<p>‘সমষ্টিগত মর্যাদার ওপর আঘাত হানায় চব্বিশের জুলাই বিপ্লব সম্ভব হয়েছে। লাশের কাফেলা বানিয়েও কাউকে রুখে দেওয়া যায়নি। আমাদের মধ্যে জুলাইয়ের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, তা বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে অনেক ফারাক আছে। এই জায়গায় অভ্যুত্থানের নতুন শক্তিকে সংগঠিত করতে হবে। তাহলেই এই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সকল শক্তির পরিবর্তন আসবে।’ </p> <p>বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের সভাকক্ষে ‘গণ-অভ্যুত্থান, জ্ঞান আকাঙ্ক্ষা ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি এ কথাগুলো বলেন।</p> <p>প্রধান আলোচকের বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘কাঠামোগত দিক থেকে যাদের হাতে আপনারা ক্ষমতা তুলে দিচ্ছেন, তাদের হাতে এমন ভারসাম্য ও জবাবদিহিতা আছে কি না যেখানে আপনার সুরক্ষা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়। এখন প্রশ্ন আপনারা রাজনৈতিকভাবে সচেতন হবেন কি না এবং কোনো ধরনের সংস্কার ও পরিবর্তন আপনাদেরকে নিশ্চয়তা দেবে। সংস্কার সবাই বলছে। সংস্কারের ভেতরে যদি না প্রবেশ করেন তাহলে কিন্তু আপনারা ছুঁই ছুঁইয়ের মধ্যে থেকে যাবেন। আপনাদের আশা ও বাস্তবতার মধ্যে বড় ফারাক তৈরি হতে থাকবে। আপনারা হতাশ হবেন। এই হতাশা কাটানো এবং লড়াই করার প্রধান উপায় হচ্ছে আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে।’</p> <p>গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি আরো বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক প্রস্তাবনায় বলছি, রাষ্ট্র মেরামত করতে চাই কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক ব্যবহার সেই আগের মতোই আছে। এটা বদলানোর জন্য জনগণের অভ্যুত্থানের ভেতরের শক্তি প্রয়োজন। জুলাই অভ্যুত্থানের আগে দেশে যে  রাজনৈতিক চর্চা চর্চিত হয়েছে তাতে জনপ্রতিনিধিরা জনগণের ওপর প্রভুত্ব করেছেন। অথচ গণতন্ত্রের মূল কথা ছিল জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস।’</p> <p>আলোচনা সভায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুথানের যে স্বপ্ন আমাদের ছিল একটা পক্ষ সে ভাষাকে ধারণ করতে পারেনি। এই অভ্যুত্থান একটা লম্বা সময় ধরে হয়েছে এবং তা চূড়ান্ত হয় জুলাইয়ে।</p> <p>তিনি বলেন, আমাদের মুক্তি শাহবাগ অথবা শাপলা চত্বর থেকে চূড়ান্ত হয়নি। এই দুটো বাইনারি থেকে আমাদের বের হতে হবে। একটা দীর্ঘ সময় যাবৎ আমরা দেখেছি রাজাকার বলতে শুধু দাঁড়ি টুপিওয়ালা মানুষকে বোঝানো হয়, অথচ ৭১-এর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই কোনো রাজাকারের দাঁড়ি টুপি ছিল না।</p> <p>ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা করিডোর চুক্তি করে এসেছে, তখনই বাংলাদেশের মানুষ বুঝে গেছে শেখ হাসিনার রেজিম থাকলে বাংলাদেশ দ্বিতীয় প্যালেস্টাইনে পরিণত হবে। ধর্ম আমাদের পাপ পুণ্য বলে স্বর্গ নরক অনেক কিছুই দেখায়। কিন্তু ধর্মবোধের মূল কথা হলো ন্যায়ের পথে চলা। আমার মনে হয় এই ধর্মবোধ একটা গুরুত্বপূর্ণ স্পিরিট হিসেবে কাজ করেছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে। তারই পরিণতি হলো মৃত্যু অথবা মুক্তি। তারই চূড়ান্ত রূপ হলো শেখ হাসিনার পতন।’</p> <p>অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে আরো বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘যোগসূত্র’ এবং লেখক পাঠকের সূতিকাগার ‘উত্তরণ’-এর উদ্যোগে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক আমীরুল ইসলাম কনকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমানসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারা।</p>