চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্প ১৪ বছর আগে নেওয়া। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিন বছর মেয়াদের ৮৫৬ কোটি টাকার এই মেগাপ্রকল্প ওই সরকারের সময় চার দফায় ব্যয় বাড়িয়ে দাঁড়িয়েছিল তিন হাজার ৩২৪ কোটি টাকায়। সেই সঙ্গে কয়েক দফায় সময় বাড়িয়েও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি সিডিএ।
গত ১৪ বছরে (জানুয়ারি ২০১১ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪) প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৮৯ শতাংশ।
অর্থাৎ মেগা এই প্রকল্পের এখনো ১১ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে।
আরো পড়ুন
এবারের বিশ্ব ইজতেমা হবে ৩ পর্বে, প্রজ্ঞাপন হয়নি এখনো
শুধু এই প্রকল্পই নয়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অধীনে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ আরো তিনটি মেগাপ্রকল্পের কাজ দীর্ঘদিন ধরে চলমান। ক্ষমতাচ্যুতির আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের জুলাই পর্যন্ত সাড়ে সাত বছরে রিং রোডসহ চারটি মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল।
একনেকে অনুমোদনের সময় এসব মেগাপ্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।
আর প্রত্যেক প্রকল্পের মেয়াদ ছিল তিন বছর।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসব প্রকল্পের উন্নয়নকাজ শেষ না হলেও একের পর এক সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। সাত হাজার কোটি টাকা বেড়ে বর্তমানে এই চার মেগাপ্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। এদিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে।
প্রকল্পগুলোর কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা-ও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।
আরো পড়ুন
উত্তরাঞ্চলে তীব্র শীত, ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত জনজীবন
জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুতির আগে আওয়ামী লীগের গত সাড়ে ১৫ বছরে রাজনৈতিক বিবেচনায় সিডিএতে একে একে তিনজন চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। সবচেয়ে বেশি সময় পার করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আব্দুচ ছালাম। অপর দুজন হলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম জহিরুল আলম দোভাষ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস।
ওই চার মেগাপ্রকল্প কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যেহেতু প্রকল্পগুলো হয়েছে সেহেতু যত দ্রুত সম্ভব কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি।
তবে প্রকল্পগুলোর সময় ও ব্যয় বেড়েছে। এতে অযৌক্তিকভাবে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে কি না তা তদন্ত করছে মন্ত্রণালয়।'
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সিডিএ তাদের মূল কাজ বাদ দিয়ে এসব মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করেছিল। প্রকল্পগুলো যখন তারা হাতে নিয়েছিল তখন তাদের এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা ছিল না। যথাযথ ফিজিবিলিটি করা হয়নি। ডিজাইনে ত্রুটি, বাস্তবায়নে ত্রুটি, অর্থছাড় কম থাকাসহ নানা সংকটে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে।'
আরো পড়ুন
নতুন জোট গঠনে তৎপর বাম-প্রগতিশীলরা, প্রার্থী ৩০০ আসনেই
চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পটি ২০১১ সালের জানুয়ারিতে একনেকে অনুমোদন হয়। ওই সময় প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৮৫৬ কোটি টাকা। এরপর কয়েক দফা সময় বাড়ানোর পাশাপাশি চারবার ব্যয় বেড়ে বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে সময় আরেক দফায় শেষ হয়েছে। এই পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৯ শতাংশ। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা জানান, সময় আরো এক দফা বাড়বে। প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়। প্রথমে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ২৭৫ কোটি ৫২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ২০২০ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর দুই দফায় ব্যয় বেড়ে দুই হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা করা হয়েছে। কয়েক দফায় বেড়েছে সময়ও। আগামী জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। এর মধ্যে গত মাস পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৮২ শতাংশ অর্থাৎ এখনো ১৮ শতাংশ কাজ বাকি।
চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল ২০১৭ সালের জুলাইয়ে। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল তিন হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এরপর আরো এক দফা ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। একাধিকবার সময় বেড়ে আগামী জুন মাসে আরেক দফা সময় শেষ হচ্ছে। আর প্রকল্পের শুরু থেকে এই পর্যন্ত (গত ডিসেম্বর) ভৌত অগ্রগতি ৯২ শতাংশ।
এদিকে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুলাইয়ে একনেকে অনুমোদন হয়। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পে কাজ বেড়েছে। কয়েক দফায় সময় বাড়ানোর পাশাপাশি এক দফায় ব্যয়ও বেড়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটিতে ব্যয় হচ্ছে আট হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়সীমা হয়েছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ।