ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫
১৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৫ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫
১৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৫ সফর ১৪৪৭
পিরোজপুরে এলজিইডিতে ভয়াবহ দুর্নীতি-২

অসাধু কর্মীদের যোগসাজশে ঠিকাদারদের অর্থ আত্মসাৎ

  • ► এলজিইডির অন্তত ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত
  • ► পিরোজপুরের বেশির ভাগ অনিয়ম ভাণ্ডারিয়া উপজেলায়
  • ► একটি ঠিকাদার পরিবারের কাছে জিম্মি ছিল এলজিইডি
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
অসাধু কর্মীদের যোগসাজশে ঠিকাদারদের অর্থ আত্মসাৎ

পিরোজপুর জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ কে করেছেন, কার সহায়তায় করেছেনএসব প্রশ্নের জবাব খুঁজছে সাধারণ মানুষ।

এলজিইডির তদন্তে দেখা গেছে, তাদের অন্তত ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, একটি ঠিকাদার পরিবারের চারটি প্রতিষ্ঠান ঘুরেফিরে সব কাজ পেয়েছে, যার মূলে ছিলেন তিন ভাই।

তাঁরা হলেন মহিউদ্দিন মহারাজ, মিরাজুল ইসলাম ও শামছুদ্দিন হাওলাদার।

এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা এবং মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিন বছরের এই অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের ঘটনায় এলজিইডির পিরোজপুরের সম্প্রতি অবসরে যাওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার হাওলাদার জড়িত। নিয়ম অনুযায়ী, এই আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছাড়া কোনো টাকা ঠিকাদারের পাওয়ার সুযোগ নেই। তিনিই ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে এসব কাজ করেছেন।

সাবেক এই কর্মকর্তার বিষয়ে তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে অবসরের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি পিরোজপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁকে তিনবার বদলির উদ্যোগ নিয়েছিল এলজিইডির প্রধান কার্যালয়, কিন্তু প্রতিবারই তা ঠেকাতে সমর্থ তিনি হন। এ ক্ষেত্রে তাঁকে সহায়তা করেন ওই ঠিকাদার।

এলজিইডির কর্মকর্তারা বলছেন, আব্দুস সাত্তার কোনো নীতি বা অফিশিয়াল নিয়ম-কানুন অনুসরণ করতেন না।

আদালতে মামলা করে বদলি স্থগিত করেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আব্দুস সাত্তার হাওলাদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

এলজিইডি পিরোজপুরের যেসব অনিয়ম পাওয়া গেছে, এর বেশির ভাগই ভাণ্ডারিয়া উপজেলায়। রাস্তা ও ব্রিজের অনিয়ম, ভ্যাট, আয়কর, ল্যাব টেস্ট ফি, রোলার ভাড়া ইত্যাদির অনিয়ম, ফাইল হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় বেশি। ভাণ্ডারিয়ায় এই অনিয়মের ক্ষেত্রে উপজেলা প্রকৌশলী বদরুল আলম জড়িত বলে স্থানীয় সরকার বিভাগে জানিয়েছে এলজিইডি।

এ ছাড়া এই উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী, নকশাকার ও সার্ভেয়ার এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বদরুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, একাধিক প্রকল্প থাকলে ওভারল্যাপিং হবেই। তবে এসব অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত চলছে। স্যাররা এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে আমাকে নিষেধ করেছেন।

আবুল কালাম আজাদ ২০০৬ সাল থেকে পিরোজপুর জেলায় উপসহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত ছিলেন। সহকারী প্রকৌশলী পদের চলতি দায়িত্ব পেয়েও তিনি ২০২৩ সালের ৯ মে থেকে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত পিরোজপুর জেলায় পোস্টিং নেন। মাঝে দুই বছর উপসহকারী হিসেবে কাউখালীতে বদলি হলেও নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে ওই পদে কাজ করেন। তিনিও এই অনিয়মে জড়িত ছিলেন বলে এলজিইডি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়।

এর আগে ২০১১ সাল থেকে এ কার্যালয়ে থাকা আব্দুল হাই, ২০১৩ সালে দায়িত্বে থাকা রফিকুল হাসান পিরোজপুর জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের আগে একই জেলার সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য রয়েছে অধিদপ্তরে।

প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত রঞ্জন রায়, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম এবং হিসাবরক্ষক এ কে এম মোজাম্মেল হক খান, বিজেপি প্রকল্পের হিসাবরক্ষক আনোয়ারুল ইসলামকেও দায়ী করছে এলজিইডি।

