<p style="text-align:justify">দিগন্ত জুড়ে ফুটেছে সাদা কাশফুল। এ যেন শরতের আকাশে একখণ্ড মেঘের ভেলা। প্রকৃতির এমন অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন উপকূলীয় জনপদের বরগুনার বেতাগী বিষখালী নদীর তীরে ভিড় করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাগমে মুখর এখন ধরলা নদীর তীর। শরতের হঠাৎ বৃষ্টির মাঝেও ঘরে আটকে রাখতে পারেনি প্রকৃতিপ্রেমীদের। </p> <p style="text-align:justify">শরতে কাশবনের ফুলগুলো দোল খেতো বাতাসে। শরতে প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্যে এ সময় অজান্তেই মানুষের মনে ভিন্ন রকম আনন্দের ঝিলিক বয়ে যেত। শরৎ শুভ্রতার ঋতু। শরৎ মানেই স্নিগ্ধতা। ষড় ঋতু অনুসারে ভাদ্র-অশ্বিন মাস জুড়ে শরৎকাল। গত কয়েক যুগ ধরে দেখা গেছে, শরৎকাল এলেই গ্রাম-বাংলার ঝোপ-ঝাড়, রাস্তা-ঘাট ও নদীর দুই ধারসহ আনাচে-কানাচে কাশফুলের মন মাতানো দোলখেলা।</p> <p style="text-align:justify">কাশফুল মূলত ছনগোত্রীয় এক ধরনের বহুবর্ষজীবী ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। প্রকৃতিতে যখন শরৎকাল আসে, তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় এর আগমনি বার্তা। এ ঋতুতে পালকের মতো নরম এবং ধবধবে সাদা রঙের কাশফুল ফোটে। বর্ষা ঋতুকে বিদায় জানিয়ে নীল আকাশে সাদা তুলার মতো মেঘের সঙ্গে কাশফুলের মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া প্রকৃতিতে শুধুই মুগ্ধতা ছড়ায়।</p> <p style="text-align:justify">নীল আকাশের নিচে সাদা কাশফুল যখন বাতাসে দুলতে থাকে, তখন মনে হয় শ্বেত বসনা একঝাঁক নৃত্যশিল্পী নৃত্য করছে। রোমানিয়া আদিবাসী কাশফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Saccharum spontaneum.</p> <p style="text-align:justify">কাশফুল উদ্ভিদটি উচ্চতায় সাধারণত ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনা রুক্ষ এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। তবে নদীর তীরেই এদের বেশি জন্মাতে দেখা যায়।</p> <p style="text-align:justify">গ্রামবাংলায় বিশ্বাস করা হয়, কাশফুল মনের কালিমা দূর করে। তাই শুভ কাজে কাশফুলের পাতা বা ফুল ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া কাশ দিয়ে গ্রামের বধূরা ঝাঁটা, ডালি, মাদুর তৈরি করে থাকে। ঘরের চাল, বাড়ির সীমানার বেড়া ও কৃষকের মাথাল তৈরিতেও কাশগাছ ব্যবহার করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">কাশফুলের বেশ কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। যেমন—পিত্তথলিতে পাথর হলে নিয়মিত গাছের মূলসহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে ওষুধ তৈরি করে পান করলে পিত্তথলির পাথর দূর হয়। কাশমূল বেটে চন্দনের মতো নিয়মিত গায়ে মাখলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর হয়। এ ছাড়া শরীরে ব্যথানাশক ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশের মূল ব্যবহৃত হয়। তবে কালের আবর্তে উপকূলীয় জনপদে আগের মতো কাশফুল আর দেখা যায় না। হারিয়ে যাচ্ছে এই কাশফুল। </p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে উপজেলা শুভসংঘের প্রধান উপদেষ্টা ও বেতাগী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন বড়াল বলেন, ‘শরৎ ঋতুর প্রকৃতির শুভ্রতার প্রতীক কাশফুল। কাশফুল শরতের অপরূপ সৌন্দর্যে শোভাবর্ধন করে। একসময় কাশফুল শরতের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করতো এবং নদীর ধারে বা ফসলের মাঠের পাশেই কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য ভেসে উঠতো।’<br />  </p>