<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমড়ার কথা এলেই দেশের যে অঞ্চলটির নাম চলে আসে সেটি বরিশাল। সুস্বাধু ও মিষ্টি আমড়া হিসেবে বরিশালের আমড়াই সবার কাছে পরিচিত। আর এই আমড়ার বেশির ভাগ ফলন হয় পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলায়। পেয়ারার মতোই এ এলাকার আমড়ার সুখ্যাতি রয়েছে দেশব্যাপী। এ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে আমড়ার আবাদ চলছে ৭০-৮০ বছর আগে থেকে। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর এলাকায় আমড়ার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর ভালো ফলন এবং যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় আমড়া চাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে। বিগত বছরগুলোর লোকসানের ক্ষতি পুষিয়ে এ বছর লাভবান হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তাঁরা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><img alt="ভাসমান হাট থেকে স্বরূপকাঠির আমড়া যাচ্ছে দেশজুড়ে" height="243" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/20-10-2024/fff.jpg" style="float:left" width="345" />উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পাওয়া তথ্য মতে, উপজেলার প্রায় প্রতি ইউনিয়নেই কমবেশি আমড়ার চাষ হলেও আটঘর, কুড়িয়ানা, জলাবাড়ী ও সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের ২৯৩ হেক্টর জমিতে এই আমড়ার মূল চাষ হচ্ছে। এ বছর প্রতি হেক্টরে গড়ে ১৫.৩৮ মেট্রিক টন এবং মোট চার হাজার ৫০৭ মেট্রিক টন আমড়া উৎপাদিত হয়েছে। এলাকায় মোট কৃষকের সংখ্যা তিন হাজার ৩৮৯। আমড়ার চাষাবাদ ও বিপণনব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত এসব এলাকার প্রায় পাঁচ থেকে সাত হাজার শ্রমজীবী মানুষ তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রতিবছর আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত আমড়ার মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। আমড়া ও পেয়ারার পাশাপাশি এসব এলাকায় লেবু, গাব, নারকেল, পান, সুপারিসহ অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যের ব্যাপক চাষাবাদ হয়। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">উপজেলার কুড়িয়ানা, আটঘর, আদমকাঠি, জিন্দাকাঠি, ধলহার, আতা, মাদ্রাসহ ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ১০টি খালে প্রতিদিনই আমড়ার ভাসমান হাট বসে। আমড়া চাষিরা বাগান থেকে আমড়া পেড়ে বিক্রির জন্য নৌকা ও ট্রলারে করে হাটে নিয়ে আসেন। ব্যবসায়ীরা আমড়া ক্রয় এবং সরবরাহ করার জন্য ওই হাটে অস্থায়ী আড়ত নির্মাণ করেছেন। আড়তগুলোতে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও কাজ করে চলেছেন। পুরুষ শ্রমিকরা প্রতিদিন আট থেকে দশ ঘণ্টা কাজ করে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং নারী শ্রমিকরা প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা কাজ করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি পান। সকালে আড়তে কাজকর্মের তেমন চাপ না থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতা ও শ্রমিকদের কাজে সরগরম হয়ে ওঠে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে আমড়া বেচাকেনা। সন্ধ্যার পর থেকে শ্রমিকরা আমড়া বাছাই করে প্লাস্টিকের ক্রেট, বস্তা ও ঝুড়ি ভর্তি করেন। গভীর রাত পর্যন্ত তাঁরা ট্রাক ও পিকআপে আমড়া বোঝাই করেন। কোনো কোনো ব্যবসায়ী লঞ্চযোগেও আমড়া সরবরাহ করে থাকেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বর্তমানে হাটে আমড়া পাইকারিভাবে মণপ্রতি এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবছর আমড়ার এই মৌসুমে ঢাকা, কুমিল্লা, চাঁদপুর, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের এক শ্রেণির পাইকার এখান থেকে হাজার হাজার মণ আমড়া ক্রয় করে লঞ্চ, ট্রাক ও পিকআপ যোগে নিয়ে যান। অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ে কিছু ব্যবসায়ী প্রতিদিন শত শত মণ আমড়া এখান থেকে লঞ্চ, ট্রলার ও ট্রাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান দেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোতে যোগাযোগব্যবস্থার সমস্যার কারণে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কুমিল্লাসহ আশপাশের এলাকায় আমড়া পৌঁছাতে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যেত। এতে করে আমড়া মোকামে পৌঁছানোর আগে পথেই অনেকটা পচে নষ্ট হয়ে যেত। ফলে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে চরম লোকসানে পড়তেন। এর প্রভাব গিয়ে পড়ত চাষিদের ওপর। ফলে আমড়ার ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন তাঁরা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সড়কপথে এখানকার আমড়া রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে সঠিক সময়ে আমড়া বিক্রি করে ব্যবসায়ীরাও ভালো দাম পাচ্ছেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আদমকাঠি গ্রামের বাগান মালিক ও আমড়া চাষি অতনু হালদার তনু বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ বছর আমড়ার সাইজ গত বছরের চেয়ে ছোট হলেও ফলন ভালো হওয়ায় ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন, আমরাও ভালো দাম পাচ্ছি। কুড়িয়ানা বাজার থেকে আদমকাঠি হয়ে ভীমরুলী পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তা ও আদমকাঠির পুলটি সংস্কার করা হলে ব্যবসায়ীরা আদমকাঠিতে বসেই ট্রাক বা পিকআপে আমড়া লোড করতে পারবেন, এতে করে তাঁদের পরিবহন খরচ অনেকটা কমে যাবে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ ব্যাপারে আদমকাঠি হাটের ব্যবসায়ী মো. কবির হোসেন বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আগে হাট থেকে আমড়া কিনে লঞ্চযোগে পরের দিন রাজধানী ঢাকায় পৌঁছাতাম অথবা সড়কপথে গেলে মাওয়া ফেরিঘাটে আটকে থেকে সেখানেই অনেক আমড়া পচে নষ্ট হয়ে যেত। ঠিক সময়ে বাজার ধরতে না পারায় উপযুক্ত দাম পেতাম না। এতে করে অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে আমাদের। পদ্মা সেতুর কল্যাণে দিনের আমড়া কিনে সেদিনই ঢাকায় পৌঁছাতে পারছি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p>