মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ জীবন যাপনের নির্দেশনা

ড. ইকবাল কবীর মোহন
ড. ইকবাল কবীর মোহন
শেয়ার
মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ জীবন যাপনের নির্দেশনা

মুসলিম সমাজ আজ অনৈক্য, বিভেদ-বিসংবাদ ও কলহে জর্জরিত। ব্যক্তি হিসেবে মুসলমানরা নানা মত ও পথে বিভক্তই নয়, বরং মুসলিম রাষ্ট্রগুলোও একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া-কলহ ও বিরোধে লিপ্ত। ফলে সারা বিশ্বে মুসলমানরা এখন নিপীড়িত-নির্যাতিত। এ জন্য দুনিয়ার নানা জনপদে অবিরাম ঝরছে মুসলমানদের রক্ত।

অথচ মুসলমানদের পারস্পরিক ঐক্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিষয়ে ইসলাম সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, বিভাজন সৃষ্টি করা এবং ঝগড়া-কলহে লিপ্ত হওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে গুনাহের কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলমানদের ঐক্য ও সম্প্রীতির ভিত্তি হলো আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর পথনির্দেশ। মহান আল্লাহ মুসলিম ঐক্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিভক্ত হয়ো না।
আর তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালোবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেলে।’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ১০৩)

মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ ও মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক।

তবে এই বিবাদ ও মতভেদ ভুলে গিয়ে আপস-মীমাংসা করার তাগিদ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে।’ (সুরা : আল-হুজুরাত, আয়াত : ১০)

এ কথা নিংসন্দেহে বলা যায়, মুসলিম ঐক্যের প্রথম সূত্র হলো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে বলবে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪২)

মুসলিম বা মুমিনের পরিচয় দিতে গিয়ে মহানবী (সা.) আরো বলেন, ‘যারা আমাদের নামাজ মানে, আমাদের কিবলা মানে এবং আমাদের জবাই করা হালাল জন্তু হালাল মনে করে, তারা মুসলিম। তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) জিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর জিম্মাদারির খিয়ানত কোরো না (তাদের অমুসলিম বলো না)। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৮৪-৩৮৫)

একজন মুসলিম বা ঈমানদারের পরিচয় হচ্ছে সে হবে আল্লাহর অনুগত, রাসুল (সা.)-এর প্রতি আস্থাশীল। সে অবশ্যই সব বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশনা এবং রাসুল (সা)-এর পথনির্দেশের বাইরে যাবে না। সে ঐক্যবদ্ধ জীবন যাপন করবে। সর্বপ্রকার বিভক্তি ও বিভাজন থেকে মুক্ত থাকবে। আর এটাই হবে তার জন্য মুক্তির পথ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সম্মিলিত ঐক্যবদ্ধ দলের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও সাহায্যের হাত আছে। আর যারা বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন হবে, তারা জাহান্নামে যাবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৭)

মুসলমানদের পরিচয় সম্পর্কে আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা.) পারস্পরিক ঐক্য, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার কথা বলেছেন। তিনি মুসলমানদের একটি দেহ, একটি প্রাণ বলে উল্লেখ করেছেন। মহানবী (সা) বলেন, ‘বিশ্বাসী মুমিনরা সম্প্রীতি, করুণা ও দয়ার্দ্রতায় এক দেহ এক প্রাণ। যেমন—শরীরের একটি অঙ্গে আঘাত পেলে সারা অঙ্গে ব্যথা অনুভব করে, যন্ত্রণায় নির্ঘুম রাত কাটায় ও জ্বরে ঘর্মাক্ত হয়।’ (সহিহ বুখারি)

মুসলমানদের মধ্যকার সুসম্পর্ক ও অটুট ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে মহানবী (সা.) বলেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার হাত ও জবান দ্বারা অন্য মুসলমান শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯)

মুসলমানদের মধ্যে কোনো মতভেদ তৈরি হলে তা মিটিয়ে ফেলে সঠিক পথে ফিরে আসার কোনো বিকল্প নেই। অনৈক্য ও মতপার্থক্য বহাল রেখে এক মুহূর্তও থাকার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর আজাব।’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ১০৫)

মুসলমানদের মনে রাখতে হবে, সব মুসলমান একই জাতি। আমাদের আল্লাহ এক, নবী এক, কিতাব এক। আমরা একই আদি পিতা ও আদি মাতার সন্তান-সন্ততি। আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১০)

এর অর্থ ভাই ভাইয়ের সঙ্গে মিলেমিশে থাকবে। তার মধ্যে কোনো বিরোধ বা অনৈক্য থাকবে না। আর দুনিয়ার সব মুসলিম যে এক জাতি সে সম্পর্কে আল্লাহ কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘এই যে তোমাদের জাতি, এ তো একই জাতি আর আমি তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, তোমরা (ঐক্যবদ্ধভাবে) আমারই ইবাদত করো।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৯২)

