ঢাকা, শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫
১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫
১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

ইসলামপূর্ব আরবের ব্যবসা-বাণিজ্য

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
শেয়ার
ইসলামপূর্ব আরবের ব্যবসা-বাণিজ্য

যেকোনো দেশের সম্পদ ও ঐশ্বর্য নির্ভর করে দুটি বিষয়ের ওপরবাণিজ্য ও কৃষি। যেসব দেশের মাটি উর্বর তারা বিভিন্ন ধরনের শস্য ও ফল উৎপাদন করে এবং তা অনুর্বর দেশগুলোতে বিক্রি করে।

আরবের বেশির ভাগ ভূমি অনুর্বর, মরুময় ও পাথুরে; সেখানে ফল ও ফসল জন্মে না। তাই স্বাভাবিক কারণেই এসব এলাকায় কৃষির চেয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ ও উন্নতি ঘটেছে বেশি।

আরবের উর্বর অংশগুলো রাজ্যের তিন দিক থেকে সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত। বাহরাইন ও ওমান পারস্য উপসাগরের তীরে অবস্থিত, হাদ্রামাউত ও ইয়ামান আরব সাগরের তীরে অবস্থিত এবং হিজাজ ও মাদয়ান লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত।

আরবের ভেতর দিকের ইয়ামামা, নাজদ, ইয়াসরিব, খয়বার ইত্যাদি উর্বর এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ফল ও শস্য জন্মে। আরবের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো পৃথিবীর বড় বড় দেশের সামনাসামনি অবস্থিত।

ওমান ও বাহরাইন ইরান ও ইরাকের সংলগ্ন; ইয়ামান ও হারামাউত আফ্রিকা ও ভারতের কাছাকাছি অবস্থিত; হিজাজের সামনে রয়েছে মিসর এবং তার পাশে আছে শাম অঞ্চল।

তাই প্রাকৃতিক অনুকূলতার কারণে পৃথিবীর যেকোনো উন্নত ও উর্বর দেশের সঙ্গে আরবের যেকোনো ভূখণ্ডের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে।

ঐতিহাসিক সূত্র থেকে প্রমাণিত হয় যে আরবের এসব বাণিজ্যিক অঞ্চলের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অনেক বেশি সম্পর্ক ছিল। যদিও মাঝেমধ্যে বিশেষ কোনো প্রয়োজনে বা ভিন্ন কারণে তাদের পিছু হটতে হয়েছে।

আরবের একদল ব্যবসায়ী বাহরাইন থেকে জায়গা ছেড়ে চলে যায় এবং ভূমধ্যসাগরের তীরে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। এটা ছিল শাম ও কানআনের সামুদ্রিক এলাকা। বনু ইসরাঈল এই ব্যবসায়ীদের আরামি (Arameans) বলে এবং কানআনিরা ও গ্রিকরা তাদের ফিনিশীয় (Phoenicians) বলে। এই আরব ফিনিশীয়রা তাদের বাণিজ্যের জাল ইউরোপ ও আফ্রিকার দূরবর্তী অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছিল। এই ব্যবসায়ীদের দিয়ে গ্রিসে সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে এবং তার আলো ধীরে ধীরে দূর থেকে দূরতম ভূখণ্ড পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।

আরবের বাণিজ্যিক অবস্থা তাওরাতের পৃষ্ঠাগুলো থেকে যতটা স্পষ্ট হয় তার চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট হয় গ্রিক ঐতিহাসিক গ্রন্থগুলো থেকে। এসব বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয় যে আরব বণিকরা খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার বছর আগে থেকে এসব বাণিজ্যিক সেবা আঞ্জাম দিয়ে আসছে। প্রাচ্য ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক সম্পর্কের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী বা সাঁকো ছিল এরাই। আফ্রিকা ও ভারত থেকে বাণিজ্যিক পণ্য সামুদ্রিক পথে নিয়ে যাওয়া হতো এবং ইয়ামান ও হারামাউতের উপকূলে জাহাজগুলো নোঙর করত। বাণিজ্যিক পণ্য স্থলপথে লোহিত সাগরের তীর ধরে হিজাজ, মাদয়ান ও ওয়াদিউল কুরা পেরিয়ে শামে পৌঁছত। শাম থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে চলে যেত ইউরোপে অথবা শামের সীমান্ত হয়ে পৌঁছে যেত মিসরে। মিসর থেকে আলেকজান্দ্রিয়া বন্দর হয়ে রওনা হতো ইউরোপের দিকে।

আরবের প্রধান বাণিজ্যিক পথ বা আল-ইমামুম মুবিন

যে বাণিজ্যিক পথ হিজাজ হয়ে ইয়েমেন থেকে শাম অঞ্চল পর্যন্ত চলে গেছে তাকে পবিত্র কোরআন আল-ইমামুম মুবিন (প্রকাশ্য পথ) নামে আখ্যায়িত করেছে।

আসহাবুল আইকাহ ওয়াল মুতাফিকা অর্থাৎ লুত (আ.)-এর সম্প্রদায়ের বসতি লোহিত সাগরের কাছে এই পথের ওপরই অবস্থিত ছিল। পবিত্র কোরআন বলছে—‘আর আইকাবাসীরাও তো ছিল সীমা লঙ্ঘনকারী। সুতরাং আমি তাদের শাস্তি দিয়েছি। অবশ্য উভয়টি প্রকাশ্য পথের পাশে।

(সুরা : হিজর, আয়াত : ৭৮-৭৯)

ইসলামপূর্ব আরবের ব্যাবসায়িক কাফেলা সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে—‘তাদের এবং যেসব জনপদের প্রতি আমি অনুগ্রহ করেছিলাম সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে দৃশ্যমান বহু জনপদ স্থাপন করেছিলাম; ওই সব জনপদে যাতায়াতের যথাযথ ব্যবস্থা করেছিলাম এবং (তাদের বলেছিলাম,) তোমরা এই সব জনপদে নিরাপদে ভ্রমণ করো দিবস ও রজনীতে। (সুরা : সাবা, আয়াত : ১৮)

ইউসুফ (আ.)-এর ঘটনায় একটি বণিক কাফেলা যে পথ ধরে চলে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে তা এই পথ। তাওরাতে তা বর্ণিত হয়েছে এভাবে—‘ইউসুফের ভাইয়েরা চোখ তুলে দেখতে পেল যে একটি ইসমাইলি কাফেলা আসছে জালআদ থেকে... এবং মিসরের দিকে যাচ্ছে। (সাফর আত-তাকভিন : ২৫/৩৭)

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে—‘এক যাত্রীদল এলো। (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১৯)

বিভিন্ন বর্ণনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে আরবদের বহির্বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল ভারত, হাবাশা, পারস্য, বাবেল (ইরাক), শাম অঞ্চল, মিসর ও গ্রিসের সঙ্গে। এসব দেশ আরবের চারপাশে অবস্থিত, যেন আরব একটি বৃত্তের কেন্দ্র, তাকে ঘিরে ঘুরছে এসব দেশ।

দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্যিক শহর

কারয়া অর্থাৎ বাহরাইন বা ইয়ামামা, হাজরামাউত, হাজরামাউতের রাজধানী শাবওয়াহ ও পোতাশ্রয় কানাহ, সাবার রাজধানী মাআরিব, মায়িন, আদন (এডেন), আজাল, আদফার, মাদয়ান ও আইলা (আকাবা) শহরগুলোর মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন যে এগুলো পারস্য উপসাগর থেকে নিয়ে আকাবা উপসাগর পর্যন্ত আরবের উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত।

বাণিজ্যিক পণ্য

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য প্রশ্ন এই যে আরব রাজ্য হলো ঊষর ভূমি, সেখানে পানি নেই, ফসল নেই, তাহলে সেখানে ব্যবসার কী পণ্য তাদের হাতে আসত, কী কী পণ্য তারা উৎপাদন করত, আরব বণিকদের বাণিজ্যিক পণ্য আসলে কী ছিল? স্বয়ং আরবদের কাছেও এসব তথ্যের কোনো সূত্র নেই। কিন্তু যেসব জাতি ও সম্প্রদায়ের কাছে আরব বণিকরা পণ্য সরবরাহ ও কারবার করত তারা তাদের উপহার-উপঢৌকনের একেকটি জিনিস মনে রেখেছে।

আরব বণিকদের ব্যাবসায়িক পণ্য ছিল মোটামুটি তিন ধরনের :

১. মসলা ও সুগন্ধি বস্তু।

২. স্বর্ণ, মূলবান পাথর ও লোহা।

৩. চামড়া, ঘোড়ার জিন এবং ছাগল ও ভেড়া।

খিস্টপূর্ব দুই হাজার বছর আগে যেসব আরব বণিক মিসরে যাতায়াত করত তাদের বাণিজ্যিক পণ্য ছিল বালাসান, পাইন, লোবান ও অন্যান্য সুগন্ধি।

