<p>নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় রোয়াইলবাড়ী-আমতলা ইউনিয়নে অবস্থিত প্রাচীন স্থাপত্য রোয়াইলবাড়ী দুর্গে অপার পর্যটনের সম্ভাবনা থাকলেও প্রশাসনের সঠিক কোনো উদ্যোগ নেই। এ কারণে পর্যটনের এমন সম্ভাবনা ভেস্তে যাচ্ছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসী মনে করেন।</p> <p>ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ, মোগল আমলের স্থাপত্য এটি। নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের রোয়াইলবাড়ি এলাকায় দুর্গটির অবস্থান। দুর্গটি  বর্তমানে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। সরকারিভাবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মাধ্যমে ঐতিহাসিক এসব নির্দশন সংরক্ষণের জন্য মাঝে মধ্যে খননকাজ শুরু হলেও মাঝপথে আবার থেমে যায়। ফলে অযত্ন, অবহেলায় ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঐত্যিহাসিক এই নিদর্শনটি আজ হুমকির মুখে পড়েছে। </p> <p>এলাকাবাসীর দাবি, এই এলাকাটি একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা হয়ে উঠছে না। এতে এলাকার সাধারণ মানুষের উন্নয়নসহ সরকার বঞ্চিত হচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে।</p> <p>কেন্দুয়া উপজেলা থেকে প্রায় ১৫কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম দিকে রোয়াইলবাড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত তৎকালীন মোগল আমলের প্রশাসনিক কেন্দ্র ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ। কালের আর্বতে এই দুর্গটি হারিয়ে যায় মাটির নিচে। প্রায় দুই যুগ আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খননকাজ পরিচালনা করে দুর্গটির সন্ধান পায়।</p> <p>সে সময় মাটির ঢিবি খনন করে মোগল আমলের কারুকার্য- সংবলিত ইট দিয়ে গড়া একটি বারোদুয়ারি মসজিদ, এর আশপাশে প্রাসাদের চিহ্ন ও একটি সুড়ঙ্গ পথের সন্ধান পায়। সুড়ঙ্গের পাশেই একটি বটগাছের নিচে কথিত নিয়ামত বিবির মাজার এবং ১২হাত লম্বা ডেংগু মালের কবরস্থান। কিন্তু অজানা কারণে কিছু দিনের মধ্যেই খননকাজ বন্ধ করে দেয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।</p> <p>এরপর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৯৮৭ সালে সরকারিভাবে ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষায় ৪৬ একর ভূমি পুরার্কীতি এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। সে সময় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শুধু একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়ে এলাকাটিকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। তবে নির্মাণ করা হয়নি কোনো বাউন্ডারি দেয়াল কিংবা নেই কোনো কাঁটাতারের বেড়া।</p> <p>খননের পর থেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে পাথরের ও কাঁচের বিভিন্ন পিলার। এদিকে সম্প্রতি নেত্রকোনার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নতুন করে খননকাজ শুরু করে আরো বেশ কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন বারোদুয়ারি মসজিদের দক্ষিণ দিকে খুঁজে পায়। খুঁজে পায় দুর্গের ফটকের সন্ধান। খনন করে সংরক্ষিত বিভিন্ন কারুকার্য-সংবলিত ইট পাথরের অস্থায়ী প্রদর্শনী উপস্থাপন করা হয় সেখানে। পরিদর্শনকালে এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে  মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে এলাকাটিকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার আশ্বাস দিলেও খননকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার এক বছরেও তার কোনো অগ্রগতি হয়নি।</p> <p>এদিকে, ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ এলাকা দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা এখানে আসছেন। কিন্তু সম্ভাবনাময় এই পর্যটন এলাকাটিতে জেলা পরিষদের উদ্যোগে পাকা করে দুটি ছাতাকৃতির বিশ্রামাগার নির্মাণ করলেও এর আধুনিকায়নে আর কিছুই করা হয়নি। ফলে পর্যটকদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।</p> <p>রোয়াইলবাড়ী ইউনিয়নে চর আমতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধানশিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ঘুরতে আসে কিন্তু এখানে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় ধীরে ধীরে পর্যটনে আসা কমে যাচ্ছে। আসলে আমরা দেখি প্রতিবছরই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজন এটি পরিদর্শন কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আসে। কিন্তু আজ অবধি এটি উন্নয়নের জন্য কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তাই বলব সরকার যদি অর্থ খরচ করে এটিকে সংরক্ষণ ও পর্যটকদের জন্য উপযোগী করে তুলতে পারে তাহলে প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ ও বিশাল পর্যটকদের আনাগোনা একটি স্থান হিসেবে চিহ্নিত হবে, যাতে সরকারের রাজস্ব আয়সহ এলাকার সাধারণ জনগণেরও উন্নয়ন হবে বলে তিনি মনে করেন।</p> <p>কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা থেকে রোয়াইলবাড়ি দুর্গ পরিদর্শনে আসা নূর সালাম নামে এক তরুণ জানান, এলাকাটি খুবই সুন্দর। দুর্গের স্থাপনাগুলোও দৃষ্টিনন্দন। জায়গাটি দেখে খুবই ভালো লেগেছে। কিন্তু এখানে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো রেস্টুরেন্ট বা বিশ্রামাগারও। দুর্গটির উন্নয়নকাজ ও পর্যটকদের জন্য সুযোগসুবিধা বাড়ানো হলে এখানে দর্শনার্থীদের যাতায়াত আরো বৃদ্ধি পাবে।</p> <p>এ ব্যাপারে রোয়াইলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লুৎফর রহমান ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, যদি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর-মন্ত্রণালয় থেকে খননকাজসহ প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া যায় তাহলে রোয়াইলবাড়ি দুর্গটিকে দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা সম্ভব। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কাছে পর্যটকদের উৎসাহিত করাসহ এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করার জোর দাবি জানান তিনি।</p> <p>কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, দুর্গটির সৌন্দর্য ও পর্যটকদের সুবিধা বৃদ্ধিসহ দুর্গ এলাকার উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। আমি বিশ্বাস করি, প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের সঠিক পরিকল্পনা করলে এটি নেত্রকোনা জেলার অন্যতম পর্যটক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠবে। আমিও কেন্দুয়া উপজেলার পক্ষ থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে তাদের পরামর্শক্রমে এরোয়াইলবাড়ী দুর্গটির সৌন্দর্য ও পর্যটকদের সুবিধা বৃদ্ধিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ে চিঠি চালাচালি করবো। এর মাধ্যমে দুর্গটির উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। </p> <p>প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নেত্রকোনা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বেশ কয়েকবার মুটোফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। </p>