<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিখ্যাত দার্শনিক প্লেটো ন্যায়বিচার সম্পর্কে সুন্দর একটি কথা বলে গেছেন। তিনি বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শাসক যেখানে ন্যায়পরায়ণ, আইন সেখানে অনাবশ্যক। আর শাসক যেখানে দুর্নীতিপরায়ণ, আইন সেখানে নিরর্থক।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এ উক্তি থেকে ধারণা করা যায় যে গণতন্ত্র কিংবা অন্য যেকোনো শাসনব্যবস্থাই বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে সরকার কিংবা শাসকের প্রকৃতি কিংবা মনোবৃত্তি। শাসকের প্রকৃতি প্রশ্নে দু-একটি ঘটনা যেমন গণতন্ত্রের দৃষ্টান্ত হতে পারে, ঠিক তেমনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আক্রমণের ভাষা এতই অরুচিকর পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক পরিবেশদূষণের অভিযোগে আদালতে মামলা করা যেত। কিন্তু আদালতের রায়ে যেহেতু রাজনৈতিক সংস্কৃতির মানোন্নয়ন অসম্ভব, সেহেতু পরিবেশ বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রয়াস গ্রহণই একমাত্র বিকল্প পথ। রাজনৈতিক সংস্কৃতির এই অধঃপতন নিয়ে সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের মনোভাব লক্ষ করা যায়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজনৈতিক সংস্কৃতির স্তর এতটাই নিচে নেমে গেছে রাজনীতিবিদরা ক্ষমতার চেয়ারে থাকলে কোথায় কী বলতে হবে, সেটিও খেয়াল রাখেন না। পরস্পর পরস্পরকে কতটা নগ্নভাবে উন্মোচন করতে পারে সেই প্রতিযোগিতা নিত্যনৈমিত্তিক ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ আশ্বাস দিয়েছিল, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্টাচার ও সহিঞ্চুতা গড়ে তোলা হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কিন্তু তারা পরে একটানা ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্টাচারের বিষয়টি কোনোভাবেই ইতিবাচক আলো দেখেনি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><img alt="রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্টাচার জরুরি" height="454" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/18-09-2024/3.jpg" style="float:left" width="500" />’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৯০-পরবর্তী সরকারগুলো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হলেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তাদের আন্তরিক পদক্ষেপ খুব কমই দেখা গেছে। এই বক্তব্যের পেছনে যুক্তি ও উদাহরণের অভাব হবে না। কারণ জাতীয় সংসদের অকার্যকারিতা, আইনের শাসনের অভাব, বিচার বিভাগে রাজনৈতিকীকরণ প্রভৃতি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছিল। এই বৈশিষ্ট্যগুলো যেহেতু বিশেষ কোনো একটি সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, সেহেতু যথাযথভাবেই দাবি করা যায় যে এগুলো দেশের শাসনব্যবস্থার সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িত। আগামীর সংস্কারমূলক যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি সেখানেও আমরা সংসদের কার্যকারিতা, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতভাবেই দেখতে চাই। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খুব সহজে গণতন্ত্র এবং স্বৈরতন্ত্রের তফাত বুঝাতে হলে বলতে হয়, যে শাসনব্যবস্থায় সরকার জনগণকে ভয় পায় সেটা গণতন্ত্র, আর যেখানে জনগণ সরকারকে ভয় পায় সেটিই স্বৈরতন্ত্র। দেশে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া হার্ট অ্যাটাক, ক্রসফায়ার কিংবা বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ এ ধরনের নানাবিধ কাজে যুক্ত অপরাধীদের দায় থেকে অব্যাহতি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের দুর্বলতার একটি সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট লক্ষণও বটে। বিগত সরকারের সময়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও সহিংসতার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করলে বাংলাদেশের রাজনীতির চরিত্রকে সহজেই অনুধাবন করা যায়। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ফ্রিডম হাউস ও বিশ্বব্যাংকের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও গণতন্ত্রের মানদণ্ডের স্কোর অত্যন্ত নিম্ন ছিল। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো দেশ ও সমাজ গঠনের কোনো আদর্শভিত্তিক পরিকল্পনা কিংবা বক্তব্য দেয় না। ক্ষমতায় যাওয়াই হলো দলগুলোর সর্বশ্রেষ্ঠ লক্ষ্য। রাজনৈতিক দলগুলোর ছত্রচ্ছায়ায় সন্ত্রাস ও দুর্নীতি এবং আপত্তিকর বক্তব্যের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের প্রবণতা রাজনীতির বড় নিয়ামক। এমনকি আশ্চর্যের বিষয় হলো, নির্বাচন ও নির্বাচকমণ্ডলীর ভূমিকা নির্বাচন-উত্তরকালে খুবই সীমিত, প্রায় নেই বললেই চলে। কেননা একবার নির্বাচিত হওয়ার পর প্রার্থীরা অপ্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের আরোপিত বাধা-নিষেধ ছাড়া আর কিছুই তোয়াক্কা করে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুসংহত করার জন্য দেশের রাজনীতিবিদরা অতীতে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু সেগুলো তারা রক্ষা করতে পারেনি কিংবা রক্ষা করার চেষ্টা করেনি। সব সরকারই নাগরিক অধিকার সীমিত করতে আইনি ও আইনবহির্ভূত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তা ছাড়া জবাবদিহির বিষয়টি এখনো </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সোনার হরিণ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ই থেকে গেছে। জবাবদিহির প্রশ্নটি যেহেতু ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এ কারণে জনপ্রতিনিধিরা নির্দ্বিধায় কটূক্তি কিংবা আপত্তিকর বক্তব্যে বিন্দুমাত্র পিছপা হয় না।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা, ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সব পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সংবিধানের এমন চেতনার হাত ধরে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও দেশে উদ্ভূত বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশের দুর্বলতার সুযোগে রাজনীতিতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে বারবার। সংবিধানের এই অনুচ্ছেদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেই রাজনীতিবিদ তথা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক স্থিতিশীল শিষ্টাচারসম্মত পরিবেশ গঠন করা সম্ভব হতে পারে। গণতন্ত্রের অপমৃত্যুর দিকে দেশ ধাবিত হোক এটা দেশের কোনো নাগরিক কিংবা রাজনৈতিক দলের জন্য কাম্য নয়।  </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কাজেই শিষ্টাচারসম্মত রাজনীতির জন্য জনপ্রতিনিধিদের গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের বক্তব্য প্রদানে সতর্কতা আবশ্যক। আপত্তিকর পরিবেশ সৃষ্টিকারীকে মন্ত্রিসভায় যেমন মানায় না, ঠিক তেমনি মহান সংসদেও কোনো আপত্তিকর বক্তব্য মানায় না। জনপ্রতিনিধিরা যেহেতু নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত হন, সেহেতু নাগরিকদের মনে বিন্দুমাত্র আঘাত লাগুক এমন অপসংস্কৃতিকে লালন করাও যুক্তিসংগত নয়। যেহেতু মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করা গণতন্ত্রের অন্যতম মূলনীতি, সেহেতু রাজনীতিবিদদের সেদিকটা খেয়াল রাখা শিষ্টাচারসম্মত রাজনীতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">sultanmahmud.rana@gmail.com</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p>