<p>সুনামগঞ্জ সদরে বিতর্কিত অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের বাগানবাড়ির জন্য কেনা পাহাড়ের জমি দখল করছে স্থানীয় লোকজন। গতকাল সোমবার সকাল থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের সীমান্তগ্রাম চিনাউড়ায় এসে চিনাউড়া পাহাড়ে অতিরিক্ত ডিআইজির কেনা জমি দখল করতে শুরু করে। তারা পাহাড়ের গাছপালা কেটে বাঁশের  বেড়া দিয়ে দখলের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে প্রশাসন ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের বাধা দিয়েছে বলে জানা গেছে।</p> <p><img alt="ডিআইজি" height="268" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Harun/2024/September-2024/10-09-2024/Graph.jpg" style="float:left" width="400" />গত ১৯ আগস্ট কালের কণ্ঠে ‘ডিআইজির স্ত্রী ছয় হাজার কোটি টাকার মালিক’ শিরোনামে একটি প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে সুনামগঞ্জের হাসাউড়ায় মোজাম্মেল হকের প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ১০০ বিঘার মতো জমি থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে।</p> <p>এদিকে পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত ডিআইজির কেনা জমি পাহাড়ি এলাকা ও পাহাড়ি আকৃতির হওয়ায় বেপরোয়া দখলে গেলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তাই এই জমি প্রশাসনের জিম্মায় নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। এই জমির কিছু ব্যক্তি পর্যায়ে কেনা এবং কিছু সরকারি খাসজমিও রয়েছে বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।</p> <p>জানা গেছে, ডিআইজি গাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের একজন স্থানীয় কর্মচারী এসব জমি দেখাশোনা করেন। স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে গতকাল কান্দিগাঁও গ্রামে সালিস বৈঠক বসে।</p> <p>সালিসে স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি ওই জমি দখলের জন্য স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করেন। এর পরই স্থানীয় কিছু মানুষ, কোদাল, খন্তা, বাঁশ নিয়ে পাহাড়ে গিয়ে দখল নিতে শুরু করে। তবে ডিআইজির ওই জমি যেহেতু পাহাড়ে, তাই পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।</p> <p>একটি সূত্র জানায়, এ আশঙ্কা থেকে কয়েকজন উন্নয়ন সংগঠক বিষয়টি দ্রুত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানকে জানান। উপদেষ্টা জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি দেখার নির্দেশনা দিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী মান্নানকে পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার নির্দেশ দেন।</p> <p>উন্নয়ন সংগঠক সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের এক কর্মচারীর সঙ্গে স্থানীয় এক ভূমি মালিকের বিরোধ চলছে। এর জেরে আজ (গতকাল) কান্দিগাঁও গ্রামে সালিস বৈঠক বসে। শুনেছি, ওই বৈঠকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ডিআইজির সম্পদ অবৈধ বলে উল্লেখ করে লোকজনকে দখলে উৎসাহিত করেন।</p> <p>তিনি বলেন, সালিসের পরই শুরু হয় দখল উৎসব। কিন্তু ভূমিটি পাহাড় ও টিলা হওয়ায় এমন অবাধ দখলে পরিবেশ ধ্বংসের আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমাদের দাবি, ডিআইজির এই সম্পদ দখলদারদের বদলে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া উচিত। না হলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে।</p> <p>রঙ্গারচর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বলেন, ‘ডিআইজির কর্মচারীর সঙ্গে স্থানীয়দের বিরোধে সালিস ছিল। সালিসে নানা বিষয় আলোচনা হয়। দখলে উৎসাহ দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। এ বিষয়ে আমার সঙ্গে ইউএনও ম্যাডাম কথা বলেছেন। তবে স্থানীয়রা দখল করতে চাইলে কিছু করার নেই।’ তিনি বলেন, ডিআইজির এই জমিতে সরকারি খাসজমিও রয়েছে।</p> <p>সুনামগঞ্জ সদরের ইউএনও মৌসুমী মান্নান বলেন, ‘পাহাড় দখলের খবর পেয়ে আমরা রওনা দিয়েছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দখলদারদের নিয়ন্ত্রণ করতে নির্দেশ দিয়েছি। ঘটনাস্থল থেকে ফিরে এসে আমরা এই বিষয়ে প্রতিবেদন দেব।’</p> <p>সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের উত্তর কান্দিগাঁও, ছিনাউড়া হাসাউড়া মৌজায় প্রায় ২০ একর,  বনগাঁও ও সুন্দাউড়া মৌজায় আরো ৩০ একরের মতো জায়গা নিজ নামে কেনেন গাজী মোজাম্মেল। সুনামগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা কামাল হোসেন এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।</p>