<p>ঘরে খাবার নেই, আর শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিঁধে আছে ১৩টি রাবার বুলেট। শারীরিক যন্ত্রণা ও আর্থিক অনিশ্চয়তায় দিশেহারা দিনমজুর মোঃ এনামুল হক (২৫)।</p> <p>গত ৪ আগস্ট কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন এনামুল। ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে তিনি রাবার বুলেটে আহত হন। তার মাথাসহ সারা শরীরে প্রায় ৫০টি রাবার বুলেট বিঁধে যায়। কয়েকটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বেশিরভাগ বুলেট বের করা হলেও এখনো মাথার ভেতরে ৭টি, হাতে ১টি, এবং উরুতে ৫টি রাবার বুলেট রয়ে গেছে। শারীরিক অক্ষমতার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বাকি বুলেটগুলো বের করতে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, যা ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ।</p> <p>এনামুলের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের স্কুলপাড়া গ্রামে। মৃত বেলাল হোসেন এবং মোছাঃ আমিনা বেগমের পুত্র এনামুল তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। বাবার মৃত্যুর পর থেকে দিনমজুরের কাজ করে তিনি সংসার চালাতেন। মা, দুই ছোট ভাই-বোন, স্ত্রী এবং সন্তানসহ ছয়জনের পরিবারের খাবার জোগানো নিয়ে এখন চরম অনিশ্চয়তায় আছেন এনামুল।</p> <p>আহত এনামুল বলেন, 'কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলা শহরে গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেই। বিকেলে ছাত্রদের মিছিলে যোগ দিলে, ভুরুঙ্গামারী থানার সামনে পুলিশের টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটের আঘাতে আমরা ছত্রভঙ্গ হই। আমি গুরুতর আহত হই, এবং ৫০টির মতো রাবার বুলেট আমার মাথা, হাত-পা ও পিঠে লাগে। বন্ধুরা আমাকে আহত অবস্থায় আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যায় এবং স্থানীয় চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরে আসি।'</p> <p>তিনি আরও বলেন, "তিনদিন পর হঠাৎ মাথা প্রচণ্ড ঝিমঝিম করতে থাকে। রংপুরের ইসলামিক কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে কিছু বুলেট বের করি। কিন্তু এখনো আমার মাথায় ৭টি, হাতে ১টি, এবং উরুতে ৫টি বুলেট রয়ে গেছে। ডাক্তার বলেছেন, সেগুলো বের করতে অপারেশন করতে হবে, যা অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু টাকার অভাবে অপারেশন করতে পারছি না।"</p> <p>এনামুলের মা মোছাঃ আমিনা বেগম বলেন, 'আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর এনামুলের দিনমজুরির আয়ে আমাদের সংসার চলতো। আন্দোলনে আহত হওয়ার পর সে আর কাজ করতে পারছে না। সংসার চালানোর কোনো উপায় নেই, চিকিৎসা করাবো কীভাবে?'</p> <p>এনামুলের স্ত্রী শিমু আক্তার বলেন, 'আমার স্বামীর আয় দিয়েই কোনোমতে এতোগুলো মানুষের খাওয়া-পরা চলতো। ঘরে আমাদের দুই বছরের সন্তান আছে। এখন স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকায় সংসারের খরচ ও তার চিকিৎসা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। এ অবস্থায় আর্থিক সহায়তা পেলে আমাদের খুব উপকার হতো।'</p> <p>ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ গোলাম ফেরদৌস বলেন, 'আহত এনামুল হকের বিষয়ে এখনই জানতে পারলাম। অফিসে এলে বিষয়টি দেখবো।'</p> <p>পরিবার জানিয়েছে, এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারা কোনো আর্থিক সহায়তা পায়নি। তবে সম্প্রতি রংপুরের র‌্যাব-১৩ এনামুলের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে। বর্তমানে তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শিগগিরই তার শরীরের সার্বিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।</p> <div id="gtx-trans" style="left:-15px; position:absolute; top:-4px"> <div class="gtx-trans-icon"> </div> </div>