সফর আল-তাকভিন : ২৫/৩৭)

দাউদ (আ.) খ্রিস্টপূর্ব এক হাজার অব্দে সাবার স্বর্ণরাশি প্রার্থনা করেছিলেন। (জাবুর : ৭২)

তাওরাতের বর্ণনা থেকে জানা যায়, সাবার সম্রাজ্ঞী সুলাইমান (আ.)-কে ৯৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে যেসব উপঢৌকন পাঠিয়েছিলেন তা হলো সুগন্ধি বস্তু, বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও রত্নরাশি।

গ্রিক ঐতিহাসিকদের বর্ণনা এর চেয়ে বেশি তথ্য পরিবেশন করেনি। তাঁরাও এসব পণ্যের কারবার ও বাণিজ্যের কথাই বেশি উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ সোনা, উত্কৃষ্ট খুশবুদার মসলা, সুগন্ধি বস্তু এবং জ্বালানোর জন্য সুগন্ধি লাকড়ি।

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এই যে এসব খুশবুদার মসলা, সোনা, লোহা, মূল্যবান পাথর, মণিমুক্তা ইত্যাদি জিনিস আরবে কোথা থেকে আসত?

গ্রিক ঐতিহাসিকদের বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে বেশির ভাগ সুগন্ধি বস্তু উৎপন্ন হতো ইয়েমেনে, তাদের এসব বস্তুর বাগান ছিল। গ্রিক ঐতিহাসিক আগাথারচিন্ডিস (Agath-archides) (মৃ. ১৪৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) বলেন,

সমুদ্রের সংলগ্ন ভূমিতে জন্মে বালাসান গাছ (Commiphora) এবং/সুন্দর সুন্দর আরো অনেক গাছ...। সাবার ভেতরের অংশে লোবান (অর্থাৎ জ্বালানোর সুগন্ধি), দারচিনি, খেজুর ও অন্য বড় বড় গাছের ঘন বন দেখতে পাওয়া যায়। ...পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী লোকেরা বসবাস করে সাবায়। চারদিকের এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ সোনা-রুপা সাবায় আমদানি করা হয়।

ঐতিহাসিক আল-হামদানি লোবান ও জাফরান সম্পর্কে লিখেছেন, তা এখান থেকেই গোটা দুনিয়ায় যায়। ইয়ামানে ও নাজদে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও উদ্ভিদ জন্মায়। কিন্তু খুব সম্ভবত মসলা অর্থাৎ লবঙ্গ, গোল মরিচ, এলাচি, মিছরি, দারচিনি, নারকেল, তেঁতুল ইত্যাদি বস্তু দক্ষিণ ভারতের ও ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের উপকূলীয় এলাকা থেকে আরবে আমদানি করা হতো।

আমাদের এই বক্তব্যের দলিল হলোআরবি ভাষায় মসলা এবং বেশির ভাগ সুগন্ধি বস্তুর নাম সংস্কৃত থেকে এসেছে। যেমনমিশক, ফুলফুল (মরিচ), কাফুর (কর্পূর), জানজাবিল (আদা), সানদাল (চন্দন), নারজিল (নারকেল), কারানফুল (লবঙ্গ), ইত্যাদি। কোনো কোনো জিনিসের ক্ষেত্রে হিন্দ শব্দটি নামের অংশ হয়ে গেছে। যেমনআল-উদুল হিন্দি (আগর), আল-কিন্তুল হিন্দি (এক প্রকার ভেষজ উদ্ভিদ) আত-তামরুল হিন্দি (তেঁতুল)। লোহার তরবারিও রপ্তানি করা হতো ভারতবর্ষ থেকে। এ কারণে আরবি ভাষায় হিন্দিমুহান্নাদ শব্দটি তরবারির বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়। খুশবুদার মসলার মধ্যে লবঙ্গ, এলাচি, গোলমরিচ, দারচিনি, হলুদসব কিছু অন্তর্ভুক্ত। এগুলো দক্ষিণ ভারত ও ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে উৎপন্ন হতো।

আমদানি

আরব বণিকরা কী কী পণ্য নিজেদের দেশ থেকে বাইরের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যেত তা আমরা জানলাম। কিন্তু তারা বাইরে থেকে কী কী পণ্য নিয়ে দেশে ফিরত? অর্থাৎ কী কী পণ্য আমদানি করত?

ইতিহাসের হাজার হাজার পৃষ্ঠা ওল্টানোর পর আমরা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি তা এই যে বিদেশ থেকে তারা কাপড়, খাদ্য, মদ, অস্ত্র, আয়না ও অন্যান্য বিলাসী পণ্য আমদানি করত।

ইয়েমেনেও কাপড় উৎপাদিত হতো। ইয়ামানি চাদর ছিল অনেক বিখ্যাত।

সাবার রাজধানী মাআরিবে তুলাশিল্প ও বস্ত্রশিল্প ইসলামের আগমন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তাই মহানবী (সা.) এখানকার অধিবাসীদের জিজিয়া হিসেবে দিরহাম ও দিনারের বদলে কাপড় নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মুআজ (রা.)-কে ইয়েমেনের উদ্দেশে (শাসক নিযুক্ত করে) পাঠালেন, তখন প্রত্যেক অমুসলিম বালেগ ব্যক্তি থেকে এক দিনার বা তার সমমূল্যের মুআফিরি কাপড়, যা ইয়েমেনে প্রস্তুত হয়, আদায় করার নির্দেশ দিলেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩৬)

ইয়েমেনের বেশির ভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল ভারতবর্ষের সঙ্গে। তাই নিশ্চিতরূপে বলা যায় যে এসব কাপড়ের পুরোটাই ইয়েমেনে উৎপাদিত হতো নাকি ভারত থেকেও আমদানি করা হতো। মুসলিম ব্যবসায়ীরা শাম থেকে কাপড় আমদানি করত। আর সম্ভবত তারা খাদ্য আমদানি করত ইয়েমেন থেকে। তবে সাধারণভাবে বেশির ভাগ খাদ্য আমদানি করা হতো শাম অঞ্চল থেকে।

(সূত্র : আল কোরআনের ভৌগোলিক ইতিহাস)

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭৫৮
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : “তিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও তাদের মধ্যবর্তী সব কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেন। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনিই ‘রহমান’, তাঁর সম্পর্কে যে অবগত আছে, তাকে জিজ্ঞাসা করে দেখো। যখন তাদের বলা হয়, সিজদাবনত হও রহমানের প্রতি... তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিনকে পরস্পরের অনুগামীরূপে তার জন্য, যে উপদেশ গ্রহণ করতে ও কৃতজ্ঞ হতে চায়।

” (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৫৯-৬২)

আয়াতগুলোতে তারকারাজি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১. আসমান-জমিন এবং এই দুয়ের মধ্যকার সব বিষয় সম্পর্কে মহান আল্লাহই পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন। তাই সৃষ্টিজগত্ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে তাঁরই দ্বারস্থ হতে হবে।

২. বরকত হলো কোনো কিছুতে আল্লাহ প্রদত্ত কল্যাণ লাভ করা।

শুধু বাহ্যিক প্রবৃদ্ধিই কল্যাণ নয়।

৩. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, বুরুজ হলো বড় বড় নক্ষত্র বা ১২টি প্রসিদ্ধ রাশিচক্র।

৪. আয়াত থেকে বোঝা যায়, গ্রহ, নক্ষত্র ও তারকারাজির মধ্যে আল্লাহ মানুষের জন্য কল্যাণ রেখেছেন। এটা মানবজাতির প্রতি তাঁর একান্ত অনুগ্রহ।

৫. ওমর (রা.) বলেন, দিনে বা রাতে যেসব ইবাদত নিয়মিত আদায় করা হয় তা ছুটে গেলে স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদায় করে নেবে (যদি নিষিদ্ধ সময় না হয়)।

(বুরহানুল কুরআন : ২/৬২৩)

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মুসলিম বাঙালি নারীর আত্মপরিচয়

আহমাদ আরিফুল ইসলাম
আহমাদ আরিফুল ইসলাম
শেয়ার
মুসলিম বাঙালি নারীর আত্মপরিচয়

বাংলার মাটি ও বাঙালির সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থলে যে অনবদ্য শক্তির প্রতিচ্ছবি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জ্বলজ্বল করে এসেছে, তা হলো বাঙালি মুসলিম নারী। সে শুধু একটি লিঙ্গ পরিচয়ের বাহক নয়, সে এই জাতির বিশ্বাস, মূল্যবোধ, পারিবারিক বন্ধন, শালীনতা ও আত্মমর্যাদার এক জাগ্রত প্রতীক। বাংলার প্রতিটি পরতে পরতে তার অবদান ইতিহাসে লেখা, পরিবারে প্রোথিত এবং সমাজে প্রমাণিত।

