<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শ্রমশক্তির কল্যাণে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে পৃথিবীর সব রাষ্ট্রেই মানুষের উৎপাদন ও সম্পদ অনেক বেড়েছে এবং বেড়ে চলছে। অনেক মানুষ যন্ত্রের গতিতে এগিয়ে চলতে চাইছে। তারা মানবতা বা মনুষ্যত্ব নিয়ে ভাবে না। এর মধ্যেও পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দরিদ্র। যারা পঙ্গু, ভিক্ষা করে খায়, তাদের সংখ্যাও অবশ্যই বিবেচনাযোগ্য। যাদের নিম্নমধ্যবিত্ত বলা হয়, তারাও কষ্ট করে জীবনযাপন করে। ক্ষমতাবানরা আরো ক্ষমতা চায়, তার জন্য যুদ্ধবিগ্রহ চালায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরও মাঝেমধ্যেই বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কাও দেখা দেয়। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যে যুদ্ধ, তা তো ক্রমেই বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গ্রেকো-রোমান-ইউরো-আমেরিকান সভ্যতা তো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছু আগে থেকেই বহুলাংশে বর্বরতায় নিপতিত হচ্ছিল। নৈতিক দিক থেকে দেখতে গেলে পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিগুলো কি সভ্যতায় উত্তীর্ণ হতে পেরেছে? যে নীতি নিয়ে তারা চলছে, তা তো বৈশ্বিক আধিপত্যবাদ। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যে যুদ্ধ চলছে, তাতে ইউক্রেনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য যে ভূমিকা নিয়ে চলছে, তাতে এই যুদ্ধ তো ক্রমেই বিশ্বযুদ্ধের রূপ নিচ্ছে। দুই বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপের জাতিগুলোর মধ্যে যে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব দেখা দিয়েছিল, তা প্রায় সম্পূর্ণই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। লিও তলস্টয়, এম কে গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ, বার্ট্রাল্ড রাসেল, আলবার্ট আইনস্টাইন ও আরো কোনো কোনো মনীষী যুদ্ধের অবসান ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে মতামত ব্যক্ত করতেন, সে রকম প্রভাবশালী কোনো চিন্তা তো এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তথ্য-প্রযুক্তি ও জীবপ্রযুক্তির বিস্তারও সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলোপের (১৯৯১) পর বসনিয়া-হারজেগোভিনায়, আফগানিস্তানে, ইরাকে, লিবিয়ায়, সিরিয়ায় যে যুদ্ধ ঘটেছে, সেগুলোর পেছনে ভীষণভাবে সক্রিয় ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটো। এই সময়ের যুদ্ধবাজ ও যুদ্ধবাদী শক্তিগুলোকে চিনে নেওয়া বিশেষ কোনো অসুবিধার ব্যাপার নয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা" height="452" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/08.July/27-08-2024/0.jpg" style="float:left" width="500" />বাংলাদেশের নাগরিক আমরা, যুদ্ধবাজ ও যুদ্ধবাদীদের সঙ্গে আমরা যাব না, আমরা শান্তির পক্ষে। আমরা উদার গণতন্ত্রের নয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সর্বজনীন গণতন্ত্রের পক্ষে। সর্বজনীন গণতন্ত্রের ধারণা আমাদের নতুনভাবে রচনা করে নিতে হবে। আন্তর্জাতিকতাবাদকে আমরা জাতীয়তাবাদের পরিপন্থী মনে করি না, মনে করি সম্পূরক। জাতিসংঘকে কার্যকর করার জন্য উন্নত নতুন চিন্তা-ভাবনা দরকার। দুর্বল, ক্ষুদ্র জাতিগুলোকেও জাতিসংঘের পুনর্গঠন নিয়ে ভাবতে হবে এবং পুনর্গঠনের জন্য প্রচেষ্টাও চালাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সর্বজনীন কল্যাণে দুনিয়াব্যাপী রাষ্ট্রব্যবস্থা বিশ্বব্যবস্থাকে নতুন রূপ ও প্রকৃতি দিয়ে পুনর্গঠিত করতে হবে। মানুষের সুচিন্তিত কার্যক্রম ছাড়া</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাধনা ও সংগ্রাম ছাড়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসব কিছুই হবে না। ইতিহাসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে গিয়ে কেউ কেউ বলে থাকেন যে বর্তমান অতীতের সৃষ্টি ও ভবিষ্যতের স্রষ্টা। কথাটা এসেছে ইতিহাসের গতি নির্ধারণে মানুষের ভূমিকা নিয়ে। প্রকৃতির নিজস্ব গতি আছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সব কিছুই গতিশীল, পরিবর্তনশীল। প্রকৃতির অন্তর্গত মানুষ জড়বস্তুর ও