<p>আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে চলমান ঋণচুক্তির আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ০.৫ শতাংশ কর বাড়ানোর শর্ত কেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পূরণ করতে পারেনি, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।</p> <p>বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে এনবিআরের সঙ্গে চারটি আলাদা বৈঠকে এ বিষয়ে জানতে চায় আইএমএফ।</p> <p>বৈঠকে প্রথমে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানসহ আয়কর, মূসক ও শুল্কনীতি শাখার সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর এই তিন বিভাগের নীতি শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদা করে কারিগরি মিটিং হয়েছে। আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দের নেতৃত্বে আরো দুই সদস্য এতে অংশ নেন।</p> <p>নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত অর্থবছরে আমরা (এনবিআর) কেন জিডিপির ০.৫ শতাংশ কর বাড়াতে পারলাম না, সে বিষয়ে তারা (আইএমএফ) জবাবদিহি চেয়েছে। আমরা বলেছি, মূসক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে। আয়কর ও শুল্ক পারেনি। কারণ আমদানি কমেছিল গত অর্থবছরে। ফলে আমদানিতে আমরা অগ্রিম কর কম আহরণ করতে পেরেছি। একই সমস্যা হয়েছে শুল্ক আহরণেও।’</p> <p>বাংলাদেশের বিরাজমান অর্থনৈতিক সংকট, শিল্পের অস্থিরতা ও জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে স্থবিরতায় রাজস্বের যে ঘাটতি প্রথম দুই মাসে হয়েছে, সেটি উল্লেখ করে চলতি অর্থবছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা কমানোরও আহ্বান আইএমএফকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।</p> <p>এ বিষয়ে আইএমএফের মত কী জানতে চাইলে কর্মকর্তারা বলেন, আইএমএফ চলমান বিষয়গুলো জানে। এখনো লক্ষ্য কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে সামনের দিনগুলোতে রাজস্ব আদায় বাড়াতে জোর দিয়েছে। এ জন্য তাদের যে সংস্কার পরামর্শ ছিল সেগুলোতে আবারও জোর দিয়েছে। কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা, রেমিট্যান্সে কর বসানো, সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের একই রকম করকাঠামো, বিভিন্ন ফান্ডে বিনিয়োগের বিপরীতে করছাড় কমানো, করপোরেট রিটার্ন দাখিল পুরোপুরি অটোমেশনে নিয়ে আসা, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল প্রণয়ন এবং বাজেটে নেওয়া কৌশল সফলতা ও এর বিপরীতে রাজস্ব আদায় বিশ্লেষণ অন্যতম।</p> <p>এ ছাড়া আয়কর আইন ও কাস্টমস আইনের অভিজ্ঞতা ও রাজস্ব আদায়ে প্রভাব জানতে চেয়েছে আইএমএফ।</p> <p>আইএমএফের ঋণচুক্তির আওতায় বলা হয়েছে, এনবিআরকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ০.৫ শতাংশ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে একইভাবে আরো ০.৫ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাড়তি ০.৭ শতাংশ কর বাড়াতে হবে।</p> <p>সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ করে এনবিআর। এ সময় তিন লাখ ৮২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে, অথচ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। প্রথমে যা ছিল চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আইএমএফ অবশ্য কমিয়ে এ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল চার লাখ ৫০০ কোটি টাকা। এর তুলনায়ও ১৭ হাজার কোটি টাকা কম আদায় করে রাজস্ব আহরণের প্রধান সংস্থা এনবিআর।</p> <p>আইএমএফের পরের বা চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার কথা ডিসেম্বরে। এ জন্য এনবিআরের মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল প্রণয়নের কথাও রয়েছে।</p> <p>কর্মকর্তারা বলেন, ‘আমরা তিন অনুবিভাগেই এর মধ্যেই কৌশলপত্রের খসড়া তৈরি করেছি। আইএমএফ চায়, আলাদা না হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ করা। আমরা সেমতে কাজ করছি।’</p> <p>আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় মূসক ও আইটিতে কমপ্লায়েন্স, ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসির বাস্তবায়ন, কাস্টমসের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিট চালু, ভ্যাট প্রশাসনের সংস্কার, আলাদা করে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর ব্যয় বা অব্যাহতির প্রতিবেদন তৈরির হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক এই ঋণদাতা সংস্থাটি।</p> <p>এনবিআরের নেওয়া কিছু পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জানিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ‘আরো কিছু নীতি গ্রহণের কথা তাঁরা বলেছেন। আমরা বলেছি, আগামী বাজেটে আরো কিছু পদক্ষেপ নেব।’</p>