<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সনাতন ধর্মের অন্যতম গ্রন্থ </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেদ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, পুরাণতন্ত্র ও ভিন্ন ভিন্ন দার্শনিক শাস্ত্রগ্রন্থগুলোতে যত প্রকার সাধনা, অনুভব ও অভিজ্ঞতা আছে; সনাতন ধর্ম তার যুগ-যুগান্তরব্যাপী তত্ত্বান্বেষণের সুমহান ইতিহাসে যত দেব-দেবীর সাধনার প্রবর্তন করেছে, দুর্গাপূজায় তার পূর্ণ সমন্বয় ঘটেছে। এই সমন্বিত দুর্গাপূজার </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অঙ্গপূজারূপে কুমারীপূজা আমাদের কাছে এক গভীর তত্ত্বের দ্বারোদঘাটন করে। কুমারী হলো শুদ্ধ আধার। দুর্গাপূজা, কালীপূজা, জগদ্ধাত্রীপূজা, অন্নপূর্ণাপূজা এবং কামাখ্যার শক্তিক্ষেত্রেও কুমারীপূজার প্রচলন আছে। কুমারী সম্বন্ধে এসব প্রশস্তির দ্বারা এটাই বোঝা যায়, কুমারী দেবী ভগবতীর অতি সাত্ত্বিক রূপ। জগন্মাতা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্ত্রী হয়েও চিরকুমারী। সে জন্য প্রত্যেক শক্তিপীঠেই কুমারীপূজার রীতি প্রচলিত। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতিবছর দুর্গাপূজার মহাষ্টমী পূজার শেষে কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। মতান্তরে, নবমী পূজার দিনও কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হতে পারে। সুদূর অতীত থেকেই কুমারীপূজার প্রচলন ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কুমারীপূজাপ্রয়োগ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গ্রন্থের পুথি থেকে। সাধারণত রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে কুমারীপূজা হয়ে থাকে, তবে সব রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে হয় না। প্রথমে দুর্গাপূজায় কুমারীপূজার প্রচলন থাকলেও পরবর্তী সময়ে এই পূজার চল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৯৮ সালে কাশ্মীরে ভ্রমণকালে স্বামী বিবেকানন্দ প্রথম কুমারীপূজা করেন। এরপর ১৮৯৯ সালে তিনি কন্যাকুমারী শহরে ডেপুটি অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল মন্মথ ভট্টাচার্যের কন্যাকে কুমারীরূপে পূজা করেছিলেন। ১৯০১ সালে বেলুড় মঠের প্রথম কুমারীপূজায় স্বামী বিবেকানন্দ ৯ জন কুমারীকে পূজা করেন। বর্তমান বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালের কোনো কোনো পূজামণ্ডপে কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কুমারীপূজা হলো তন্ত্রশাস্ত্র মতে অনধিক ১৬ বছরের অরজঃস্বলা কুমারীকে পূজা করা। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যোগিনীতন্ত্র</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কুলার্ণবতন্ত্র</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেবীপুরাণ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্তোত্র</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কবচ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সহস্রনাম</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তন্ত্রসার</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রাণতোষিণী</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পুরোহিতদর্পণ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রভৃতি ধর্মীয় গ্রন্থে কুমারীপূজার পদ্ধতি এবং মাহাত্ম্য বিশদভাবে বর্ণিত আছে। বর্ণনানুসারে কুমারীপূজায় কোনো জাতি, ধর্ম বা বর্ণভেদ নেই। দেবীজ্ঞানে যেকোনো কুমারীই পূজনীয়। তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যার পূজাই সব জায়গায় প্রচলিত। এ ক্ষেত্রে এক থেকে ১৬ বছর বয়সী যেকোনো কুমারী মেয়েকে পূজা করা যায়। বয়সের ক্রমানুসারে পূজাকালে এসব কুমারীকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক বছরের কন্যার নাম সন্ধ্যা, দুই বছরের কন্যার নাম সরস্বতী, তিন বছরের কন্যার নাম ত্রিধামূর্তি, চার বছরের কন্যার নাম কালিকা, পাঁচ বছরের কন্যার নাম সুভাগা, ছয় বছরের কন্যার নাম উমা, সাত বছরের কন্যার নাম মালিনী, আট বছরের কন্যার নাম কুষ্ঠিকা, ৯ বছরের কন্যার নাম কালসন্দর্ভা, ১০ বছরের কন্যার নাম অপরাজিতা, ১১ বছরের কন্যার নাম রূদ্রাণী, ১২ বছরের কন্যার নাম ভৈরবী, ১৩ বছরের কন্যার নাম মহালপ্তী, ১৪ বছরের কন্যার নাম পীঠনায়িকা, ১৫ বছরের কন্যার নাম ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ১৬ বছরের কন্যার নাম অন্নদা বা অম্বিকা বলা হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুর্গাপূজায় কুমারীপূজার দিন সকালে পূজার জন্য নির্দিষ্ট কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয় এবং ফুলের গয়না ও নানা রকম অলংকারে তাকে সাজানো হয়। পা ধুয়ে পরানো হয় আলতা, কপালে এঁকে দেওয়া হয় সিঁদুরের তিলক, হাতে দেওয়া হয় মনোরম ফুল। কুমারীকে মণ্ডপে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে তার পায়ের কাছে রাখা হয় বেলপাতা, ফুল, জল, নৈবেদ্য ও পূজার নানা রকম উপাচার। তারপর কুমারীর ধ্যান করতে হয়। প্রতিমায় দেবীর পূজায় আংশিক ফল হয়, কিন্তু কুমারীতে দেবীর প্রকাশ উপলব্ধি করে তার পূজায় পরিপূর্ণ ফল পাওয়া যায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শ্রী রামকৃষ্ণ বলতেন, মাতৃভাব বড় শুদ্ধভাব। কুমারীর মধ্যে দৈবীভাবের প্রকাশ দেখা বা তাকে জননীরূপে পূজা করা সেই শুদ্ধসত্ত্ব ভাবেরই এক সার্থক প্রকাশ। দুর্গাপূজায় কুমারীপূজার অনুষ্ঠান তারই শাস্ত্রীয় ও বাস্তবায়িত রূপ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এভাবেই নানা রূপে ও ভাবে আর্য ও অনার্য সংস্কৃতিতে অতি প্রাচীন কাল থেকেই শিবজায়া দুর্গা কুমারীরূপেই পূজিত হয়ে আসছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যাগ-যজ্ঞ-হোম সবই কুমারীপূজা ছাড়া সম্পূর্ণ ফলদায়ী নয়। কুমারীপূজায় দৈবফল কোটিগুণ লাভ হয়। কুমারী পুষ্প দ্বারা পূজিত হলে তার ফল পর্বতসমান। যিনি কুমারীকে ভোজন করান তাঁর দ্বারা ত্রিলোকেরই তৃপ্তি হয়। দেবীপুরাণ মতে, দেবীপূজার পর উপযুক্ত উপাচারে কুমারীদের ভোজন করাতে হবে, তবেই জগতে কল্যাণ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কুমারীপূজার দার্শনিক তত্ত্ব হলো, নারীতে পরমার্থ দর্শন ও পরমার্থ অর্জন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যে ত্রিশক্তির বলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় সাধিত হচ্ছে, সেই ত্রিবিধ শক্তিই বীজাকারে কুমারীতে নিহিত। কুমারী প্রকৃতি বা নারী জাতির প্রতীক ও বীজাবস্থা। তাই কুমারী বা নারীতে দেবীভাব আরোপ করে তার সাধনা করা হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সাধু নাগ মহাশয় আশ্রম</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেওভোগ, নারায়ণগঞ্জ</span></span></span></span></p>