সেলাই করা খোলা মুখ

জাগো মাঠ প্রশাসন, ‘কুণ্ঠে বাহে?’...

  • মোফাজ্জল করিম
শেয়ার
জাগো মাঠ প্রশাসন, ‘কুণ্ঠে বাহে?’...

গত কিছুদিন ধরে দৈনিক পত্রিকাগুলোর পাতায় খুন-ধর্ষণ-ছিনতাই-লুণ্ঠন-দখলবাজি-চাঁদাবাজি ইত্যাদির সংবাদ এত বেশি আসছে যে একটি সংবাদপত্রকে সব ধরনের সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যম না বলে অপরাধজগতের মুখপত্র বললে মনে হয় খুব একটা অতিশয়োক্তি হবে না। অবশ্যই পাঠক দেশ-বিদেশের নানা গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ জানার জন্যই রোজ সকালে খবরের কাগজের জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করতে থাকেন। কেউ নিশ্চয়ই কোথায় কোন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজন কোথায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছে, কন্যাদায়গ্রস্ত কোন পিতা ছিনতাইকারীর হাতে তাঁর সর্বস্ব খুইয়ে পথে বসেছেনএই সব হৃদয়বিদারক সংবাদ পাঠের জন্য গাঁটের পয়সা খরচ করে পত্রিকা কেনেন না।

সারা দেশে অপরাধপ্রবণতা হঠাত্ করেই অনেকটা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে অনেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করছেন।

গত বছরের জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলির সময় পুলিশ বাহিনী যে বেসামাল অবস্থায় নিপতিত হয়েছিল তাতে তার মাঠ পর্যায়ের সদস্যরা বোধগম্য কারণেই মনোবল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে এবং ওই বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দৃঢ়তার কারণে পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। যেকোনো সুশৃঙ্খল বাহিনীর মূল চালিকাশক্তি তার মরাল বা মনোবল। মনোবলে চিড় ধরা মানে একটি অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত বাহিনীর পঙ্গুত্ববরণ করা।
বিগত সরকার পুলিশ বাহিনীর মতো একটি বেসামরিক বাহিনীকে নিরীহ নিরস্ত্র জনগণ নিধনে ব্যবহার করায় ওই বাহিনীর মনোবল শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গিয়েছিল। যাক, স্বস্তির বিষয়, পরিস্থিতির এখন যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।

দেশে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে যেকোনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে যা থাকবে তা, আমার বিবেচনায়, দেশের মাঠ প্রশাসন। ভালো-মন্দ যাই হোক, আমাদের দেশের মাঠ প্রশাসন (এবং সামগ্রিকভাবে সমগ্র শাসনব্যবস্থা) চলছে প্রায় পৌনে তিন শ বছর আগে ব্রিটিশরাজ প্রবর্তিত বিধিব্যবস্থামত।

ব্রিটিশরাও তাদের পূর্বসূরী মোগলদের শাসনকাঠামোই মোটামুটি খোল-নলচে পাল্টে বহাল রেখেছিল। দেশ শাসিত হতো কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নিয়োজিত কর্মচারীদের দ্বারা। ফলে ব্রিটিশরা যে জেলা, মহকুমা বা থানা ইত্যাদি যেভাবে রেখে গিয়েছিল ১৯৪৭ সালে তাদের বিদায়ের কালে, সেগুলো মোটামুটি সেভাবেই কিছু কিছু নাম-ধাম পরিবর্তন-পরিমার্জন করে এখনো সেভাবেই আছে। তখনো মাঠ প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল জেলা, এখনো তাই আছে। তখন জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ দায়িত্বে যে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন, এখনো তিনিই আছেন।
শুধু নাম বদলিয়ে এখন তিনি হয়েছেন ডেপুটি কমিশনার। বাংলায় বলা হয় জেলা প্রশাসক। একটি জেলার সার্বিক দায়িত্বে আছেন তিনি। তাঁর মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে ভূমি প্রশাসন ও ভূমি রাজস্ব আদায়, জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন। সব কিছু মিলিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট জেলায় সরকারের প্রতিনিধি। তাঁকে বলা হয় সিম্বল অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, বা প্রশাসনের প্রতীক। ফলে জেলার কোথাও কোনো ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটলে সরকারের উপরিমহলে প্রথমেই খোঁজ পড়ে তাঁর। তাঁর বক্তব্যই হয় সরকারি বক্তব্য। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলাজনিত বা রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে তাঁর ভূমিকা আবহমানকালের।

জাগো মাঠ প্রশাসন, ‘কুণ্ঠে বাহে?’...পাকিস্তানি আমলে ষাটের দশকে একটি মহকুমা (বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা), তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে দুটি মহকুমা, বাংলাদেশের তিনটি বৃহত্তর জেলা (কুষ্টিয়া, খুলনা ও ঢাকা) এবং রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্বপালনের অভিজ্ঞতা থেকে মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দুটি কথা বলার জন্য আজকের এই নিবন্ধ। গোড়াতেই বলে রাখতে চাই সম্প্রতি মাগুরার একটি শিশু ধর্ষণের (মেয়েটি গত বৃহস্পতিবার মারা গেছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) ঘটনায় দেশব্যাপী যে তুমুল বিক্ষোভের ঝড় বইছে তা খুবই স্বাভাবিক। বিশেষ করে আমাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্তানতুল্য তরুণ শিক্ষার্থীরা বারবার যেভাবে জাতির বিবেক ধরে নাড়া দিচ্ছে তাতে আমি অন্তত আশাবাদী, এই দেশে বৈষম্য থাকবে না, অন্যায় করে কেউ পার পাবে না, দেশে আইনের শাসন অতি শীঘ্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে একটি কথা আন্দোলনকারীদের মনে রাখতে হবে, কোনো অপরাধীকে পাকড়াও করা, তাকে আইনের আওতায় আনা, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, ছিনতাই ইত্যাদি বন্ধ করার প্রাথমিক দায়িত্ব কিন্তু কোনো মন্ত্রী, সচিব বা বিভাগীয় বড় কর্তার নয়এই দায়িত্ব মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর। অতএব ঢাকায় নীতিনির্ধারণকারী কোনো মন্ত্রী, সচিব বা বিভাগীয় বড় কর্তার পদত্যাগ দাবি করা যুক্তিসঙ্গত নয়। তবে হ্যাঁ, তাঁদের কাছে অবশ্যই দাবি জানানো যেতে পারে। তাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের টপ-টু-বটম সকলেরই টনক নড়বে সন্দেহ নেই।

এখন আসুন মাঠ পর্যায়ে কী ঘটছে, বা সব সময় কী ঘটে থাকে তা একটু নাড়াচাড়া করে দেখা যাক। মনে রাখা দরকার, একটি এলাকার চোর-চোট্টা-বদমাশ-ধর্ষকরা, ইভ টিজাররা, সব সময় চোখ-কান খোলা রেখে এলাকার ও.সি., এস.পি, ডি.সি., ইউএনও ইত্যাদি কর্মকর্তার গতিবিধি ও কার্যকলাপ মনিটর করে। যদি দেখে এদের একজনের সঙ্গে আরেকজনের সদ্ভাব নেই, একজনের কাজকর্মের সঙ্গে অন্যজনের কাজকর্মের সমন্বয়ের অভাব, কিংবা তাঁরা ব্যস্ত নিজের পকেটপূর্তিতে বা স্যারের জন্য চাঁদা তুলতে, অথবা কোনো নেতার তাঁবেদারি করতে, তখন তারা বগল বাজিয়ে নেমে পড়ে যাবতীয় কুকর্মে। অপরাধীরা ঠিকই লাইন বের করে ফেলে চুরি-ডাকাতি-ধর্ষণ ইত্যাদি যেকোনো অপরাধ করে কী করে নির্বিঘ্নে বেরিয়ে যেতে হবে।

