শবেমেরাজ

নবীজিকে যেসব পাপের শাস্তি দেখানো হয়েছে

মুফতি মুহাম্মাদ ইসমাঈল
মুফতি মুহাম্মাদ ইসমাঈল
শেয়ার
নবীজিকে যেসব পাপের শাস্তি দেখানো হয়েছে
সংগৃহীত ছবি

রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের ওপর চলছিল চরম নির্যাতন। খাজা আবু তালিব নবীজি (সা.)-কে কাফিরদের আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা দিতেন। ঘরে নবীজি (সা.)-কে সান্ত্বনা দিতেন হজরত খাদিজাতুল কুবরা (রা.)। কয়েক দিনের ব্যবধানে শ্রদ্ধেয় চাচা আবু তালিব ও প্রিয় স্ত্রী খাদিজাতুল কুবরা (রা.) ইন্তেকাল করলেন।

এরপর অনেক আশা নিয়ে তায়েফবাসীর কাছে তাওহিদের দাওয়াত নিয়ে গেলেন। তারা দাওয়াত কবুল করল না। ক্ষতবিক্ষত করল নবীজি (সা.)-কে। এমন কঠিন মুহূর্তে মহান আল্লাহ নবীজি (সা.)-কে বড় বড় নিদর্শন দেখিয়ে সম্মানিত করতে ডেকে নিলেন ঊর্ধ্বজগতে।
সশরীরে, সজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় ভ্রমণ করালেন আসমান জমিনসহ ঊর্ধ্বজগৎ। স্বচক্ষে দেখালেন অনেক কিছু। যাকে মেরাজ বলা হয়।
 
মেরাজের সংক্ষিপ্ত ঘটনা

বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী, হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে এক রাতে নবীজি (সা.) নফল হিসেবে রাতের নামাজ আদায় করলেন।

অতঃপর খানায়ে কাবাসংলগ্ন ‘হাতিমে’ শুয়ে বিশ্রাম নিতে লাগলেন। তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে দুই চোখ বন্ধ করলেন। এরই মধ্যে আগমন করলেন জিবরাঈল (আ.)। জাগ্রত করলেন নবীজিকে। আবে জমজম দ্বারা তাঁর হৃৎপিণ্ড পরিশাধন করে পুনঃস্থাপন করলেন।
বোরাক নামক অতি ক্ষিপ্রগতি সম্পন্ন একটি বাহনে চড়িয়ে মুহূর্তের মধ্যে মসজিদুল আকসায় নিয়ে গেলেন। যেখানে যেতে তখন কয়েক দিন লেগে যেত। সেখানে কুদরতিভাবে আগে থেকেই সব নবী-রাসুলকে উপস্থিত করা হয়েছিল। নবীজি (সা.) তাঁদের নিয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করলেন। এরপর ঊর্ধ্বাকাশে রওনা হলেন। 

প্রথম আকাশে আদম (আ.), দ্বিতীয় আকাশে ঈসা ও ইয়াহইয়া (আ.), তৃতীয় আকাশে ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আকাশে ইদরিস (আ.), পঞ্চম আকাশে হারুন (আ.), ষষ্ঠ আকাশে মুসা (আ.) ও সপ্তম আকাশে বাইতুল মামুরে ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় এবং সবার সঙ্গে সালাম ও কুশল বিনিময় হয়। সপ্তম আকাশে অবস্থিত ‘বায়তুল মামুর’ ফেরেশতাদের ইবাদতের স্থান। যেখানে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা আসেন ও ইবাদত করে প্রস্থান করেন; যাঁরা দ্বিতীয়বার আসার সুযোগ পান না।

অতঃপর নবীজি (সা.)-কে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হলো। নবীজি (সা.) বলেন, সিদরাতুল মুনতাহা পেরিয়ে এত ঊর্ধ্বে পৌঁছে যাই, যেখান থেকে আমি আল্লাহর হুকুম-আহকাম লিপিবদ্ধ করার কাজে ব্যস্ত ফেরেশতাদের ‘কলমের’ আওয়াজ শুনতে পেলাম। এরপর মহান আল্লাহ নবীজি (সা.)-কে যা দেওয়ার ছিল তা দিলেন। (পরিবর্তনসহ মুসলিম, হাদিস : ১৬২)