 

ঐতিহাসিক নির্মাণে বাঙালি মুসলিম নারী

ইসলামী ইতিহাসে নারীদের মর্যাদার যে উদাহরণ নবীজির (সা.) যুগ থেকে শুরু করে পরবর্তী যুগ পর্যন্ত চলে এসেছে, বাঙালি মুসলিম নারী সেই আদর্শ থেকেই নির্মিত হয়েছে।

শিক্ষার ক্ষেত্রে মা আয়েশা (রা.), ত্যাগের ক্ষেত্রে খাদিজা (রা.), সাহসিকতার ক্ষেত্রে নুসাইবা বিনতে কাব (রা.)-এর জীবনী আমাদের পূর্বসূরি মুসলিম নারীদের অনুপ্রেরণা দিয়েছে।

এই আদর্শ নিয়েই বাংলা সমাজে মুসলিম নারী গড়ে তুলেছে পরিবার, সাহসিকতা আর শালীনতার সম্মিলনে একটি অনন্য জীবনধারা।

বাঙালি মুসলিম নারী সংসারপটু, লাজুক, পর্দাশীলধর্মবিশ্বাসী’—এই চারটি শব্দের ছায়ায় নিজের পরিচয় নির্মাণ করেছে।

মধ্যযুগে মুসলিম পরিবারে নারী ছিল শিক্ষিত, ধর্মচর্চায় প্রবল এবং গৃহস্থালির সংগঠক।

  তারা ছিল শিশুদের প্রথম শিক্ষিকা, স্বামীর পরামর্শদাত্রী এবং সমাজে নৈতিকতার বাতিঘর।

হাজার বছরের ঐতিহ্যে তারা কখনো বিদ্রোহিনী, কখনো আলোকবর্তিকা; কখনো গৃহকোণে সংযত সাহসিনী, আবার কখনো রাজপথে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তাদের ভূমিকা পরিবারে, সমাজে, রাজনীতিতে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে যতটা বিস্তৃত, ততটাই শিকড়গাঁথা ধর্মীয় মূল্যবোধে।

ইতিহাস সাক্ষী দেয়, বাংলার নারী কখনো সস্তা পরিচয়ে নিজেকে বিলিয়ে দেয়নি, বরং তারা ছিল পর্দার আড়ালে থেকেও সবচেয়ে দৃঢ় কণ্ঠস্বর, ছিল সংসারের শান্তি, সমাজের স্থিতি, আর নৈতিকতার প্রহরী।

 

আধুনিকতার অভিঘাতে নতুন চ্যালেঞ্জ

তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বায়ন, বাজার-অর্থনীতি ও তথাকথিত উন্নয়ন চিন্তার অভিঘাতে বাঙালি মুসলিম নারীর আত্মপরিচয় এক নতুন সংকটের মুখে পড়েছে। নারীবাদ ও মানবাধিকারের নামে এমন কিছু ধারণা ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা তার প্রকৃত মর্যাদা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

নারীর স্বাধীনতা কথাটিকে অনেক সময় এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন ধর্ম, পরিবার বা শালীনতাসব কিছুই নারীর জন্য এক ধরনের শৃঙ্খল। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, বাঙালি মুসলিম নারীর স্বাধীনতা মানে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জীবনের নিশ্চয়তা, যেখানে সে নিজেকে রক্ষা করতে পারে, সন্তানদের গড়তে পারে, সমাজকে আলোকিত করতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে যখন পতিতাবৃত্তিকে শ্রম হিসেবে স্বীকৃতির প্রস্তাব আসে, তখন সেটি নিছক একটি শ্রমনীতির বিষয় থাকে না, বরং হয়ে দাঁড়ায় এক গভীর সাংস্কৃতিক সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু।

কারণ বাঙালি মুসলিম নারীর সমাজে দেহ নয়, চরিত্রই পুঁজি। পতিতাবৃত্তি তাঁর জীবনের পথ নয়, বরং দুর্দশার গ্লানি।

এই সমাজে একজন পতিতা কখনোই নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না, বরং তারা পুনর্বাসনের দাবি রাখে, সম্মানিত জীবনের সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু সেই পেশাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিলে তা হবে আত্মমর্যাদার ভিত্তিকে কাঁপিয়ে দেওয়া।

 

বাঙালি মুসলিম নারীর ভবিষ্যত্ কোন পথে?