ঠিকাদার পরিবারের কাছে জিম্মি : একটি ঠিকাদার পরিবারের কাছে জিম্মি ছিল পিরোজপুরের এলজিইডি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, এই পরিবারের ঠিকাদারদের দৌরাত্ম্যের সুযোগ করে দিয়েছেন সাবেক মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। প্রাথমিক তদন্তে সাবেক এই মুখ্য সচিবের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে মন্ত্রণালয়। এক সংবাদ সম্মেলনে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, পিরোজপুর জেলায় বিভিন্ন প্রকল্পের যে বরাদ্দ দেওয়া হতো, সেখানে অর্থ লুটপাটের প্রাথমিক প্রমাণ আমরা পেয়েছি। এর সঙ্গে সাবেক মুখ্য সচিবের প্রাথমিক সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত এখনো চলছে।

তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ২০১৮ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। এর পর থেকে তিনি ঠিকাদার পরিবারকে সব ধরনের প্রশাসনিক সহায়তা করেন। তাঁদের বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সঙ্গী হন। ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁর নিয়োগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন।

১৫ বছর ধরে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল তিন ভাই মহিউদ্দিন মহারাজ, মিরাজুল ইসলাম ও শামছুদ্দিন হাওলাদারের হাতে। মহিউদ্দিন মহারাজ সর্বশেষ ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। একসময় জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর একান্ত সচিবও ছিলেন তিনি। তাঁর ছোট ভাই মিরাজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁদের অন্য ছোট ভাই শামসুদ্দিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা।

তাঁদের মালিকানাধীন ইফতি ইটিসিএল, মেসার্স তেলিখালি কনস্ট্রাকশন, মেসার্স ইষান এন্টারপ্রাইজ ও ঐশী কনস্ট্রাকশনএই চারটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পিরোজপুরের প্রায় সব কাজ করতেন। পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় তাঁদের কথার বাইরে কিছুই হতো না। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবের কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস পেত না কেউ।

স্থানীয় লোকজন জানায়, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভাণ্ডারিয়ায় এই তিন ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে ভূরিভোজ করতেন। এলজিইডির ঠিকাদারের বাড়িতে প্রধান প্রকৌশলীর এই ভোজ নিয়ে তীব্র সমালোচনাও হয়েছিল।

২০১১ সাল থেকে এই দুর্নীতি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও তদন্ত আটকে যায়।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, মহিউদ্দিন মহারাজ ও মিরাজুল ইসলাম বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। অন্য ছোট ভাই শামসুদ্দিন হাওলাদার গ্রামের কোথাও আত্মগোপনে রয়েছেন। 

ভাণ্ডারিয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতিকুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, আমরা এই ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে দুদকসহ সরকারের বিভিন্ন মহলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলেও কোনো ফল হয়নি। উল্টো আমাদের হয়রানি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মহিউদ্দিন মহারাজ প্রকাশ্যে বলেছেন, নদীর পানি শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু আমাদের টাকা শেষ হবে না। তাঁর কথার প্রমাণ তাঁরা দেখিয়েছেন। কাজ না করেই যে তাঁরা টাকা আত্মসাৎ করছেনএটা ওপেন সিক্রেট। আশা করছি, এবার প্রতিকার পাব।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

রাউজানে সংঘর্ষ

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত, গিয়াস কাদেরের পদ স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও রাউজান প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও রাউজান প্রতিনিধি
শেয়ার
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত, গিয়াস কাদেরের পদ স্থগিত

চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সংঘর্ষের পর রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে গতকাল বিকেল সোয়া ৪টার দিকে রাউজান পৌরসভার সত্তারঘাট এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। তাতে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সংসদ সদস্য এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার গুরুতর আহত হন।

সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন নেতাকর্মী আহত হন, ভাঙচুর করা হয় গোলাম আকবরের পাজেরো গাড়ি এবং অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গোলাম আকবর খোন্দকার রাউজানের সুলতানপুরে বিএনপির সাবেক নেতা মহিউদ্দিন আহমেদের পারিবারিক কবরস্থান জিয়ারত করতে যাচ্ছিলেন। পথে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দীন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে সংঘর্ষ বাধে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি চলে।

এক পর্যায়ে গুলির ঘটনাও ঘটে।

গোলাগুলিতে গিয়াস কাদেরের পক্ষের দুই-তিনজন এবং ইটপাটকেলে গোলাম আকবর খোন্দকারসহ উভয় পক্ষের আরো অন্তত ৪০ জন আহত হন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

 

গিয়াস কাদেরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

ঘটনার পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দীন কাদের চৌধুরীকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, গিয়াস কাদের চৌধুরী কয়েক মাস ধরে নিজের এলাকায় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মদদ ও সহিংসতায় উসকানি দিয়ে আসছিলেন।