নবীজিকে যেসব পাপের শাস্তি দেখানো হয়েছে

নবীজি (সা.) একদল লোককে দেখলেন, তাদের নখগুলো তামার। নিজেদের নখ দিয়ে তারা (স্বয়ংক্রিয়ভাবে) নিজের গাল ও বুকে আঁচড় কাটছে। জিজ্ঞাসা করলেন, জিবরাঈল এরা কারা? বলেন, এরা ওই সব লোক, যারা গিবত করত এবং মানুষকে লাঞ্ছিত করত। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৭৮)

তিনি আরো দেখলেন, একদল লোকের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দিয়ে (স্বয়ংক্রিয়ভাবে) কাটা হচ্ছে। ঠোঁট কাটা মাত্র তা পুনরায় জোড়া লেগে পূর্ববৎ হয়ে যেত। জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? জিবরাঈল (আ.) বলেন, এরা বক্তৃতা করত বটে, কিন্তু নিজেরা আমল করত না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১২২১১)

আরো একদল লোক দেখলেন, যাদের পেট ছিল এক একটি গৃহের মতো। পেটের ভেতরটা সর্পে ভর্তি ছিল, যা বাইরে থেকেই দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? জিবরাঈল (আ.) বললেন, এরা সুদখোর। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৮৬৪০) 

নবীজি (সা.) এ সফরে যে উপহার পেলেন

এ সফরে নবীজিকে বিশেষ তিনটি উপহার দেওয়া হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, সুরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো এবং এই উম্মতের যারা শিরক থেকে বেঁচে থেকে মৃত্যুবরণ করবে তাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়ার ঘোষণা। (মুসলিম, হা : ৩২০)

মেরাজ-পরবর্তী সকালে মানুষের প্রতিক্রিয়া

শবেমেরাজের সকালে নবীজি (সা.) হাতিমে কাবায় বসে আছেন। আবু জাহেলের সঙ্গে দেখা হলে বিদ্রুপের ছলে জিজ্ঞাসা করল ‘কোনো ব্যাপার আছে নাকি?’ নবীজি (সা.) বললেন হ্যাঁ। সে বলল কী? তিনি জবাব দিলেন, আজ রাতে আমার মেরাজ হয়েছে। মেরাজের ঘটনা বর্ণনা করলেন। সে বিস্ময়ের সঙ্গে বলল, সব মানুষ তোমার কাছে এসে গেলে তুমি এ ঘটনা বলতে পারবে তো? নবীজি (সা.) দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, হ্যাঁ। সে সবাইকে ডাকল। নবীজি (সা.) পুনরায় বর্ণনা দিলেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মসজিদে আকসারও বিবরণ দিলেন। কিন্তু তার পরও তারা নবীজি (সা.)-কে সত্য নবী হিসেবে মেনে নিতে পারল না। কাফিরই থেকে গেল। (সংক্ষিপ্তরূপে মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৮১৯)

অন্যদিকে আবু বকর (রা.) নবীজির মেরাজের কথা শুনে এক আকাশ আস্থা নিয়ে সুদৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলেন, আমি তো এর চেয়েও আরো দূরের অনেক জটিল বিষয়েও তাঁকে বিশ্বাস করি। তাঁর কাছে আসা আসমানি বার্তাগুলোর ওপর আছে আমার অটল বিশ্বাস ও দৃঢ় ঈমান। পেলেন ‘সিদ্দিক’ উপাধি। (মুসতাদরাক : ২/৩৬১)

মহান আল্লাহ সবাইকে নবীজির মেরাজ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার, ঢাকা

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ৮ আমল

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ৮ আমল
সংগৃহীত ছবি

ইসলামে জুমার দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র কোরআনে জুমার দিন দ্রুত মসজিদে গমনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া হাদিসে গুরুত্বপূর্ণ আমলের কথাও এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিন নামাজের আজান হলে তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাবিক্রি বন্ধ কোরো, তা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝো।

এরপর নামাজ শেষ হলে ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ৯-১০)

