<p>সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লোভনীয় বেতনে চাকরি ও অবিশ্বাস্য কম দামে পণ্য বিক্রির পোস্টের মাধ্যমে টোপ ফেলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকচক্র। অন্তর্জালে প্রতারণার প্রকারভেদ ও নিরাপদ থাকার উপায় জানাচ্ছেন আশিক উল বারাত।</p> <p><strong>নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি</strong></p> <p>ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে প্রায়ই দেখা যায় বিভিন্ন পদে নিয়োগের পোস্ট। বেশির ভাগ পোস্ট হয়ে থাকে স্পন্সরকৃত, অর্থাৎ পোস্টদাতা ছাত্র-ছাত্রী ও বেকারদের প্রফাইলে পৌঁছানোর আশায় কিছু খরচাপাতিও করেছেন। অভিজ্ঞতা ছাড়াই অবিশ্বাস্য বেতনের আশ্বাস থাকে এসব পোস্টে। বিজ্ঞাপনের লিংকে থাকতে পারে প্রতারকদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা, ব্যবহারকারীদের তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার ফিশিং পেজ, অথবা সরাসরি যোগাযোগের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ বা টেলিগ্রামের ঠিকানা। চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রথমে অল্প কিছু টাকা জয়েনিং ফি হিসেবে বিনিয়োগ করতে বলে, সেটাই তাদের লাভ।</p> <p><strong>ফ্রিল্যান্স কাজ শেখার কোর্স</strong></p> <p>‘ঘরে বসেই লাখ টাকা আয় করুন’ শিরোনামের পোস্টগুলোকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির অপভ্রংশ বলা যায়। ফ্রিল্যান্সাররা আসলে কিভাবে কাজ করে, সে বিষয়ে অজ্ঞতার সুযোগ নিচ্ছে প্রতারকচক্র। ‘সহজ কোর্স করে প্রতিদিন আয় করুন হাজার টাকা’, এমনটাই বিজ্ঞাপনে লেখা থাকে। কোর্সের এবং কাজ করার জন্য জয়েনিং ফি হিসেবে প্রতারকরা টাকা পাঠাতে বলে। টাকা পাওয়ার পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। </p> <p><strong>বেচাকেনার প্রতারণা</strong></p> <p>‘লাখ টাকার স্মার্টফোন মাত্র কয়েক হাজারে’, ‘বর্ডার ক্রস বাইক অর্ধেক মূল্যে’—এমন চটকদার বিজ্ঞাপন ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে দেখা যায়। স্বনামধন্য ই-কমার্স সেবার লোগো ও নাম নকল করেও ভুয়া বিজ্ঞাপনের নজির আছে। বিজ্ঞাপনের ফোন বা বাইকটি কিনতে চাইলে প্রতারকচক্র বলে অগ্রিম অর্থ পাঠাতে। সরাসরি দেখা করে লেনদেন করার জন্য ডেকে নিয়ে গিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে হরহামেশা।</p> <p><strong>অনলাইন ক্যাসিনো বা বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন</strong></p> <p>বাজি ধরে আয়, কিংবা স্পিন করলেই ডলার জেতার সুযোগ—ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে অহরহ এমন বিজ্ঞাপন দেখা যায়। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফরমে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা শেয়ার লেনদেন করে আয় করুন লক্ষাধিক টাকা, এমনটাও হয়। কিছু বিজ্ঞাপনে দেখা যাবে কোনো তরুণ ইনফ্লুয়েন্সার বলছে, ‘আমি এই সাইটে বিনিয়োগ করে অল্প সময়ে গাড়ি কিনেছি’ অথবা ‘এই সাইটে বিনিয়োগ করে হয়েছি কোটিপতি’। তার সঙ্গে থাকবে সাইটটিতে বিনিয়োগ করার লিংক। দেশের কোনো সুপারস্টার বা জনপ্রতিনিধির ডিপফেকও একই কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। সরল বিশ্বাসে ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই হারিয়েছেন সর্বস্ব।</p> <p><strong>ভিডিও কলে ব্ল্যাকমেইল</strong></p> <p>হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়ের মতো প্রতারণার কৌশল অপেক্ষাকৃত নতুন। শুরুতে প্রতারকরা ফেসবুকে আবেদনময়ী, সুন্দরী নারীর ছবিসহ ভুয়া আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। রিকোয়েস্ট গ্রহণ করার পর প্রতারকরা চাইবে সেই ব্যাক্তির হোয়াটসঅ্যাপ বা টেলিগ্রাম নম্বর। প্রতারকরা নম্বর পেয়ে ভিডিও কল করবে, যা রিসিভ করলে অন্য প্রান্ত থেকে দেখানো হবে অসামাজিক কার্যকলাপের দৃশ্য। কলটি রেকর্ড করে এবং স্ক্রিনশট নিয়ে সেটি ভুক্তভোগীর পরিচিতজনদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রতারকরা টাকা দাবি করে। একবার টাকা পাঠানো শুরু করলে ভবিষ্যতেও তারা চাইতেই থাকবে।</p> <p><strong>করণীয়</strong></p> <p>প্রথমেই মনে রাখতে হবে, হুট করে বিনা কষ্টে টাকা আয় করা যায় না। তার জন্য প্রয়োজন দক্ষতা ও অধ্যবসায়। অনলাইন কেনাকাটায় কখনো অগ্রিম কোনো অর্থ প্রদান করবেন না। অর্থ পরিশোধের সময় সেটি যাতে ‘পেমেন্ট’ হিসেবে পরিশোধিত হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে কখনোই টাকা পাঠাবেন না। সরাসরি লেনদেন করার সময় নিরাপদ কোনো জনসমাগমের স্থান অবশ্যই বেছে নিতে হবে। ফেসবুকে বন্ধুত্বের আহবান এলে যাছাই-বাছাই করে সাড়া দিন। নিজের একান্ত ব্যক্তিগত কোনো তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করবেন না। কোনো লিংকে ক্লিক করার আগে নিশ্চিত হতে হবে সেটি নিরাপদ কি না। কখনোই অপরিচিত কারো ভিডিও কল গ্রহণ করবেন না।</p>