মুসলিম জাতি বা মুসলিম সমাজ ও ব্যক্তি অনৈক্য, বিভেদ ও হানাহানিতে লিপ্ত—এর অনেক কারণ রয়েছে। এসব বিষয়ের মধ্যে আছে পরস্পরকে তুচ্ছ জ্ঞান করা, বিদ্রুপ করা, খারাপ নাম বা উপাধিতে ডাকা, খারাপ ধরণা করা, পরনিন্দা, চোগলখুরি, গিবত, অপবাদ. গোয়েন্দাগিরি করাসহ অনেক মন্দ কাজ ও স্বভাব। অথচ এসব কাজ ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আমাদের সতর্ক হতে হবে যে ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস বা মিলেমিশে না থাকার পরিণাম কিন্তু ভয়ানক। এর ফলে মুসলমানরা কেবল গুনাহের কাজই করবে না, তারা বহিঃশত্রুর সামনে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও সুনামও নষ্ট হবে। এ কথাই আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করো এবং পরস্পর ঝগড়া কোরো না, তাহলে তোমরা সাহস হারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। তোমরা ধৈর্য ধরো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৪৬)

তাই আমাদের সবার দায়িত্ব হচ্ছে ঐক্য ও সংহতির প্রতি খেয়াল রাখা এবং আখিরাতের মুক্তির বিষয়ে সতর্ক থাকা। আল্লাহর পছন্দশীল ব্যক্তি হওয়ার নিয়ামত আমরা তখনই লাভ করব, যদি ধৈর্যের সঙ্গে চলে ঐক্য ও সম্প্রীতির ভিত্তিতে জীবনকে পরিচালনা করতে পারব। এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে আখিরাতে মুক্তির জন্য এবং দুনিয়ায় সফলতার জন্য চাই পারস্পরিক ঐক্য ও সংহতি। এ জন্য আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে, ‘আল্লাহ ওই সব লোককে ভালোবাসেন, যারা তাঁর রাস্তায় ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সিসাঢালা প্রাচীর।’ (সুরা : সফ, আয়াত : ৪)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির জন্য সব ভেদাভেদ, বিভেদ-বিভাজন ভুলে এক জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকার তৌফিক দান করুন। আমাদের শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বেঁচে থাকার জন্য কবুল করুন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কিয়ামতের দিন যে আমলের ওজন সবচেয়ে বেশি হবে

উম্মে আহমাদ ফারজানা
উম্মে আহমাদ ফারজানা
শেয়ার
কিয়ামতের দিন যে আমলের ওজন সবচেয়ে বেশি হবে

ইসলামে উত্তম চরিত্রের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। মুমিনদের জন্য বিভিন্ন গুণে চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা ঈমানের দাবি। কেননা উত্তম চরিত্র ছাড়া একজন মুমিনের ঈমান পরিপূর্ণ হতে পারে না। ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য উত্তম চরিত্র অর্জন করা অপরিহার্য।

এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ওই মুমিন ঈমানে পরিপূর্ণ, যার চরিত্র সর্বোত্তম। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৮২)

আমাদের সমাজে মানুষের সর্বোত্তম হওয়ার বিভিন্ন মাপকাঠি আছে। বিভিন্নজনের কাছে ভিন্ন মাপকাঠিতে ভিন্ন ধরনের মানুষ সর্বোত্তম। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হচ্ছে উত্তম চরিত্র।

এ ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, নবী (সা.) অশ্লীলভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যার চরিত্র সর্বোত্তম। (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৯)

রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি কখনো কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করেননি।

চরিত্রবান মানুষকে তিনি ভালোবাসতেন। তাই রাসুল (সা.)-এর প্রিয় মানুষদের কাতারে শামিল হতে চাইলে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া আবশ্যক। উত্তম চরিত্রের সর্বোত্তম নমুনা ছিলেন রাসুল (সা.)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) জন্মগতভাবে বা ইচ্ছাপূর্বক অশ্লীলভাষী ছিলেন না। তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়, যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।
(বুখারি, হাদিস : ৩৭৫৯)

উত্তম চরিত্রের সওয়াব এত বেশি, যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কিয়ামতের দিন মানুষের সওয়াব ও গুনাহ পরিমাপের জন্য দাঁড়িপাল্লায় ওজন করা হবে। সেদিন যে আমলের ওজন সবচেয়ে বেশি ভারী হবে তা হলো উত্তম চরিত্র। এ সম্পর্কে আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে বেশি ওজনের আর কোনো জিনিস হবে না। কেননা আল্লাহ অশ্লীল ও কটুভাষীকে ঘৃণা করেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০০২)

