জুলুম-নির্যাতন তাদেরকে তাদের দ্বিন থেকে ফেরাতে পারেনি। অতঃপর বলেন, আল্লাহর শপথ! মহান আল্লাহ এই দ্বিনকে এমনভাবে জয়যুক্ত করবেন যে, ...আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ভয় থাকবে না। (বুখারি)

মদিনার মুসলমানরা যখন রাতে ঘুমাতে গেলে সকালে নিরাপদে জাগবে কিএমন আতঙ্কগ্রস্ত, তখন ঘোষিত হলো মহান আল্লাহর আশ্বাসবাণী—‘তোমাদের যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তিনি তাদের পৃথিবীর কর্তৃত্ব প্রদান করবেন; যেমন তিনি তাদের পূর্ববর্তীদের দিয়েছেন। তিনি তাদের দ্বিন প্রতিষ্ঠিত করবেন, যে দ্বিন তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন। আর ভয়ভীতির পরিবর্তে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন...। (সুরা : নুর, আয়াত : ৫৫)

পরিশেষে প্রিয় নবী (সা.)-এর একটি হাদিস উদ্ধৃত করছিখাদ্য গ্রহণকারীরা যেভাবে খাবারের পাত্রের চতুর্দিকে একত্র হয়, অচিরেই বিজাতিরা তোমাদের বিরুদ্ধে সেভাবেই একত্র হবে। এক ব্যক্তি বলল, সেদিন আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে কি এরূপ হবে? তিনি বলেন, তোমরা বরং সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে; কিন্তু তোমরা হবে প্লাবনের স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মতো। আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের পক্ষ থেকে আতঙ্ক দূর করে দেবেন, তিনি তোমাদের অন্তরে ভীরুতা ভরে দেবেন। আরেক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আল-ওয়াহন ভীরুতা কী? তিনি বলেন, দুনিয়ার মোহ ও মৃত্যুকে অপছন্দ করা। (আবু দাউদ)

লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান

ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ

কাপাসিয়া, গাজীপুর

 

 

মন্তব্য

গিবত করাও পাপ, শোনাও পাপ

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
গিবত করাও পাপ, শোনাও পাপ

গিবত বা পরনিন্দা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। তাই কেউ কেউ গিবত থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সতর্ক থাকলেও গিবত শোনাও যে একটি বড় পাপ, সে বিষয়ে আমরা উদাসীন। তাই নিজে গিবত করার ব্যাপারে সতর্ক থাকলেও অসতর্কতাবশত গিবতকারীদের গিবত শুনে পাপে লিপ্ত হয়। অথচ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অনর্থক কথাবার্তা শোনা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, আর যখন তুমি তাদেরকে দেখো, যারা আমার আয়াতগুলোর ব্যাপারে উপহাসমূলক সমালোচনায় রত আছে, তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, যতক্ষণ না তারা অন্য কথাবার্তায় লিপ্ত হয়। আর যদি শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে দেয়, তবে স্মরণের পর জালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে বোসো না।

(সুরা : আনআম, আয়াত : ৬৮)

যারা এ ধরনের কথাবার্তা শোনা থেকেও নিজেদের বিরত রাখে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাদের সুনাম করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, আর তারা যখন অনর্থক কথাবার্তা শুনে তখন তা থেকে বিমুখ হয়।

(সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫৫)

অর্থাৎ অর্থহীন ও অসার কাজএটি এমন সব কথা ও কাজকে বোঝায়, যা অপ্রয়োজনীয়, অনৈতিক কিংবা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। মুমিন কখনো এ ধরনের কাজে লিপ্ত হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ মুমিনের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, যারা অহেতুক বিষয় পরিহার করে। (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৩)

তাই কেউ আমাদের সামনে এসে কোনো গুনাহের কথা কিংবা পরনিন্দা ইত্যাদি করলে, আমাদের উচিত তাদের এড়িয়ে চলা।

আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.)-এর সামনে কেউ কারো ব্যাপারে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু বলতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিতেন। এবং ওই ভাইয়ের সম্মান বাঁচানোর চেষ্টা করতেন। ইতিবাচক কথা বলতেন। ইতবান ইবনে মালিক (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) সকালে আমার কাছে এলেন। তখন এক লোক বলল, মালিক ইবনে দুখশুন কোথায়? আমাদের এক ব্যক্তি বলল, সে তো মুনাফিক; সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসে না।

তা শুনে রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা কি এ কথা বলোনি যে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি চেয়ে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে। তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, যেকোনো বান্দা কিয়ামতের দিন ওই কথা নিয়ে উপস্থিত হবে, আল্লাহ তার ওপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।

(বুখারি, হাদিস : ৬৯৩৮)

তা ছাড়া পরনিন্দা করার মাধ্যমে নিন্দিত ব্যক্তির সম্মানহানি করা হয়, তাকে খাটো করার চেষ্টা করা হয়, যে ব্যক্তি পরনিন্দাকারীকে যেকোনোভাবে তা থেকে বিরত করবে এবং যার নিন্দা করা হচ্ছিল তার সম্মান রক্ষার্থে ইতিবাচক কথা বলে তার সম্মান রক্ষার চেষ্টা করবে, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করবেন। আবুদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে লোক তার কোনো ভাইয়ের মানসম্মানের ওপর আঘাত প্রতিরোধ করে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাআলা তার মুখমণ্ডল থেকে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন। তিরমিজি, হাদিস : ১৯৩১)

আমাদের সবার উচিত পরনিন্দা থেকে বিরত থাকা, কেউ অন্যের পরনিন্দা করলে তা শোনা থেকেও বিরত থাকা।

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মনীষীর কথা

শেয়ার
মনীষীর কথা

আমি ইমাম মালিক (রহ.) থেকে মহান কোনো ব্যক্তিকে দেখিনি। তিনি অনেক বেশি নামাজ ও রোজা আদায় করতেন, তবে তাঁর গোপন বহু আমল ছিল।

আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.)

 

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