<p>কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিলুপ্ত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদের একটি পরিত্যক্ত হলরুম নিজের দখলে নিয়েছিলেন সাবেক রেলপথমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক। ২০১৯ সালে দখলের কিছুদিনের মধ্যেই ওই হলরুমটি সংস্কার করে মুজিবুল নির্মাণ করেন নিজের কার্যালয়। ২০২০ সালের শুরুর দিকে নির্মাণকাজ শেষ হলে চৌদ্দগ্রাম গেলেই ওই কার্যালয়ে বসতেন কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সদ্যঃসাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হক।</p> <p>৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনই চৌদ্দগ্রামের বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মুজিবুলের ওই কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। পরে গত ১৭ আগস্ট ওই কার্যালয়টি দখলে নিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে দখলের পর কার্যালয়টির দরজা-জানালা মেরামত করা হয়েছে। বর্তমানে সেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘শহীদ জিয়াউর রহমান (বীর-উত্তম) হল’।</p> <p>এ ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে চারদিকে নানা ধরনের আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। স্থানীয়রা বলছেন, ৫ আগস্টের পর দখলের শুধু দলবদল হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি একই আছে। শুধু এই কার্যালয়টিই নয়, পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি একই।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা এবং চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক হারুনুর রশিদের নেতাকর্মীরা ওই কার্যালয়টি দখল করেছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম বাজারের মাঝামাঝি এলাকায় ঢাকামুখী লেনের ডান পাশে ওই কার্যালয়টির অবস্থান। সাবেক সংসদ সদস্য ও রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক দখলে নেওয়ার পর সংস্কার করে ওই হলরুমের নাম দেন ‘মো. মুজিবুল হক, মাননীয় সংসদ সদস্য, ২৫৯ কুমিল্লা-১১-এর কার্যালয়।’ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটি দখল হয়ে যায়। ২০২০ সালের শুরু থেকে মুজিবুল হক যখনই চৌদ্দগ্রাম গেছেন, তখনই ওই কার্যালয়ে বসতেন তিনি। গত ৭ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে এটি ছিল মুজিবুল হকের প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়। এর ভেতরে একটি হলরুম এবং মুজিবুল হকের বসার জন্য আরেকটি কক্ষ ছিল।</p> <p>চৌদ্দগ্রাম বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চৌদ্দগ্রাম সদর ইউনিয়ন পরিষদকে ২০০৩ সালে বিলুপ্ত ঘোষণা করে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা করা হয়। ওই সময় পর্যন্ত চৌদ্দগ্রাম বাজারের মাঝামাঝি এলাকায় মহাসড়কের পাশে ছিল চৌদ্দগ্রাম সদর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়। তাঁর সঙ্গেই ছিল ওই হলরুমটি। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়সহ আশপাশের সম্পত্তির ওপর শপিং মল নির্মাণ করছে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা। আর ২০১৯ সালের শেষ সময়ে এসে ওই হলরুমের দিকে নজর পড়ে সাবেক এমপি মুজিবুল হকের। এরপর তিনি সেটি দখল করে সংস্কারের পর নিজের কার্যালয় বানান। হলরুমসহ ওই এলাকার পুরো জায়গাটির মালিক জেলা পরিষদ। কিন্তু সেখানে জেলা পরিষদের কোনো স্থাপনা নেই। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কার্যালয়টি নতুন করে দখল করেন বিএনপির নেতাকর্মীর। নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি হলরুমে বর্তমানে টাঙানো হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের ব্যানার-ফেস্টুন।</p> <p>এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক হারুনুর রশিদ বলেন, ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর চৌদ্দগ্রামের বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মুজিবুল হকের দখল করা কার্যালয়টিতে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এর পর থেকেই রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা চেয়েছেন কার্যালয়টি দখলে নিতে। আমরা বিষয়টি জানতে পেরে হলরুমটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে ভাঙচুর হওয়া হলরুমের দরজা ও জানালা মেরামত করা হয়েছে। কেউ যেহেতু দখলের সাহস না করে এ জন্য হলরুমের নাম দিয়েছি ‘শহীদ জিয়াউর রহমান (বীর-উত্তম) হল।’</p> <p>হারুনুর রশিদ বলেন, একতলা বিশিষ্ট টিনশেড ভবনটির সম্পত্তির মালিক জেলা পরিষদ। এটি একসময় চৌদ্দগ্রাম সদর ইউনিয়ন পরিষদের হলরুম ছিল। মুজিবুল হক ক্ষমতার অপব্যবহার করে এটি দখল করেছেন। এটি সরকারি সম্পত্তি। আমরা এটি উদ্ধার করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। সরকার নিজেদের প্রয়োজনে যখনই চাইবে তখনই আমরা এটি হস্তান্তর করতে রাজি আছি। আমরা জেলা পরিষদ বা সরকারের এই সম্পত্তি দখল করিনি, উদ্ধার করেছি।</p> <p>এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি বিষয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা পরিষদকে অবহিত করব। এ ছাড়া বিষয়টির বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছি।’</p> <p>এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ রয়েছে। </p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি এলাকা থেকে গাঢাকা দিয়েছেন।</p>