আজ আমাদের সমাজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে রয়েছে ইসলামী মূল্যবোধ, পারিবারিক শৃঙ্খলা ও সামাজিক শালীনতার ঐতিহ্য। অন্যদিকে রয়েছে ভোগবাদ, পণ্যায়ন ও আত্মপরিচয়ের বিভ্রান্তি। এই দ্বন্দ্বে বাঙালি মুসলিম নারী কী করবে?

উত্তর একটাইতাকে তার শিকড়ে ফিরতে হবে। তাকে জানতে হবে তার ইসলাম কী বলে, সমাজ কী প্রত্যাশা করে এবং আত্মমর্যাদা কিসে রক্ষা পায়। ইসলাম নারীর স্বাধীনতাকে তার সম্ভ্রমহানির ছায়া নয়, বরং সম্মানজনক জীবনের নিশ্চয়তা হিসেবে দেখেছে। তাই কোনো আইন, সংস্কার কিংবা উন্নয়নের অজুহাতে যদি নারীকে তার ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা হয়, তা সমাজে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি ডেকে আনবে।

নারী স্বাধীনতা মানেই তার শালীনতাকে সম্মান করা, পরিবারকে গুরুত্ব দেওয়া এবং সমাজে কার্যকর ভূমিকা রাখা। একমাত্র এই পথেই বাঙালি মুসলিম নারী হতে পারে তার ইতিহাসের যোগ্য উত্তরসূরি।

 

 

মন্তব্য

জুমার নামাজের গুরুত্ব

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
জুমার নামাজের গুরুত্ব

ইসলামের দৃষ্টিতে জুমার দিনকে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা নবীজি (সা.) বলেছেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এদিন আদম (সা.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং সেখান থেকে দুনিয়ায় অবতরণ করানো হয়েছে। জুমার দিনই কিয়ামত সংঘটিত হবে।

(মুসলিম, হাদিস : ১৮৬২)

ইসলামের জুমার দিনের গুরুত্ব অপরিসীম। জুমার দিনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নবীজি এই দিনকে ঈদের দিনের সঙ্গে তুলনা করেছেন বলে একটি সূত্রে পাওয়া যায়।

জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো জুমার নামাজ। জুমার অর্থ হলো একত্র হওয়া, সংঘবদ্ধ হওয়া।

যেহেতু এই দিনে মানুষ আল্লাহর বিধান পালনার্থে একত্র হয়, তাই এই দিনকে জুমার দিন বলা হয়।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত মসজিদের দিকে ধাবিত হও। আর বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো।

(সুরা : জুমা, আয়াত : ৯)

জুমার দিনের অধিক গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নবীজি (সা.) এই দিনকে ঈদের দিনের সঙ্গে তুলা করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি জুমার সালাত আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (ইবনে মাজাহ, আয়াত : ১০৯৮)

হাদিসবিশারদের মতে, এখানে ঈদ বলে খুশি ও আনন্দের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

যেহেতু সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ এই দিনে মুসলমানরা একত্র হয়। পাশাপাশি যেহেতু এদিন প্রত্যেক মুসলমান জনসমাগমে যাবে, তাই এই দিনের কিছু আদব রক্ষার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

ইবনে আব্বাস (রা.) এই দিনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে এই দিনকে ‘‌গরিবের হজ বলে আখ্যা দিয়েছেন। (তাবরানি)

উদ্দেশ্য হলো, মুসলমানরা যাতে এই দিনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে এবং এই দিনের পবিত্রতা রক্ষা করে ইবাদতে মনোনিবেশ করতে পারে। কোনো অবস্থায়ই যেন এই দিনের ফজিলত থেকে বঞ্চিত না হয়। হাদিস শরিফে জুমার দিনের বহু ফজিলত ও আমলের কথা উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, এক জুমা থেকে আরেক জুমার মধ্যবর্তী সময়ের (সগিরা গুনাহের) জন্য কাফফারা হয়ে যায় যদি মুমিন কবিরাহ গুনাহ থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ৪৪০)