পশুপাখির মতো থাকে না, মানুষ বিবেক ও বুদ্ধির অধিকারী, নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ে তুলতে চায়। একা একা পারে না, বহুজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে পারে। এক জেনারেশনে পারে না, জেনারেশনের পর জেনারেশনের চেষ্টায় পারে। বলা হয়, কোনো বিষয়ের জ্ঞানই সেই বিষয়ের ইতিহাসের জ্ঞান ছাড়া পর্যাপ্ত ও কর্মোপযোগী হয় না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব কথা আমার মনে জাগছে বাংলাদেশের অবস্থা দেখে। বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের কোটা পদ্ধতি সংস্কারের আন্দোলনের সঙ্গে সরকার উত্খাতের উদ্দেশ্যে আন্দোলনকারী কোনো একটি শক্তি যুক্ত হয়ে সেই আন্দোলনকে এমন রূপ দিয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে, দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এর ফলে গোটা মন্ত্রিপরিষদ বাতিল হয়ে গেছে এবং রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে দেন। রাষ্ট্রপতি নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তাঁর প্রধান উপদেষ্টা রূপে নিয়োগ করেন। পরে আরো ১৬ জনকে প্রধান উপদেষ্টার সহযোগী রূপে উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদ রাষ্ট্র পরিচালনার কেন্দ্রীয় শক্তি রূপে কাজ করছে। যেখানে দরকার সেখানে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে কাজ করতে হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রতি জনসাধারণের সমর্থন আছে। আমি নিজেও মনে করি, এই সরকারকে সমর্থন ও সহযোগিতা করে বাংলাদেশের অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় উত্তরণের বাস্তবতা তৈরি করতে হবে এবং তারপর নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকার গঠন করতে হবে। সবাই বুঝতে পারেন যে শুধু নির্বাচিত সরকার দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হলেই তা গণতান্ত্রিক সরকার হয় না। গণতন্ত্রের ধারণাকে পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিগুলো এখন শুধু নির্বাচিত সরকার দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনাকেই গণতন্ত্র বলছেন। আমাদের মনে হয়, শুধু নির্বাচন নয়, গণতন্ত্রের জন্য গণতান্ত্রিক দল অপরিহার্য। সেই সঙ্গে অপরিহার্য জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় উন্নতির সর্বাঙ্গীণ আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচি ও কার্যক্রম। কথিত উদার গণতন্ত্র নয়, সর্বজনীন গণতন্ত্র দরকার। নানা দেশে গণতন্ত্রের নানা রকম অনুশীলন আছে। দলভিত্তিক, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সরকার গঠনের ব্যাপারটিকে বিচার-বিবেচনা করে দেখতে হবে। বাংলাদেশের জন্য দলভিত্তিক আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সরকারের রূপ ও প্রকৃতি কী হবে তা নিয়ে চিন্তা ও চেষ্টা দরকার। এসবের জন্য উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে যে সরকার এখন গঠিত হয়েছে তাকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। ভবিষ্যতে যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন তাঁদের এসব নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করা দরকার। আশা করি, বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ এসব বিবেচনা করে গৌরবজনক ভূমিকা পালন করবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনেক গুরুতর বিষয় আছে, সেগুলো নিয়ে প্রিন্ট মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনা ও মতবিনিময় একান্ত দরকার। একটা দিক হলো, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো যে অনাচার ও দুর্নীতি করেছে, জননির্যাতন চালিয়েছে, তাদের পরিচয় ও অপকর্মের বিবরণ জনসাধারণের সামনে তুলে ধরা। যেসব ক্ষেত্রে শাস্তি প্রদান দরকার, সেসব ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কিছু করা উচিত হবে না। ঔপন্যাসিক শরত্চন্দ্রের একটি উক্তি : </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ত্রুটি, বিচ্যুতি, অপরাধ, অধর্মই মানুষের সব কিছু নয়।...