আমলাদের মতো গাড়ি চান বিচারকরাও

দেলওয়ার হোসেন
দেলওয়ার হোসেন
শেয়ার
আমলাদের মতো গাড়ি চান বিচারকরাও
সংগৃহীত ছবি

আমলাদের মতো বিচারকরাও সুদমুক্ত ঋণে ব্যক্তিগত গাড়ি কিনতে চান। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের গাড়ি কেনার নীতিমালার অনুমোদনও দিয়ে গেছেন। এখন অর্থ বিভাগের অনুমতি পেলেই গাড়ি কেনা শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ এবং চাকরিকাল ১৩ বছর পূর্ণ হয়েছে এমন যুগ্ম জেলা জজ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয়ের জন্য সুদমুক্ত ঋণ ও গাড়ি সেবা নগদায়ন সুবিধা পাবেন।

ঋণের টাকায় ১৫০০ থেকে ২০০০ সিসি মডেলের গাড়ি কেনা যাবে। ২০২০ সালে জারীকৃত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণ ও গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের সুদমুক্ত ঋণ ও গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা-২০২৩’-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জুডিশিয়াল সার্ভিস কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ির সুদমুক্ত ঋণের জন্য নিয়মিত চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনো অর্থ বিভাগ চূড়ান্ত অনুমোদন দিচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, ‘আইন ও বিচার বিভাগের উপদেষ্টা ও সচিবকে কয়েকবার বলা হয়েছে। তাঁরা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আইন উপদেষ্টা বলেছেন, উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তারা যদি গাড়ি পান, তাহলে সমমর্যাদার যাঁরা আছেন তাঁদের অবশ্যই গাড়ি পাওয়া উচিত।’

ব্যয় সাশ্রয়ের যুক্তি দেখিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে যুগ্ম সচিব থেকে শুরু করে ওপরের পদের কর্মকর্তাদের প্রাধিকারপ্রাপ্ত হিসেবে ২০১১ সালে সুদমুক্ত গাড়ির ঋণ চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার।

এরপর ২০১৭ সাল থেকে উপসচিবরা এ ঋণ পাচ্ছেন। এ সিদ্ধান্তের ফলে সরকারের ব্যয় যেমন বেড়েছে, তেমনি অন্যান্য ক্যাডারের সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডারের দূরত্ব বেড়ে গেছে। বর্তমানে প্রশাসনে কর্মরত উপসচিবদের সবাই পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা। এরপর অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাসহ পঞ্চম গ্রেডের প্রায় সব কর্মকর্তা সুদমুক্ত গাড়ির ঋণের জন্য আন্দোলন ও তদবির শুরু করেন। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাঁরা সরাসরি যেতে পেরেছেন, তাঁরা এ সুবিধা পেয়ে গেছেন।

তবে জেলা জজ হলেন গ্রেড-১, অতিরিক্ত জেলা জজ গ্রেড-২, যুগ্ম জেলা জজ গ্রেড-৩ পর্যায়ের কর্মকর্তা।

এর মধ্যে ২০১৯ সাল থেকে সশস্ত্র বাহিনীর মেজর ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল বা সমমর্যাদার ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ সুবিধা পাচ্ছেন। একইভাবে ২০১৯ সাল থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব ও তদূর্ধ্ব এবং সংসদ সচিবালয়ের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ সুবিধা পাচ্ছেন। বিচারকদের মতো একটি গোয়েন্দা সংস্থার জন্যও এ ঋণের অনুমোদন দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এসব কর্মকর্তা গাড়ি কিনতে ৩০ লাখ টাকা এবং রক্ষণাবেক্ষণ, তেল ও চালকের বেতন বাবদ মাসে ৫০ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন। তবে প্রেষণ, মাঠ প্রশাসন ও প্রকল্পে কর্মরত প্রাধিকারপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার সার্বক্ষণিক গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা থাকলে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২৫ হাজার টাকা পাবেন। সচিব ও জ্যেষ্ঠ সচিব এবং সচিব পদমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তারা আরো ২৫০ লিটার পেট্রল বা অকটেন পাচ্ছেন। ফলে ঋণের টাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার পরও সরকারের যাতায়াত খাতে ব্যয় বেড়েছে কয়েক গুণ। কারণ সরকারিভাবে সুদমুক্ত ঋণে গাড়ি কেনার পরও বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার প্রকল্পের বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করছেন আমলারা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় গত ২ সেপ্টেম্বর সব জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিবদের এক চিঠিতে জানিয়েছেন, প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত গাড়ি সুবিধা পাওয়ার পরও অনৈতিক ও বিধিবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ব্যবহার করছেন। অথচ নীতিমালার ১৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সুদমুক্ত ঋণসুবিধা গ্রহণকারী কোনো কর্মকর্তা তাঁর দপ্তর থেকে রিকুইজিশনের ভিত্তিতে কোনো গাড়ি সরকারি বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন না।

এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় যে পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এখন গাড়ি দেওয়া হয় তাঁদের কাউকে দেওয়া উচিত হয়নি। কারণ একটা গরিব দেশে সবচেয়ে বেশি থাকবে গণপরিবহন।’ তিনি আরো বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে এখানে আমরা একটা বড় বিভাজন করে রেখেছি। কোনো কোনো সার্ভিসে উপসচিব হলে গাড়ি পাচ্ছে। অন্তত সংগত কারণেই অন্যদের মধ্যে এই গাড়ির প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। তুমি যদি পাও, আমি পাব না কেন—এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বৈষম্য থেকে এই যন্ত্রণা সৃষ্টি।’

সবাই মিলে এই সুবিধা ত্যাগ করে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গণপরিবহন ব্যবহার করলে দেশের জন্য ভালো হবে জানিয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত রিকশা, গণপরিবহন ও সিএনজিতে চড়তাম। আমার খুব শখ ছিল উপদেষ্টা হওয়ার পরও এসব পরিবহনে চড়ব। কিন্তু আমাকে অসম্ভব ভয় দেখানো হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে যেটা অসম্ভব। আমরা বিদেশে দেখি মন্ত্রীরা ট্রেনে করে অফিস করছেন। আমাদের এখানে এটাই হওয়া উচিত ছিল।’

সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সুদমুক্ত ঋণের মাধ্যমে গাড়ি সুবিধা ছিল এক প্রকার ঘুষ। এ জন্য আমি এই ঋণ নেইনি। ঋণ নিয়ে তাঁরা গাড়ি কিনলেও বেশির ভাগ কর্মকর্তা বেআইনিভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এতে অনাচার বেড়েছে, খরচ বেড়েছে, রাষ্ট্রের ওপর অর্থনৈতিক চাপ তৈরি হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের কোনো লাভ হয়নি। সুশাসন পরিপন্থী কাজ হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে ঋণ দেওয়া হয়েছিল, সেটা আদৌও সাধন হয়নি।’

গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে বছরে ব্যয় হচ্ছে ২০৪ কোটি টাকা

এ পর্যন্ত উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের প্রায় চার হাজার কর্মকর্তা এ ঋণ পেয়েছেন। এর মধ্যে কর্মরত দুই হাজার ৫০০ জন। অবসরে গেছেন প্রায় এক হাজার ৫০০ জন। কর্মরতদের মধ্যে সার্বক্ষণিক গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছেন প্রায় এক হাজার কর্মকর্তা। সশস্ত্র বাহিনীর মেজর ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল বা সমমর্যাদা ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কর্মকর্তা এই সুবিধা পাচ্ছেন। এর মধ্যে কর্মরত প্রায় সাড়ে চার হাজার কর্মকর্তা। অবসরে গেছেন দুই হাজার কর্মকর্তা। কর্মরতদের মধ্যে সার্বক্ষণিক গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছেন প্রায় এক হাজার কর্মকর্তা। ফলে প্রশাসন ও সশস্ত্র বাহিনীর এসব কর্মকর্তার জন্য প্রতি মাসে সাড়ে ১৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে। বছরে ব্যয় হচ্ছে ২০৪ কোটি টাকা। 

এ বিষয়ে অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সব ধরনের যানবাহন ক্রয় বন্ধ রেখেছে সরকার। গত ৪ জুলাই এসংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়। এর মধ্যে গাড়ি ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হলে সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।’ 

বিচারকদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণে বছরে ব্যয় হবে প্রায় ৬০ কোটি টাকা

