<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক<strong> ড. মোবাশ্বের মোনেম।</strong> গত ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) ১৫তম চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন তিনি। দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাসেই চাকরিপ্রার্থীদের বৈষম্য দূরীকরণে তিনি একাধিক উদ্যোগ নিয়েছেন। গতকাল সোমবার তিনি কালের কণ্ঠের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন নানা পরিকল্পনা। সাক্ষাৎকার    নিয়েছেন কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি <strong>শরীফুল আলম সুমন</strong></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left">কালের কণ্ঠ : গত দুই মাসে আপনার অভিজ্ঞতা জানতে চাই। পাশাপাশি পিএসসির প্রতি আস্থায় যে ভাটা পড়েছিল, সেখান থেকে উত্তরণে কী করেছেন?</p> <p>ড. মোবাশ্বের মোনেম : আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলাম, তখন প্রশাসনিক কাজ করতে হতো। কিন্তু এই জায়গাটা কিছুটা ভিন্ন রকমের। এখানে সহকর্মীরা অত্যন্ত সাহায্য করছেন। এতে আমার শেখার প্রক্রিয়া সহজ হচ্ছে।</p> <p>আগের কমিশনের রেখে যাওয়া বেশ কিছু ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আমরা সম্মিলিতভাবেই তা নিয়েছি।</p> <p>৪৪তম থেকে ৪৬তম বিসিএস পর্যন্ত বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই সিদ্ধান্তগুলো দেখলেই বোঝা যাবে, আমরা আস্থার জায়গা তৈরি করার জন্য কাজ করছি।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : একটা বিসিএস শেষ করতে তিন বছর পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। এই দীর্ঘসূত্রতা কমাতে কী উদ্যোগ নিয়েছেন?</p> <p>ড. মোবাশ্বের মোনেম : এখন আমাদের সদস্য আছেন আটজন। তাদের মধ্যে ছয়জনকে দিয়ে ছয়টি বোর্ড পরিচালনা করছি। দুজনকে প্রশাসনিক কাজ করতে হচ্ছে। এতে সাত মাস সময় লাগছে। এখন যদি আমরা ১২টা বোর্ড পরিচালনা করতে পারতাম, তাহলে তিন মাসে ভাইভা শেষ করা সম্ভব। আমি সরকারের কাছে আবেদন করব, দ্রুতই আমরা নতুন সদস্য যেন পাই।</p> <p>এখনকার পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষার খাতা তিনজন পরীক্ষক দেখেন। এতে প্রথমজনের কাছেই দুই মাস চলে যায়। আবার কেউ কেউ দেরিতেও খাতা জমা দেন। এরপর দ্বিতীয় পরীক্ষকের কাছেও দুই মাস বা বেশি চলে যায়। দুই পরীক্ষকের নম্বরের ব্যবধান ২০-এর বেশি হলে খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে যায়।</p> <p>আমরা এরই মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছি, একক পরীক্ষক করা যায় কি না। এর কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। আমরা প্রথম পর্যায়ে এ বিষয়টি নন-ক্যাডারের ক্ষেত্রে চালু করব। যদি ভালো ফল পাওয়া যায়, তাহলে একক পরীক্ষকের বিষয়টি ৪৮তম বিসিএস থেকে প্রচলন করার চেষ্টা করব।</p> <p>আমরা চিন্তা করছি, খাতার মধ্যে উত্তরের জায়গা দিয়ে দেব। এতে অল্প জায়গার মধ্যেই সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারবে, পরীক্ষকরাও সহজে খাতা দেখতে পারবেন। এইসব চালু করতে পারলে দীর্ঘসূত্রতা কমে আসবে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : সরকারি দপ্তরগুলোতে অনেক নন-ক্যাডার পদ শূন্য। এর পরও আপনারা কেন বিসিএস পরীক্ষা থেকে অধিকসংখ্যক নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দিতে পারছেন না?</p> <p>ড. মোবাশ্বের মোনেম : বেশিসংখ্যক নন-ক্যাডার পদে যাতে নিয়োগ দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে শিগগিরই উদ্যোগ দেখতে পারবেন। তবে অনেক দপ্তর থাকে, তারা কিছু শর্ত জুড়ে দেয়। এখন সেই শর্তগুলো যদি প্রার্থীরা পূরণ না করে তাহলে তো আমাদের সুপারিশ করার সুযোগ থাকে না। আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে শর্ত সহজ করে বেশিসংখ্যক নিয়োগ দেওয়া যায়। নন-ক্যাডার নিয়োগের যে বিধি আছে, সেটা নিয়েও আমরা আলোচনা করব।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : চাকরির বয়স থাকা পর্যন্ত যতবার খুশি বিসিএস দেওয়ার উদ্যোগটা কত দূর এগিয়েছে?</p> <p>ড. মোবাশ্বের মোনেম : চাকরির বয়স ৩২ বছর করা হয়েছে। এর মধ্যে এখন চারবার বিসিএস দেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু ৩২ বছর হওয়া পর্যন্ত যতবার সুযোগ পায় ততবারই বিসিএস দেওয়ার একটা প্রস্তাব আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন সরকার সিদ্ধান্ত জানাবে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : আগে বিসিএসের ভাইভায় একজন প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচয় প্রাধান্য পেত। এ ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই।</p> <p>ড. মোবাশ্বের মোনেম : আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২ বছর শিক্ষকতা করেছি। কোনো দিনই ছাত্র-ছাত্রীদের রাজনৈতিক পরিচয় জানার চেষ্টা করিনি। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে আমার দায়িত্ব হচ্ছে, কারো পরিচয় জানতে না চাওয়া। আমাদের যারা ভাইভা নেবেন, তারাও কেউ যেন এগুলো জানতে না চান, সেটাই আমার প্রত্যাশা থাকবে।</p> <p>আমার জানতে হবে, একজন প্রার্থী রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ কি না। এর বাইরে সে বাংলাদেশের নাগরিক। পিএসসির কাজ হচ্ছে মেধাবীদের নির্বাচন করা; কে কোন দল করে, সেটা দেখা নয়।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : ক্যাডার-ননক্যাডার জট খোলার কি কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন?</p> <p>ড. মোবাশ্বের মোনেম : এ বিষয়ে আমরা একটা ক্যালেন্ডার তৈরির চেষ্টা করছি। প্রতিটি বিসিএসের জন্য একেকজন বিজ্ঞ সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা একটা টাইমলাইন দিয়ে এই ক্যালেন্ডার তৈরি করবেন। এরপর আমরা একটা মাস্টার ক্যালেন্ডার তৈরি করব।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশে আপনি কী বলবেন?</p> <p>ড. মোবাশ্বের মোনেম : চাকরিপ্রার্থীরা হয়তো সরকারি চাকরির বাইরে চিন্তা কম করে। সবাই মনে করে, সরকারি চাকরিতে একটা সম্মান আছে। এখন যদি আপনি প্রাইভেট জব করেন বা উদ্যোক্তা হন, তাহলে সেখানেও তো সম্মান আছে। আমি বলব, একজন চাকরিপ্রার্থী যে বিষয়েই পড়ুক না কেন, সে যেন তাতে ভালো করে জ্ঞান অর্জন করে।</p> <p>চাকরিপ্রার্থীদের বলব, আগে যে অনিয়মগুলো ছিল, সেগুলো নিয়ে ভাবনার প্রয়োজন নেই। একটা আস্থার জায়গায় আমরা পিএসসিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। খোলা মনে বলতে চাই, মেধা থাকলে চাকরি হবে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।</p> <p>ড. মোবাশ্বের মোনেম : আপনাকেও ধন্যবাদ।</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>