<p style="text-align:justify">অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, যথাযথ নীতি প্রণয়নের জন্য প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত দরকার। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বৈদেশিক ঋণের অপব্যবহার বন্ধের নির্দেশসহ নানা নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">গতকাল মঙ্গলবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, কমিশন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বৈঠকের পর সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব জানান।</p> <p style="text-align:justify">সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনেকে বৈদেশিক ঋণের ৫০০ টাকার জিনিস পাঁচ হাজার টাকায় কেনেন। ভাবখানা এমন এটা আর পরিশোধ করতে হবে না। এ আর চলবে না।’</p> <p style="text-align:justify">সময়মতো বৈদেশিক ঋণের সব কিস্তি দেওয়া হবে জানিয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের অবস্থা এত খারাপ নয়। আমাদের অঙ্গীকার যেটা আছে তা রাখতে হবে। বাইরে থেকে অনেকে বলছে কিছুই নাই, কথাটা ঠিক নয়। জিডিপির তুলনায় আমাদের ঋণ এত বেশি না। এখন সবাইকে এক্সট্রা এফোর্ট (বাড়তি প্রচেষ্টা) দিতে হবে।’</p> <p style="text-align:justify">উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবন জীবিকার প্রকল্প চালু রাখা হবে। বড় প্রকল্পের অর্থছাড় বড় হয়, তাই এই বিষয়ে পরে সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অর্থ অপচয় বন্ধ করতে হবে। বাইরের টাকা ইচ্ছামতো খরচ নয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ছাড়া কিছু চলবে না।</p> <p style="text-align:justify">মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশের সবার মতো বর্তমান সরকারও মূল্যস্ফীতি নিয়ে চিন্তিত। জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশের ওপরে উঠে গেছে, এটা অস্বীকার করে লাভ নেই। তিনি বলেন, যথাযথ নীতি প্রণয়নের জন্য প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত দরকার। সরকারের লক্ষ্য হলো কৃষক যাতে কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য না হয় তা দেখা। ফড়িয়ারা যেন ৫০ গুণ মুনাফা করতে না পারে।</p> <p style="text-align:justify">অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় নেই। বরং বলা যায়, অর্থনীতির গতি কমে গেছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ অনেক কারণেই তা হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতিতে গতি আনার চেষ্টা করছে। শিগগিরই এ বিষয়ে অগ্রগতি হবে। সংস্কারের বিষয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংস্কার করা হবে। ব্যাংকিং খাত সংস্কারের বিষয়ে কিছু পরিকল্পনা তাঁর মাথায় আছে। এখনই এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চান না। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তা করা হবে।</p> <p style="text-align:justify">এডিপির বরাদ্দ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য, সামাজিক ও শিক্ষা খাতের বরাদ্দ অপ্রতুল। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বা সবুজায়নে অনেক প্রকল্প এসেছে। বাস্তবতা হলো, দেশে সবুজ না বাড়লেও বড় বড় ভবন হয়েছে। এসব বাস্তবভিত্তিক করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতার কথাও বলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। এক রাস্তা বারবার খোঁড়ার কথা তুলে তিনি বলেন, ‘এতে অর্থের অপচয় হয়, দুর্ভোগ বাড়ে মানুষের।’</p> <p style="text-align:justify">অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশের ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে কোনোভাবেই উদ্বিগ্ন নয় বিশ্বব্যাংক। বরং বাংলাদেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে আরো বেশি বিনিয়োগ করতে চায় সংস্থাটি। তিনি বলেন, ‘এখানে জলবায়ু পরিবর্তন অনেক বড় ঝুঁকি, সেখানে অন্তর্বর্তীমূলক বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমরা বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদে সম্পর্ক গড়তে কাজ করছি।’</p> <p style="text-align:justify">সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের স্থবির অর্থনীতিকে চালু করার জন্য যত রকমের সহযোগিতা দরকার বিশ্বব্যাংক তা দেবে। আইএফসি ও বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা চেয়েছি আমরা। তারা বলেছে, বাংলাদেশের মানুষের জন্য তারা যেকোনো কিছুই করতে পারে। নিয়ম-কানুন মেনে তারা বিনিয়োগ করবে।’</p>