বর্তমানে জেলা জজ আছেন ৩২২, অতিরিক্ত জেলা জজ ৩৫৬ জন ও যুগ্ম জেলা জজ ৩১৭ জন। তাঁদের এ ঋণ দেওয়া হলে প্রতি মাসে গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যয় হবে চার কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বছরে ব্যয় হবে ৫৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গাড়ি ক্রয়ের জন্য সুদমুক্ত ঋণ ও গাড়ি সেবা নগদায়ন সুবিধা প্রদানসংক্রান্ত সারসংক্ষেপ ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন করেন। সারসংক্ষেপ অনুযায়ী, আইন ও বিচার বিভাগ গাড়ি ক্রয়ের সুদমুক্ত ঋণ মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ উদ্দেশ্যে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করবে। এরপর জুডিশিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তারা এককালীন সুদমুক্ত ঋণ, মাসিক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় এবং অবচয় সুবিধা পাবেন।

সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ থাকায় ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের সুদমুক্ত ঋণ ও গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা-২০২৩’ জারির আগে অর্থ বিভাগের মতামত গ্রহণের জন্য ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর চিঠি পাঠানো হয়। অর্থ বিভাগ ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ এবং চাকরিকাল ১৩ বছর পূর্ণ হয়েছে এমন যুগ্ম জেলা জজ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গাড়ি ক্রয়ের জন্য সুদমুক্ত ঋণ ও গাড়ি সেবা নগদায়ন সুবিধা প্রদান বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত গ্রহণপূর্বক স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব পাঠাতে বলেন। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর সুদমুক্ত ঋণ ও গাড়ি সেবা নগদায়ন সুবিধা প্রদান বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। এখন অর্থ বিভাগ অনুমোদন দিলেই কেনা হবে গাড়ি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প
প্রতীকী ছবি

রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

শুক্রবার বিকেল ৪টা ৫২ মিনিটে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ গোলাম মোস্তফা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে,রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪। এটি হালকা ভূমিকম্প। এর উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে।

ভারতের ভূমিকম্প গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি (এনসিএস) জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ০।

উৎপত্তিস্থলে ভূপৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

জ্বালানিনির্ভর জাতীয় মাস্টার প্ল্যান পুনর্বিবেচনার দাবি তরুণ জলবায়ু কর্মীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জ্বালানিনির্ভর জাতীয় মাস্টার প্ল্যান পুনর্বিবেচনার দাবি তরুণ জলবায়ু কর্মীদের

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো ঢাকায়ও জলবায়ু ধর্মঘট পালন করেছে দেশের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। ধর্মঘটে সমন্বিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) বাস্তবায়ন হলে ব্যয়বহুল ও দূষিত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার আরো বাড়বে মন্তব্য করে তা দ্রুত সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে এ দাবি জানান তারা। বর্তমান পরিকল্পনা জলবায়ু লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এর ফলে দেশের জলবায়ু সংকট আরও গভীর হতে পারে বলে তারা গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে।

 
 
বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটের অংশ হিসেবে আয়োজিত এই সমাবেশে দুই শতাধিক তরুণ জলবায়ু কর্মী রঙিন ব্যানার, পোস্টার ও স্লোগানের মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানির ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরেন। ‘ভুয়া সমাধান নয়, নবায়নযোগ্য শক্তি চাই’ শীর্ষক শ্লোগানে মুখরিত ছিল সমাবেশস্থল। 

জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট তুলে ধরে তারা বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই ও বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে হলে জ্বালানি নীতিতে নবায়নযোগ্য উৎসগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুতে বিশ্বের উন্নত দেশ এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে।

সমাবেশে জলবায়ুকর্মীরা বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্যই বহুজাতিক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকেও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
 
সমাবেশে ইয়ুথনেট গ্লোবাল-এর নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ু সংকটকে বিবেচনায় রেখে আমাদের শক্তি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। আইইপিএমপিতে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সুবিধা নিশ্চিত করার বদলে দরকার একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ ও স্থানীয় বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটানো পরিকল্পনা।

এখন সময় জনগণকে ক্ষমতায়িত করা, নবায়নযোগ্য শক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং ভ্রান্ত সমাধানের যুগের অবসান ঘটানোর।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ জীবাশ্ম জ্বালানির মুনাফার জন্য বিক্রি করা চলবে না। নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারই একমাত্র টেকসই পথ।’

জলবায়ুকর্মী আরুবা ফারুক  বলেন, ‘জলবায়ু সংকটে দায়ী নয় বাংলাদেশ, অথচ ক্ষতির শিকার আমরা। তাই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে উন্নত দেশগুলোকে।

তরুণদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আইইপিএমপি বিগত সরকারের একটি ভুল পরিকল্পনার অংশ, যা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আর্থিক সংকটকে উপেক্ষা করেছে। এ পরিকল্পনায় বিদ্যুতের চাহিদা অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষিতভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যার সুযোগ নিয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এখনই সময় আইইপিএমপি পুনঃমূল্যায়ন ও সংশোধনের। আমরা চাই নতুন পরিকল্পনা হবে দেশীয় সমাধানভিত্তিক, দেশীয় অর্থায়নে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে প্রণীত।’

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘আইইপিএমপিতে নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের কোনো সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন নেই। কোন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কত কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, সেটির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে রিনিউয়েবল এনার্জি পলিসি ২০২৫-এর সঙ্গে সমন্বয় করে আইইপিএমপিকে সংশোধন করতে হবে।’
 

মন্তব্য

হানিফ ফ্লাইওভারে গাড়ি চাপায় নারী নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হানিফ ফ্লাইওভারে গাড়ি চাপায় নারী নিহত
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে হানিফ ফ্লাইওভারে গাড়ির চাপায় এক নারী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। 

যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোরশেদ আলম জানান, ভোর রাতের দিকে গাড়ির চাপায় নিহত হন। ওই নারী ভবঘুরে প্রকৃতির ছিলেন বলে জানা গেছে।

তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।  

মন্তব্য

দূষণবিরোধী অভিযানে ২৪ কোটি টাকা জরিমানা, বন্ধ ৬৪৮ ইটভাটা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
দূষণবিরোধী অভিযানে ২৪ কোটি টাকা জরিমানা, বন্ধ ৬৪৮ ইটভাটা

দেশব্যাপী দূষণবিরোধী অভিযান চালিয়ে গত তিন মাসে ৬৪৮টি ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া অভিযানে ১ হাজার ৬৬৩টি মামলায় ২৪ কোটি ৯ লাখ পঞ্চাশ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

আরো পড়ুন
দিল্লিতে নিষিদ্ধ হচ্ছে সিএনজি অটো, ঝুঁকিতে গ্যাস খাত

দিল্লিতে নিষিদ্ধ হচ্ছে সিএনজি অটো, ঝুঁকিতে গ্যাস খাত

 

শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২ জানুয়ারি থেকে আজ (১০ এপ্রিল) পর্যন্ত সারা দেশে দূষণবিরোধী বিশেষ অভিযান চালানো হয়। এতে যানবাহন, অবৈধ ইটভাটা, স্টিল মিল, শব্দদূষণ, ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য, সীসা কারখানা, জলাশয় ভরাট, টায়ার পোড়ানো ও খোলা নির্মাণ সামগ্রির বিরুদ্ধে ৭৭৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।

এ সময় ১ হাজার ৬৬৩টি মামলায় ২৪ কোটি ৯ লাখ পঞ্চাশ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ৪৩৮টি অবৈধ ইটভাটার চিমনী ভেঙে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ২১০টি ইটভাটা বন্ধের জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১২৪টি ভাটায় কাঁচা ইট ধ্বংস করা হয়েছে এবং সাতটি ইটভাটার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
পাশাপাশি এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে একজনকে। সাতটি প্রতিষ্ঠান থেকে আট ট্রাক সীসা গলানোর যন্ত্রপাতি জব্দ করে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার রাজধানী ঢাকার গুলশান, মাতুয়াইল, আমিনবাজার, মোহাম্মদপুর ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় নির্মাণ সামগ্রি দিয়ে বায়ুদূষণ করায় ছয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এতে পাঁচটি মামলায় ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

আরো পড়ুন
পাহাড়ে মজেছেন ফারিণ!

পাহাড়ে মজেছেন ফারিণ!

 

একই দিনে আমিনবাজারে অবৈধ সীসা ব্যাটারি গলানোর একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে কারখানাটি উচ্ছেদ ও যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। গাজীপুরে জলাধার ভরাটের অভিযোগে একজনকে সতর্ক করা হয়েছে এবং পাঁচ দিনের মধ্যে পুকুর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

মানিকগঞ্জ ও দিনাজপুরে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে চালানো অভিযানে আটটি মামলায় এক লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযানে একটি ইটভাটার চিমনী ও কাঁচা ইট ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং ছয়টি ইটভাটার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