এখানে দু-একটি মৌলিক বিষয়ের উল্লেখ করতেই হয়। জেলার আইনশৃঙ্খলা, অপরাধ দমন ইত্যাদির সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধান দুই কর্মকর্তাডি.সি. এবং এস.পি.সারাক্ষণ জনসাধারণের নজরদারিতে আছেন, এটা ভুলে গেলে চলবে না। অতএব তাঁরা অফিসে এবং অফিসের বাইরে ব্যক্তিগত জীবনে পরস্পর পরস্পরের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ বা ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ করেন, নাকি আমি কী হনু রে, ও আবার কে? ইত্যাদি মার্কা ব্যবহার ফুটে ওঠে তাঁদের কথায়-বার্তায়, চলনে-বলনে তা সব সময় পাবলিক লক্ষ্য করে। যেকোনো সমস্যায় বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ডি.সি.-এস.পি. ঘন ঘন নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে সেটা বাস্তবায়ন করা সহজ হয়। একই কথা বলা যায় ইউএনও-ও.সি.-র বেলায়ও। অন্যথায় নিজ নিজ অফিসের অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারী আদেশপালনে বা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গড়িমসি করবে।

আরেকটি কথা। ডি.সি.-এস.পি.-র জনসংযোগ। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা ডি.সি. বা এস.পি. জেলার জনপ্রতিনিধিদের সাহায্য-সহযোগিতা-পরামর্শ ব্যতীত কখনোই সফল হতে পারবেন না। মনে রাখতে হবে, জনপ্রতিনিধি ওই এলাকার মানুষ, সান অব দ্য সয়েল, যে কারণে এলাকা, এলাকার মানুষ, সমস্যা ও তার সমাধান সম্বন্ধে তাঁর কিছু বিশেষ জ্ঞান থাকার কথা, যা আপনার নেই। কাজেই আপনি ডি.সি. বা এস.পি.যেই হোন না কেন অনেক সময় প্রকৃত তথ্য জানার জন্য, অথবা যেকোনো বিষয়ে জনসমর্থন লাভের জন্য স্থানীয় কোনো সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরতিনি কোনো স্কুলের শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী বা ভূস্বামী হতে পারেনসাহায্য নিতে পারেন। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, কোনো টাউট-বাটপাড় যেন এই সুযোগে কাছে ভিড়তে না পারে। কুষ্টিয়ায় ১৯৭৪ সালে আমি যখন ডি.সি. হিসেবে যোগদান করি তখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কুষ্টিয়ায় বলা যায় দাবানল জ্বলছিল। আমার কাজ ছিল বিশেষ বিশেষ এলাকায় গিয়ে জনসাধারণকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ করা। গ্রামে গ্রামে মিটিং করতাম রাজনৈতিক নেতাদের মত। আমার বক্তৃতায় সদ্য স্বাধীন দেশকে ভালবাসা, তার উন্নয়নে কাজ করা, ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তি-শৃঙ্খলার পক্ষে থাকার কথা বলতাম। এসব কাজে কুষ্টিয়ার সেই সময়ের রাজনৈতিক নেতাদের সাহায্য-সহযোগিতা খুবই কাজে লেগেছিল। আল্লাহর ইচ্ছায় তিন-চার মাসের মধ্যে সন্ত্রাসের আগুন নেভাতে সমর্থ হয়েছিলাম আমরা।

আরেকটি কথা। ডি.সি., এস.পি. এবং জেলার সব সিনিয়র কর্মকর্তাকে তাঁদের সকল কাজে সততার পরিচয় দিতে হবে। তবেই তাঁদের বিভিন্ন কাজেকর্মে জনসমর্থন পাওয়া যাবে। আর জনসমর্থন ব্যতীত কোনো উদ্যোগ-আয়োজনই সাফল্যের মুখ দেখবে না।

শেষ কথা, একটি আকুতি। ডি.সি.-এস.পি.-রা কি জাতির এই মাহেন্দ্রক্ষণে জুলাই-আগস্টের চেতনায় উদ্বুব্ধ হয়ে মাঠ প্রশাসনকে গণমুখী করতে পারেন না? পারেন না ক্রমবর্ধিষ্ণু মারাত্মক অপরাধগুলোর মূলোত্পাটন করতে? ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে এর অনেকখানিই সম্ভব বলে আমিতোমাদের এই বরিষ্ঠ সাবেক সহকর্মীমনে করি। মাঠ প্রশাসনের এই দুই ভ্রাতৃপ্রতিম সহকর্মী হাতে হাত মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলার পাগলা ঘোড়াকে নিশ্চয়ই অতি দ্রুত বাগে আনতে পারবে এ প্রত্যাশা শুধু আমার নয়, সমগ্র জাতির।

লেখক : সাবেক সচিব, কবি

mkarim06@yahoo.com

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আনন্দ ও উত্তেজনার স্নায়ুক্ষয়ী টি-টোয়েন্টি

    ইকরামউজ্জমান
শেয়ার
আনন্দ ও উত্তেজনার স্নায়ুক্ষয়ী টি-টোয়েন্টি

ক্রিকেটের মধ্যে যে কত বেশি বিনোদন, আনন্দ আর উত্তেজনার উৎস, কত বেশি উদ্ভাবনী শক্তি, সাহস, আত্মবিশ্বাস, নিজকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা, শারীরিক শক্তি ও সামর্থ্য, চরম পেশাদারি, বিজ্ঞান, অঙ্কপাশাপাশি ভীষণ অনিশ্চয়তা লুকিয়ে আছে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মাঠে গড়ানোর আগ পর্যন্ত এই সম্পর্কে ধারণা ছিল না। প্রতিদিনই এই ক্রিকেট সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে চলেছে। সময়ের প্রয়োজনে মাঠে এসে খেলাকে দিয়েছে নতুন প্রাণের স্পন্দন। সার্বিকভাবে ক্রিকেট নামক খেলাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।

মাঠমুখী করেছে ক্রিকেট রসিকদের। বিশ্বজুড়ে খেলাটির জনপ্রিয়তা, প্রসার ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট সংস্করণ টি-টোয়েন্টি। সবার পরে মাঠে এসেছে।

মাঠে এসেই তার জাদুর মাধ্যমে বুঁদ করে ফেলেছে। দেশে দেশে মানুষ এই খেলা উপভোগের জন্য উতলা হয়ে ওঠে। অল্প সময়ের মধ্যে টি-টোয়েন্টি তার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বদৌলতে টেস্ট ও ওয়ানডেকে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার দৌড়ে অনেক আগেই পেছনে ফেলে দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, টি-টোয়েন্টির প্রভাব এখন টেস্ট ও ওয়ানডেতে ভর করেছে।

ক্রিকেট খেলাটিকে বিপ্লব ঘটিয়েছে টি-টোয়েন্টি সংস্করণ। সম্ভব হয়েছে খেলাটির অ্যাপ্রচ ও দর্শনের বদৌলতে। খেলাটি পেরেছে সব বয়সের ক্রিকেটপ্রেমীদের আকৃষ্ট করতে, তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে। মানুষ যা প্রত্যাশা করে, সেটি যে দিতে পারছে টি-টোয়েন্টি! এই ক্রিকেট এখন তাই সবার ভালোবাসা। সবার দুর্বলতা।

