বাংলা কবিতায় আশির দশক বলতেই নিরীক্ষাপ্রবণতা আর পূর্বের ধারার বাইরে এসে নতুনের দিকে যাত্রার কথা মনে করিয়ে দেয়। এ দশকের কারো কারো কবিতার শরীর থেকে পেলবতা হারিয়ে দেখা দিতে থাকে নিরেট গদ্যের ছাদ। সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময়ের কালপর্বের ভেতরে কবিতা নিয়ে নিজেকে মেলে ধরতে চেয়েছেন কবি শিহাব শাহরিয়ার। এরই মধ্যে বেরিয়েছে তাঁর ১২টি কাব্যগ্রন্থ এবং সেগুলো নিয়ে এ বছর বেরিয়েছে ‘কবিতাসমগ্র’।
বই আলোচনা
নিজের স্বাতন্ত্র্য ফুটিয়ে তুলতে সচেষ্ট শিহাব শাহরিয়ার

শিহাব শাহরিয়ারের কবিতায় ব্যক্তি চৈতন্যের প্রকাশ লক্ষণীয়। তিনি আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্রে সাবলীল অর্জনে সচেষ্ট থেকেছেন গোড়া থেকেই। ফলে ব্যক্তির অন্তর্দ্বন্দ্বে সঙ্গে সঙ্গে সমাজের অসংগতি, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের যে প্রগতিশীলতা আধুনিকতার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে, সেসবের মৌলিক লক্ষণ তার কবিতা।
কবিতায় দৃশের পর দৃশ্য বর্ণনায় শিহাব শাহরিয়ারের ক্লান্তি নেই।
টানা গদ্যধর্মী লেখার দিকে আলাদা ঝোঁক রয়েছে শিহাব শাহরিয়ারের। তবে সেখানেও তিনি নিজের স্বাতন্ত্র্য ফুটিয়ে তুলতে সচেষ্ট। সেখানেও তিনি দৃশ্য নির্মাণ করেন। পাঠকের সামনে ছড়িয়ে দেন ধাঁধা। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বেড়ে ওঠা শিহাব শাহরিয়ার প্রকৃতির যে উষ্ণ সান্নিধ্যের ভেতর দিয়ে উঠে এসেছেন, প্রকৃতির যে নিবিড় আলিঙ্গনের ভেতর দিয়ে নিজেকে পরিপূর্ণ করে তুলেছেন, তার সঙ্গে রাজধানীর গতিময়তা, জীবনের বহুরৈখিক বাঁকবদল তাকে করে তুলেছে পরিণত।
‘পাখার রং খুঁজি পার হই ব্রহ্মপুত্র/তারপর ঘন বালি,/তারপর রাতের আঁধার/তারপর ঘুম ঘুম নদীর পাড়/তারপর পাখিরা ফিরে যায় নদীর বৃত্ত থেকে/তারপর আমরা নদীমাখা বাতাসের ঘ্রাণ খুঁজি/পাখিতত্ত্ব বুঝি না, খুঁজি শুধু খুঁজতে থাকি পাখার রং’/ [ব্রহ্মপুত্র পর্ব : ০১]
তাঁর ‘কবিতাসমগ্র’র ১২টি কাব্যগ্রন্থের নামগুলোও সুন্দর আর তাঁর কবিতা জীবনের সব জটিলতার বাইরে এসে মানুষের মনের মধ্যে ফেলে আসা অতীতের যে হীরণ্ময় স্মৃতি তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে, সেই আলোর সন্ধান দেয়। তিনি প্রকৃতির মধ্য দিয়ে নতুন পাঠেরও সন্ধান করেন। সেই সন্ধানই তাঁর কবিতাকে করে তোলে হৃদয়গ্রাহী। পাঠক শিহাব শাহরিয়ারের কবিতার কাছে এসে বুকভরে সুস্থ বাতাস টেনে নেওয়ার অবকাশ পায়। ‘কবিতাসমগ্র’টি প্রকাশ করেছে বৈঠা প্রকাশনী, প্রচ্ছদ এঁকেছেন স. ম. তুহিন।
মামুন রশীদ
সম্পর্কিত খবর

পাঠকের প্রিয় বই
নাজমাকে রক্ষা করতে পারেনি ডেভিড
- আয়শা জোহা পূর্ণতা, প্রথম বর্ষ, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল, ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ

