<p>মারিয়া কিবতিয়া (রা.) ছিলেন একজন মিসরীয় দাসী। মিসরের শাসক মুকাওকিস তাঁকে মহানবী (সা.)-এর দরবারে উপহার হিসেবে প্রেরণ করেন। সপ্তম হিজরিতে মহানবী (সা.) ইসলামের আহ্বান জানিয়ে হাতিব ইবনে আবি বালতা (রা.)-কে তাঁর কাছে পাঠান। তখন নবীজি (সা.)-এর সম্মানে মুকাওকিস মারিয়া বিনতে শামউন ও শিরিন বিনতে শামউন (রা.)-কে উপহার হিসেবে পাঠান। এ ছাড়া তিনি নবীজি (সা.)-এর জন্য একটি খচ্চর ও ২০ জোড়া পোশাক পাঠান, যার মধ্যে অত্যন্ত দামি পোশাকও ছিল।</p> <p>শামউনের দুই কন্যার মধ্যে মারিয়া কিবতিয়া (রা.)-কে নবীজি (সা.) নিজের খিদমতের জন্য রেখে দেন। শিরিন (রা.)-কে তুলে দেন তাঁর সভাকবি হাসসান বিন সাবিত (রা.)-এর সেবায়। শিরিন (রা.)-এর গর্ভে আবদুর রহমান ইবনে হাসসানের জন্ম হয়।</p> <p>অন্যদিকে মারিয়া কিবতিয়া (রা.)-এর গর্ভে নবীজি (সা.)-এর সন্তান ইবরাহিমের জন্ম হয়। খাদিজা (রা.)-এর পর তিনিই দ্বিতীয় কোনো নারী, যিনি মহানবী (সা.)-এর সন্তানের মা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। জন্মসূত্রে মারিয়া কিবতিয়া (রা.) খ্রিস্টান হলেও মদিনায় আগমনের আগেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে ওমর (রা.)-এর শাসনামলে ইন্তেকাল করেন। ওমর (রা.) তাঁর জানাজার নামাজ পড়ান এবং তাঁকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়। এই কবরস্থানে নবী পরিবারের অসংখ্য সদস্যসহ ১০ হাজারেরও বেশি সাহাবিকে দাফন করা হয়েছিল।</p> <p>মারিয়া কিবতিয়া (রা.) মিসরের কিবতি গোত্রের সন্তান ছিলেন। মিসরে এখনো তাঁর পৈতৃক বসতবাড়ির ধ্বংসাবশেষ টিকে আছে বলে দাবি করা হয়। মিসরের রাজধানী কায়রো থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণে শায়খ ইবাদা গ্রাম, যা মিনয়া প্রদেশের কেন্দ্রে মালাভি সেন্টারের কাছেই অবস্থিত।</p> <p>ধারণা করা হয়, এখানেই মারিয়া কিবতিয়া (রা.) জন্মগ্রহণ করেন। এখানেই তাঁর পৈতৃক বসতবাড়ি অবস্থিত বলে দাবি করা হয়। শায়খ ইবাদা গ্রামে ৬০ হাজার মানুষ বাস করে। তাদের বিশ্বাস, তাদের গ্রামেই মারিয়া কিবতিয়া (রা.) জন্মগ্রহণ করেন। ফলে মারিয়া কিবতিয়া (রা.)-এর নামে গ্রামে একটি মসজিদও নির্মাণ করা হয়েছে। সাহাবি উবাদা বিন সামিত (রা.)-এর নামানুসারে গ্রামের নাম ‘শায়খ ইবাদা’ (সম্ভবত এটা মিসরীয় উচ্চারণ) নাম দেওয়া হয়।</p> <p>মিসরের পর্যটন বিভাগের একজন সরকারি কর্মকর্তা ফারাজ আবদুল আজিজ জানান, মারিয়া কিবতিয়া (রা.) যে এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন তার পূর্ব নাম পসা, যা মূলত একজন প্রাচীন মিসরীয় দেবতার নাম। সম্রাট দ্বিতীয় রামসিসের সময় এখানে একটি শহর গড়ে উঠেছিল এবং তার নাম ছিল হুফন। ফলে এখানে প্রাচীন মিসরীয়, রোমান, কিবতি ও ইসলামী যুগের বহু নিদর্শন আছে।</p> <p>তিনি আরো জানান, সাহাবি আমর ইবনুল আস (রা.) যখন মিসর জয় করেন, তখন সাহাবি উবাদা বিন সামিত (রা.) তাঁর নেতৃত্বাধীন সেনাদের নিয়ে এই গ্রামে প্রবেশ করেন। যখন তিনি জানতে পারেন, এটা মারিয়া কিবতিয়া (রা.)-এর জন্মস্থান, তিনি এখানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মারিয়া কিবতিয়া (রা.)-এর বসতবাড়ির নিকটেই তাঁর নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এটাই ছিল মালাভি অঞ্চলের প্রথম মসজিদ। উবাদা বিন সামিত (রা.) এই গ্রামে থেকে যান এবং এখানে বসবাস করতে শুরু করেন। ফলে গ্রামের নাম হয়ে যায় শায়খ ইবাদার (উবাদা) গ্রাম। মুয়াবিয়া (রা.) তাঁর শাসনামলে মারিয়া কিবতিয়া (রা.)-এর সম্মানে এই গ্রামকে শুল্কমুক্ত অঞ্চল ঘোষণা করেন।</p> <p><em>তথ্যসূত্র : জাদুল মাআদ, তারিখে তাবারি ও আল আরাবিয়া নিউজ</em><br />  </p>