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি বুঝতে পেরেছে টি-টোয়েন্টি তারুণ্যের খেলা, যৌবনের খেলা। এটি আগামী দিনের খেলা। তাই আগামী অলিম্পিকে টি-টোয়েন্টি সংস্করণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত হওয়া মানে এই ক্রিকেট বিশ্বের দেশে দেশে আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে।

আনন্দ ও উত্তেজনার স্নায়ুক্ষয়ী টি-টোয়েন্টিক্রিকেট খেলাটিকে বাঁচানোর জন্য একটি সময় টি-টোয়েন্টি সংস্করণকে মাঠে আনা হয়েছে। মাঠের ক্রিকেটকে তো বাঁচিয়েছে, পাশাপাশি ক্রিকেট ঘিরে বাণিজ্যকে মোটাতাজা করেছে। ক্রিকেটারদের দিয়েছে অকল্পনীয় আর্থিক নিরাপত্তা। প্রতিটি ক্রিকেট বোর্ডকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। সর্বোপরি আইসিসি ফান্ডের গ্রাফ যেভাবে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে চলেছে, তাতে দুনিয়াজুড়ে ক্রিকেট কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে চিন্তার আর কারণ নেই। অতএব আনন্দদায়ী, স্নায়ুক্ষয়ী ক্রিকেট জিন্দাবাদ। ক্রিকেটের জগতে নতুন সূর্যোদয়চটকদার টি-টোয়েন্টি সংস্করণ। ক্রিকেট রোমান্টিক মাত্রই টি-টোয়েন্টির লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। তিন ঘণ্টার চলচ্চিত্র উপভোগের জন্য সে কী ব্যাকুলতা!

একটা সময় ছিল অনেক ক্রিকেট গ্রেট এবং ক্রিকেট বিশুদ্ধচারিরা টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে বেশি সমালোচক ছিলেন। তাঁদের কথা হলো ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেট ক্রিকেটের সেই আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য, দর্শন ও মূল্যবোধ ধ্বংস করে ফেলবেঅতএব এই ক্রিকেট চাই না। কিন্তু কিছু সময় যেতেই এই মানুষগুলোই আবার টি-টোয়েন্টির ভক্ত হয়ে গেছেন, প্রেমে পড়েছেনতাঁরা বুঝতে পেরেছেন এটি সময়ের দাবির ক্রিকেট। যুগের ক্রিকেট। তাই তাঁরা টি-টোয়েন্টির মিছিলে যোগ দিয়েছেন। বুঝতে পেরেছেন ঘড়ির খেলা, কড়ির খেলার আবেদন। রঙিন পোশাকের ক্রিকেটাররা তো মাঠে নামছেন বিনোদ-মাধুর্য বিতরণের জন্য, যেটি নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা বেশি উদগ্রীব!

ক্রিকেট বিশ্বে সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে আলোচিত ভারতের আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগের ১৮তম আসর মাঠে গড়াতে যাচ্ছে ২২ মার্চ। দুনিয়াজুড়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রতীক্ষার অবসান হবে। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে মুখোমুখি হবে গতবারের চ্যাম্পিয়ন (২০২৪) কলকাতা নাইট রাইডার্স ও রয়াল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। কলকাতা নাইট রাইডার্স এর আগে দুইবার (২০১২ ও ২০১৪) শিরোপা জিতেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নাইট রাইডার্সকে চলতি বছর শিরোপা ধরে রাখার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

পুুরো বিশ্বের সেরা ও ভালো ক্রিকেটাররা আইপিএলে খেলেন। আইপিএলে খেলার জন্য মুখিয়ে থাকেন। ৭৪ ম্যাচের টুর্নামেন্টের ফাইনাল হবে ২৫ মে আবার কলকাতার ইডেনে। ইডেনে ক্রিকেট উপভোগের অন্য এক ধরনের আবেগ এবং আবেদন আছে। ইডেনে খেলা মানেই স্টেডিয়ামে মানুষের সমুদ্র। ১০টি ফ্র্যাঞ্চাইজির অংশগ্রহণে খেলা হবে কলকাতা ছাড়া আরো ১২টি শহরে। সব ভেন্যুই থাকবে দশর্কে ঠাসা। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আইপিএলে হোম ভেন্যুর আবেদন ও গুরুত্ব যাঁরা মাঠে গিয়ে খেলা না দেখেছেন, তাঁরা ঠিক সেভাবে অনুভব করতে পারবেন না।

গত বছর নভেম্বরে সৌদি আরবের জেদ্দায় বসেছিল আইপিএলের মেগানিলাম। ৬৩৯ কোটি ১৫ লাখ রুপিতে মোট ১৮২ জন খেলোয়াড় কিনেছে ১০ ফ্র্যাঞ্চাইজি। ধরে রেখেছে ৪৬ জন খেলোয়াড়। কিছুদিন আগে সংবাদপত্রে দেখেছি, সৌদি আরব ছয় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ আয়োজনের কথা গভীরভাবে ভাবছে। এতে এই লীগ ঘিরে আকাশে টাকা উড়ে বেড়াবে। ক্রিকেটাররা ঝুঁকবেন সেই লীগে। তখন আইপিএলের অবস্থা কী হতে পারে? সৌদি পেশাদারি ফুটবলে তো এখন আন্তর্জাতিক গ্রেট তারকাদের মেলা। কথায় আছে, অর্থ কথা বলে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্রিকেটের দিকে তাকিয়ে বলা যায়, একমাত্র টি-টোয়েন্টি সংস্করণের মাধ্যমেই বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটের সম্প্রসারণ সবচেয়ে বেশি সম্ভব। ২০ ওভারের ক্রিকেট এখন বাজার মাতাচ্ছে। সময় এটিকে দারুণভাবে লুফে নিয়েছে। সবাই ইতিবাচক টি-টোয়েন্টি নিয়ে।

ভারতে ১৮তম আইপিএলে এবার বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের স্থান হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছে। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের চাহিদা কার্যকর ক্রিকেটার, যাঁরা দলকে সঠিকভাবে সার্ভ করতে পারবেন। বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারকে ফ্র্যাঞ্চাইজি না কিনলেও অগণিত মানুষ কিন্তু প্রতিদিন প্রবল আগ্রহ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও চিত্তাকর্ষক আইপিএল উপভোগ করবে। এখানেই খেলার রাজার আবেদনের জয়।

ভারত সম্প্রতি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে। দুটি ট্রফি রোহিত শর্মার নেতৃত্বে। ভারতের ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের খেলা গতবারের তুলনায় অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। ভারতের খেলোয়াড়রা বিদেশিদের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হবেন। তাঁরা চাইবেন মানুষকে বহুগুণে সুখী করতে।

পরিসরে ছোট ক্রিকেট টি-টোয়েন্টিআবার সূত্র ধরে ক্রিকেটীয় কারিগরি বা কৌশলগত দিকে সমৃদ্ধতার পরশ সব সময় লক্ষণীয় হয়। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং ও রণকৌশলে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব নিত্যনতুন সংযোজন, তার সবই প্রায় সীমিত ওভারের প্রয়োজন। খেলাটি সত্যি ব্যাটসম্যান, না বোলারের? না উভয়ের? এই বিতর্কটি এখন চলছে। বোলাররাও তো ম্যাচ জেতাচ্ছেন। আর শারীরিক ফিটনেস ছাড়া প্রাণবন্ত ক্রিকেট হবে কিভাবে? মাঠে ভুল শোধরানোর সুযোগ খুব কম। অধিনায়কের সিদ্ধান্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিন ঘণ্টায় দুই দলের খেলা শেষ। কিন্তু অনুশীলন অনেক বেশি। মাথা ঘামাতে হয় অনেক বেশি।