চিঠিতে বলা হয়, আপনাকে একাধিকবার সতর্ক করার পরও আপনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করছেন। তাই দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আপনাকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হলো। পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার

একই দিন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি ও যুবদলের পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করে। তাঁরা হলেনচট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব গাজী নিজাম উদ্দিন, বারৈয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দিদারুল ইসলাম মিয়াজী, যুবদল নেতা সিরাজুল ইসলাম এবং যুবদল নেতা কামাল উদ্দিন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মিরসরাইয়ে বিএনপির অন্তত অর্ধডজন নেতাকর্মী দলীয় কোন্দলের জেরে নিহত হন। ওই সব ঘটনার তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিলুপ্ত ঘোষিত কমিটি ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর গঠন করা হয়েছিল। গোলাম আকবর খোন্দকার ছিলেন আহ্বায়ক, সদস্য ছিলেন ৪৩ জন। পরে ২০২২ সালের জুলাইয়ে সদস্যদের মধ্য থেকে ৯ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হলেও এই কমিটির মাধ্যমেই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কার্যক্রম চলছিল।

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, সংঘর্ষের পাশাপাশি চলমান অভ্যন্তরীণ কোন্দল, পাল্টাপাল্টি অবস্থান এবং বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনায় কেন্দ্রীয় কমিটি কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

 

মন্তব্য
রংপুরে হিন্দুবাড়িতে হামলা

ফিরেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা বাড়িঘর মেরামত করে দিচ্ছে প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর
নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর
শেয়ার
ফিরেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা বাড়িঘর মেরামত করে দিচ্ছে প্রশাসন

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ির আলদাদপুর বালাপাড়া গ্রামে হিন্দুপল্লীতে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামত করে দিচ্ছে প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে এই কার্যক্রম শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগকে কেন্দ্র করে শনিবার রাত ও রবিবার কয়েক দফা হামলায় অন্তত ২২টি হিন্দু বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

হিন্দুপল্লীতে হামলার ঘটনায় গত তিন দিনেও কোনো মামলা করা হয়নি।

গ্রেপ্তার করা হয়নি কাউকে। পুলিশ সুপার আবু সাইম হামলায় জড়িত সন্দেহে পাঁচ-ছয়জনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গ্রামে এখনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হামলার কারণে স্বজনদের বাড়িতে যাওয়া রঞ্জন রায়ের পরিবারসহ অন্যরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরেছেন।

  প্রশাসনের শ্রমিকদের সঙ্গে মিলে ক্ষতিগ্রস্তরা ঘরদোর ঠিক করছেন। ঘরের আসবাব মেরামত করা হচ্ছে। গঙ্গাচড়ার ইউএনও মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, সেদিনের ঘটনায় ২২টি পরিবারে হামলা করা হয়। এর মধ্যে ১৫টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ১৫ বান্ডেল ঢেউটিন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১০ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, চিনি, লবণ, মরিচের গুঁড়াসহ আট উপকরণের ৩০টি বস্তা দেওয়া হয়েছে। ১০টি চুলা ও চারটি টিউবওয়েল দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ ও প্রয়োজন অনুযায়ী নগদ অর্থ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইউএনও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি।

তারা স্বজনদের বাড়িতে ছিল, সকালেই বাড়িতে ফিরেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়িঘর সংস্কার করাসহ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

স্থানীয়  ইউপি সদস্য শ্রী পরেশ চন্দ্র জানান, শনিবার রাত ও রবিবার দুই দফা হামলায় ২২টি পরিবারের মধ্যে ১৫টি পরিবার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনের নিয়োগ করা শ্রমিকরা সকাল থেকে সেখানে মেরামতের কাজ করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরে নতুন টিন লাগানো হয়েছে। ঘরের আসবাব মেরামত করা হচ্ছে।

স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন প্রশাসনের পদক্ষেপে কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করলেও আতঙ্ক কাটেনি তাদের। কেশবের স্ত্রী সন্ধ্যা রাণী বলেন, পুলিশ আছে, তার পরও আমাদের আতঙ্ক কাটেনি, আবার হামলা করবেএমন টেনশন হয়।

চন্দনা বলেন, সকাল থেকে সমস্যা নাই। সবাই মিলে আছি। বাড়িঘর তো সব ভাঙ্গি দিছে। সকালে সরকার থাকি টিন দিছে, চাল দিছে, রান্না করি খাইছি। কিন্তু টেনশন তো আছে।

রংপুরের পুলিশ সুপার আবু সাইম বলেন, মামলার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে আমরা পাঁচ-ছয়জনকে শনাক্ত করেছি। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, নিরাপত্তার ঘাটতি নেই। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আছেন। ক্ষতিগ্রস্তরা বাড়িতে আছেন।

