<p style="text-align:justify">বগুড়ার শাজাহানপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী সাগর হোসেন তালুকদার (৩৫) ওরফে ‘টোকাই সাগর’ হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার তিনদিন পর বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে শাজাহানপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন সাগরের বোন রোকসানা আক্তার বর্ষা।</p> <p style="text-align:justify">মামলায় স্থানীয় হজরত আলীসহ মোট ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা যায়নি। পুরো হত্যাকাণ্ড নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে পুলিশ। </p> <p style="text-align:justify">শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়াদুদ আলম মামলা সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করা এখনো সম্ভব হয়নি। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও রহস্য উদ্‌ঘাটনে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা সাগরের অন্যতম সহযোগী মুক্তার হোসেনের (২৯) খোঁজে মাঠে নামলেও তার হদিস পাওয়া যায়নি। সাগর ও স্বপন হত্যাকাণ্ডের সময় মুক্তার তাদের মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। হত্যার পর মুক্তারকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তবে মুক্তারের হদিস মিলছে না।</p> <p style="text-align:justify">বগুড়া ডিবির ওসি মুস্তাফিজ হাসান বলেন, হত্যার ঘটনার সময় মুক্তার হোসেন সাগরের সঙ্গেই ছিলেন। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। হত্যাকারীদের ভয়ে কিংবা রাজসাক্ষী হওয়ার ভয়ে মুক্তার নিজে থেকে আত্মগোপনে থাকতে পারেন।</p> <p style="text-align:justify">পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের সাবরুল ছোট মন্ডলপাড়া এলাকায় বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন সাগর। এ সময় মোটরসাইকেলে আসা একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়ে সাগর ও তার দুই সহযোগীকে উপর্যুপরি কুপিয়ে জখম করে। এতে ঘটনাস্থলেই সাগর ও স্বপন নিহত হন। আহত আরেক সহযোগীকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার ছত্রছায়ায় শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলার আশপাশে ৩০ গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন সাগর তালুকদার। তবে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোনো পদে ছিলেন না। কর্মী হিসেবে নেতাদের পক্ষে কাজ করতেন। সাবরুল বাজারে সাগরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মামা-ভাগনে এন্টারপ্রাইজ কার্যত সন্ত্রাসীদের আখড়া।</p> <p style="text-align:justify">এক দশক ধরে ওই দোকানে বসে নানা অপকর্মে জড়িয়েছেন তিনি। বাড়ি নির্মাণ, জমি কেনা থেকে ব্যবসা সবকিছুতেই চাঁদা দিতে হতো সাগরকে। তার অর্ধশতাধিক সদস্যের একটি বাহিনী আছে। মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে চলাফেরা করতেন সাগর। সড়কে মাছের গাড়ি, যানবাহন থেকে শুরু করে জমি চাষের পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর থেকেও চাঁদাবাজি করেন তারা।</p> <p style="text-align:justify">এর আগে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সাবরুল বাজার থেকে মোটরসাইকেলে বগুড়া শহরে যাওয়ার পথে মাথাইলচাপড় এলাকায় কলেজশিক্ষক ও আওয়ামী লীগের নেতা শাহজালাল তালুকদার ওরফে পারভেজকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। কারাগারে থেকে এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগে সাগর হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা হয়। ২টি হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজিসহ সাগর অন্তত ১২টি মামলার আসামি ছিলেন।</p> <p style="text-align:justify">বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগর ও তার এক সহযোগী প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয়েছেন। তবে হামলাকারীদের এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। সাগর পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ এক ডজন মামলা আছে। মামলাটির তদন্ত অব্যাহত আছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলমান।</p>