 

লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্লেষক। সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, এআইপিএস এশিয়া। আজীবন সদস্য বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন। প্যানেল রাইটার, ফুটবল এশিয়া

 

মন্তব্য

গ্রাম বদলে গেছে বদলে যাচ্ছে

    আব্দুল বায়েস
শেয়ার
গ্রাম বদলে গেছে বদলে যাচ্ছে

২০২৫ সালে গ্রামবাংলায় পা ফেলেই যেন ধাঁধায় পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। কৈশোরে পাঠ্যপুস্তকে পড়া কিংবা দু-তিন যুগের আগের দেখা গ্রাম আর বর্তমান গ্রামের মধ্যে পর্বতপ্রমাণ পার্থক্য। এই গ্রাম তো ঠিক সেই গ্রাম নয়। পানির কলকল ধ্বনি, বর্ষার জলে টইটম্বুর নদী ও পুকুর, পাখির কলরব, সারি সারি ছনের ঘর, কুপির টিমটিমে আলো ইত্যাদি তেমন আর চোখ পড়ল না।

আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে এখন ভরাট হয়ে সোজাসুজি চলছে। মাঠের ধূলাবালিতে গড়াগড়ি, গাছের ডাল থেকে দুঃসাহসিক লাফ, পুকুরে দাপাদাপি ও পানির খেলায় মেতে ওঠার মহোৎসব আগের মতো মূর্তিমান নেই; ঐতিহ্যবাহী হাডুডু, গোল্লাছুট, এমনকি এক্কা-দোক্কা খেলা আধুনিকতার ধাক্কায় যেন কুপোকাত। পতিত জমিতে পাজামা, পাঞ্জাবি ও টুপি পরা মাদরাসার ছাত্র কিংবা খালি গায়ে একদল শিশু ক্রিকেট খেলছে। গ্রাম থেকে ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছে যাত্রা, পালা, জারিগান ও পুথিপাঠ।
আর নেবেই না কেন, আজকাল টিভি ও মোবাইল ফোন উপহার দিচ্ছে ডিসকো গান ও ধুমধাড়াক্কা সিনেমা এবং সম্ভবত সেই আফসোস থেকে এই গান গাওয়া : আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম/আমরা আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম।/গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান/মিলিয়া জারিগান আর মুর্শিদি গাইতাম।

দুই.

সুতরাং সৌভাগ্য আর দুর্ভাগ্য বলি, প্রথাগত গ্রামের প্রেক্ষাপটে আমাদের দেখা গ্রামগুলো যে অনেকটা বেখাপ্পা ও বেমানান, সে কথা বলা বাহুল্য। কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির এই ব্যবধান আরো একটু পরিষ্কার করে বোঝানো যেতে পারে।

দুই দশক আগে কষ্টেসৃষ্টে এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে বড়জোর উপজেলা সদর পর্যন্ত যাওয়া যেত; এখন পিচঢালা মসৃণ পথে মোটরগাড়িতে বেশ কিছু গ্রামে সরাসরি যাওয়া যায়চাই কি বাড়ির আঙিনায়। আজকাল গ্রামে ছনের ঘরের সংখ্যা ব্যাপক কমে আসছে আর কুপিবাতি বিদায়ের প্রহর গুনছে। এমনকি অতীতের মতো নাকে-মুখে রুমাল গুঁজে গ্রামে ঢুকতে হয় নাপ্রতিটি গ্রামের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ঘরে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা এবং প্রায় প্রতিটি ঘরের জন্য সুপেয় পানির বন্দোবস্ত আছে। বসতবাটি যথাসম্ভব পরিচ্ছন্ন রাখার একটা তাগিদ আমাদের চোখ এড়াল না। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’—এমন পরিবেশ যেন সবার কাম্য।
অনেক খানায় বিদ্যুত্সংযোগ এসে গেছে এবং সেই সূত্রে টিভি ও ফ্রিজ; অপেক্ষাকৃত সচ্ছলদের ঘরে রঙিন টিভি ও দামি ফার্নিচার। যেখানে বিদ্যুত্ পৌঁছাতে পারেনি (যেমনচরাঞ্চল ও দুর্গম গ্রাম), সেখানে সোলার প্যানেল লাগিয়ে দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর প্রাণান্ত প্রচেষ্টাও লক্ষণীয়। তবে টিভি ও ডিশ উন্নত জীবনমানের বাহক হলেও অভিযোগ আছে যে সিনেমা, নাটক ও সিরিয়াল কিশোর-কিশোরীদের খোলা মাঠের খেলা কেড়ে নিচ্ছে। টিভির দোষ দিয়েই বা লাভ কী? গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলার জায়গাগুলোতে গড়ে উঠেছে বসতি, নার্সারি কিংবা ফসলের আবাদ। এক শ বিঘার মাঠটাই এই গ্রামের একমাত্র সম্বল’—শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেখা সেই গ্রাম আজকাল কেউ দুরবিন দিয়েও খুঁজে পাবে বলে মনে হয় না। ইদানীং গ্রামে নাটক খুব একটা হয় না, তবে গ্রামের জীবন নানা নাটকীয়তায় ভরা। চলুন তাহলে এমন কয়েকটা নাটকীয় ঘটনার কথা শুনি।

তিন.

দু-তিন দশক আগেও দোকান বলতে গ্রামের কোনো ছোট একটি ঘরে চাল-ডাল, নুন আর তেলের পসরা। অথচ ২০২৪-২৫ সালে এসে আমাদের দেখা গ্রামগুলোতে গড়পড়তা চার-পাঁঁচটি দোকান এবং সেই সঙ্গে কোথাও টিভি ও ফ্রিজ। চা, চানাচুর, চিপস, সাবান ও প্রসাধনী, আইসক্রিম, কোমল পানীয়, এমনকি প্রক্রিয়াজাত মসলা দেদার বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় হাটবাজারের অবস্থা আরো উন্নত এবং শহরের প্রায় সব দ্রব্য ওই সব দোকানে পাওয়া যায়। নাটকীয়তা এসে গেছে দরিদ্রের জীবনেও। সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর একদা যে দিনমজুর সন্ধ্যার গ্রাম বদলে গেছে বদলে যাচ্ছেপরপরই বিছানায় গা এলিয়ে দিত, সে এখন চা, পান ও সিগারেট সঙ্গে করে মধ্যরাত পর্যন্ত গ্রামের বা হাটের দোকানে টিভির সামনে বসে থাকে। কোথাও আবার দোকানের এক কোণে ক্যারম বোর্ড পাতা আছেমাঝে মাঝে দিনমজুর, যুবক শ্রেণি ও বেকার লোক পয়সার বিনিময়ে খেলে কিংবা অন্যের খেলা প্রাণভরে উপভোগ করে। রোনালডো, নেইমার, মেসি, শচীন টেন্ডুলকার এখন গ্রামে খুব পরিচিত নাম; খুব দরিদ্র ঘরের ছেলেমেয়েও তরতর করে নাম বলে, যেন তাঁরা ওদেরই সহপাঠী। এভাবে দুই দশক আগের অচেনা-অজানা পুরো বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহ এখন গ্রামে থাকা ওই ছোট দোকান ঘরটিতে এক নিমেষে উপস্থিত হয়। সুতরাং কে বলবে এই গ্রাম, সেই গ্রাম? স্বভাবতই রবীন্দ্র, শরত্ যুগ, এমনকি সত্তরের দশকের গ্রাম-ভাবনা নিয়ে বসে থাকলে হতাশ হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তবে অনুমান করতে কষ্ট হলো না যে শহরভিত্তিক উন্নয়নের ছিটেফোঁটা রাস্তাঘাট ও বাজারের বদৌলতে গ্রাম-গ্রামান্তর উপচে পড়ছে (ট্রিকল ডাউন); এক কালের বিচ্ছিন্ন ও বিযুক্ত গ্রাম শহরের কিঞ্চিত্ রূপ ধারণ করে চলেছে। এই সংযুক্তির সুযোগে খোলা জানালা দিয়ে যেমন নির্মল বায়ু প্রবেশ করছে, তেমনি ঢুকছে মশা-মাছি। 