দুপুর দেড়টার দিকে রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্যসচিব আনিছুর রহমান লাকু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে শাড়ি-লুঙ্গিসহ শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ পেয়ে গত শনিবার রাতে এক কিশোরকে আটক করে থানায় আনা হয়। পরদিন সাইবার সুরক্ষা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আদালত তাকে শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। ওই কিশোর একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী।

মন্তব্য
জামায়াত আমির

বিচার ও সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে বিপর্যয় হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বিচার ও সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে বিপর্যয় হবে
শফিকুর রহমান

জুলাই আন্দোলন ঘিরে আওয়ামী লীগের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আগে কোনো নির্বাচন হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

জামায়াত আমির বলেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে হবে। বিচার ও সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে সেটা জাতির জন্য ডিজাস্টার (বিপর্যয়) হবে।

তিনি আরো বলেন, শহীদ পরিবারের দাবি, বিচার না দেখে তারা কোনো নির্বাচন চায় না।

বিচারের বিষয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার চাই, কিন্তু যেন বিচারের নামে ওদের ওপর অন্যায় না হয়। ওদের প্রাপ্য বিচার বুঝিয়ে দেওয়া হোক। জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, ইতিহাস যেন হারিয়ে না যায়, সেটিকে ধরে রাখা আমাদের কর্তব্য।

শ্রদ্ধার সঙ্গে আমাদের স্মরণ করতে হবে, কারণ আজকের অবস্থানও এসেছে সেই ত্যাগের বিনিময়ে।

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিংয়ের উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, সেখানে কিছু অপূর্ণতা ছিল, তা পূরণ করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের ওপর অবিচার হয়েছে, আমাদের নেতাদের বিচারিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছেএমন বিচার আর দেখতে চাই না।

জামায়াত আমির বলেন, বিচার যেন শতভাগ স্বচ্ছ ও ন্যায়ের ভিত্তিতে হয়।

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেলে কেউই পার পাবেন নাএ বিশ্বাসই আমাদের।

তিনি বলেন, যারা খুন করেছে, তারা যেন তাদের ন্যায্য শাস্তি পায় এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর হয়। এই প্রক্রিয়ায় দলের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

সরকার গঠনে সুযোগ পেলে কিংবা বিরোধী দলে থাকলেও জামায়াতের ভূমিকা হবে স্পষ্ট, ন্যায়নিষ্ঠ ও অকুতোভয় জানান জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, আমরা কাউকে ভয় করব না, শুধু আল্লাহকে।

দায়বদ্ধ থাকব নিজের বিবেক ও দেশবাসীর কাছে। অন্য দলগুলো থেকেও একই প্রতিশ্রুতি আশা করি।

মন্তব্য
কুমিল্লার মুরাদনগর

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ

কুমিল্লা (উত্তর) প্রতিনিধি
কুমিল্লা (উত্তর) প্রতিনিধি
শেয়ার
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ
কুমিল্লার মুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে মুরাদনগর উপজেলার সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা। বিকেলে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগের দাবিতে কুমিল্লার মুরাদনগরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র-জনতা।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সর্বস্তরের সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে মুরাদনগর উপজেলা গোলচত্বর থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি উপজেলা পরিষদ চত্বর, থানা প্রাঙ্গণ ঘুরে গোলচত্বরে এসে শেষ হয়। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন শিক্ষার্থীরা।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাড়ি মুরাদনগর উপজেলারই আকুবপুর গ্রামে।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে বক্তারা বলেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন মাস্টার নানা অপকর্মে জড়িত। তিনি মব সৃষ্টি করে মুরাদনগরের আকুবপুরে ট্রিপল মার্ডার ঘটানোর পেছনে ইন্ধন দিয়েছেন। এক স্কুল শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।

বর্তমানে ওই নারী ভয়ে বাড়ি যেতে পারছেন না। এ ছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুকুর দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। আর এসব অপকর্মের প্রশ্রয় দিচ্ছেন উপদেষ্টা আসিফ।

বক্তারা আরো বলেন, আসিফ মাহমুদের বাবা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিরীহ মানুষদের পুলিশ দিয়ে মামলা ও গ্রেপ্তার করিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন।

অবিলম্বে এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার   করতে হবে। তিনি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের লোকজন ও আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনে সহযোগিতা করছেন।

সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা হিন্দু পরিষদের নেতা দুলাল দেবনাথ, মুরাদনগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিপ্লবী কমিটির সদস্যসচিব নাহিদুল ইসলাম নাহিদ, ছাত্রদলের আহ্বায়ক খায়রুল হাসান প্রমুখ।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