<p>একজন মোবাইল অ্যাকাউন্টধারী তার হিসাব থেকে অন্য অ্যাকাউন্টধারীর হিসাবে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা পাঠাতে পারে। এটাকে বলা হয় সেন্ড মানি। নির্ধারিত রেটে এই সুবিধা দেওয়া হয়। এতে ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো সমস্যা নেই।তাই সেন্ড মানি করা জায়েজ।</p> <p>অন্যদিকে ক্যাশ আউট মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বহুল ব্যবহৃত একটি সুবিধা। নিজ অ্যাকাউন্ট থেকে অথবা এজেন্টের কাছে পাঠানো টাকা উত্তোলনই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (বিকাশ, এমক্যাশ ইত্যাদি) মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। ইসলামী ফিকহের দৃষ্টিতে এটি ‘আল ইজারাহ’-এর অন্তর্ভুক্ত। ইজারাহ হচ্ছে নির্ধারিত বিনিময়ে নির্ধারিত সেবা বিক্রয় করার নাম। (আল আওসাত : ১১/১৩১, আল মুগনি : ৮/২২)</p> <p>এ ক্ষেত্রে টাকা জমা বা উত্তোলনকারী হচ্ছে সেবাগ্রহীতা বা ‘মুসতাজির’। আর কম্পানি হচ্ছে সেবাদাতা বা ‘আজির’। এজেন্ট হচ্ছে মূল সেবাদাতা বা আজিরের ওয়াকিল বা প্রতিনিধি। ওয়াকালাহ বা Agency Contract-এর ক্ষেত্রে Agent বা প্রতিনিধি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তার Agency এর দায়িত্ব পালন করতে পারে। আর পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে তা নির্দিষ্ট হওয়া জরুরি। তা নির্দিষ্ট অঙ্ক বা কোনো অঙ্কের নির্দিষ্ট হার উভয়টিই হতে পারে। যেমন—১০০ টাকায় ১০ টাকা বা ১০০ টাকার ১০ শতাংশ উভয়টিই বৈধ। তবে সার্বিক বিবেচনায় বিকাশের মাধ্যমে টাকা প্রেরণ ও গ্রহণে যদিও কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু তা যেন সুদভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সুদভিত্তিক কার্যক্রমে সহযোগিতার পর্যায়ে না হয়, তা লক্ষ রাখা উচিত।</p> <p>অতএব, সেবাদাতা কম্পানি (যেমন—বিকাশ, ডাচ-বাংলা ইত্যাদি) যদি সুদভিত্তিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তাদের কাছে বেশি সময় টাকা গচ্ছিত রাখা উচিত নয়। কারণ এতে তারা গ্রাহকের টাকা কিছু সময়ের জন্য হলেও সুদভিত্তিক খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ পেয়ে যাবে।</p> <p><strong>ক্যাশ ব্যাকের টাকার বিধান কী</strong></p> <p>বিকাশ বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার পণ্য ক্রয় করে ওই টাকা যদি বিকাশে পে করা হয়, তাহলে কিছু টাকা ফেরত দেওয়া হয়ে থাকে। এটাকে ক্যাশ ব্যাক বলা হয়। এটা মূলত বিকাশ এবং ওই প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত গ্রাহক আকর্ষণ করার পদ্ধতি। এতে একদিকে মোবাইল ব্যাংকিং কম্পানির প্রচার-প্রচারণা ও গ্রাহক বৃদ্ধি হয়, অন্যদিকে ওই প্রতিষ্ঠানেরও প্রচার-প্রচারণা এবং বিক্রয় বৃদ্ধি পায়। এই ক্যাশ ব্যাক মানির বিধান হলো, এই অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করতে কোনো দোষ নেই। কারণ পণ্যের মালিক আপনাকে ছাড় দিয়েছে।</p> <p><strong>হুন্ডি ব্যবসা কি জায়েজ?</strong></p> <p>ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে হুন্ডি ব্যবসা নাজায়েজ নয়। কেননা, এটি হচ্ছে মুদ্রা বিনিময় তথা এক দেশের মুদ্রাকে অন্য দেশের মুদ্রার বিনিময় ক্রয়-বিক্রয়, যা ইসলামের দৃষ্টিতে জায়েজ। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/১৩১, ফাতহুল মুলহিম : ১/৫৯০)</p> <p>তবে এ ক্ষেত্রে মজলিসেই কমপক্ষে একপক্ষকে কারেন্সি হস্তগত করে নিতে হবে। যদি একজনও তাদের বিনিময়কৃত কারেন্সি হস্তগত না করে তাহলে ক্রয়-বিক্রয়টি জায়েজ হবে না।</p> <p>মনে রাখতে হবে যে আমাদের দেশে হুন্ডি ব্যবসা আইনিভাবে নিষিদ্ধ। আর ইসলামের নীতি হলো, রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ কোনো বিষয় যদি কোরআন-হাদিসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় এবং রাষ্ট্রের কল্যাণে প্রণীত হয়, তা মান্য করা সব নাগরিকের কর্তব্য। হুন্ডি ব্যবসা এবং এর মাধ্যমে লেনদেন থেকে বিরত থাকা ইসলামী আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। তাই এই আইন মেনে চলা জরুরি।</p> <p>পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহর অনুগত হও, রাসুলের অনুগত হও এবং তোমাদের মধ্যকার কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিদের; যদি কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সেই বিষয়কে আল্লাহ ও রাসুলের (নির্দেশের) দিকে ফিরিয়ে দাও যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাকো। এটাই উত্তম এবং সুন্দরতম মর্মকথা।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৯)</p> <p> </p>