সাধারণত সিনেমা, টিভি বা নাটকের শুরুতে একটি ডিসক্লেমার বা সতর্কীকরণ নোটিশ দেওয়া থাকে। গ্রাম বিবর্তন উপাখ্যানের মূল পর্বে যাওয়ার আগে একটি ডিসক্লেমার দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও মনে হতে পারে যে গ্রামগুলো যেন এক ও অভিন্ন। আসলে কিন্তু তা নয়, বিশেষত ভূ-প্রকৃতি ও জীবিকা কৌশলের দিক থেকে এরা একে অপর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। দু-একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। বেশির ভাগ গ্রামে দুই সন্তানই যথেষ্ট এমন একটি চেতনা বেশ ভালোভাবে গ্রোথিত বলে মনে হয়েছে। ফলে ওই সব গ্রামে খানার সদস্যসংখ্যা বড়জোর ৩-৪; মোট জনসংখ্যায় শিশুর অনুপাত ১০-১২ শতাংশ; কর্মবয়সী জনসংখ্যার অনুপাত বাড়ন্ত এবং প্রজননহার পড়ন্ত। এর ঠিক উল্টো পরিস্থিতি দেখা যায় কিছু গ্রামে। আল্লাহর আদম আল্লাহ খাওয়াবেন’—এমন রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে সেখানে খানাপ্রতি সদস্যসংখ্যা ৬-৭, প্রজননহার বেশ উঁচুতে এবং উপার্জনকারীর ওপর ভোক্তার নির্ভরশীলতার অনুপাত অপেক্ষাকৃত বেশি। কোথাও খানার আয়ের বেশির ভাগ আসে বৈদেশিক রেমিট্যান্স থেকে (যেমনমধুরখোলা); কোথাও আবার অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স আয়ের প্রধান চাবিকাঠি (যেমনকবিরকাঠি গ্রাম)। রাজশাহীর তেঘর গ্রামে বর্ষা মৌসুমে ৮০ শতাংশ জমিতে পানি জমে না অথচ সুনামগঞ্জের পশ্চিম কাশিপুর ছয় মাস প্রায় পানির নিচে থাকে। সাতক্ষীরার পরানদহ তথা বেশির ভাগ গ্রামে উফশী ধান কৃষকের প্রাণ, যেখানে খুলনার মাইলমারা গ্রামে উফশীর উচ্ছিষ্টও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর; তাই বলে মাইলমারার মানুষ না খেয়ে মরছে না। সীমান্ত ঘেঁষে গ্রামগুলোতে ভারত থেকে আসা ধানের বীজ (যেমনজামাইবাবু, স্বর্ণা, মিনিকেট) ও সেখানকার কৃষিজ্ঞান চোরাই পথে এসে চাষির মন কাড়ায় ব্যস্ত অথচ বাংলাদেশের অন্য কোথাও তেমনটি দেখা যায় না। কী বিচিত্র এই দেশ সেলুকাস! কী বিচিত্র এই গ্রাম! তবে নানান বরন গাভিরে তার একই বরন দুধ অর্থাত্ নানা ধরনের গ্রাম হলেও তাদের উন্নয়নের সিঁড়ি অনেকটা একই রকম : সবুজ বিপ্লব এবং/অথবা উন্নত অবকাঠামো, যা মাইকেল লিপটনের ফার্টিলিটি, ফুড ও ফার্মিংপরিবর্তন ব্যাখ্যায় প্রাসঙ্গিক বলে আমরা মনে করি।

চার.

ওর্যাল হিস্ট্রি থেকে মনে হলো যে গ্রামের আর্থ-সামাজিক রূপান্তর গল্পের নায়কের নাম নয়া ধান, যা সচরাচর সুধীসমাজে সবুজ বিপ্লব হিসেবে পরিচিত। বিশেষত সেচের সুবিধা আছে এমন অঞ্চলের গ্রামগুলোতে জমি, লিঙ্গ ও শিক্ষা ভেদে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা উফশী (উচ্চ ফলনশীল) বা নয়া ধানের জয়গান ও উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এর পেছনে একটিমাত্র কারণ হলো শুষ্ক মৌসুমে এই নয়া ধান গ্রামবাংলায় নবদিগন্তের সূচনা করেছে বলে তারা মনে করে থাকে। সবুজ বিপ্লবের চাদরে ঢাকা সেচ ও সার নির্ভর উচ্চ ফলনশীল ধান আসার আগে এসব গ্রামের কৃষিজমি ছিল প্রধানত একফসলি; খাদ্য জোগানের একমাত্র উপায় ছিল সনাতন জাতের ধান। সবুজ বিপ্লব তথা উফশীর ঢেউয়ে এখন সেই ধান ভেসে গেছে। দু-একটি গ্রাম ছাড়া একসময়ের প্রভাবশালী আউশ ধানের অস্তিত্ব কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না; যদি থেকেও থাকে, তবে নিশ্চিতভাবে জাদুঘরে। তাই বলে কিন্তু সনাতন ধানের মৃত্যু ঘটেছে অমন কথা বলা যাবে না, আমন মৌসুমে কিছুটা অস্তিত্ব এখনো আছে। বেশ কিছু গ্রামে কৃষক এ ধরনের ধান করেন মূলত মুড়ি, চিড়া ও পোলাওয়ের চালের জন্য। তা ছাড়া এগুলোর বেশির ভাগ বেশি পানিতে কিংবা প্লাবনের পরও কিছু ফসল দেয় এবং রোগবালাইয়ের অক্রমণও অপেক্ষাকৃত কম। ফলে অবস্থাপন্ন কৃষক প্রয়োজনের সময় বীজ পাওয়ার জন্য অল্প জমিতে এসব ধানের চাষ বহাল রেখেছেন। আর একটি কথা। জমিখণ্ডগুলো এমন আলাদা যে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সব খণ্ডে উফশী করা যায় না বলে সনাতন ধানই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়।

পাঁচ.