প্রকাশকালের দিক থেকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম উপন্যাস তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘একটি কালো মেয়ের কথা’। ১৯৭১ সালে এটি প্রকাশ পায়। গল্পের নায়ক ডেভিড আর্মস্ট্রং। উপন্যাসের ঘটনাকাল একাত্তরের মার্চ-এপ্রিল, ঘটনাস্থল পূর্ব বাংলা।
ঢাকায় তাঁর বাড়ির এক কোণে ঠাঁই হয় এক ভিখারি রহিম ও তার মেয়ে নাজমার। জন্ম-গাইয়ে পিতা-কন্যা গান গেয়ে ঢাকার রাস্তায় ভিক্ষা করত। ডেভিড বাংলার লোকগীতি ভাটিয়ালির সুরের প্রেমে মজল। গানের প্রতি বিশেষ অনুরাগের দরুন ডেভিড রহিম ও নাজমাকে স্নেহ করত, বিশেষ করে নাজমা নামের সেই আশ্চর্য কালো ও মিষ্টি মেয়েটিকে।
এ দেশের প্রকৃতি, ভাটিয়ালি গানের সুরে মুগ্ধ ডেভিড বিয়ে করে ছায়াকে। কিন্তু হঠাৎ ছায়াকে হারিয়ে সন্ন্যাসীর মতো হয়ে পড়ে ডেভিড। তার ব্যক্তিগত জীবনের কাহিনি ও অনুভূতির প্রকাশের আড়ালে মূর্ত হয়ে উঠতে থাকে সেই সময়কার ভয়ানক অবস্থা।
ডেভিড অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান, ধর্মে খ্রিস্টান। খান সেনারা তাকে জানে মারবে না, এতটুকু বিশ্বাস তার ছিল। কিন্তু যখন নাজমা নামের সেই আশ্চর্য কালো মেয়েটির নিয়তি ডেভিডের নিয়তির সঙ্গে জুড়ে গেল, তখন থেকেই উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহ ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। নাজমা অনেক আশা নিয়ে ঘর বেঁধেছিল।
এরপর বহু পথ পাড়ি দিয়ে মানুষগুলো এসে পৌঁছে একটি গ্রামে। তারা যে বাসায় উঠেছিল তার মালিক হাজি শেখ আব্বাস পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের লোক। হাজি সাহেবের পরিবার বাংলাদেশপন্থী। নাজমাকে এখানে আনতে পেরে ডেভিড যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তারা ধরা পড়ে যায়। এরপর ঘটে আশ্চর্যজনক ঘটনা। ডেভিডের সেই পাঞ্জাবি বন্ধু জাফরউল্লা খাঁ এই বঙ্গে এসেছে পাক বাহিনীর তাঁবেদার হিসেবে। ক্ষীণকায়া নাজমার দিকে তার দৃষ্টি ছিল লালসাপূর্ণ ও কামার্ত। জাফরউল্লা নাজমার ফুটফুটে ছেলেটিকে পায়ের তলায় পিষে মেরে ফেলে। ডেভিডের চোখের সামনেই নাজমাকে ধর্ষণ করে। বাংলার সাধারণ নওজোয়ান এবং সঙ্গে তাদের পথপ্রদর্শক হাজি সাহেবের আকস্মিক হামলা পিশাচ জাফরউল্লাকে হতবিহ্বল করে তোলে। গুলি খেয়ে পিশাচ জাফরউল্লা গোঙাতে থাকে।
উপন্যাসের নাজমা মহান মুক্তিযুদ্ধে পূর্ব বাংলার নির্যাতিত-নিপীড়িত মা-বোনদের প্রতীক। ছায়া ব্যক্তিত্ব, ভালোবাসা, মমতা ও দেশপ্রেমের এক মূর্ত প্রতীক, যা স্পর্শ করেছিল সেই বিজাতি পুরুষকেও।
গ্রন্থনা : পিন্টু রঞ্জন অর্ক