জুমার নামাজ আদায়ের জন্য ইসলামের দেওয়া বিধান ও আদবগুলো পালন করে বের হলে, প্রতি কদমে কদমে গুনাহ মাফ হতে থাকে। আওস ইবনে আওস আস-সাক্বাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করবে এবং (স্ত্রীকেও) গোসল করাবে, প্রত্যুষে ঘুম থেকে জাগবে এবং জাগাবে, জুমার জন্য বাহনে চড়ে নয়, বরং পায়ে হেঁটে মাসজিদে যাবে এবং কোনোরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের নিকটে বসে খুতবা শুনবে, তার (মসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নাত হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সে এক বছর যাবত্ সিয়াম (রোজা) পালন ও রাতভর সালাত (নামাজ) আদায়ের (সমান) সওয়াব পাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)

এর বিপরীতে যারা কোনো শরিয়ত সমর্থিত যৌক্তিক কারণ ছাড়া জুমার নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকবে, তারা তো অফুরন্ত সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবেই, পাশাপাশি তাদের নাম গাফিলদের তালিকায় পড়ে যাবে। আবদুল্লাহ ইবনে উমার ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তাঁর মিম্বারের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, যারা জুমার নামাজ ত্যাগ করে তাদেরকে এ অভ্যাস বর্জন করতে হবে, নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে সিল মেরে দেবেন, অতঃপর তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৮৭)

নাউজুবিল্লাহ, একজন মুমিনের জন্য এর চেয়ে বড় দুঃসংবাদ আর কী হতে পারে! উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিনা ওজরে (শরিয়ত সমর্থিত কোনো অজুহাত ছাড়া) পর পর তিন জুমা পড়া থেকে বিরত থাকে, তার নাম মুনাফিকদের খাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। (তাবরানি)

হাদিসটি সনদগতভাবে দুর্বল হলেও বিনা ওজরে জুমার নামাজ ছাড়া যে জঘন্য অপরাধ, তা জুমার দিনের ফজিলত সংবলিত হাদিসগুলো দেখলে অনুভব করা যায়।

অতএব, আমাদের সবার উচিত জুমার দিনের আদব রক্ষা করে জুমার নামাজ আদায়ের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া।

 

মন্তব্য

আরবির প্রধান পাঁচ উপভাষা

আববার আবদুল্লাহ
আববার আবদুল্লাহ
শেয়ার
আরবির প্রধান পাঁচ উপভাষা

পৃথিবীর কমপক্ষে ৩৫ কোটি মানুষ আরবি ভাষায় কথা বলে। ভাষাভাষীর বিচারে আরবি পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। ইসলামপূর্ব আরব উপদ্বীপই আরবি ভাষার জন্মস্থল। জাহেলি যুগ (যে যুগে ইসলামের আগমন ঘটে) এবং ইসলামী যুগেই আরবি ভাষার চূড়ান্ত বিকাশ সাধিত হয়।

পরবর্তী সময়ে তা বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্র্যের সংযোগে একাধিক আরবি উপভাষার জন্ম হয়। আরবির কোনো কোনো উপভাষার ভেতর পার্থক্য অনারব ভাষার মতোই প্রজ্জ্বল। যেমনকেউ যদি উত্তর আফ্রিকা ও ইরাকের দুজন আরবিভাষীর কথা শোনে তবে তার কাছে মনে হতে পারে উভয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলছে।

তবে আরবি ভাষার একটি প্রমিত রূপ শিক্ষিত আরবদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

যাকে ইংরেজিতে মডার্ন স্ট্যান্ডার্ড অ্যারাবিক (এমএসএ) বা ফুসহা বলা হয়। ফুসহা বা প্রমিত আরবি কোরআনে ব্যবহূত ধ্রুপদি আরবি ভাষার নিকটবর্তী। বর্তমানে শিক্ষা, সংবাদমাধ্যম, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক বিবৃতি এবং ধর্মীয় বক্তৃতায় ফুসহা ব্যবহার করা হয়। তবে আরবি ভাষার আঞ্চলিক উপভাষা দেশগুলোর জাতিচিন্তা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে উজ্জীবিত করে।

