গত বছর ডিসেম্বর থেকে চলতি বছর ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ডিবি পুলিশ পরিচয়ে চট্টগ্রাম মহানগরে দুটি অপহরণ ও একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, যার মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ডিবি পরিচয়ে চট্টগ্রামে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করা হয়েছে। ডিবি পরিচয়ে অপহরণ বা ডাকাতি করতে গেলে সন্দেহ হলে পাশের থানাকে অবহিত বা ৯৯৯ নম্বরে কল করতে বলছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট থানার কদমতলী পোড়া মসজিদ এলাকার নিজের দোকানের সামনে থেকে দিনের বেলা শুভাশিষ বসু নামের এক ব্যবসায়ীকে গোয়েন্দা পরিচয়ে (ডিবি) মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়। গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে তাঁর দুই হাতে হাতকড়া লাগিয়ে দেওয়া হয়। গাড়িতে তোলার দুই ঘণ্টা পরে তাঁকে একটি বাসায় ঢোকানো হয়। ওই সময় তাঁর কাছে তিন কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
পরে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে শুভাশিষকে টিটু চৌধুরী হাট এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সদরঘাট থানায় একটি মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী। পরে অভিযান চালিয়ে হাটহাজারী থেকে মাইক্রোবাসের চালক রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয়। রায়হান পুলিশকে জানিয়েছেন, এই অপহরণের ঘটনায় সাতজন জড়িত।
এ বিষয়ে শুভাশিষ বসু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অপহরণের ঘটনায় মামলা করেছি। ঘটনায় জড়িত মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে আমার দোকানের সামনে নামতেই দুজন যুবক ধাক্কা দিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তুলে ফেলে আমাকে। দোকানের কর্মচারীরা বাধা দিলে অপহরণকারীরা নিজেদের ডিবির লোক পরিচয় দেয়।
মাইক্রোবাসে ওঠার পর আমার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেওয়া হয়। একটি গামছা দিয়ে চোখ বাঁধা হয়। ওই সময় গাড়িতে চারজন ছিল। এক পর্যায়ে তারা মুক্তিপণ দাবি করে।’
চট্টগ্রামের সদরঘাট থানার ওসি আব্দুর রহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কদমতলী থেকে ব্যবসায়ীকে অপহরণের ঘটনায় মাইক্রোবাসের চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় কারা জড়িত সেই তথ্য পেয়েছি। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে কারা জড়িত তা তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’
ভবনের কেয়ারটেকার আবদুল আজিজ বলেন, ‘পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা ভবনে প্রবেশ করে। তারা একটি বাসা থেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা লুট করে নিয়ে যায়।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র উপকমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না। অপরাধীরা বিভিন্ন সময়ে অপরাধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিচয় ধারণ করে। যেহেতু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নাম-পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধ করছে, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অপরাধীকে গ্রেপ্তার করছি। ডিবি সাদা পোশাকে থাকে। সাদা পোশাকে অভিযান করার কারণে অপরাধীরা এই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’