ঢাকার আদি বাসিন্দা অর্থাৎ ঢাকাইয়া জনগণের মাঝে দুটি ভাষায় কথা বলার প্রচলন হয়েছে। একটি হচ্ছে ঢাকাইয়া বাংলা, অন্যটি ঢাকাইয়া উর্দু। ঢাকাইয়া উর্দু প্রমিত উর্দুরই একটি উপভাষা। এটির জন্ম এই ঢাকার মাটিতেই।
ঢাকার আদি বাসিন্দা অর্থাৎ ঢাকাইয়া জনগণের মাঝে দুটি ভাষায় কথা বলার প্রচলন হয়েছে। একটি হচ্ছে ঢাকাইয়া বাংলা, অন্যটি ঢাকাইয়া উর্দু। ঢাকাইয়া উর্দু প্রমিত উর্দুরই একটি উপভাষা। এটির জন্ম এই ঢাকার মাটিতেই।
ঢাকার আদি বাসিন্দারা এক স্বতন্ত্র সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে বসবাস করছেন। ঢাকাইয়া উর্দু ভাষা হচ্ছে ঢাকাইয়া সমাজ ও সংস্কৃতির একটা অংশ।
অভিধানটির মুখবন্ধে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও বিশিষ্ট ভাষাতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ লিখেছেন, উর্দুভাষী এই জনগোষ্ঠী কালক্রমে ঢাকা শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে গ্রহণ এবং বাংলা ভাষার ভাষিক ঐতিহ্যকে আত্মস্থ করে প্রমিত উর্দু ভাষার সঙ্গে যে উচ্চারণ ও শব্দগত পার্থক্য তৈরি করে, তা-ই পরবর্তীকালে ঢাকাইয়া উর্দু নামে পরিচিত হয়।
পৃথিবীর বিপন্ন মাতৃভাষার সংরক্ষণ, নথিকরণ ও বিকাশের উদ্দেশ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এই বিপন্ন ভাষিক সম্প্রদায়ের মাতৃভাষা রক্ষার তাগিদ থেকেই ঢাকাইয়া উর্দু-বাংলা অভিধান প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই অভিধান প্রকাশের মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকার বিশেষ ভাষিক সম্প্রদায়ের বিপন্ন ভাষাটির এক ধরনের নথিকরণের কাজ যেমন শুরু হলো, তেমনি এই অভিধান প্রকাশের মাধ্যমে ঢাকাইয়া উর্দুর বিশাল শব্দভাণ্ডারের সঙ্গে এ দেশের মানুষ পরিচিত হবে বলে আশা করা যায়।
২৯৬ পৃষ্ঠার অভিধানটিতে কয়েক হাজার শব্দের অন্তর্ভুক্তি ছাড়াও এতে রয়েছে ঢাকাইয়া উর্দু ভাষার কাহাওয়াত (প্রবাদ প্রবচন) ও পাহেলি (ধাধা), যা অভিধানটির আকর্ষণ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
ঢাকাইয়া উর্দু-বাংলা অভিধান।
রিদওয়ান আক্রাম
সম্পর্কিত খবর
সাম্রাজ্যবাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো সাংস্কৃতিক বোমা। ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় সাহিত্য এবং সংস্কৃতিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যার সাহায্যে একটা জাতিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা সম্ভব। কেনিয়ায় জন্ম নেওয়া নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গা তার ‘Decolonising the Mind’ গ্রন্থে দেখিয়েছেন ভাষা এবং সাহিত্য কিভাবে মানুষের মনে প্রভাব পড়ে। ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা কিভাবে সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ধ্বংসের মাধ্যমে মাতৃভাষাও বিলুপ্ত করে দেয়।
বইয়ের শুরুতে আলোকপাত করা হয়েছে আফ্রিকার সাহিত্য ও সংস্কৃতিসমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে ঔপনিবেশিক শাসকরা যে প্রক্রিয়ায় হঠিয়ে দিয়েছিল। উপনিবেশ পরবর্তী কেনিয়ায় কী ঘটেছিল সেসব বিষয়েও বিস্তারিত আছে।
সাংস্কৃতিক বোমা মানুষের নাম, জাতি, ভাষা, ঐতিহ্য, একতা, সক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এবং সর্বশেষে নষ্ট করে নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস।
গ্রন্থনা : পিন্টু রঞ্জন অর্ক
নারী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালায় ‘দীপ্ত নয়ন’ শিরোনামে শুরু হয়েছে এ দেশের নারী শিল্পীদের কাজ নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী। দুটি গ্যালারিতে ৮৩ জন নারী শিল্পীর ১৩০টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। বর্তমানে নারী-পুরুষ শিল্পী হিসেবে কিছুটা সমতা এলেও বিগত শতাব্দীতে নারীর শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ ছিল কঠিন এক বিষয়। এর মধ্যেই কম হলেও নিজের দক্ষতায় কয়েকজন নারী শিল্পী নিজের অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