আরবি ভাষার প্রধান পাঁচ উপভাষা

আরবি ভাষার প্রচলিত উপভাষাগুলোর মধ্যে প্রধান পাঁচ উপভাষার পরিচয় তুলে ধরা হলো

১. মিসরীয় উপভাষা : আরবি ভাষাভাষীদের ভেতরে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ মিসরীয় উপভাষায় কথা বলে। এটা প্রায় ১০ কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ভাষা। মিসরের বাইরেও লাখ লাখ মানুষ এই উপভাষায় কথা বলে। মিসরীয় চলচ্চিত্র ও গণমাধ্যম মিসরীয় উপভাষা জনপ্রিয় করে তুলেছে। এই উপভাষার একটি বৈশিষ্ট্য হলো জিম বর্ণকে গাইন-এর মতো উচ্চারণ করা।

যেমননাজমকে (তারকা) নিগম উচ্চারণ করা। এই উপভাষার ওপর তুর্কি, ফরাসি ও ইংরেজি ভাষার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।

২. মেসোপটেমিয়ান উপভাষা : মেসোপটেমিয়ান উপভাষায় কথা বলে ইরাক, কুয়েত, সিরিয়ার একাংশ, ইরানের আরবি ভাষীরা ও দক্ষিণ তুরস্কের আরবি ভাষীরা। এই উপভাষার ওপর প্রাচীন ও আধুনিক মেসোপটেমিয়ান ভাষাগুলোর প্রভাব আছে। যেমনসুমেরি, আক্কাদি, ফারসি, কুর্দি ও গ্রিট। মেসোপটেমিয়ান উপভাষার প্রধান দুটি ধারা হলো জেলেট ও কেল্টু। এই উপভাষায় দোয়াদ বর্ণকে কিছু সা বর্ণের মতো উচ্চারণ করা হয়। একইভাবে ক্বফ বর্ণকে গাইন বর্ণের মতো উচ্চারণ করা হয়।

৩. শামি উপভাষা : ইংরেজিতে শামি উপভাষাকে লেভানটাইন বলা হয়। শামি উপভাষায় তিন কোটি ৮০ লাখ মানুষ কথা বলে। যাদের বেশির ভাগ সিরিয়া, লেবানন, জর্দান, ফিলিস্তিন ও তুর্কি সাইপ্রাসে বসবাস করে। শামি উপভাষা প্রমিত আরবির (এমএসএ) খুবই নিকটবর্তী। এই উপভাষায় সা বর্ণকে সিন বর্ণের মতো, ক্বফ বর্ণকে গাইন বর্ণের মতো এবং কাফ বর্ণকে সোয়াদ বর্ণের মতো উচ্চারণ করা হয়। শামি উপভাষার ওপর তুর্কি ভাষার বিশেষ প্রভাব রয়েছে। ইংরেজি ও ফরাসি ভাষারও সামান্য প্রভাব আছে।

৪. মাগরিবি : উত্তর আফ্রিকা তথা মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, লিবিয়া, পশ্চিম সাহারা ও মৌরিতানিয়া এবং পশ্চিম মিসরের লোকেরা এই উপভাষায় কথা বলে। স্থানীয়রা মাগরিবি আরবিকে দারিজা বলে। যার অর্থ নিত্যদিনের ভাষা। অভিযোগ আছে, মাগরিবি উপভাষা বোঝা তুলনামূলক কঠিন। এই উপভাষার ওপর ফরাসি, স্প্যানিশ, তুর্কি ও ইতালিয়ান ভাষার প্রভাব আছে। মাগরিবি উপভাষার বৈশিষ্ট্য হলো স্বরবর্ণ বিলোপ করা। যেমনপ্রমিত আরবি বাক্য মিন আইনা আনতা-এর মাগরিবি উচ্চারণ হলো মানিনতা। মিন আইনা আনতা অর্থ আপনি কোথা থেকে এসেছেন।

৫. খালিজি উপভাষা : আরবি খালিজি শব্দের অর্থ উপসাগরীয়। এই উপভাষায় কমপক্ষে ৭০ লাখ মানুষ কথা বলে। সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ ইরাক ও উত্তর ওমানের অধিবাসীরা খালিজি উপভাষায় কথা বলে। তবে প্রত্যেক দেশের খালিজি উপভাষার ব্যবহার ও উচ্চারণে সামান্য ব্যবধান আছে। এই উপভাষার বৈশিষ্ট্য হলো ক্বফ বর্ণকে গাইন বর্ণের মতো উচ্চারণ করা এবং কাফ বর্ণকে সোয়াদ বর্ণের মতো উচ্চারণ করা। খালিজি উপভাষার ওপর ফারসি ও তুর্কি ভাষার দৃশ্যমান প্রভাব আছে।

মিডল ইস্ট আই অবলম্বনে

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