উত্তম চরিত্রের সওয়াব ওজনে সবচেয়ে বেশি ভারী হওয়ার রহস্য আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়। এক ব্যক্তি সারা দিন সাওম পালন করে এবং সারা রাত নফল সালাত পড়ে যেরূপ সওয়াব পায়, মহান আল্লাহ উত্তম চরিত্রের বদৌলতে সেরূপ সওয়াব দান করেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনে) সাওম পালনকারী ও (রাতে) নামাজ আদায়কারীর মর্যাদা লাভ করতে পারে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৮)

জান্নাতে মানুষের আমল অনুযায়ী সম্মানজনক জায়গায় অধিষ্ঠিত করা হবে। যার আমল যত ভালো হবে, সে তত বেশি সম্মানিত হবে। রাসুল (সা.) নিজে উত্তম চরিত্রবানদের জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে ঘর বরাদ্দের জিম্মাদারি নিয়েছেন। এ বিষয়ে আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ন্যায়সংগত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার। আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না, আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের জিম্মাদার এবং যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে, আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)

মন্তব্য

আজকের নামাজের সময়সূচি, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আজকের নামাজের সময়সূচি, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

আজ রবিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—

জোহর সময় শুরু- ১২টা ৩ মিনিট। 

আসরের সময় শুরু - ৪টা ৩০ মিনিট।

মাগরিব- ৬টা ২৩ মিনিট।

এশার সময় শুরু - ৭টা ৩৯ মিনিট।

আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ২৩ মিনিট।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ১৯ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৫টা ৪০ মিনিটে।

সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
প্রশ্ন-উত্তর

মৃত ব্যক্তির আকিকা দেওয়া জায়েজ আছে কি?

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
মৃত ব্যক্তির আকিকা দেওয়া জায়েজ আছে কি?

প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির আকিকা দেওয়া জায়েজ আছে কি?

-আতিক, মিরপুর

উত্তর : আকিকা জীবিত ব্যক্তির জন্য মুস্তাহাব। মৃত ব্যক্তির আকিকা করা মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাই তাতে আকিকার সওয়াব পাওয়া যাবে না। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৩৬, ফয়জুল বারি : ৪/৩৩৭)

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা

মন্তব্য

কোরআনের বর্ণনায় পবিত্র কাবাঘরের গুণাবলি

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
শেয়ার
কোরআনের বর্ণনায় পবিত্র কাবাঘরের গুণাবলি

আল্লাহর ইবাদতের জন্য পৃথিবীতে নির্মিত প্রথম ঘর কাবা। কাবাঘর পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও সম্মানিত স্থান। পবিত্র কাবাঘরের দিকে ফিরেই মুসলমানরা নামাজ আদায় করে। কোরআন ও হাদিসে কাবাঘরের একাধিক নাম, গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে।

কাবাঘরের সম্মান ও মর্যাদা

পবিত্র কাবাঘর আল্লাহর অনন্য নিদর্শন এবং তা হাজরে আসওয়াদ, জমজম কূপ ও মাকামে ইবরাহিমের মতো নিদর্শনকে বুকে ধারণ করে আছে। আল্লাহ কাবাঘরকে নিরাপদ ঘোষণা করেছেন এবং এই পবিত্র ঘরের হজ ফরজ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে, যেমন—মাকামে ইবরাহিম। আর যে সেখানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ।

মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই ঘরের হজ করা তার আবশ্য কর্তব্য। যে প্রত্যাখ্যান করল সে জেনে রাখুক, আল্লাহ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে এই ঘরের হজ করল এবং অশ্লীলতায় লিপ্ত হলো না, আল্লাহর অবাধ্য হলো না, সে সদ্যঃপ্রসূত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে (হজ থেকে) ফিরল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫২১)

কাবাঘরের নামগুলো

কোরআন ও হাদিসে কাবাঘরের সাতটি নাম পাওয়া যায়।

তা হলো—

১. বাইত : পবিত্র কোরআনে ১৫ বার ‘বাইত’ শব্দ দ্বারা কাবাঘরকে ব্যক্ত করা হয়েছে। কখনো শুধু বাইত শব্দটি এসেছে। আবার কখনো এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সর্বনাম ও বিশেষণ। আরবি বাইত শব্দের অর্থ ঘর। যেমন—মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা তো বাক্কায় (মক্কায়), তা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারি।

’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৬)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা যেন তাওয়াফ করে প্রাচীন ঘরের।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ২৯)

২. কাদিস : আল্লামা আজরাকি (রহ.) বলেন, প্রাচীনকালে আরবের লোকেরা কাবাঘরকে কাদিস বলত। যার অর্থ পবিত্র। লিসানুল আরবে কাদিসের একটি অর্থ লেখা হয়েছে ‘বাইতুল হারাম’ বা কাবাঘর। (আখবারু মক্কা : ১/২৮০; লিসানুল আরব : ৬/১৭০)

