<p style="text-align:justify">একটি রাবার ড্যামের সুবিধাভোগী হলেন পাঁচ ইউনিয়নের হাজার হাজার কৃষিজীবী মানুষ। এই পাঁচটি ইউনিয়নের সব কৃষিজমিই শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদের পানির জন্য ওই রাবার ড্যামের ওপর নির্ভরশীল। অথচ এই রাবার ড্যামটি দীর্ঘ ছয় বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। প্রতিবছর সংস্কারের নামে এক থেকে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও সেই টাকা লুটপাট করে নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন পানি ব্যবস্থাপনা কমিটি। আর শুষ্ক মৌসুমে পানি না পেয়ে অধিকাংশ জমিই নিষ্ফলা পড়ে থাকে চাষাবাদ ছাড়াই।</p> <p style="text-align:justify">কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দের পাড়ায় বাঁকখালী নদীর ওপর স্থাপিত রাবার ড্যামটি অকেজো হওয়ায় চাষিরা যেমন পানি পাচ্ছেন না, তেমনি নদীর নাব্যতাও নষ্ট হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ।</p> <p style="text-align:justify">বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সেই অকেজো রাবার ড্যামটি পরিদর্শন করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. সুকোমল বড়ুয়া ও কক্সবাজার-০৩ (সদর-রামু-ঈদগাও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল। তারা বিষয়টি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নজরে এনে নতুনভাবে রাবার ড্যামটি তৈরি করার ব্যাপারে সাধারণ মানুষদের আশ্বস্ত করেছেন।</p> <p style="text-align:justify">সূত্র মতে, ১৯৯৫ সালে নদীর উজানের পানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চাষাবাদের জন্য জমিতে পানি সরবরাহ করতে তৎকালীন সরকার রাবার ড্যাম নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ওই সময় কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নে বাঁকখালী নদীর ওপর একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। রাবার ড্যামটি নির্মাণের পর বাঁকখালী নদীর উজানের পানি ব্যবহার করে সুফল পেতে শুরু করেন কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের চাষিরা। এই দুই উপজেলার সুবিধাভোগী পাঁচটি ইউনিয়ন হলো- সদরের ঝিলংজা ও পিএমখালী এবং রামুর চাকমারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ও রাজারকুল।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় অধিবাসীদের মতে, রাবার ড্যামের কারণেই এসব অঞ্চলের জমিতে ফসল উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে যায় এবং উৎপাদন খরচও কমে যায়। কিন্তু গত ছয় বছর ধরে এই রাবার ড্যাম থেকে কোনো ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন না চাষিরা। অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও যেন কারো কোনো মাথাব্যথা নেই।</p> <p style="text-align:justify">অভিযোগ রয়েছে, রাবার ড্যামের পানি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কমিটি থাকলেও সেই কমিটির এখন কোনো কার্যক্রম সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে না। সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদাধিকার বলে এই কমিটির সভাপতি হলেও দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর ধরে সেই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান। তার সঙ্গে কমিটিতে থাকা অন্য সদস্যদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী।</p> <p style="text-align:justify">ওই রাবার ড্যামের সুবিধাভোগী ও কক্সবাজার জেলা তাঁতীদলের আহ্বায়ক খালেদ স্বপন বলেন, ঝিলংজা রাবার ড্যামটি অকেজো হওয়ার পরও প্রতিবছর রাবার ড্যাম সংস্কার ও নদীতে বাঁধ দেওয়ার জন্য এক থেকে দেড় কোটি টাকা সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের ‘বিকাশ’ এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের নির্দেশে তাদের নেতাকর্মীরা সেই টাকা লুটপাট করেছেন।</p> <p style="text-align:justify">রাবার ড্যামের আরেক সুবিধাভোগী, কক্সবাজার জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক মো. মোস্তফা কামাল বলেন, বিএনপির শাসনামলে রাবার ড্যামটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ওই সময়ও একবার রাবার ড্যামটি নষ্ট হয়ে যায়। তখন বিএনপি সরকার দ্রুত সেটি সংস্কার করে দেয়।</p> <p style="text-align:justify">তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর রাবার ড্যামটি নষ্ট হলেও সংস্কার কিংবা পুনঃ নির্মাণের কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। সুকোমল বড়ুয়া ও লুৎফুর রহমান কাজল রাবার ড্যামটি পরিদর্শনকালে অনেক নেতাকর্মী ও এলাকার উপকারভোগী উপস্থিত ছিলেন। তারা বিষয়টি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাকে বুঝিয়ে বলেন। তিনিও নিজের চোখে রাবার ড্যাম এলাকাটি পরিদর্শন করেন।</p> <p style="text-align:justify">ঝিলংজা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার লিয়াকত আলী বলেন, এই রাবার ড্যামকে ঘিরে শুধুই লুটপাট হয়েছে। সাধারণ কৃষকদের স্কিম কমিটিতে রাখা হয়নি। তারা এই কমিটির কাছে ঘেঁষতেও পারেননি।</p> <p style="text-align:justify">এ ব্যাপারে জানতে ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা টিপু সুলতানের মোবাইলে কল দেওয়া হলে ফোন ধরেন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব। তিনি জানান, এই নম্বরটি ইউনিয়ন পরিষদে ব্যবহার হয়। তার আরেকটি মোবাইল নম্বরে ফোন দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।</p> <p style="text-align:justify">অপরদিকে এই রাবার ড্যামটির নির্মাণ, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ ব্যাপারে জানতে এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।</p>