জুমার দিনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো— 

১. জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদা

আবু লুবাবা বিন আবদুল মুনজির (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো—এক. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। দুই. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে জমিনে অবতরণ করিয়েছেন।

তিন. এই দিনে আদম (আ.)-কে মৃত্যু দিয়েছেন। চার. এই দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা কিছুই প্রার্থনা করবে তিনি তা দেবেন। যতক্ষণ সে হারাম কিছু প্রার্থনা করবে না। পাঁচ. এই দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে।
’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮৯৫)

২. জুমার নামাজ আদায়

সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করল, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে না যায়, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)

অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে; যদি সেই ব্যক্তি সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)

৩. জুমার দিন গোসল করা

জুমার দিন গোসল করা ও আগে আগে মসজিদে যাওয়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। আউস বিন আউস সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করল, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেল ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগসহ (খুতবা) শুনল, তাঁর জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)

৪. মসজিদে প্রথমে প্রবেশ করা

জুমার দিন মসজিদে আগে প্রবেশ করা ও মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনার বিশেষ গুরুত্ব আছে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, অতঃপর প্রথমে মসজিদে গেল সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে এরপর মসজিদে গেল, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল। আর যে এরপর ঢুকল, সে যেন ছাগল কোরবানি করল, এরপর যে ঢুকল সে যেন মুরগি কোরবানি করল, আর যে এরপর ঢুকল সে ডিম সদকা করল। অতঃপর ইমাম খুতবার জন্য এলে ফেরেশতারা আলোচনা শোনা শুরু করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৪১)

৫. জুমার দিন দোয়া কবুল হয়

জুমার দিন একটি সময় আছে, যখন মানুষ আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আসরের পর অনুসন্ধান কোরো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ১০৪৮)

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান কোরো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)

৬. সুরা কাহাফ পাঠ

জুমার অন্যতম আমল সুরা কাহাফ পাঠ করা। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সহিহ তারগিব, হাদিস : ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক : ২/৩৯৯)

৭. গুনাহ মাফ হয়

সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)

৮. দরুদ পাঠ

জুমার দিন নবীজি (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা কর্তব্য। আউস বিন আবি আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়ো। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনার দেহ একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে? তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)

মন্তব্য

জুমার দিন যে সময় দোয়া কবুল হয়

মুহাম্মদ তাকরিম
মুহাম্মদ তাকরিম
শেয়ার
জুমার দিন যে সময় দোয়া কবুল হয়

ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন জুমার দিন। এই দিনে এমন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত রয়েছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায় তা পেয়ে যায়। কিন্তু সময়টা ঠিক কখন, তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মত পাওয়া যায়।

কেউ কেউ দাবি করেন, জুমার দিনের সেই গুরুত্বপূর্ণ সময়টি হলো জুমার সময় ইমাম সাহেব বসা থেকে নিয়ে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত।

আবু মুসা আল আশআরি (রা.) বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ইমামের বসা থেকে নামাজ শেষ করার মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সে মুহূর্তটি নিহিত। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৬০)

আবার কারো কারো মতে, সময়টি আসর নামাজের পর থেকে মাগরিবের নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি অবহিত করি। সেখানে কাব (রা.)-ও উপস্থিত ছিলেন।

আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, আমি দোয়া কবুলের বিশেষ সময়টি সম্পর্কে জানি। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমাকে তা অবহিত করুন। তিনি বলেন, সেটি হলো জুমার দিনের সর্বশেষ সময়। আমি (আবু হুরায়রা) বললাম, জুমার দিনের সর্বশেষ সময় কেমন করে হবে? অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যেকোনো মুসলিম বান্দা সালাতরত অবস্থায় ওই সময়টি পাবে...।
’ কিন্তু আপনার বর্ণনাকৃত সময়ে তো সালাত আদায় করা যায় না।

আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কি বলেননি, যে ব্যক্তি সালাতের জন্য বসে অপেক্ষা করবে সে সালাত আদায় না করা পর্যন্ত সালাতরত বলে গণ্য হবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, তা এরূপই। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৬)

