প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় পটুয়াখালীর গলাচিপায় এবার তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত তিন বছরের লোকসান কাটাতে পেরে এবার খুশি কৃষকরা।
এ বছর প্রথম ধাপে উৎপাদিত তরমুজ রপ্তানি হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। বিশেষ করে, রমজানে এই রসাল ফলের চাহিদা রয়েছে বাজারগুলোতে।
উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের একাধিক পয়েন্টে (মোকাম) প্রতিদিন গড়ে অন্তত দেড় থেকে তিন শ ট্রাকে পাঠানো হচ্ছে তরমুজ। অস্থায়ী কয়েকটি মোকামের মধ্য অন্যতম গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নসংলগ্ন রামনাবাদ নদী তীরের আমখোলা। প্রতিদিন এই একটি পয়েন্ট (মোকাম) থেকে প্রায় ২০০ ট্রাকে তরমুজ যাচ্ছে রাজধানীসহ কয়েকটি জেলায়। যার পাইকারি বাজারমূল্য দৈনিক অন্তত দুই কোটি টাকা।
এ ছাড়াও গলাচিপার মুশুরিকাঠি স্লুইস, গোলখালীর হরিদেবপুর খেয়াঘাট, রতনদী তালতলীর বন্যাতলী খেয়াঘাট, উলানিয়া বাজার, ডাকুয়ার পাঙ্গাসিয়া, সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া খেয়াঘাট এলাকায় প্রায় দেড় শ ট্রাকে তরমুজ পরিবহন করা হচ্ছে।
গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া গ্রামের মো. হুমায়ুন খান জানান, এ বছর ১৫০ শতক জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এতে ১ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। তিন লাখ টাকার মতো লাভ হতে পারে।
এ পর্যন্ত তিনি ২ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। অল্প কিছু আছে, যা বিক্রি হয়ে যাবে।
সরেজমিনে রামনাবাদ নদীর তীরে অস্থায়ী আমখোলা পয়েন্টে (মোকামে) দিনভর ঘুরে দেখা যায়, নদীপথে তরমুজ নিয়ে রামনাবাদ নদীর তীরে ভিড়ছে ট্রলার। নানা ক্যাটাগরির ধারণক্ষমতার ট্রাকে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকার তরমুজ লোড করছেন শ্রমিকরা। দিনরাত মিলিয়ে গড়ে অন্তত ২০০ ট্রাক ছাড়ে আমখোলার এই পয়েন্ট থেকে।
শুধু আমখোলার মোকাম থেকে গড়ে ৮ কোটি টাকার তরমুজ পরিবহন হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। সোনার বাংলা ট্রাক কভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিক মো. মহসিন মৃধা বলেন, ‘আমখোলা এলাকায় ৫০টি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি রয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন ২০০ ট্রাক লোড হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় তরমুজ নিয়ে যাচ্ছে।’
মানিকগঞ্জ থেকে আমখোলা মোকামে তরমুজ নিতে আসা ট্রাকচালক সালমান হোসাইন বলেন, ‘গত বছরের থেকে এ বছরে ট্রাক ভাড়া কম থাকায় সব খরচ দিয়ে লাভ কম থাকছে। গত বছর ৩৫ হাজার ভাড়ার পরিবর্তে এ বছর ৩০ হাজার টাকা ভাড়া হয়েছে। প্রতি ট্রিপে তিন-চার লাখ টাকার তরমুজ বহন করা হয়।’
আমখোলা মোকামের শ্রমিক সরদার মো. ইমরান জানান, এখানে দিনরাত প্রায় ৫০০ শ্রমিক তরমুজ ট্রাকে ভরার কাজ করছেন। প্রতি পিস তরমুজ ট্রাকে তুলতে তাঁরা দেড় টাকা মজুরি পাচ্ছেন। ঈদ পর্যন্ত এই মোকাম থেকে ট্রলার থেকে ট্রাকে তরমুজ তুলে দেওয়ার কাজ করবেন তাঁরা।
গাজীপুর থেকে আমখোলা মোকামে তরমুজ কিনতে আসা পাইকারী ব্যবসায়ী মো. জামান চৌধুরী জানান, তিনি পটুয়াখালী থেকে ২০ বছর ধরে তরমুজ কিনে গাজীপুরে তাঁর নিজস্ব আড়তে বিক্রি করছেন। এ বছরে পটুয়াখালীতে তরমুজের উৎপাদন বেড়েছে। এ পর্যন্ত ১৮টি ট্রাকে প্রায় ৭০ লাখ টাকার তরমুজ কিনেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমার মতো আরো দেড় থেকে দুই শ ব্যবসায়ী আমখোলা মোকাম থেকে তরমুজ কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বিক্রি করছেন।’
গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজু আক্তার বলেন, ‘গত কয়েক বছর তরমুজের লোকসান হওয়ায় এবার তুলনামূলক তরমুজ চাষি কমে গেছে। তবে এ বছর ৮ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে চরমুজ চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশই লাভবান হবে বলে আশা করা যায়।’