১৯৪৮ সালে ঢাকায় কলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। শুরুতে ছেলেরাই এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়। চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার ছয় বছর পর ১৯৫৪ সালে সেখানে মেয়েরা ভর্তির সুযোগ পায়।
প্রদর্শনী কিউরেটিংয়ে আছে নতুনত্ব। কয়েকটি বিষয়ে ভাগ করে ছবিগুলো সাজানো হয়েছে। ‘মা ও মুক্তি, আত্মসত্তার রাজনীতি, পুরাতত্ত্ব, দেশমাত্রিকতা, অমৃত বাগান বিভাগে রয়েছে ছবিগুলো। প্রতিটি বিভাগে প্রবেশের আগে লিখে দিয়েছে কয়েক লাইন। যার কারণে ছবির সঙ্গে সহজে যোগাযোগ সম্ভব হয়। প্রদর্শনীর শেষ দিন ২২ মার্চ শনিবার।
হাজি মহিউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থা আহমদ পাবলিশিং হাউসের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে ষাটের দশকে যখন আমি বাংলা একাডেমিতে প্রকাশনা ও বিক্রয় বিভাগে কর্মরত।
১৯৬৪-৬৫ সালের দিকে একাডেমির বেশ কিছু বইয়ের প্রথম সংস্করণ নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে সে বইগুলোর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশের তাগিদ আসছিল।
হাজি সাহেব তখন এসেছিলেন দ্বিতীয় সংস্করণের বই প্রকাশনা নিয়ে আলোচনা করতে। সে সূত্রে হাজি সাহেবের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। বাংলা একাডেমির দ্বিতীয় সংস্করণের বইগুলো কিভাবে প্রকাশ করা যায়, সে প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে আলোচনা হয়। এ সময় মরহুম কবি গোলাম মোস্তফার ‘বিশ্বনবী’ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
তিনি যখন একাডেমিতে আসতেন সাধারণত প্রথমেই আসতেন প্রকাশনা বিভাগে। তারপর পরিচালকের ঘরে যেতেন। তিনি প্রায়ই একাডেমিতে আসতেন কখনো কাজে অথবা নিছক গল্প করতে বা আড্ডা দিতে। তখন একাডেমিতে সব সাহিত্যিক ও সাহিত্যামোদীর আগমন ঘটত, আড্ডা হতো। এসব আড্ডায় আসতেন আবদুল গনি হাজারী, সানাউল হক, সিকান্দার আবু জাফর, ফর্রুখ আহমদ, কবি আবদুল কাদির, সুফি জুলফিকার হায়দার, প্রিন্সিপাল ইবরাহিম খাঁ, গোলাম রহমান, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, এককথায় এ দেশের সব কবি-সাহিত্যিক। তাঁদের অনেকেই আজ আর ইহজগতে নেই। এদের মধ্যে একজন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক আবু যোহা নূর মোহাম্মদ। আবু যোহা ছিলেন হাজি সাহেবের বাঁধা লেখক।
বাঁধা লেখক বলছি এ কারণে যে তিনি আহমদ পাবলিশিং হাউসের বহু বইয়ের লেখক ছিলেন। একটি বিষয়ে হাজি সাহেবের সুনাম ছিল। তিনি কোনো লেখককে তাঁর প্রাপ্য রয়্যালটি বা পারিশ্রমিক দেননি এ কথা কেউ বলতে পারবে না।
ঢাকায় যখন তিনি প্রথম প্রকাশনা আরম্ভ করেন তখনই তিনি শিশুসাহিত্য প্রকাশের দিকে মনোযোগ দেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন শৈশবেই যদি শিশুরা মহৎ ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে আসতে পারে অথবা মহৎ ব্যক্তিদের জীবনী পাঠ করে, তবে তারাও মহৎ ব্যক্তিদের জীবন অনুসরণ করে বড় হয়ে উঠবে। তাহলেই তারা সঠিকভাবে মানুষ হয়ে উঠতে পারবে। সে কারণে তিনি প্রকাশ করতে আরম্ভ করলেন মহৎ জীবনী গ্রন্থমালা। মাত্র আট আনা অর্থাৎ আজ যাকে আমরা পঞ্চাশ পয়সা বলি সে মূল্যের এক একটি বই। এই সিরিজের বেশির ভাগ বই লিখতেন আবু যোহা নূর মোহাম্মদ। বইগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।
প্রকাশনা নিয়ে হাজি সাহেব যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, যে সংগ্রাম করেছেন এবং যে ভিত্তির ওপর তাঁর সংস্থাকে দাঁড় করিয়েছেন সেগুলোকে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করি, তাহলে বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনার প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করতে পারব। এবং সেটাই হবে বাংলাদেশের প্রকাশনার ইতিহাস।
মুহূর্ত
সংস্কৃত ভাষা থেকে আগত ‘মুহূর্ত’ শব্দের বর্তমান অর্থ দাঁড়িয়েছে অতি অল্প সময়। কিন্তু আদিতে এ অর্থ ছিল না। মুহূর্ত মূলত সময়ের একক। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টার ৩০ ভাগের এক ভাগকে বলা হয় মুহূর্ত।