অতএব, আমাদের উচিত জুমার দিন এই সময়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া।

দোয়া-দরুদ, জিকির ইত্যাদিতে মশগুল থাকা। জুমার সময় তো আমরা মসজিদেই থাকি। জুমার দিন আসরের পর বেলা ডোবার সময়ও মসজিদে অবস্থান করে আল্লাহর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ক্ষমা চাইতে পারি এবং নিজেদের প্রয়োজনগুলো পূরণের ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য চাইতে পারি।

মন্তব্য

আজকের নামাজের সময়সূচি, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আজকের নামাজের সময়সূচি, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫

আজ শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ৩০ রজব ১৪৪৬।

ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ-

জোহরের সময় শুরু - ১২টা ১৬ মিনিট।
আসরের সময় শুরু - ৪টা ০৭ মিনিট।
মাগরিব- ৫টা ৪৮ মিনিট।

এশার সময় শুরু - ৭টা ০৪ মিনিট।
আগামীকাল ফজর শুরু - ৫টা ২৬ মিনিট।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত ৫টা ৪৩ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৪১ মিনিটে।

সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

মন্তব্য

কোরআনের বর্ণনায় সন্তানের মাতৃদুগ্ধ পান

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
কোরআনের বর্ণনায় সন্তানের মাতৃদুগ্ধ পান

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো প্রত্যেক মায়ের কর্তব্য। কারণ মহান আল্লাহ মায়ের দুধে শিশুর বেড়ে ওঠার সব উপাদান দিয়েছেন। যেমন—আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পানি, সহজ পাচ্যকারী উপাদান ইত্যাদি সুষমভাবে থাকে মাতৃদুগ্ধে। ফলে মায়ের বুকের দুধ খাওয়া শিশু সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে বেড়ে ওঠে।

পাশাপাশি তাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও অনেক বেশি থাকে। এর ফলে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, অপুষ্টিজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পায়।

শারীরির সুস্থতার পাশাপাশি শিশুর মানসিক বিকাশেও মায়ের দুধের ভূমিকা অনবদ্য। এ ছাড়া মায়ের সুস্থতা যেমন—স্তন ক্যান্সার ও ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধে সন্তানকে সঠিকভাবে মায়ের দুধ পান করানোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

তাই প্রত্যেক মায়ের উচিত সন্তান জন্মলাভের পর থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাকে নিয়মমাফিক দুধ পান করানো।

অনেকে আবার না জেনে কোরআনের নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পরও সন্তানকে বুকের দুধ পান করান। অথচ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর নির্দিষ্ট একটি সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মাতাগণ নিজেদের বাচ্চাদেরকে পূর্ণ দুই বছর স্তন্যদান করবে, যদি দুধ খাওয়ার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়।


(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৩৩)

তাফসিরবিদরা বলেন, এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে সন্তানকে দুধ পান করানো ওয়াজিব এবং আরো বোঝা গেল যে বিশেষ ওজর ছাড়া স্তন্যদান থেকে বিরত থাকার অবকাশ নেই। (মাআরেফুল কুরআন, তাফসিরে মাযহারি, কুরতুবি, জামিউ আহকামিসসিগার : ১/১২৩)

অনেক মা সন্তানকে তিন-চার বছরও দুধ খাওয়ান। আবার অনেকে আড়াই বছর খাওয়ানো যায় মনে করে এই মেয়াদ পূর্ণ করেন। এটা ভুল। সন্তান অনূর্ধ্ব দুই বছর মায়ের বুকের দুধ খেতে পারবে।

দুই বছরের বেশি বয়সী সন্তানকে দুধ পান করানো নাজায়েজ। দুই বছর দুধ পান করানোর বিষয়টি উল্লিখিত আয়াতে রয়েছে। এ ছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘মায়ের দুধ পানের সময় দুই বছরই।’ (সুনানে দারাকুতনি : ৪/১৭৪)

তাই প্রত্যেক মায়ের দায়িত্ব সন্তানের দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তাকে অন্যান্য খাবারে অভ্যস্ত করা, যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাকে মায়ের দুধ দেওয়া বন্ধ করা যায়।
 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