বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) আলোচিত সেই কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বাদশা আবারও ছাতক সিমেন্ট কারখানার আধুনিকায়নে ব্যালান্সিং মর্ডানাইজেশন রেনোভেশন অ্যান্ড এক্সপেনশন (বিএমআরই) প্রকল্পের হর্তাকর্তা হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে বিসিআইসিসহ ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ এম বারী কাগজে-কলমে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে থাকলেও নতুন প্রকল্পের মূল কাজ পরিচালনা করছেন চিটাগাং রাঙ্গাদিয়া ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লি. থেকে ছাতক সিমেন্ট কারখানায় পে-রোলে আসা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (রসায়ন) আব্দুর রহমান বাদশা। তবে পে-রোলে নিয়োগের মেয়াদ শেষ হলেও বহাল তবিয়তেই রয়েছেন তিনি।
এদিকে পে-রোলের মেয়াদ বর্ধিত করা হয়নি বলে কারখানার জিএম (প্রশাসন) গোলাম রাব্বানি জানালেও আব্দুর রহমান বাদশা জানান, তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। অথচ বিসিসিআইর ওয়েবসাইটের দপ্তরাদেশে সব প্রজ্ঞাপন থাকলেও এ ধরনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (অ্যাব) কেন্দ্রীয় এ নেতার বিরুদ্ধে বিসিআইসির প্রতিষ্ঠান ছাতক সিমেন্ট কারখানা এবং কর্ণফুলী পেপার মিলে (কেপিএম) কর্মরত অবস্থায় ব্যাপক অনিয়ম- দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছিল। ছাতক সিমেন্ট কারখানা থেকে একাধিকবার তদন্ত ও বদলি হয়েও পুনরায় তার ঠাঁই হয়েছে ছাতক সিমেন্ট কারখানায়।
জানা যায়, ছাতক সিমেন্ট কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৬ সালে ড্রাই প্রসেস প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বর্তমানে চলমান রয়েছে কোটি কোটি টাকার নির্মাণকাজ। এসব কাজের হর্তাকর্তা হিসেবে কাজ করছেন সেই বিতর্কিত আব্দুর রহমান বাদশা। প্রকল্পের কাজ নামে-বেনামে বাগিয়ে নিতে এখানে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন তিনি।
এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে নতুন প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
একটি সূত্র জানায়, কারখানার বড় ধরনের সবগুলো দুর্নীতির সঙ্গে আব্দুর রহমান বাদশার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততা ছিল। ওই কর্মকর্তা ছাতক সিমেন্ট কারখানায় কর্মরত অবস্থায় বিনা টেন্ডারে মাত্র ৩৫ লাখ টাকায় কারখানার পুরনো পাওয়ার প্লান্ট বিক্রির পাঁয়তারা করেছিলেন। পরে স্থানীদের প্রতিবাদের মুখে বাধ্য হয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে প্লান্টটি আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়।
এ ছাড়া নিজস্ব খনি প্রকল্প থেকে রজ্জুপথে আসা কারখানার চুনাপাথর সেনা কল্যাণ সংস্থার নাম ব্যবহার করে খোলাবাজারে প্রতি টন পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে কারখানার কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও ছিল বাদশাসহ এ চক্রের বিরুদ্ধে।
যা নিয়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় একাধিক সংবাদসহ সম্পাদকীয় কলামও ছাপা হয়েছিল।
স্থানীয় নুরুল আমিন, আব্দুল খালিকসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, আব্দুর রহমান বাদশাই এখন কারখানার অঘোষিত প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) হিসেবে কাজ করছেন। এক শ্রমিকনেতার যোগসাজশে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নামে-বেনামে বিভিন্ন ধরনের কাজ বণ্টন করা হচ্ছে। যার বেশির ভাগ ঠিকাদারের সঙ্গেবি ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে আছেন আব্দুর রহমান বাদশা। এমনকি আগে কাজ করিয়ে পরবর্তী সময়ে নিয়ম রক্ষার জন্য কাগজে-কলমে টেন্ডার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের অভিযোগ রয়েছে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিএমআরই প্রজেক্ট সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে আব্দুর রহমান বাদশা জানান, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তিনি নিয়মাবলি মেনেই কাজ করছেন।
ছাতক সিমেন্ট কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ এম বারীর মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।