‘জাতীয় স্বার্থের দিকটি বিবেচনা করে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর এখনই সমঝোতায় আসা জরুরি। সমঝোতা হলে একই দিনে জাতীয় সংসদ ও সংবিধান সভার নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব। ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল এভাবেই। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এদেশের ওপর অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল।
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর প্রতিবাদী ছাত্র-জনতা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে হটিয়ে আবারো দেশ গঠনের সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগ হাত ছাড়া হলে এর দায় নিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকেই’।
মিট দ্যা প্রেসে কথাগুলো বলেছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম। বুধবার (৭ এপ্রিল) রাতে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর পৌরশহরের বসন্তপুরে পুনর্বিন্যাস পাঠাগার মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা ও মেসাকারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
সকলকে সংকীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখারও আহ্বান জানিয়ে তিনি মিট দ্যা প্রেসে বলেন, ‘সংস্কার প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্তি ছেড়ে রাজনৈতিক দলসমূহ সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে একটিমাত্র নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একসঙ্গেই জাতীয় সংসদ ও সংবিধান সভা তথা গণপরিষদ নির্বাচন হতে পারে। এতে আস্থার সঙ্কট কেটে যাবে এবং বিদ্যমান ক্ষত কাটিয়ে দেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে রূপান্তর করা যাবে’।
মিট দ্যা প্রেসে সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে হাসনাত কাইয়ূম জানান, ঢাকাসহ চারটি বিভাগে তাঁর দলের সমঝোতা সংলাপে বিএনপির নেতৃবৃন্দকে উপস্থিত রেখে তাদের ভাবনার কথা শুনেছেন। আওয়ামী লীগের টানা ১৬ বছরের দুঃশাসনে নিপীড়নের শিকার বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সংস্কার চান।
তারা আর নির্যাতিত হতে চান না। আবারো সহিংসতা ও বিভাজন চান না।
তিনি বলেন, ‘সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে- সব দলেই এমনটা চায় এরকম মানুষ যেমন আছে, আবার এটা না চাওয়ার মতো মানুষও আছে। ছাত্রদের গঠন করা নতুন দলসহ যেসকল রাজনৈতিক দল সংস্কারের প্রশ্নে আন্তরিক, তাদের কণ্ঠস্বর আরো জোরালো করে জনগণের কাছে সংস্কারের বার্তাটি পৌঁছাতে হবে। জনগণ এ দাবির সঙ্গে কণ্ঠ মেলালে বিএনপি সংস্কারের দাবি না মেনে পারবে না’।
কল্যাণ রাষ্ট্রের বিষয়ে হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ‘প্রাগৈতিহাসিক পর্ব অতিক্রম করছি আমরা। রাষ্ট্র আমার টাকা আমার কাছ থেকে নিয়ে আমার সন্তানকে গুলি করে মারবার জন্য আমার ভাইকে ব্যবহার করতে পারে। ব্রিটিশের আগের কম্পানি আমলে মতোই এদেশে এ ব্যবস্থা বিদ্যমান। এখানে যা ইচ্ছে তাই করা যায়। এ বর্বর পরিস্থিতি থেকে রাষ্ট্রকে ফিরিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তর হচ্ছে প্রথম কাজ। যে রাষ্ট্র আমাদের খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তাসহ মৌলিক-মানবিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করবে’।
তিনি আরো বলেন, ‘দশ ভাগ মানুষের হাতে দেশের নব্বই ভাগ সম্পদ রয়েছে। কিন্তু সম্পদের অনুপাতে কর আদায় করার রীতি না থাকায় এক্ষেত্রেও চরম বৈষম্য রয়েছে। যেমন মোবাইল ফোন ব্যবহারের বেলায় একজন ভিখারি যে হারে কর পরিশোধ করে, কোটিপতিও এদেশে একই হারে কর দেয়। পরোক্ষভাবে আদায় করা ভ্যাটের নব্বই ভাগের বেশি টাকা যায় সাধারণ জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে। আবার কোটিপতিরা মাত্র ১০ ভাগ ভ্যাট পরিশোধ করে নব্বই ভাগ সুবিধা ভোগ করে। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের ভেতরের এরকম বৈষম্য কমাতেই রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হবে’।
মিট দ্যা প্রেসে অন্যান্যের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য হরিপদ দাস নান্টু, বাজিতপুর উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক শামসুল হক কাজল, সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম কাজল, নিকলী উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল মোমেন স্বপনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।