আবদুলরাজাক গুরনাহর নতুন বই

১৮ মার্চ ২০২৫ তারিখে ব্লুমসবেরি পাবলিশিং থেকে প্রকাশ করা হলো তানজানিয়ান-ব্রিটিশ নোবেলজয়ী কথাসাহিত্যিক আবদুলরাজাক গুরনাহর উপন্যাস ‘থেফ্ট’। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর এটাই তাঁর প্রথম উপন্যাস। ১৯৬০-এর দশকের বিপ্লবের পরবর্তী সময় নিয়ে লেখা হয়েছে উপন্যাসটি। এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্রদের অন্যতম বদর।
নতুন উপন্যাসের প্রধান চরিত্রদের একজনের নাম করিম।
♦ ফাহমিদা দ্যুতি

বিশ্বসাহিত্য
ডিলান টমাস পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ

ওয়েলসের কবি ডিলান টমাসের জন্ম ২৭ অক্টোবর ১৯১৪ সালে। তিনি মারা যান ৯ নভেম্বর ১৯৫৩ সালে। বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৯ বছর। কবির জীবনকাল স্মরণে রেখে তাঁর জন্মস্থানের সোয়ানসি ইউনিভার্সিটি তাঁর নামে প্রবর্তন করেছে ডিলান টমাস পুরস্কার।

বই আলোচনা
‘সাহিত্য সাধনায় নিবেদিতপ্রাণ আবদুল মান্নান সৈয়দ’ প্রসঙ্গে
- রিহাম হাসান

আবদুল মান্নান সৈয়দ কবি। ষাটের দশকের অন্যতম কবি। কবিতায় যেমন তিনি আলোচিত, তেমনি ‘সত্যের মতো বদমাশ’ গল্পগ্রন্থ লিখেও আলোচিত হন। লিখেছেন অনেক উপন্যাসও।

মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, রাহাত খান, সৈয়দ শামসুল হক, সেলিনা হোসেন, ড. মাহবুব হাসান, হাসান হাফিজ, মুজিবুল হক কবীর, অসীম সাহা, আবু তাহের মজুমদার, বিশ্বজিৎ ঘোষ, আহমাদ মাযহার, রাজু আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ আজম, শাহীন রেজা, ড. রহমান হাবিব, মাহমুদুল বাসার, অনু হোসেন, হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী, ফজল মোবারক, শাহাবুদ্দীন নাগরী, শিমুল সালাহউদ্দিন, মোহাম্মদ আসাদ, শেখর ইমতিয়াজ, খালেদ হামিদী, মোহাম্মদ নূরুল হক, আবুল কাসেম হায়দার, পুলক হাসান, চঞ্চল আশরাফ, জুয়েল মোস্তাফিজ, পাবলো শাহি, নাহার আলম, আবু আফজাল মোহা. সালেহ, তাপস মজুমদার, মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান প্রমুখ লেখক লিখেছেন তাঁদের প্রিয় লেখক আবদুল মান্নান সৈয়দকে নিয়ে। কেউ স্মৃতিচারণা করেছেন, কেউ মূল্যায়ন করেছেন। ‘সাহিত্য সাধনায় নিবেদিতপ্রাণ আবদুল মান্নান সৈয়দ’ গ্রন্থে তা উঠে এসেছে।
কবি সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেছেন, ‘আবদুল মান্নান সৈয়দ ষাটের দশকের খুব বড়মাপের একজন কবি। তাঁর কবি পরিচয়টাই আমার কাছে প্রধান; যদিও গবেষক, সাহিত্য সম্পাদক, সংকলক হিসেবে তাঁর খ্যাতি শুধু বাংলাদেশে নয়, বাংলা ভাষাভাষী অন্যান্য জায়গাতেও বিস্তৃত। সেদিক থেকে তো তাঁর মূল্য একাডেমিক পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু আমার কাছে বড় পরিচয় এবং যে পরিচয়ে তিনি টিকে থাকবেন বলে বিশ্বাস করি, সেটি হচ্ছে তাঁর কবিতা ও গল্পের জন্য। একটি নতুন ও স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর তিনি আমাদের সাহিত্যে শুনিয়েছেন।’ কালের কণ্ঠের শিলালিপিতে ছাপা হওয়া (৩ সেপ্টেম্বর ২০১০) কবি শিমুল সালাহউদ্দিনের নেওয়া সাক্ষাৎকারটি এই গ্রন্থটিকে করেছে অনন্য। ‘সাহিত্য সাধনায় নিবেদিতপ্রাণ আবদুল মান্নান সৈয়দ’ গ্রন্থটি প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ সম্পাদকদ্বয়কে।