জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আজ বুধবার বৈঠকের পর বিএনপি তার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করবে। বৈঠক ফলপ্রসূ হলে আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতি শুরু করবে। আর বৈঠক যদি ফলপ্রসূ না হয় বা অন্য বৈঠকের মতো এবারও সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত না পায়, তাহলে রাজপথের কর্মসূচিতে যাবে দলটি।
আজ দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক বেশ তাত্পর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এই বৈঠকের পর রাজনীতির গতিপথের কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে বলেও ধারণা করছেন নেতাকর্মীরা।
বিএনপি মনে করছে, সংসদ নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যেসব বক্তব্য আসছে, তাতে পরিষ্কার কোনো বার্তা নেই। বরং দেশে নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে জনমনে। নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের ‘ষড়যন্ত্র’ও দেখতে পাচ্ছে দলটি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের বক্তব্য স্পষ্ট নয়। বরং কয়েক দিন পরপরই বিএনপিকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। আবার সরকারের উপদেষ্টারাই বলছেন, ড. ইউনূস সরকারকে পাঁচ বছর দেখতে চায় জনগণ। এই ধরনের বক্তব্যে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার যে ইচ্ছা তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তাই নির্বাচন নিয়ে সরকারের কাছে সুস্পষ্ট বক্তব্য জানতে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হবে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে গতকাল রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে আজকের বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে কথা হয়। নেতারা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আদায় করতে তাঁদের কৌশল নির্ধারণ করেন।
দলের কর্মপরিকল্পনা তৈরিতে নিবিড়ভাবে কাজ করেন এমন একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপি বারবারই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্মানের বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করছে।
ড. ইউনূস বিব্রত হন এমন কিছু তাঁরা করতেন চান না। তাঁকেও এই বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে ভোট অনুষ্ঠানের যে কথা বলা হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষে একেক সময় একেক বক্তব্যে এক ধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে। তাই নির্বাচন ঠিক কবে হবে কিংবা নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রকৃত অবস্থান কী, ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নেতারা তা নিয়ে আলোচনা করবেন।
মূলত নির্বাচন নিয়ে আজকের বৈঠক হলেও প্রসঙ্গক্রমে সংস্কার নিয়ে আলোচনা করতে চান দলের নেতারা। সরকারের সংস্কার ভাবনা, কতটুকু সংস্কার করতে চান, কত দিনে সেই সংস্কার শেষ করবেন—এ বিষয়ে বিএনপি সরকারের মত জেনে নিজেদের ভাবনাও তুলে ধরবে।
তিন মাসের পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে
ভবিষ্যত্ কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে সম্প্রতি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকদের বৈঠক হয়। সেখানে সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ এবং নির্বাচনের দাবিতে আগামী তিন মাস নানামুখী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার প্রাথমিক পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে থাকতে পারে সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা, মিছিল। তৃণমূল থেকে এসব কর্মসূচি শুরুর কয়েকটি ধাপে তা পালিত হবে। এই পরিকল্পনা লিখিতভাবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, নির্বাচনের দাবিতে ঈদের আগে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপেও শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে বিএনপি এই বার্তা দিতে চাইবে যে দীর্ঘদিন ধরে দেশের ভোটবঞ্চিত জনগণ এখন গণতন্ত্রে উত্তরণের অপেক্ষায় আছে। তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে উন্মুখ। এ জন্য জনগণ দ্রুত নির্বাচন চায়। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের ওপরও এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে চায়, যাতে পরিস্থিতির আলোকে সরকারও নির্বাচনের পথে এগোয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপি ঢাকায় বড় ধরনের শোডাউনের চিন্তা করছে। দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না এলে এই ধরনের কর্মসূচি পালন করা হতে পারে। আবার তৃণমূল পর্যায় থেকে কর্মসূচি পালন করে ঢাকায় বড় ধরনের কর্মসূচির কথাও ভাবা হচ্ছে।