<p style="text-align:justify">চাঁদপুরের হাইমচর মেঘনা নদীর ইশানবালা খালের মুখে নোঙর করা ‘এমভি আল-বাখেরা’ নামের একটি সারবাহী লাইটারেজ জাহাজ থেকে সাতজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ ও কোস্ট গার্ড। পুলিশ ও মালিকপক্ষ জানিয়েছে, শুধু সাতজন খুন হয়েছেন, সার লুট করা হয়নি। জাহাজের বাকি সবই অক্ষত আছে। এতে পুলিশ ও মালিকপক্ষ হতবাক! এত মানুষকে কেন খুন করা হলো প্রশ্ন সাধারণ মানুষেরও।</p> <p style="text-align:justify">‘এমভি আল-বাখেরা’ জাহাজটি মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন জাহাজ। আল-বাখেরার ধারণ ক্ষমতা ৮০০ টন। এটি চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন রুটে মালামাল পরিবহন করে থাকে। ঢাকার দোহারের মাহবুব হোসেন ও আত্মীয়রা এ জাহাজের মালিক। এ মালিকের মালিকানাধীন অন্য জাহাজ ‘এমভি মুগনি-৩’।</p> <p style="text-align:justify">পুলিশ ও মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিহত সাতজনের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা যায়নি। এতে নিহত হন জাহাজের মাস্টার এনামুল কিবরিয়া। তার বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। ইঞ্জিনচালক মো. সালাউদ্দিন, তিনি নড়াইলের বাসিন্দা। সুকানি আমিনুল মুন্সি ও মো. জুয়েল। গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, আজিজুল হক ও মাজেদুল ইসলাম।</p> <p style="text-align:justify">লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল জানায়, ১৯ ডিসেম্বর আল-বাখেরা নামের জাহাজটি ইউরিয়া সার পরিবহনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। জাহাজটির ধারণক্ষমতা ৮০০ টন। জাহাজটির পণ্য পরিবহন ঠিকাদার মেসার্স হামিদিয়া এন্টারপ্রাইজ। বরাদ্দ পাওয়ার পর জাহাজটিতে ২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর কাফকো জেটি থেকে ৭২০ টন ইউরিয়া সার বোঝাই করা হয়। রবিবার ভোরে জাহাজটি সার নিয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীর উদ্দেশে রওনা হয়। এই সার ছিল বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি)।</p> <p style="text-align:justify">নৌ পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘৯৯৯-এর কল পেয়ে জাহাজটি উদ্ধার করতে যায় নৌ পুলিশ। কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশ জাহাজটি থেকে আজ (সোমবার) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রথমে ৫ জনের লাশ এবং তিনজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সর্বশেষ তথ্য মতে আরো দুজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এখন নিহতের সংখ্যা ৭ জন। আমরা জানতে পেরেছি, জাহাজটিতে আটজন লোক ছিল।’</p> <p style="text-align:justify">‘এমভি আল-বাখেরা’ জাহাজটির মালিক ছয়জন। মালিকের একজন হলেন মাহবুব হোসেন। তিনি সোমবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজকে (সোমবার) দুপুর ১২টার দিকে আমরা খবর পেয়েছি, মেঘনা নদীর ইশানবালা খালের মুখে নোঙর করা অবস্থায় ডাকাতি হয়েছে। এরপর আমি জাহাজের মাস্টার এনামুল কিবরিয়াকে বারবার ফোন দিচ্ছিলাম। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করছিলেন না। এমভি মুগলি-৩ ও একই সময়ে ‘এমভি আল-বাখেরা’ সঙ্গে যাত্রা করেছিল।</p> <p style="text-align:justify">পরে একই সঙ্গে যাওয়া আমাদের আরেক জাহাজ এমভি মুগনি-৩-এর মাস্টার বাচ্চু মিয়াকে ফোন করে জানায়, আল-বাখেরার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলি। ওই সময় মুগনি-৩ জাহাজটি মাওয়া থেকে ঘটনাস্থল দিয়ে অতিক্রম করার সময় জাহাজের লোকজন বাখেরা জাহাজটি দেখতে পান। ওই সময় তারা জাহাজের লোকদের রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ৯৯৯-এ কল দেন। পরে পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের লোকজন লাশ উদ্ধার করে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘জাহাজে ৭২০ টন সরকারি সার ছিল। এসব সার অক্ষত আছে জাহাজে। লুট হয়নি। যারা জাহাজের লোকদের খুন করেছেন, আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ডাকাতি করতে নয় শত্রুতার কারণে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমি জানি না, কিভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে আসল ঘটনা বের করতে পারবে।’</p> <p style="text-align:justify">চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা এখনো অন্ধকারে। ঘটনাটি কিভাবে ঘটেছে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। ডাকাতি, কিংবা অন্য কোনো কারণেও হতে পারে। তদন্ত করার পরে জানা যাবে। নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ে কথা বলেছি। যাতে নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হয়।’</p>