মানুষকে তন্ন তন্ন করিয়া দেখিবার চেষ্টা করিলে তাহার ভিতর হইতে অনেক জিনিস বাহির হয়। তখন তাহাকে সহানুভূতি না করিয়া থাকা যায় না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কথাটা উপন্যাসে তাঁর সৃষ্ট নায়ক-নায়িকা ও অন্যান্য চরিত্র সম্পর্কে বলেছেন। কল্পিত সব চরিত্র। যে মানুষদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৎপর দেখা যায়, তাদের প্রতিও কি এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রযোজ্য? বিচার করে দেখতে হবে? শেখ হাসিনা তো অত্যন্ত প্রতাপশালী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁকে কেন এভাবে পদত্যাগ ও দেশত্যাগ করতে হলো? বঙ্গবন্ধু, আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শেখ ফজলুল হক মনি একই সময়ে এভাবে সপরিবারে নিহত হলেন কেন? ব্যক্তিপূজা, কল্পিত ভাবমূর্তির পূজা কল্যাণকর নয়। বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকারভিত্তিক পরিবারতান্ত্রিক নেতৃত্ব গণতন্ত্রবিরোধী। নীতি ও দুর্নীতি, আইন ও আইনের শাসন, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়কে নির্দিষ্ট দেশকালের ভিত্তিতে গভীরভাবে বিচার-বিবেচনা করে দেখতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিবর্গের চাপিয়ে দেওয়া ধারণাবলিকে নির্বিচারে গ্রহণ করে চললে হবে না। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এগুলো যতটা অর্থনৈতিক, ঠিক ততটাই রাজনৈতিক সংস্থা। তাদের রাজনীতি পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিগুলোর, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অনুকূলে কার্যকর। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বেলায় বাংলাদেশকে পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিবর্গের অনুসারী ও ভারতবিরোধী হলে তার ফল ভালো হবে না। এসব বিষয় নিয়ে গভীর জ্ঞান ও চিন্তার দরকার। বাংলাদেশ যেহেতু গত ৫৩ বছরে রাজনৈতিক দিক দিয়ে কোনো উন্নতি করতে পারেনি, সে জন্য বর্তমান সরকারকে সাফল্যসম্ভব নতুন নীতি অবলম্বন করে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু নেতা বক্তৃতা-বিবৃতিতে প্রতিপক্ষের প্রতি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তাতে উক্ত নেতাদের কোনো রকম গণতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচয় ছিল না। বাংলাদেশে রাজনীতির চরিত্রকে উন্নত করতে হলে উন্নতমানের ভাষা আয়ত্ত করতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একটা কথা বলা হয়নি। ছাত্রদের কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে বিএনপি ছিল। বাইরে থেকে বিএনপি আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছে। আন্দোলনের ভেতরে এসে যারা দেশব্যাপী রাষ্ট্রীয় অনেক সম্পত্তি বিনষ্ট করেছে তারা কারা? তাদের পরিচয় বাংলাদেশের পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর গোয়েন্দারা চেষ্টা করলে বের করতে পারবে। তারা বিএনপি-জামায়াতের লোক এটা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। প্রকৃত তথ্যাবলি জনসাধারণকে জানানো দরকার। সরকারকেই এটা করতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যাঁরা খবরের কাগজ পড়েন, টেলিভিশনের খবর  শোনেন, তাঁরা সরকারের কাছে অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক কিছু আশা করেন। যে রাজনৈতিক সংকটে বাংলাদেশ পড়েছে তা অল্প সময়ে সমাধান করা অসম্ভব। এটা বাংলাদেশে সবারই বোঝা দরকার। শেরেবাংলার নেতৃত্বের মূল বৈশিষ্ট্য তাঁর নিজের কথা অবলম্বন করেই বলা যায়, তিনি কৃষক-প্রজাদের কল্যাণসাধন, পরে তিনি কৃষক-শ্রমিকদের কল্যাণসাধন চেয়েছেন। এ জন্য তিনি সব সময় ক্ষমতায় থাকতে চাইতেন। কৃষক-শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করতেন। শিক্ষা বিস্তারের, বিশেষ করে বাংলার মুসলমানদের শিক্ষার জন্য তিনি স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ ক্ষেত্রে যাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন তাঁদের সহায়তা করেছেন। তিনি দল গঠনে এবং আদর্শ অবলম্বনে উদ্যোগী হননি। জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে তাঁর কিছু ধারণার পরিচয় পাওয়া যায়। দেখা যায়, বাংলা ভাগ, পাঞ্জাব ভাগ, ভারত ভাগ তিনি চাননি। এ জন্য ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তিনি নিজে জিতলেও তাঁর প্রার্থী তালিকা থেকে দু-একজন আইনসভায় পাস করে থাকতে পারেন। মুসলিম লীগ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সংকল্প নিয়ে কাজ করেছে এবং ফজলুল হককে পাকিস্তান দাবির বিরোধী বলে প্রচার করেছে। তিনি নিজেও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অনুকূলে কিছু করেননি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভাসানী নির্যাতিত-নিপীড়িত মজলুম জনগণের পক্ষ নিয়ে অত্যন্ত দুঃসাহসের সঙ্গে কথা বলেছেন। পাকিস্তানকালে কমিউনিস্ট পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছেন। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নিজেদের কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে দল গঠন নিয়ে তাঁর বিশেষ চিন্তা ছিল না। তাঁর সঙ্গে উচ্চশিক্ষিত বহু লোক এসেছেন প্রথমে আওয়ামী মুসলিম লীগ ও পরে তাঁর নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগে, আরো পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে অনেক জ্ঞানী লোক এসেছিলেন। ভাসানীর অনুসারীরা প্রগতিশীল ও বামপন্থী বলে পরিচিত হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা দল গঠনে এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের কর্মসূচি বাস্তবায়নের কার্যকর লক্ষ্য নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে কিংবা জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি। কমিউনিস্টরা ক্রমাগত দল ভেঙেছেন, নেতৃত্ব সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ভাসানীর প্রতিবাদ কখনো কখনো কমবেশি কার্যকর হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৪৬ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দ্য স্টেট অব বেঙ্গল নামে স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছিলেন। মাস দেড়েক তিনি এ দাবি প্রচার করেছিলেন। পরে আর প্রচার করেননি। পাকিস্তানকালে তিনি পাকিস্তানের রাজধানী করাচিকে শক্তিশালী করার কথা বলেছিলেন, পূর্ব বাংলার বা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি সমর্থন করতেন না। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুসারী ছিলেন। তাঁর গণতন্ত্রের ধারণা সীমাবদ্ধ ছিল মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মিটিং-মিছিল করার স্বাধীনতা ইত্যাদিতে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বিষয়াদি নিয়ে সর্বাঙ্গীণ কোনো বক্তব্য তাঁর ছিল না। সোহরাওয়ার্দী তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর একান্ত আপনজন হিসেবে নিজের রাজনীতিতে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁরাও সোহরাওয়ার্দীকে একান্ত আপনজন মনে করতেন। কিন্তু শেখ মুজিবের রাজনৈতিক উপলব্ধি ভিন্ন ছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সোহরাওয়ার্দীর পাকিস্তানবাদী চিন্তার সমর্থক তিনি ছিলেন না। সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পরই তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে বক্তব্য প্রকাশ করেন এবং ছয় দফা কর্মসূচি প্রচার করে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার বাঙালি জাতীয়তাবাদের দাবি ছয় দফা কর্মসূচি প্রচার করতে আরম্ভ করেন। ছয় দফার সূচনা থেকে এবং এর আগে থেকেও তাজউদ্দীন ছিলেন তাঁর একান্ত সহযোগী। তাজউদ্দীনকে বাদ দিয়ে আমাদের মুক্তিসংগ্রামের ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেভাবে প্রচার করা হয়েছে তাতে ইতিহাস বিকৃতি ঘটেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের নেতৃত্ব সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা দরকার। সে সম্পর্কে সব সময় অনেক আলোচনা হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনকাল নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের আধুনিক রাজনীতির এই ইতিহাসকে গভীরভাবে জানতে হবে এবং সেই জ্ঞানকে উন্নত নতুন ভবিষ্যৎ সৃষ্টির জন্য কাজে লাগাতে হবে। বর্তমান উপদেষ্টামণ্ডলীর কাছে আমাদের অনেক আশা। আমরা তাঁদের সাফল্য কামনা করি। তাঁরা সফল হলে তা আমাদের রাষ্ট্র, জাতি ও জনজীবনের সাফল্য বলেই বিবেচিত হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : বিশিষ্ট চিন্তাবিদ</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>