<p style="text-align:justify">শুধু দুর্নীতি আর অবৈধ সম্পদের পাহাড়ই গড়েননি সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। অপরাধ সংঘটনেও সমান সিদ্ধহস্ত ছিলেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজের জামাতা ডা. রাজন হত্যার ঘটনাও ধামাচাপা দিয়েছিলেন ক্ষমতা ব্যবহার করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজন কর্মকার তাঁরই জামাতা। সাধনের বড় মেয়ে কৃষ্ণা রানী মজুমদার স্বামী ডা. রাজনকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ রাজনের পরিবারের।</p> <p style="text-align:justify">জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৭ মার্চ ভোর পৌনে ৪টার দিকে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও নওগাঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদারের বড় মেয়ে কৃষ্ণা রানী মজুমদার তাঁর স্বামী ডা. রাজনকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে  যান।  এরপর ডাক্তার জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ডা. রাজন মারা গেছেন। এরপর ডা. রাজনের পরিবার ও সহকর্মীরা তাঁকে হত্যার অভিযোগ তোলেন স্ত্রী কৃষ্ণা রানী মজুমদারের বিরুদ্ধে। কৃষ্ণা রানীও ছিলেন বিএসএমএমইউয়ের জেনারেল সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে রাজনের স্বজনরা জানান, মৃত্যুর এক বছর আগে রাজনকে গুরুতর অবস্থায় একটি স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁকে স্থানান্তর করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে না দেখালে তখন তাঁকে বাঁচানো যেত না। তখন তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।</p> <p style="text-align:justify">ওই সময় তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণাকে বারবার বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলেও তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। রাজনের মৃত্যুকে রহস্যজনক আখ্যায়িত করে রাজনের মামা সুজন কর্মকার এ ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি করে বলেন, ‘রাজনের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তের দাবি করেছিলাম। কারণ মৃত্যুর দেড় বছর আগেও নির্যাতনের শিকার হয়ে রাজনকে একটি হাসপাতালের আইসিইউতে পর্যন্ত যেতে হয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">রাজনের মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ো হয়েছিল এবং ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল। রাজনের ময়নাতদন্ত শেষে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সেলিম রেজা বলেছিলেন, ভিসেরা রিপোর্টে আমরা চূড়ান্ত মতামত দিয়েছি।</p> <p style="text-align:justify">হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ডা. রাজন কর্মকারের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা রাজনের পরিবারের সদস্যরা একমত পোষণ করেনি। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ডা. রাজনকে হত্যার প্রকৃত ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">সাধন চন্দ্র মজুমদারের নির্বাচনী এলাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও বিষয়টি জানেন। তাঁরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, মন্ত্রীর মেয়ের শারীরিক নির্যাতনের কারণে ডা. রাজন মারা যান। এটা মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা সবাই জানেন। তিনি নিজের ক্ষমতার প্রভাবে মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">ডা. রাজনের বাবা সুনীল চন্দ্র কর্মকার ও মা খুকু রানী কর্মকার। রাজনদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার কর্মকার বাড়ি। রাজনের মৃত্যুর পরপরই পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।</p>