কিন্তু এই ভরসার দিন শেষপ্রায়। মাটি, পানি ও প্রকৃতির ওপর চাপ দিয়ে নয়া ধান দীর্ঘমেয়াদি দুঃখ ডেকে এনেছে বলে বলছেন বিজ্ঞানীরা। সুতরাং সনাতন জাতের ধান উৎপাদনে উৎসাহিত করার দিন এসে গেছে। পরিকল্পিতভাবে উপরিস্তরের পানি ব্যবহার করে, কম কীটনাশক ব্যবহার করে ধান উৎপাদনে ব্রতী হওয়া দরকার। নয়া ও সনাতন মিলে দেবে সমাধানএকটি সমস্যা ডেকে আনবে আরো তীব্রভাবে।

লেখক : অর্থনীতিবিদ, সাবেক উপাচার্য

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য

ঋণের উচ্চ সুদহার কমানো প্রয়োজন

    নিরঞ্জন রায়
শেয়ার
ঋণের উচ্চ সুদহার কমানো প্রয়োজন

সম্প্রতি একটি ইংরেজি দৈনিক ব্যাংকঋণের ওপর উচ্চ সুদহার এবং দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে গড় সুদের হার ছিল ৭.২৪ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এসে দাঁড়ায় ৯.৭৫ শতাংশে এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১১.৮৯ শতাংশ। বিগত দুই বছরে ঋণের ওপর সুদের হার ৭.২৪ থেকে বৃদ্ধি করে ১১.৮৯ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাত্ মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে সুদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ শতাংশ, যা এককথায় নজিরবিহীন।

আমরা জানি না, বিশ্বের আর কোনো দেশে, বিশেষ করে যেসব দেশের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পন্ন হয়, সেসব দেশে এত অল্প সময়ের ব্যবধানে এই মাত্রার সুদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে কি না।

কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন যে দেশের ব্যবসায়ীরা যতই চাপ সৃষ্টি করুন না কেন, তিনি সুদের হার হ্রাস করবেন না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীদের চাপ সৃষ্টি করার মতো অবস্থা কি আসলেই আছে! ব্যবসায়ীরা তাঁদের ব্যবসা টিকিয়ে রেখে কোনো রকমে বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত এবং প্রতিনিয়ত উদ্বেগজনক অবস্থার মধ্যে আছেন। চাপ সৃষ্টি করবেন কিভাবে? তা ছাড়া রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় না থাকলে যে কোনো রকম চাপ সৃষ্টি করা যায় না, সেটি তাঁরা ভালো করেই জানেন।

যা হোক, উচ্চ সুদহার অব্যাহত রাখার সমর্থনে গভর্নর আমেরিকা, ইউরোপ এবং ভারতের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলেছেন যে সব দেশেই একটি কার্যকর (ইফেক্টিভ) সুদের হার থাকে এবং আমরাও তা-ই করব। তিনি আরো বলেন যে সুদের হার তখনই কমানো হবে, যখন দেশে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। কিন্তু গভর্নর যেসব দেশের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন, তারা তো সুদের হার হ্রাস করে চলেছে এবং এখন স্বল্প সুদহারের সময়ে আছে। তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও তো সেই পথ অনুসরণ করার কথা।
অর্থাত্ উচ্চ সুদহার হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। তবে গভর্নরের এ কথা ঠিক যে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের পরই সুদের হার হ্রাস করতে হয়। কেননা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এখন পর্যন্ত যতগুলো অর্থনৈতিক অস্ত্র আবিষ্কার করা হয়েছে, তার মধ্যে নীতি সুদ হার অন্যতম। সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই অস্ত্রই ব্যবহার করে। কিন্তু অর্থনীতির এই তত্ত্ব তো কাজ করে একটি স্বাভবিক অবস্থায়।

ঋণের উচ্চ সুদহার কমানো প্রয়োজনআমরা যারা অর্থনীতি নিয়ে লেখাপড়া করেছি, তারা ভালো করেই জানি যে অর্থনীতির কোনো তত্ত্ব তখনই কাজ করে, যখন অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে এবং স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করে। এ কারণেই অর্থনীতির যেকোনো সূত্র লেখার আগে একটি কথা প্রথমেই উল্লেখ করা হয় তা হচ্ছে, অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে (ceteris paribus, meaning other things will ermain unchanged) এমনকি যেসব দেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করে, মানসম্পন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি এবং সুশৃঙ্খল বাজার ব্যবস্থা বিদ্যমান; যেমনকানাডা, আমেরিকা, ইউরোপ, সেখানেও এই নীতি সুদ হার প্রয়োগ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সব সময় সম্ভব হয় না। এ কারণেই সেসব দেশে একাধিক মূল্যস্ফীতির সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে; যেমনমৌলিক মূল্যস্ফীতি যেখানে অতি মূল্য পরিবর্তনশীল পণ্য বিবেচনায় নেওয়া হয় না; অমৌলিক মূল্যস্ফীতি, যেখানে সব রকম পণ্য বিবেচনায় নেওয়া হয় এবং গড় মূল্যস্ফীতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু মৌলিক মূল্যস্ফীতিই বিবেচনা করে। এই যেখানে অবস্থা, সেখানে আমাদের দেশে না আছে মানসম্পন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি, না আছে বাজারব্যবস্থায় শৃঙ্খলা। সর্বক্ষেত্রে এক বিশৃঙ্খল অবস্থা। এর ওপর এখন তো বিরাজ করছে একেবারেই অস্বাভবিক অবস্থা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এ রকম অবস্থায় উচ্চ সুদহার প্রয়োগ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার কাজটি মোটেই সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অন্তত আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা তা-ই বলে। মাঝখান থেকে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং সর্বোপরি দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ কথা অনস্বীকার্য যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে দুই ধরনের উপাদানের প্রভাব। একটি হচ্ছে অর্থনৈতিক উপাদান; যেমনমুদ্রা সরবরাহ, চাহিদা, জোগান। আরেকটি হচ্ছে অর্থনীতিবহির্ভূত উপাদান; যেমনবিশৃঙ্খল বাজার ব্যবস্থা, আধুনিক গুদামজাত ব্যবস্থার অভাব, মানসম্পন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি, অনিয়ন্ত্রিত সরবরাহ ব্যবস্থা প্রভৃতি। নীতি সুদ হার প্রয়োগ করে মূল্যস্ফীতির অর্থনৈতিক উপাদানকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও অর্থনীতিবহির্ভূত উপাদানের ক্ষেত্রে তেমন কিছুই করার সুযোগ থাকে না। এ কারণেই দেখা যায়, যেসব দেশে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণে অর্থনীতিবহির্ভূত উপাদান খুবই কম; যেমনআমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ, সেসব দেশে নীতি সুদ হার প্রয়োগ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কাজটি অনেকটা সহজ হয়। পক্ষান্তরে যেসব দেশে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণে অর্থনীতিবহির্ভূত উপাদান অনেক বেশি; যেমনবাংলাদেশ, সেসব দেশে শুধু নীতি সুদ হার প্রয়োগ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ খুবই কম। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতাও তা-ই বলে।

উচ্চ সুদহারের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আমাদের দেশে উচ্চ সুদহারের নেতিবাচক প্রভাব মারাত্মক। কেননা এখানে বিনিয়োগযোগ্য অর্থ সংগ্রহের একমাত্র উৎস হচ্ছে ব্যাংকঋণ। উচ্চ সুদহার বহাল থাকলে ব্যাংক যেমন নতুন ঋণ দিতে আগ্রহী হয় না, তেমনি উদ্যোক্তারাও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে সাহস পান না। কেননা উচ্চ সুদহারের সময় ঋণ পরিশোধ বা ডেট সার্ভিসিং করতে না পারার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। আমাদের অনেকেরই মনে থাকার কথা, ১৯৮০-এর দশকে অসংখ্য ঋণগ্রহীতা ব্যাপকহারে ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে ঋণখেলাপির খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন এবং সেখান থেকেই দেশে ঋণখেলাপি সংস্কৃতির শুরু। সেই সময়ের অস্বাভাবিক খেলাপি ঋণের জন্য দেশের ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করা হয়। এটিই স্বাভাবিক। কেননা ঋণ নিলে, সেই ঋণ পরিশোধের সব ধরনের দায়দায়িত্ব ঋণগ্রহীতার ওপরই বর্তায়, তাতে বাস্তব অবস্থা যেমনই হোক না কেন।