৩. নাজির : শাব্দিক অর্থ মানতকারী, তবে তা মানতের স্থান অর্থে ব্যবহৃত হতো। আল্লামা আজরাকি (রহ.) বলেন, প্রাচীনকালে আরবের লোকেরা কাবাঘরকে নাজির বলত। কেননা কাবাঘরের উদ্দেশ্যে নানা জিনিসের মানত করা হতো। (আখবারু মক্কা : ১/২৮০)

৪. নাদির : নাদির শব্দটি ‘নাদরাতুন’ থেকে এসেছে। নাদরাহ হলো এক প্রকার বিরল ও মূল্যবান রত্ন, যা স্বর্ণের খনিতে পাওয়া যায়। তুলনাহীন ও মূল্যবান অর্থে কাবাঘরকে নাদির বলা হতো। (কামুসুল মুহিত, পৃষ্ঠা-৬১৯)

৫. বানিয়্যাহ : শাব্দিক অর্থ স্থাপত্য বা শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য। আল্লামা ইবনে আসির (রহ.) বলেন, কাবাঘরকে বানিয়্যাতু ইবরাহিম বলা হতো। কেননা তিনি তা নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে অধিক ব্যবহারের কারণে তাতে সংকোচন ঘটে এবং বানিয়্যাহ শব্দে রূপান্তরিত হয়। হাদিসেও কাবাঘর বোঝাতে বানিয়্যাহ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। (আন নিহায়া ফি গারিবিল হাদিস ওয়াল আসার : ১/১৫৮; মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৫৮৩৬)

৬. দাওয়ার : আল্লামা ইবনে মানজুর (রহ.) দাওয়ারকে কাবাঘরের একটি নাম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দাওয়ার শব্দটি দাঈর শব্দের বহুবচন। যার অর্থ বৃত্তাকার। যেহেতু কাবাঘরকে ঘিরে মানুষ তাওয়াফ করে। তাই তাকে দাওয়ার বলা হয়। (আসমাউ কাবাতিল মুশাররাফা, পৃষ্ঠা-২৮; লিসানুল আরব : ৪/২৯৮)

৭. কিবলা : পবিত্র কোরআনে কাবাঘরকে কিবলা নামে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি এ যাবৎ যে কিবলা অনুসরণ করছিলে তাকে আমি এই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম, যাতে জানতে পারি কে রাসুলের অনুসরণ করে এবং কে ফিরে যায়?’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৪৩)

কাবাঘরের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি

কোরআন ও হাদিসের আলোকে কাবাঘরের গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হলো—

১. পথপ্রদর্শক : পবিত্র কাবাকে আল্লাহ মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক বানিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা তো বাক্কায় (মক্কায়), তা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারি।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৬)

২. বরকতময় : কাবাঘরকে আল্লাহ বরকতময় করেছেন। যেমনটি সুরা আলে ইমরানের ৯৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে।

৩. মিলনমেলা : কাবাঘরকে আল্লাহ মানুষের জন্য নিরাপদ মিলনমেলা বানিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সে সময়কে স্মরণ করো, যখন কাবাঘরকে মানবজাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল করেছিলাম।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১২৫)

৪. কিবলা : আল্লাহ কাবাঘরকে কিবলা বানিয়েছেন। ফলে মানুষ সেদিকে ফিরে ইবাদত করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাকে অবশ্যই এমন কিবলার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছি, যা তুমি পছন্দ করো। অতএব, তুমি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৪৪)

৫. কল্যাণের উৎস : মহান আল্লাহ বলেন, ‘পবিত্র কাবাঘর, পবিত্র মাস, কোরবানির জন্য কাবায় প্রেরিত পশু ও গলায় মালা পরিহিত পশুকে আল্লাহ মানুষের কল্যাণের জন্য নির্ধারিত করেছেন।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৯৭)

৬. সম্মানিত : ইবরাহিম (আ.) কাবাকে সম্মানিত ঘর আখ্যা দিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন—‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় তোমার সম্মানিত ঘরের কাছে।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৩৭)

৭. পবিত্র : নির্মাণকাল থেকে কাবাঘরকে আল্লাহ পবিত্র করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহিমের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সেই ঘরের স্থান, তখন বলেছিলাম, আমার সঙ্গে কোনো শরিক স্থির কোরো না এবং আমার ঘরকে পবিত্র রেখো তাদের জন্য, যারা তাওয়াফ করে, যারা নামাজে দাঁড়ায়, রুকু করে ও সিজদা করে।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ২৬)

৮. প্রাচীন : কাবাঘর পৃথিবীর প্রাচীনতম ঘর। কোরআনে কাবাকে প্রাচীন বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে, তাদের মানত পূর্ণ করে এবং তাওয়াফ করে প্রাচীন ঘরের।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ২৯)

আল্লাহ সবাইকে পবিত্র কাবাঘরের জিয়ারত নসিব করুন। আমিন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