<p>ভারতের আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশি উপ-হাইকমিশনে হামলা বিজেপি সরকারের অপতৎপরতা ও বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। তিনি বলেছেন, এই হামলা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকি। এতে বোঝা যায়, আওয়ামী লীগ নিজেদের বিদায় ও পরাজয় মেনে নিতে পারলেও স্বৈরাচার হাসিনার বিদায় ভারত মানতে পারছে না। </p> <p>রাশেদ খান বলেন, উগ্র হিন্দুত্ববাদী জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা ও কলকাতায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত কলকাতায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও জাতিসংঘে সেই প্রস্তাব করার আহ্বান করছি। </p> <p>আজ মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় গণঅধিকার পরিষদের দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার, ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে হামলা ও দেশের চলমান সংকট নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। </p> <p>রাশেদ খান বলেছেন, দেশের বীর ছাত্র-জনতা ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৫ বছর ধরে গড়ে ওঠা হাসিনার মসনদ ভেঙে খানখান করে দিয়েছে। তাই ভারত একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে এবং ধর্মীয় উসকানি দিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও যুদ্ধ লাগানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু দেশের জনগণ কোনো ধরনের উসকানির ফাঁদে পা না দিয়ে ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে সব কিছু মোকাবেলা করছে। </p> <p>তিনি আরো বলেছেন, আইনজীবী সাইফুল ইসলামের নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং মসজিদে হামলার পরও কোনো হিন্দুর বাড়িতে ও মন্দিরে হামলা হয়নি। বরং নিরাপত্তা বলয় আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত মনে করেছিল, ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেবে বাংলাদেশের জনগণ। এরপর ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধ করার ক্ষেত্র খুঁজে পাবে। কিন্তু জনগণের বিচক্ষণতার কাছে ভারতের ষড়যন্ত্রের পরাজয় হয়েছে। অথচ গত অক্টোবর মাসের শেষ দিকে ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা পরিচালিত জরিপেও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছে। </p> <p>গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর জামিন না দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২৬ নভেম্বর তার ভক্ত ও অনুসারী ইসকন সদস্যরা চট্টগ্রামের আদালতে অবস্থিত মসজিদে হামলা করে এবং সরকারি সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করে। কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড, অপ ইন্ডিয়াসহ একাধিক গণমাধ্যমে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতীয় মিডিয়ার এসব কর্মকাণ্ড মিথ্যাচার ও নির্লজ্জতার সীমা অতিক্রম করেছে। </p> <p>তিনি বলেন, ভারতের গণমাধ্যমে বিজেপি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সংখ্যালঘু নির্যাতন ও আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাসহ নানা ইস্যুতে গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের মানুষ ভালো আছে। এখানে কোনো ধর্মীয় বাগবিতণ্ডা ও সাম্প্রদায়িকতা নেই। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরে সম্প্রীতি ও শ্রদ্ধা বজায় রেখে জীবনযাপন করছে।</p> <p>রাশেদ খান বলেন, ভারতের বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর মোতায়েন চেয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন। অথচ গত ২৮ অক্টোবর বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ নামের একটি সংগঠন ও  বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়েছে। এমনকি সীমান্ত অবরোধের হুমকিসহ বাংলাদেশি সীমান্তে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে একের পর এক বিক্ষোভ ও ঘৃণা প্রচার চলছে। এ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনো প্রতিবাদ নেই। বরং বাংলাদেশ ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী জঘন্য মিথ্যাচারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন। </p> <p>তিনি বলেন, আমরা মনে করি, কলকাতা উপ-হাইকমিশনে নিরাপত্তা না দিয়ে ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি উপ-হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। উগ্র হিন্দুত্ববাদী জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা ও কলকাতায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত কলকাতায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও জাতিসংঘে সেই প্রস্তাব করার আহ্বান করছি। </p>