বাস্তবতা হচ্ছে সে সময়ের পর্যাপ্ত ঋণখেলাপির পেছনের আসল কারণ কখনোই অনুসন্ধান করা হয়নি এবং এ নিয়ে কোনো কথাও বলা হয় না। অথচ সে সময়ের মাত্রাতিরিক্ত ঋণপখেলাপির পেছনে যে কয়টি উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল, তার মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত সুদের হার, যা তখন ছিল ১৮ থেকে ২০ শতাংশ। এই উচ্চ সুদহারে এক কোটি ঋণ নিয়ে থাকলে চার বছরে তা সুদে-আসলে বেড়ে দুই কোটি টাকা হয়েছিল। কোনো ব্যবসায়ীর পক্ষে চার বছরের মধ্যে ব্যবসা করে গৃহীত এক কোটি টাকা ঋণ সুদে-আসলে দুই কোটি টাকা পরিশোধ করা সম্ভব নয়। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য বেড়ে গেছে। এখনো যদি সুদের হার হ্রাস না করে উচ্চ সুদহার বহাল রাখা হয়, তাহলে একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। অর্থাত্ দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, যা এরই মধ্যে উদ্বেগজনক অবস্থায়ই আছে।

এ কারণেই শুধু অর্থনীতির নিয়মের মধ্যে বা আইএমএফের সুপারিশের মধ্যে আটকে না থেকে বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন আছে। এ রকম সিদ্ধান্ত বিশ্বের অনেক দেশই নিয়ে থাকে এবং সেসব দৃষ্টান্ত অসংখ্য আছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ের সে রকম একটি দৃষ্টান্ত পাঠকদের জ্ঞাতার্থে উল্লেখ করছি। কানাডায় ব্যাংক অব কানাডা (কেন্দ্রীয় ব্যাংক) আগে বেশ কয়েকবার নীতি সুদ হার হ্রাস করেছে এবং এখন কোনো অবস্থায়ই এই সুদের হার আরো কমানোর অবস্থানে নেই। কেননা মূল্যস্ফীতি এখনো সেভাবে হ্রাস পায়নি। তদুপুরি কানাডিয়ান ডলারের বিনিময় মূল্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মুদ্রাবাজার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে পুনরায় নীতি সুদ হার হ্রাস করলে কানাডিয়ান ডলারের আরো অবমূল্যায়ন হবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য খুব একটা ভালো হবে না। এর পরও ব্যাংক অব কানাডা পুনরায় নীতি সুদ হার হ্রাস করে ২.৭৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে জনগণের, বিশেষ করে ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের কষ্ট লাঘব করার চেষ্টা। কেননা এখানকার অর্থনীতি হচ্ছে ঋণনির্ভর। ফলে ঋণের ওপর উচ্চ সুদহারের কারণে কানাডার মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা। এ কারণেই সরকার ডলারের অবমূল্যায়নের ঝুঁকি নিয়ে এবং বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা উপেক্ষা করে নীতি সুদ হার হ্রাস করেছে।

বাস্তবতা যখন দাবি করে, তখন বইয়ের সূত্র বা আইএমএফের সুপারিশের বাইরে গিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এ রকম সিদ্ধান্ত বিশ্বের অনেক দেশই নিয়ে থাকে, তাই আমাদের দেশকেও নিতে হবে। আগে ব্যবসায় গতি আনতে হবে, ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরাতে হবে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে এবং সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হবে। আর এগুলো নিশ্চিত করতে হলে অনেক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা আছে, যার মধ্যে সুদের হার হ্রাস করা অন্যতম এবং সবার আগে এটি করা প্রয়োজন। আশা করব, অর্থ উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

লেখক : সার্টিফায়েড অ্যান্টি মানি লন্ডারিং স্পেশালিস্ট ও ব্যাংকার, টরন্টো, কানাডা

nironjankumar_roy@yahoo.com

 

মন্তব্য

দেশীয় পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহারের অর্থনৈতিক প্রভাব

    ড. ফজলে এলাহী মোহাম্মদ ফয়সাল
শেয়ার
দেশীয় পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহারের অর্থনৈতিক প্রভাব

বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে উন্নতি লাভ করছে। এ উন্নতির পেছনে রেডিমেড গার্মেন্টস সেক্টরের উন্নয়ন এবং প্রবাসীদের মাধ্যমে প্রেরিত অর্থের বিরাট অবদান রয়েছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ৯৪ মার্কিন ডলার এবং ২০২৪ সালে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৬৭৫ মার্কিন ডলার। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে বেশ কয়েক গুণ।

ইউনিয়ন অথবা গ্রাম পর্যায়ের বাজারগুলোতে এখন কসমেটিক সামগ্রী, বিলাসদ্রব্য, ফাস্ট ফুড, ফ্রিজ, এসি ইত্যাদি বিক্রয় হচ্ছে, যা সত্তরের দশক অথবা আশির দশকে চিন্তাও করা যেত না। বিদ্যুতের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে এসি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল, গাড়ি, বাড়িতে ব্যবহারের জন্য ইলেকট্রনিকস এবং ইলেকট্রক্যািল সামগ্রী, উন্নতমানের পোশাক ইত্যাদির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকাংশে। এসব দ্রব্যের চাহিদা মেটানোর জন্য বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করা হচ্ছে এবং আশার কথা হলো, বাংলাদেশে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।
বেশ কিছুদিন পূর্বে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক-ইয়ং-সিক আমাদের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন এবং ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দেশের জনগণকে বাংলাদেশি পণ্য ক্রয়ে উৎসাহ প্রদান করেন। দেশীয় পণ্যের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোকপাত করার জন্য ইলেকট্রনিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস খাত, অটোমোবাইল খাত এবং রেডিমেড গার্মেন্টস সেক্টর সম্পর্কে আলোচনা প্রয়োজন।

একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্যের প্রায় পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো।

অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হলো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশেই ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদন, বিক্রয় ও রপ্তানি করে থাকে। বাংলাদেশে সর্বমোট ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস দ্রব্যের চাহিদা প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ভোক্তাগণের ব্যবহারের প্রয়োজনে ইলেকট্রনিকস পণ্যের চাহিদা প্রায় ৫.১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের টেলিভিশন সেটের মোট চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ পূরণ হচ্ছে দেশে উৎপাদিত অথবা সংযোজিত টিভি সেটের মাধ্যমে। দেশের সর্বমোট এয়ারকন্ডিশনারের চাহিদার প্রায় ৭৫ শতাংশ পূরণ হচ্ছে বাংলাদেশে উৎপাদিত এয়ারকন্ডিশনারের মাধ্যমে। ফ্রিজ সেটের সর্বমোট চাহিদার ৮০ শতাংশ পূরণ হচ্ছে বাংলাদেশে উৎপাদিত ফ্রিজের মাধ্যমে।
বাংলাদেশে উৎপাদিত ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশনার, টেলিভিশন, ফ্যান, কেবল, সুইচ, সকেট ইত্যাদি ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ওয়ালটনের পণ্যসামগ্রী বিশ্বের ৪০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত ব্যাটারি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহে এবং আফ্রিকার দেশসমূহে রপ্তানি হচ্ছে। ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস সেক্টরে বিনিয়োগ করার জন্য বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। রপ্তানি ও দেশীয় চাহিদা মেটানোর জন্য দেশে মোট কাপড়ের চাহিদা ১২ বিলিয়ন মিটারের চেয়ে বেশি। আমাদের দেশে উৎপাদিত হয় মাত্র তিন বিলিয়ন মিটার। আমাদের দেশে বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ড থাকার পরও প্রায় ২৩.৫ বিলিয়ন পিস রেডিমেড গার্মেন্টস আমদানি করা হয়ে থাকে। ভারত থেকে প্রধানত শাড়ি, থ্রিপিস ও পাঞ্জাবি, পাকিস্তান থেকে থ্রিপিস এবং চীন থেকে টি-শার্ট, জার্সি এবং জ্যাকেট আমদানি করা হয়। বাংলাদেশে ২০২৩ সালে প্রায় চার লাখ ৬২ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। দেশে বর্তমানে ১০টি মোটরসাইকেল ফ্যাক্টরি রয়েছে এবং ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা  মোটরসাইকেল ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে।  মোটরসাইকেলের ইন্ডাস্ট্রিতে জড়িত রয়েছেন প্রায় দুই লাখ জনবল। জাপানি ব্র্যান্ডের হোন্ডা, সুজুকি, ইয়ামাহা, ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজ, টিভিএস, হিরো এবং বাংলাদেশি ব্র্যান্ড রানার মোটরসাইকেল বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। প্রতিবছর প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। বাংলাদেশে বিদেশি ব্র্যান্ড মিতসুবিশি, হিরো, প্রটোন, হুন্দাই, টাটা, অশোক লেল্যান্ড, মাহিন্দ্রা ইত্যাদি সংযোজিত হচ্ছে। দেশীয় ব্র্যান্ডের গাড়ি হলো সোবারি, মিশুক এবং অ্যাগাটে। ২০১৯ সালে মোট গাড়ি আমদানির সংখ্যা ছিল ৬১  হাজার ৪৬৭টি। ২০২২ সালে আমদানির পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৮৮০টি গাড়ি। ২০২৩ সালে গাড়ি আমদানির সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ১৫০টি।

দেশীয় পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহারের অর্থনৈতিক প্রভাবপ্রকৃতপক্ষে আমরা যদি ব্যবহারের জন্য আমাদের দেশে তৈরি পণ্য অর্থাত্ আমাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড অথবা বিদেশি ব্র্যান্ডের পণ্য, যেগুলো আমাদের দেশে উৎপাদন করা হয় সেসব পণ্য ব্যবহার করি, তাহলে আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমবে এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অথবা ব্যালেন্স অব ট্রেড-এর উন্নয়ন ঘটবে। আমরা জানি, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন অর্থাত্ মুনাফা অর্জনের জন্য প্রয়োজন বিক্রয় বৃদ্ধি। বিক্রয়মূল্য যদি উৎপাদন খরচ ও অন্যান্য খরচের চেয়ে বেশি হয় এবং কোনো প্রতিষ্ঠান যদি বেশি পরিমাণ দ্রব্য বিক্রয় করতে পারে, তাহলে প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হবে। তাদের ব্যবসায়ের পরিধি বৃদ্ধির জন্য পুনরায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিধি বৃদ্ধি পেলে বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং কর্মে জড়িত ব্যক্তিদের আয়স্তর বৃদ্ধি পাবে। বেকার যুবকরা কর্মের সুযোগ পেলে এবং আয়স্তরের বৃদ্ধি ঘটে থাকলে দ্রব্যের সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এবং বিনিয়োগ, উৎপাদন ও ব্যবসায় বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং নতুন নতুন পণ্যের উৎপাদনের মাধ্যমে পণ্যের জোগান বাড়বে। এর ফলে আবারও কর্মসংস্থান ও আয়স্তর বৃদ্ধি পাবে। এতে আমাদের দেশে পুনরায় কর্মসংস্থান, আয়স্তর সামগ্রিক চাহিদা, পণ্যের উৎপাদন ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। বৃদ্ধি পাবে সরকারের রাজস্ব আয় এবং সরকারের পক্ষে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

একটি সহজ উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি আলোচনা করা যাক। মনে করি, কোনো একটি প্রতিষ্ঠান নিউটন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাংলাদেশে ফ্যাক্টরির মাধ্যমে উৎপাদন করে। বাংলাদেশের নাগরিকরা যদি বিদেশি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল না কিনে বেশি পরিমাণ নিউটন মোটরসাইকেল কেনা শুরু করে, তবে প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে আরো বেশি নিউটন মোটরসাইকেল উৎপাদন করতে চাইবে। মনে করি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে নতুনভাবে আরো দুই হাজার তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ হলো। দুই হাজার জনের কর্মসংস্থান হওয়ার ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি হলো। দুই হাজার জনের আয়স্তর বৃদ্ধির কারণে দ্রব্যের চাহিদা তৈরি হলো। এতে চায়নিজ রেস্টুরেন্ট, লন্ড্রি, ফার্মেসি, বিস্কুট ফ্যাক্টরি তৈরি হলো এবং এসব ব্যবসায়ের মালিকদের আয় বৃদ্ধি পেল এবং নতুন করে ২০০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলো। রাজস্ব বৃদ্ধি হলে মনে করি, কোনো এলাকার নতুন রাস্তা তৈরি হলো এবং একটি সরকারি হাসপাতাল নির্মিত হলো। আরো মনে করি, ওই এলাকায় যাদের জমি ছিল রাস্তা ও হাসপাতাল নির্মিত হওয়ার ফলে তাদের জমির মূল্য দ্বিগুণ হয়ে গেল। হাসপাতাল ও রাস্তা নির্মিত হওয়ায় সেখানেও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হলো। সুতরাং একটি সহজ উদাহরণে দেখা গেল দেশীয় পণ্য বিক্রির ফলে সরকারের রাজস্ব আয়, উন্নয়ন কার্যক্রম, কর্মসংস্থান, আয়স্তর, চায়নিজ রেস্টুরেন্ট, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, ফার্মেসি ইত্যাদি তৈরি হলো এবং আবারও কর্মসংস্থান ও আয়স্তর বৃদ্ধি পেল এবং হাসপাতাল ও রাস্তা নির্মিত হওয়ার ফলে জনগণের সম্পদের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলো। মুনাফা বৃদ্ধির ফলে প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য একটি স্কুল নির্মাণ করল।

দেশীয় পণ্য বিক্রয় বৃদ্ধি পেলে অর্থনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক এবং রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন হয়ে থাকে। একইভাবে দেশে উৎপাদিত বৈদেশিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রয় বৃদ্ধি পেলেও কর্মসংস্থান, আয়স্তর, রাজস্ব আয় এবং উন্নয়ন বৃদ্ধি পায়। আমরা যদি আমাদের দেশকে প্রকৃত অর্থেই ভালোবাসি, তাহলে দেশে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহারের জন্য অনুপ্রাণিত হতে হবে।

লেখক : অধ্যাপক, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