<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই বঙ্গের প্রতি রবীন্দ্রনাথের কী পরিমাণ ভালোবাসা ছিল, তা তাঁর রচনা না পড়লে অনুমান করা কঠিন। আমরা অনায়াসে পেয়েছি, তাই তার মূল্য দিই না। জগতের নানা অভিন্নতা আমাদের বিভ্রান্ত করে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শতবর্ষ আগেও পতিসরের নাগর নদে বসে তিনি নিজেদের ভবিষ্যৎ ভাবনায় ৭ই আষাঢ় ১৩০৫ বঙ্গাব্দে চিরকালের স্বাধীন চিত্তবৃত্তির মানুষের ভাবনাকে তুলে ধরেন এবং করণীয় সম্পর্কে বার্তা দিয়ে যান। বলেছিলেন, আমরা যেন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাস্যমুখে অদৃষ্টের</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> পরিহাস করে ভুবনজয়ী হই। রবীন্দ্রনাথের এই আকুলতা আমরা আমলে আনিনি। নানা ঘেরাটোপের মধ্যে নিজেদের আবদ্ধ করে, নিজেদের পরাজয় নিজেরাই ডেকে আনছি। এসব ভয়াবহ পরিণতির জন্য আমরাই দায়ী। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বলা হয়ে থাকে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">না, লোভ আছে বলেই জগৎ-সংসার বহমান। তবে লোভের মাত্রা যদি ব্যক্তিস্বার্থ বৃদ্ধির মাত্রার স্বাভাবিককে হার মানায়, তখনই ধ্বংস অনিবার্য হয়ে ওঠে। মনে হয় এই সহজ বোধ সবার আছে, তবে তা যখন ব্যক্তির গণ্ডি ছাড়িয়ে যায় তখনই আসে বিপর্যয়। এমনিভাবে শত সহস্র বছরের পৃথিবীতে অসংখ্য বিপর্যয় এসেছে। বলা হয় সভ্যতা কখনো সাগর তলায়, আবার কখনো মাটির নিচে হারিয়ে গেছে। তাদের কীর্তি-অকীর্তি আমরা পাই কিংবদন্তিতে, কখনো আবার মহাকাব্যে। আমরা বিস্মিত হই। না, বিস্মিত হওয়ার কী আছে, এ আমাদের পূর্বপুরুষের কৃতকর্মের ফল। আকাশ থেকে নেমে আসেনি, আকাশ থেকে নামিয়ে আমরা শতসান্ত্বনা খুঁজেছি। মানবকল্যাণ যে হয়নি তা নয়, তবে তা স্থায়ী হয়নি। ব্যক্তিগত লোভ-লালসা আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। লোভ নয়, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আশা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেই রবীন্দ্রনাথ উজ্জ্বলভাবে দেখেছেন। তিনি মনে করেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আশা করিবার অধিকারই মানুষের শক্তিকে প্রবল করিয়া তোলে, প্রকৃতির গৃহিণীপনায় শক্তির অপব্যয় ঘটতে পারে না, এই জন্য আশা যেখানে নাই, শক্তি সেখানে বিদায় গ্রহণ করে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> আমরা আশা করব, সেই আশা যেন মানবকল্যাণে পরিণত হয়, তবেই তার মূল্য হবে দীর্ঘস্থায়ী।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের আশা সবই ব্যক্তির সমৃদ্ধিতে সীমিত। আমরা সামগ্রিক কল্যাণের ভাবনায় ভাবিত নই। সবার ভালো হবে না, ব্যক্তির সমৃদ্ধি কোন পথে, তাই খুঁজে বেড়াই। যার পরিণতি শুভ হয় না। সাময়িক হলেও হারিয়ে যায় দৃষ্টির সামনে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের যেকোনো পরিকল্পনা ভূতভবিষ্যৎ ভেবেই করা উচিত। আমরা পরিকল্পনায় হাত দিই ব্যক্তিগত সমৃদ্ধির আশা সামনে রেখে। ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেদিকে খেয়াল রাখি না। ফলে দেখতে পাচ্ছি, ভবিষ্যৎ ফলদায়ক না হয়ে হচ্ছে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভূত</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। আমাদের স্বকৃত ভূত ছাড়াবে কে? সুতরাং কাজের আগেই ভাবা উচিত নয় কি! এমন সময় আমাদের দীর্ঘমুখী কল্যাণ আনে, সেটাও বুঝি না। হুজুগ করে সেই কল্যাণ ঠেকাতে বসি। আমাদের প্রায় শতবর্ষী অভিজ্ঞতায় তার বহু নজির আছে। অন্যের সামান্য সমৃদ্ধি ঠেকিয়ে রেখে বৃহত্তর কল্যাণের পথে বাধার সৃষ্টি করে। এতে আমাদের পথ রুদ্ধ হয়, আমরা সবার সহজ পথ পাই না। সুতরাং </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভাবিয়া করিও কাজ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> আপ্তবাক্যটি যেন ভুলে না যাই। </span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সাবেক শিক্ষক, রাজশাহী কলেজ</span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>